ঢাকা ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
“মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন … লালমনিরহাটে বৃষ্টির জন‍্য বিশেষ নামাজ আদায় মিছিল ও শোডাউন করায় মতলব উত্তর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মানিক দর্জিকে শোকজ –গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা এলাকায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামি শ্রী রুপেন দাশ’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব । চন্দনাইশে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু ইষ্টার্ণ হাউজিংয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ায় সাংবাদিকদের উপর হামলা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে কোরআন শরিফ অবমাননা করায় মানববন্ধন রাঙ্গুনিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনার চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু

বিষবৃক্ষ তামাক চাষ ছেড়ে কুষ্টিয়ায় তরমুজ চাষে ঝুঁকছে চাষীরা

মোঃ রাছেল রানা জেলা প্রতিনিধি: বিষবৃক্ষ তামাক চাষ ছেড়ে কুষ্টিয়ায় তরমুজ চাষে ঝুকছে কৃষকেরা। কুষ্টিয়ার মিরপুরে তামাক চাষ ছেড়ে ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ চাষ করে সফলতার মুখ দেখছে কৃষকরা। ভালো ফলনের পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ায় ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবার উপজেলায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে এই জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে। উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের ফকিরাবাদ গ্রামের তরমুজ চাষি শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর ২৫ কাঠা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ করলাম। ভালো ফলন হওয়ায় আমরা খুশি। ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ মাচায় চাষ করতে হয়। চাষের দুই মাসের মধ্যেই ফল ধরতে শুরু করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুই মাস আগে গাছ লাগিয়েছি। এরইমধ্যে দু’বার ৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। এখনও আরও দেড় লাখ টাকার তরমুজ মাঠে রয়েছে। কোনও কীটনাশক ছাড়াই কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এ ফল উৎপাদন করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’ একই এলাকার তরমুজ চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবারই প্রথম এক বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। এরমধ্যে তরমুজ চাষের জন্য এক বিঘা জমিতে বীজ লাগে ৩৫০০ টাকার, সার ৩ হাজার টাকা, শ্রমিক ১২ হাজার টাকা, সেচ খরচ ১৫০০ টাকা, মাচা তৈরি বাবদ ১০ হাজার টাকা, মানচিন পেপার ৭ হাজার, নেট ২৪০০ টাকা। এছাড়া লিজ বাবদ ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, চাষের মাত্র ৭২ দিনের মধ্যে গাছে ফল ধরা শুরু করে। আগে এই জমিতে তামাক চাষ করতাম। তামাক চাষে অনেক লোকসান হয়েছে। তাই তামাক চাষ ছেড়ে স্থানীয় একটি এনজিওর সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিয়ে তরমুজ চাষ করছি। আগামীতে ৩ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষের ইচ্ছা আছে। সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিলে তরমুজ চাষ আরও বাড়াতে পারতাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘তরমুজ চাষ অনেক লাভজনক। এরইমধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। এখানকার তরমুজ কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে। আবার পাইকাররাও আসেন। ব্ল্যাক বেবি তরমুজ কালো রঙের হলেও এর ভেতরটা টকটকে লাল। এছাড়া প্রতিটি তরমুজ আড়াইথেকে সাড়ে ৫ কেজি পর্যন্ত হয়। খেতেও খুব মিষ্টি। এ ফল বৈশাখ থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত হয়।’ কেউপুর গ্রামের চাষি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আগে তামাক চাষ করতাম। তামাক চাষে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এর চেয়ে অনেক অল্প পরিশ্রমে তরমুজ চাষে লাভ বেশি। এ কারণে অন্যদের দেখে আমিও তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়েছি। তরমুজ চাষ করার জন্য এরইমধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আগামীতে তরমুজ চাষের ইচ্ছা রয়েছে।’ কুষ্টিয়া পৌর মার্কেটের তরমুজ বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম জানান, প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে বাজারে তরমুজের ব্যাপক চাহিদা। বিক্রিও বেশ ভালো। বর্তমানে ব্ল্যাক বেবি তরমুজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তরমুজ ক্রেতা সাহেদ আলম জানান, মৌসুমি ফল হিসেবে তরমুজ একটি সুস্বাদু ফল। এর পুষ্টিগুণ অনেক। তবে দামটা আরেকটু নাগালের মধ্যে হওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় বারুইপাড়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকরা যথাসময়ে বীজ পাওয়ায় তা সময়মতো রোপণ করতে পেরেছেন। প্রাকৃতিক কোনও সমস্যা না হওয়ায় এ বছর তরমুজের ফলনও ভালো।’ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘নতুন জাতের তরমুজ উৎপাদনে কৃষিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। তরমুজ চাষ সহজ ও লাভজনক হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। এবার উপজেলার ২০ হেক্টর জমিতে এই তরমুজের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে।’

