ঢাকা ০৬:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ

ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় সার্ভিস লেনের কাজ শুরু হয়নি এখনো

মোঃ মশিউর রহমান /টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু স্লো মুভিং ভেহিক্যাল ট্রাফিক (এসএমভিটি) বা সার্ভিস লেনের এক পাশের কাজ শুরু করা হলেও বিপরীত পাশের কাজ শুরুই করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসের মূল কাজ চলমান থাকলেও এর অ্যাপ্রোচ অংশের কাজ শুরু করা হয়নি। ফলে কাজের সময়সীমা বাড়ায় দৈনন্দিন ভোগান্তিতে হতাশা প্রকাশ করেছে পরিবহন চালকরা। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চারলেন উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজ ও কালভার্টগুলোর কাজ করছে সড়ক ও জনপথ(সওজ) অধিদপ্তর। এতে মহাসড়কে ৭০ কিলোমিটারের প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এর আগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি ২০১৩ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ(একনেক) সভায় অনুমোদিত হওয়ার পর ২০১৬ সালে এর কাজ শুরু করা হয়। মহাসড়কের এলেঙ্গা-টাঙ্গাইলের দরুণ পর্যন্ত সড়ক, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ব্রিজ, কালভার্টের কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেড।
একইভাবে টাঙ্গাইলের দরুণ থেকে মির্জাপুরের জিরো-পয়েন্ট পর্যন্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর আখতার এবং মির্জাপুর থেকে গোড়াই-চন্দ্রা পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের কাজ করছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড কোম্পানি। মহাসড়কে ১১টি আন্ডারপাস ও ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করার কথা রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলোর কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বাংলাদেশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেডের সঙ্গে বিদেশি কোম্পানী দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিসিএল, আব্দুল মোনেম লিমিটেডের সঙ্গে মালয়েশিয়ান কোম্পানী এইচসিএম ইঞ্জিনিয়ারিং এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অপর কোম্পানী সামহোয়ানের সঙ্গে মীর আখতার লিমিডেট কয়েকটি প্যাকেজে মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ করছে। তবে সরেজমিনে বিদেশি কোম্পানীর কোনো লোকজন দেখা যায়নি।
সরেজমিনে জানা গেছে, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করণের কাজ প্রায় শেষ দিকে। কয়েকটি ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসের কাজ শুধু বাকি রয়েছে।
এর পাশাপাশি মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত পূর্বপাশের এসএমভিটি বা সার্ভিস সড়কের কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু পশ্চিম পাশের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। ওই সড়কের ছোট ছোট কালভার্ট ও ব্রিজের কাজও হয়নি। রাবনা পূর্বপাশের এসএমভিটি সড়কেরও একই অবস্থা।
তবে রাবনা বাইপাস থেকে পশ্চিমের এসএমভিটি সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। সেখান দিয়ে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে।
কিন্তু বিপরীতপাশে অর্থাৎ পূর্বপাশের ঢাকামুখী সার্ভিস লেনের কাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো শুরুই করতে পারেনি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় সার্ভিস সড়ক ও আন্ডারপাসের কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে।
এদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে টাঙ্গাইল শহরের প্রবেশপথ রাবনা বাইপাসে ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। সেখানে মূল ফ্লাইওভারের কাজ এখনও অনেকাংশে বাকি রয়েছে।
এছাড়া ফ্লাইওভারের দুইপাশের অ্যাপ্রোচ অংশের কাজ শুরুই করা হয়নি। মহাসড়কের তারুটিয়া অংশের ফ্লাইওভার, নাটিয়াপাড়ার আন্ডারপাস ও মির্জাপুরের গোড়াইয়ে ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করা হয়নি।
ফলে প্রতিনিয়ত এসব জায়গায় চালক ও জনসাধারণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মির্জাপুরের গোড়াইয়ে যানবাহনগুলো প্রতিদিনই যানজটের শিকার হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর আখতার লিমিটেড ও আব্দুল মোনেম লিমিটেড কোম্পানী দুটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না করায় এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মহাসড়কের অধিকাংশ আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে।
