স্টাফ রিপোর্টার মুহাম্মাদঃআল আমীন সাইফ
ঈদের আগে বেতন-বোনাসের
দাবিতে ফতুল্লা বিসিকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন
করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট ফতুল্লা বিসিক
শিল্পাঞ্চল শাখা। সোমবার (১৮ এপ্রিল) বিকাল
সাড়ে ৩ টায় বিসিকের ২নং গেইটের সামনে এ
মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট বিসিক আঞ্চলিক শাখার
সভাপতি নূর
নূর হোসেন সর্দারের সভাপতিত্বে
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট
জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও রি-রোলিং স্টিল
মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সাধারণ সম্পাদক এস.
এম. কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলা সাধারণ
সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার
সভাপতি রুহুল আমিন সোহাগ, ফতুল্লা আঞ্চলি
শাখার সভাপতি আশেকে রাসূল শাওন, গাবতলী
পুলিশ লাইন আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক
খোরশেদ আলম, বিসিক আঞ্চলিক শাখার সদস্য
মোহাম্মদ আলী, হাদিউল ইসলাম।
বক্তারা বলেন, নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে
এবারের ঈদ নিয়ে শ্রমিকের মধ্যে হতাশা বিরাজ
করছে। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ ঈদ আসলেই কেবল
ভাবতে পারে পরিবার পরিজনের জন্য কিছু ভাল
খাবার ও কিছু জামা কাপড় কেনার। গার্মেন্টস
শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারিত হয়েছে চার বছর আগে।
এসময়ে নিত্য পণ্যের দাম ৭০% থেকে ১০০%
বেড়েছে। তাদের খাবার তালিকা ইতিমধ্যে সংক্ষিপ্ত
করে ফেলা হয়েছে। বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে
শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি সময়ের দাবি। যতদিন নূতন
মজুরি না হয় তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য উৎপাদন
অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে মহার্ঘ ভাতা দেয়া দরকার।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ঈদ আসলে বেতন বোনাস
নিয়ে কারখানাগুলোতে সংকট তৈরি হয়। অধিকাংশ
মালিকরা বোনাস না দিয়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা
বকশিশ দেয়। অনেকে তাও দেয় না। সরকারি
প্রতিষ্ঠানে বেসিকের সমান বোনাস দেয়া হয়। অথচ
যাদের উৎপাদনের কারণে দেশে বৈদেশিক মূদ্রা
আসে তাদের ঠিকমতো বোনাস দেয়া হয় না।
শ্রমিকদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো পূর্ণ বোনাস
দিতে হবে। এপ্রিল শেষ হয়ে মে মাসের শুরুতে ঈদ
হবে। ঈদের আগে শ্রমিকের এপ্রিলের বেতন পাওয়া
ন্যায্য। কিন্তু শ্রম প্রতিমন্ত্রী ১৫ দিনের বেতন দেয়ার
কথা বলেছে। শ্রমিকরা মালিকের স্বার্থরক্ষাকারী
প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছে। শ্রমিকদের বেতন বোনাস ঈদের শেষ মুহুর্তে দিলে শ্রমিক বাড়ি
যাওয়ার তাড়ায় ভালো করে কেনাকাটা করতে পারে
না। বিশ রোজার মধ্যে অর্থাৎ ২১ এপ্রিলের মধ্যে
শ্রমিকের পূর্ণ ঈদ বোনাস ও চলতি মাসের পূর্ন বেতন
পরিশোধ করতে হবে। বেতন বোনাস নিয়ে
মালিকদের গড়িমসির কারণে শিল্প এলাকায় যদি
শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হয় তার জন্য মালিক ও
প্রশাসন দায়ী থাকবে।
তারা বলেন, ২৪ এপ্রিল রানাপ্লাজা ধ্বসের ৯ বছর
পূর্ণ হচ্ছে। রানাপ্লাজা ধসে ১১৩২ জন শ্রমিক
মৃত্যুবরণ করে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল এঘটনার পরে
আর কোন শ্রমিক মালিকের অতি মুনাফার স্বার্থে
মৃত্যুবরণ করবে না। কিন্তু এ মর্মান্তিক ঘটনা মালিক
ও প্রশাসনের কোন শিক্ষা হয়নি। প্রয়োজনীয়
নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এখনও কারখানায়
অগ্নিকান্ডে বয়লার বিষ্ফোরণে শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে।
মৃত্যু হলে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ মাত্র ২ লাখ এবং
মালিক ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের শাস্তির কোন
যথাযথ আইন নেই। শ্রম আইন সংশোধন করে
আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী আজীবন
আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ এবং মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের
সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান এবং ২৪ এপ্রিলকে গার্মেন্টস
শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণা করতে হবে।
তারা আরও বলেন, ঢাকা সাভারের কলমা অঞ্চলে
সেঞ্চুরী ডিজাইন এন্ড ফ্যাশন লি.নামক কারখানা
কর্তৃপক্ষ ৬০ জন শ্রমিককে বকেয়া বেতন-ভাতা ও
অন্যান্য আইনানুগ পাওনা পরিশোধ না করে কর্মস্থল
থেকে বের করে দেয়। পাওনা অর্থ চাইলে এলাকার
জুট সন্ত্রাসীদের দিয়ে মারধোর করায়। শ্রমিক
নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং প্রাপ্য পাওনা পরিশোধের
দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ
নির্যাতিত শ্রমিকদের সাথে নিয়ে কারখানার গেটের
সামনে উপস্থিত হলে শিল্প পুলিশের এস আই
কুরবান শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে সাভার গার্মেন্টস শ্রমিক
ফ্রন্টের নেতা আনিসুর রহমান এবং আহমেদ
জীবনকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং
তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন। শিল্প পুলিশের
পক্ষপাতদুষ্টু একদর্শী আচরণ এবং শিল্প সম্পর্কে
অন্যতম পক্ষ শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে
অসৌজণ্যমূলক আচরণের জন্য দায়ী পুলিশ
সদস্যদের বিচার দাবি করেন।