ঢাকা ০৫:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গজারিয়ায় বালুয়াকান্দী অটো ড্রাইভার ও মালিক সমিতির উদ্যোগে আমিরুল ইসলাম এর নির্বাচনী সভা ও দোয়া মাহফিল “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের পক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি “ “ওয়াটারলিলি ইন্টারন্যাশনালের ইফতার ,দুআ ও আলোচনা সভা “ “বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে টেকসইতা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সুইডিশ প্রতিনিধিদলের ফকির অ্যাপারেলস সফর” “জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার উদ্যোগে হতদরিদ্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ “ বিশ্ব নাট্য দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা ও নাট্যানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত মতলব উত্তরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত বাবুগঞ্জে শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন। ইন্দুরকানীতে এলজিইডি অফিসে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চট্টগ্রামে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা

মজুরি-বৈষম্যে নারীশ্রমিকরা

নকুল চন্দ্র দে পাপ্পু, স্টাফ রিপোর্টার :
স্বামী সংসার, সন্তান এবং সামাজিক রীতিনীতির ধরাবাঁধা নিয়মে নারীদের স্বাধীনতার সীমা রেখা যে সীমিত সমীকরণে বাঁধা ছিলো তা এখনও আছে এটা মেনে নিতে হবে। এমন রীতি অহরহ দৃশ্যমান হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরে পাল্টেছে দিনকাল, পরিবর্তন হয়েছে সমাজ ব্যবস্থা, ঘুরেছে অর্থনীতি, পরিবর্তন হয়েছে মানুষরে জীপনযাপন ।তবুও ঘরে-বাইরে নারী নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি। বেড়ে চলা নির্যাতন, অবহেলা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণে বাধাসহ নানা সমস্যায় নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে অতৃপ্তিও কম নয়।সময়মত বিয়ে না হলে, বিয়ে ভেঙে গেলে, বাবার বাড়ি থাকলে নারীকেই প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়। এখনো নারীর ঠিকানা হয় বাবার বাড়ি, না হয় শ্বশুরবাড়ি। তার নিজের ঠিকানা নেই।এমন ঠিকানাহীন নারীকে ঠিকানার খোঁজে আর একমুঠো ভাতের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে টিকে থাকতে হয় তার জীবনযুদ্ধে ।নারীকে হতে হয় কর্মমুখী।আর কর্মক্ষেত্রেও নারীরা অবহিত এবং মজুরি–বৈষম্য কমেনি। তাঁরা পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেন, কিন্তু তাঁদের অর্ধেক মজুরি দেওয়া হচ্ছে। মজুরির বিষয়ে প্রতিবাদ করেও তাঁরা কোনো ফল পান না।নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে মজুরি–বৈষম্যের এ চিত্র পাওয়া গেছে। একসময় নারীরা ঝিয়ের কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন। এখন তাঁরা মাঠে-ঘাটে কাজ করেন। অনেকে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন, বিশেষত নারী শ্রমিকেরা বোরো ফসলের পরিচর্যা, ধানের চারা রোপণ, ধান ও মাটি কাটা এবং ইটভাটায় কাজ করে থাকেন। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে এক দিনের কাজ ধরা হয়। স্থানীয়ভাবে এক দিনের পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৪০০ টাকা। এ হিসাবে একজন নারী শ্রমিকেরও ৪০০ টাকার পাওয়ার কথা, কিন্তু তাঁরা সমান কাজ করেও পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।নারীর অধিকার, মজুরিসহ নানা বিষয়ে সমঅধিকার নিয়ে অনেক সভা-সেমিনার হয়ে থাকে। কিন্তু দেশে মজুরি-বৈষম্য কমেনি। পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেন নারী। কিন্তু তাদের অর্ধেক মজুরি দেয়া হয়। নারীরা মজুরি বৈষম্যের বিষয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন না। বছর ঘুরে নারী দিবস আসে। তখন নারী শ্রমিকদের মজুরি-বৈষম্যের শিকার হওয়ার বিষয়টি কপচানো হয়। তাদের মজুরির কোনো পরিবর্তন হয় না।এমনি একটি বাস্তবিক চিত্র বহু রেয়েছে।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জয়দা গ্রামের নারীশ্রমিক গোলাপি বেগম, বছর কয়েক আগে তার স্বামী মারা গেছেন। দুই সন্তান নিয়ে সংসার চলে না। তিনি স্থানীয় একটি নার্সারি তে কোকোপিডে দিয়ে চারা তৈরির কাজ করেন।প্রতিদিন তিনি ২৫০ টাকা মজুরি পান আর এই সামান্য টাকায় চলে সংসার এবং মহাফেজি পড়া ছেলের লেখাপড়ার খরচ। গোলাপির মত আরো নারীশ্রমিক মালেকা,হাফিজা,মমতা সহ ১২-১৪ জনের মত নারীরা কাজ করে এই নার্সারিতে ।নারীশ্রমিকরা জানান,”আমাদের শ্রম অনুযায়ী মজুরি পাই না, এইবিষয়ে সরকারের সুনজর চান নারীশ্রমিকরা ”

এমনি রাইসমিল, ইটভাটা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ‘সস্তা শ্রমে কাজটা আদায় করা । নারীদের কাছ থেকে সস্তা মূল্যে শ্রম আদায় করা যায়, সে জন্যই তারা এমন বৈষম্য করে যাচ্ছে। রাষ্ট্র্রীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো না থাকায় নারীদের কম মজুরি দিয়ে বঞ্চিত করছেন মালিকরা। বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে তদারকির প্রয়োজন। তা না হলে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের বৈষম্য কমবে না কখনও।কর্মক্ষেত্রে মজুরিবৈষম্য মেনে নিয়েই পুরুষের সাথে লড়াই করে কাজ করে চলছেন তারা। কখনো সমান কিংবা কখনো বেশি কাজ করছেন। তবু কম মজুরিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে নারীশ্রমিকরা ।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