অন্যদিকে, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত মহাসড়কের ব্রিজ ও কালভার্টগুলো বিগত ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় একাধিকবার মহাসড়কের ওইসব জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও পরিমাপ করলেও এখনও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে পারেনি। ফলে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ভূমি অধিগ্রহণ না করায় জমির মালিকরা সার্ভিস লেনের(এসএমভিটি) কাজ বন্ধ করে দেয়।
পরে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে পুনরায় মহাসড়কের তারুটিয়া ও নাটিয়াপাড়া এলাকায় কাজ শুরু হলেও বাকি অংশের সার্ভিস সড়কের কাজ শুরু হয়নি।
সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মাইদুল, আব্দুর রহিম, কাঁলাচাদ মন্ডল, সামশ উদ্দিন সহ অনেকেই জানান, ছোট পরিবহন চলাচল করার জন্য বিকল্প সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় মহাসড়কের পাশ দিয়ে তারা গাড়ি চালাতে পারছেন না। মহাসড়কে উঠলেই পুলিশ গাড়ি আটকে মামলা দিচ্ছে। এতে ১০দিনের আয় একদিনেই চলে যাচ্ছে।
তারা আরও জানান, মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে টাঙ্গাইল রাবনা বাইপাস পর্যন্ত একপাশের সার্ভিস লেনের কাজ হয়েছে। আবার রাবনা বাইপাস থেকে মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সার্ভিস লেনের কাজ হয়েছে। কিন্তু পূর্বপাশে সার্ভিস লেনের কাজ শুরুই হয়নি। বাধ্য হয়ে ছোট ছোট পরিবহনগুলো মহাসড়কে উঠে পড়ছে। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।
মহাসড়কের করটিয়া ইউনিয়নের মাধবধনী এলাকায় সার্ভিস লেনের জন্য ব্রিজের কাজ করছে মীর আখতার লিমিটেড। সেখানকার আবু সাইদ নামের এক শ্রমিক জানান, চারলেন সড়কের সঙ্গে সার্ভিস লেনের সংযোগের জন্য ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জায়গা ছেড়ে না দেওয়ায় সার্ভিস লেনের মূল সড়কের কাজ করা যাচ্ছে না।
টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস ফ্লাইওভারের শ্রমিক রুবেল হোসেন বলেন, যেভাবে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলছে তাতে কাজ শেষ হতে আরও বছরখানেক লেগে যাবে। করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণ কাজে দেরি হয়েছে।
রাবনা বাইপাস ফ্লাইওভারের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেডের প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ফ্লাইওভারটি রি-টেন্ডার হয়েছে। এটা নির্মাণে আগামি বছরের জুন পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সময়সীমার আগেই ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজসহ অ্যাপ্রোচের কাজও শেষ হবে।
মির্জাপুরের গোড়াইয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ করছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড। কোম্পানিটির প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, গোড়াইয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের পাশাপাশি এর দুইপাশে চারলেনের কাজ চলমান রয়েছে। যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে তার আগেই নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।
মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ম্যানেজার মো. ইসতিয়াক ও অমিত দেবনাথ জানান, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সার্ভিস লেন বা এসএমভিটি সড়কের কাজ অনেক জায়গায় আটকে গেছে। নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই সার্ভিস লেনের কাজ শুরু করা যাবে। করোনা, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাজ বিলম্বিত হয়েছে।
তারা জানান, ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মহাসড়কের নাটিয়াপাড়ার আন্ডারপাসটির কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এছাড়া মহাসড়কে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস যুক্ত হওয়ায় দ্বিতীয়বার রি-টেন্ডার হয়। ফ্লাইওভার-আন্ডারপাস নির্মাণের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামি ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। কাজ যেভাবে এগুচ্ছে তাতে সময়সীমার আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের(এআরআই) সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ জানান, মহাসড়কের কাজে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে একদিকে যেমন ব্যয় বাড়ে অন্যদিকে মানুষের জীবনাচারে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও  পরিবহনের ক্ষতি হয়।
এছাড়াও মহাসড়কে উন্নয়ন কাজের জন্য সেখানে ধুলাবালির সৃষ্টি হয়। ধুলাবালির মধ্যে চলাচলকারী মানুষের মাঝে শ্বাসকষ্টের মতো রোগ হতে পারে।
Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত

ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় সার্ভিস লেনের কাজ শুরু হয়নি এখনো

আপডেট টাইম ০৯:৪৪:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ ডিসেম্বর ২০২০
মোঃ মশিউর রহমান /টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু স্লো মুভিং ভেহিক্যাল ট্রাফিক (এসএমভিটি) বা সার্ভিস লেনের এক পাশের কাজ শুরু করা হলেও বিপরীত পাশের কাজ শুরুই করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসের মূল কাজ চলমান থাকলেও এর অ্যাপ্রোচ অংশের কাজ শুরু করা হয়নি। ফলে কাজের সময়সীমা বাড়ায় দৈনন্দিন ভোগান্তিতে হতাশা প্রকাশ করেছে পরিবহন চালকরা। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চারলেন উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজ ও কালভার্টগুলোর কাজ করছে সড়ক ও জনপথ(সওজ) অধিদপ্তর। এতে মহাসড়কে ৭০ কিলোমিটারের প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এর আগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি ২০১৩ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ(একনেক) সভায় অনুমোদিত হওয়ার পর ২০১৬ সালে এর কাজ শুরু করা হয়। মহাসড়কের এলেঙ্গা-টাঙ্গাইলের দরুণ পর্যন্ত সড়ক, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ব্রিজ, কালভার্টের কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেড।
একইভাবে টাঙ্গাইলের দরুণ থেকে মির্জাপুরের জিরো-পয়েন্ট পর্যন্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর আখতার এবং মির্জাপুর থেকে গোড়াই-চন্দ্রা পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের কাজ করছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড কোম্পানি। মহাসড়কে ১১টি আন্ডারপাস ও ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করার কথা রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলোর কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বাংলাদেশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেডের সঙ্গে বিদেশি কোম্পানী দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিসিএল, আব্দুল মোনেম লিমিটেডের সঙ্গে মালয়েশিয়ান কোম্পানী এইচসিএম ইঞ্জিনিয়ারিং এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অপর কোম্পানী সামহোয়ানের সঙ্গে মীর আখতার লিমিডেট কয়েকটি প্যাকেজে মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ করছে। তবে সরেজমিনে বিদেশি কোম্পানীর কোনো লোকজন দেখা যায়নি।
সরেজমিনে জানা গেছে, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করণের কাজ প্রায় শেষ দিকে। কয়েকটি ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসের কাজ শুধু বাকি রয়েছে।
এর পাশাপাশি মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত পূর্বপাশের এসএমভিটি বা সার্ভিস সড়কের কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু পশ্চিম পাশের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। ওই সড়কের ছোট ছোট কালভার্ট ও ব্রিজের কাজও হয়নি। রাবনা পূর্বপাশের এসএমভিটি সড়কেরও একই অবস্থা।
তবে রাবনা বাইপাস থেকে পশ্চিমের এসএমভিটি সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। সেখান দিয়ে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে।
কিন্তু বিপরীতপাশে অর্থাৎ পূর্বপাশের ঢাকামুখী সার্ভিস লেনের কাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো শুরুই করতে পারেনি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় সার্ভিস সড়ক ও আন্ডারপাসের কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে।
এদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে টাঙ্গাইল শহরের প্রবেশপথ রাবনা বাইপাসে ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। সেখানে মূল ফ্লাইওভারের কাজ এখনও অনেকাংশে বাকি রয়েছে।
এছাড়া ফ্লাইওভারের দুইপাশের অ্যাপ্রোচ অংশের কাজ শুরুই করা হয়নি। মহাসড়কের তারুটিয়া অংশের ফ্লাইওভার, নাটিয়াপাড়ার আন্ডারপাস ও মির্জাপুরের গোড়াইয়ে ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করা হয়নি।
ফলে প্রতিনিয়ত এসব জায়গায় চালক ও জনসাধারণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মির্জাপুরের গোড়াইয়ে যানবাহনগুলো প্রতিদিনই যানজটের শিকার হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর আখতার লিমিটেড ও আব্দুল মোনেম লিমিটেড কোম্পানী দুটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না করায় এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মহাসড়কের অধিকাংশ আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে।
অন্যদিকে, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত মহাসড়কের ব্রিজ ও কালভার্টগুলো বিগত ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় একাধিকবার মহাসড়কের ওইসব জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও পরিমাপ করলেও এখনও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে পারেনি। ফলে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ভূমি অধিগ্রহণ না করায় জমির মালিকরা সার্ভিস লেনের(এসএমভিটি) কাজ বন্ধ করে দেয়।
পরে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে পুনরায় মহাসড়কের তারুটিয়া ও নাটিয়াপাড়া এলাকায় কাজ শুরু হলেও বাকি অংশের সার্ভিস সড়কের কাজ শুরু হয়নি।
সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মাইদুল, আব্দুর রহিম, কাঁলাচাদ মন্ডল, সামশ উদ্দিন সহ অনেকেই জানান, ছোট পরিবহন চলাচল করার জন্য বিকল্প সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় মহাসড়কের পাশ দিয়ে তারা গাড়ি চালাতে পারছেন না। মহাসড়কে উঠলেই পুলিশ গাড়ি আটকে মামলা দিচ্ছে। এতে ১০দিনের আয় একদিনেই চলে যাচ্ছে।
তারা আরও জানান, মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে টাঙ্গাইল রাবনা বাইপাস পর্যন্ত একপাশের সার্ভিস লেনের কাজ হয়েছে। আবার রাবনা বাইপাস থেকে মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সার্ভিস লেনের কাজ হয়েছে। কিন্তু পূর্বপাশে সার্ভিস লেনের কাজ শুরুই হয়নি। বাধ্য হয়ে ছোট ছোট পরিবহনগুলো মহাসড়কে উঠে পড়ছে। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।
মহাসড়কের করটিয়া ইউনিয়নের মাধবধনী এলাকায় সার্ভিস লেনের জন্য ব্রিজের কাজ করছে মীর আখতার লিমিটেড। সেখানকার আবু সাইদ নামের এক শ্রমিক জানান, চারলেন সড়কের সঙ্গে সার্ভিস লেনের সংযোগের জন্য ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জায়গা ছেড়ে না দেওয়ায় সার্ভিস লেনের মূল সড়কের কাজ করা যাচ্ছে না।
টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস ফ্লাইওভারের শ্রমিক রুবেল হোসেন বলেন, যেভাবে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলছে তাতে কাজ শেষ হতে আরও বছরখানেক লেগে যাবে। করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণ কাজে দেরি হয়েছে।
রাবনা বাইপাস ফ্লাইওভারের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেডের প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ফ্লাইওভারটি রি-টেন্ডার হয়েছে। এটা নির্মাণে আগামি বছরের জুন পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সময়সীমার আগেই ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজসহ অ্যাপ্রোচের কাজও শেষ হবে।
মির্জাপুরের গোড়াইয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ করছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড। কোম্পানিটির প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, গোড়াইয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের পাশাপাশি এর দুইপাশে চারলেনের কাজ চলমান রয়েছে। যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে তার আগেই নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।
মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ম্যানেজার মো. ইসতিয়াক ও অমিত দেবনাথ জানান, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সার্ভিস লেন বা এসএমভিটি সড়কের কাজ অনেক জায়গায় আটকে গেছে। নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই সার্ভিস লেনের কাজ শুরু করা যাবে। করোনা, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাজ বিলম্বিত হয়েছে।
তারা জানান, ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মহাসড়কের নাটিয়াপাড়ার আন্ডারপাসটির কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এছাড়া মহাসড়কে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস যুক্ত হওয়ায় দ্বিতীয়বার রি-টেন্ডার হয়। ফ্লাইওভার-আন্ডারপাস নির্মাণের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামি ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। কাজ যেভাবে এগুচ্ছে তাতে সময়সীমার আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের(এআরআই) সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ জানান, মহাসড়কের কাজে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে একদিকে যেমন ব্যয় বাড়ে অন্যদিকে মানুষের জীবনাচারে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও  পরিবহনের ক্ষতি হয়।
এছাড়াও মহাসড়কে উন্নয়ন কাজের জন্য সেখানে ধুলাবালির সৃষ্টি হয়। ধুলাবালির মধ্যে চলাচলকারী মানুষের মাঝে শ্বাসকষ্টের মতো রোগ হতে পারে।