গজারিয়ায় বালুয়াকান্দী অটো ড্রাইভার ও মালিক সমিতির উদ্যোগে আমিরুল ইসলাম এর নির্বাচনী সভা ও দোয়া মাহফিল

মজুরি-বৈষম্যে নারীশ্রমিকরা

আপডেট টাইম ০৮:৪৩:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০২২

নকুল চন্দ্র দে পাপ্পু, স্টাফ রিপোর্টার :
স্বামী সংসার, সন্তান এবং সামাজিক রীতিনীতির ধরাবাঁধা নিয়মে নারীদের স্বাধীনতার সীমা রেখা যে সীমিত সমীকরণে বাঁধা ছিলো তা এখনও আছে এটা মেনে নিতে হবে। এমন রীতি অহরহ দৃশ্যমান হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরে পাল্টেছে দিনকাল, পরিবর্তন হয়েছে সমাজ ব্যবস্থা, ঘুরেছে অর্থনীতি, পরিবর্তন হয়েছে মানুষরে জীপনযাপন ।তবুও ঘরে-বাইরে নারী নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি। বেড়ে চলা নির্যাতন, অবহেলা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণে বাধাসহ নানা সমস্যায় নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে অতৃপ্তিও কম নয়।সময়মত বিয়ে না হলে, বিয়ে ভেঙে গেলে, বাবার বাড়ি থাকলে নারীকেই প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়। এখনো নারীর ঠিকানা হয় বাবার বাড়ি, না হয় শ্বশুরবাড়ি। তার নিজের ঠিকানা নেই।এমন ঠিকানাহীন নারীকে ঠিকানার খোঁজে আর একমুঠো ভাতের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে টিকে থাকতে হয় তার জীবনযুদ্ধে ।নারীকে হতে হয় কর্মমুখী।আর কর্মক্ষেত্রেও নারীরা অবহিত এবং মজুরি–বৈষম্য কমেনি। তাঁরা পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেন, কিন্তু তাঁদের অর্ধেক মজুরি দেওয়া হচ্ছে। মজুরির বিষয়ে প্রতিবাদ করেও তাঁরা কোনো ফল পান না।নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে মজুরি–বৈষম্যের এ চিত্র পাওয়া গেছে। একসময় নারীরা ঝিয়ের কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন। এখন তাঁরা মাঠে-ঘাটে কাজ করেন। অনেকে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন, বিশেষত নারী শ্রমিকেরা বোরো ফসলের পরিচর্যা, ধানের চারা রোপণ, ধান ও মাটি কাটা এবং ইটভাটায় কাজ করে থাকেন। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে এক দিনের কাজ ধরা হয়। স্থানীয়ভাবে এক দিনের পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৪০০ টাকা। এ হিসাবে একজন নারী শ্রমিকেরও ৪০০ টাকার পাওয়ার কথা, কিন্তু তাঁরা সমান কাজ করেও পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।নারীর অধিকার, মজুরিসহ নানা বিষয়ে সমঅধিকার নিয়ে অনেক সভা-সেমিনার হয়ে থাকে। কিন্তু দেশে মজুরি-বৈষম্য কমেনি। পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেন নারী। কিন্তু তাদের অর্ধেক মজুরি দেয়া হয়। নারীরা মজুরি বৈষম্যের বিষয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন না। বছর ঘুরে নারী দিবস আসে। তখন নারী শ্রমিকদের মজুরি-বৈষম্যের শিকার হওয়ার বিষয়টি কপচানো হয়। তাদের মজুরির কোনো পরিবর্তন হয় না।এমনি একটি বাস্তবিক চিত্র বহু রেয়েছে।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জয়দা গ্রামের নারীশ্রমিক গোলাপি বেগম, বছর কয়েক আগে তার স্বামী মারা গেছেন। দুই সন্তান নিয়ে সংসার চলে না। তিনি স্থানীয় একটি নার্সারি তে কোকোপিডে দিয়ে চারা তৈরির কাজ করেন।প্রতিদিন তিনি ২৫০ টাকা মজুরি পান আর এই সামান্য টাকায় চলে সংসার এবং মহাফেজি পড়া ছেলের লেখাপড়ার খরচ। গোলাপির মত আরো নারীশ্রমিক মালেকা,হাফিজা,মমতা সহ ১২-১৪ জনের মত নারীরা কাজ করে এই নার্সারিতে ।নারীশ্রমিকরা জানান,”আমাদের শ্রম অনুযায়ী মজুরি পাই না, এইবিষয়ে সরকারের সুনজর চান নারীশ্রমিকরা ”

এমনি রাইসমিল, ইটভাটা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ‘সস্তা শ্রমে কাজটা আদায় করা । নারীদের কাছ থেকে সস্তা মূল্যে শ্রম আদায় করা যায়, সে জন্যই তারা এমন বৈষম্য করে যাচ্ছে। রাষ্ট্র্রীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো না থাকায় নারীদের কম মজুরি দিয়ে বঞ্চিত করছেন মালিকরা। বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে তদারকির প্রয়োজন। তা না হলে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের বৈষম্য কমবে না কখনও।কর্মক্ষেত্রে মজুরিবৈষম্য মেনে নিয়েই পুরুষের সাথে লড়াই করে কাজ করে চলছেন তারা। কখনো সমান কিংবা কখনো বেশি কাজ করছেন। তবু কম মজুরিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে নারীশ্রমিকরা ।