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

“মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন”

বিষবৃক্ষ তামাক চাষ ছেড়ে কুষ্টিয়ায় তরমুজ চাষে ঝুঁকছে চাষীরা

আপডেট টাইম ০২:৩১:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০১৯

মোঃ রাছেল রানা জেলা প্রতিনিধি: বিষবৃক্ষ তামাক চাষ ছেড়ে কুষ্টিয়ায় তরমুজ চাষে ঝুকছে কৃষকেরা। কুষ্টিয়ার মিরপুরে তামাক চাষ ছেড়ে ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ চাষ করে সফলতার মুখ দেখছে কৃষকরা। ভালো ফলনের পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ায় ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবার উপজেলায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে এই জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে। উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের ফকিরাবাদ গ্রামের তরমুজ চাষি শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর ২৫ কাঠা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ করলাম। ভালো ফলন হওয়ায় আমরা খুশি। ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ মাচায় চাষ করতে হয়। চাষের দুই মাসের মধ্যেই ফল ধরতে শুরু করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুই মাস আগে গাছ লাগিয়েছি। এরইমধ্যে দু’বার ৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। এখনও আরও দেড় লাখ টাকার তরমুজ মাঠে রয়েছে। কোনও কীটনাশক ছাড়াই কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এ ফল উৎপাদন করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’ একই এলাকার তরমুজ চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবারই প্রথম এক বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। এরমধ্যে তরমুজ চাষের জন্য এক বিঘা জমিতে বীজ লাগে ৩৫০০ টাকার, সার ৩ হাজার টাকা, শ্রমিক ১২ হাজার টাকা, সেচ খরচ ১৫০০ টাকা, মাচা তৈরি বাবদ ১০ হাজার টাকা, মানচিন পেপার ৭ হাজার, নেট ২৪০০ টাকা। এছাড়া লিজ বাবদ ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, চাষের মাত্র ৭২ দিনের মধ্যে গাছে ফল ধরা শুরু করে। আগে এই জমিতে তামাক চাষ করতাম। তামাক চাষে অনেক লোকসান হয়েছে। তাই তামাক চাষ ছেড়ে স্থানীয় একটি এনজিওর সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিয়ে তরমুজ চাষ করছি। আগামীতে ৩ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষের ইচ্ছা আছে। সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিলে তরমুজ চাষ আরও বাড়াতে পারতাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘তরমুজ চাষ অনেক লাভজনক। এরইমধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। এখানকার তরমুজ কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে। আবার পাইকাররাও আসেন। ব্ল্যাক বেবি তরমুজ কালো রঙের হলেও এর ভেতরটা টকটকে লাল। এছাড়া প্রতিটি তরমুজ আড়াইথেকে সাড়ে ৫ কেজি পর্যন্ত হয়। খেতেও খুব মিষ্টি। এ ফল বৈশাখ থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত হয়।’ কেউপুর গ্রামের চাষি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আগে তামাক চাষ করতাম। তামাক চাষে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এর চেয়ে অনেক অল্প পরিশ্রমে তরমুজ চাষে লাভ বেশি। এ কারণে অন্যদের দেখে আমিও তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়েছি। তরমুজ চাষ করার জন্য এরইমধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আগামীতে তরমুজ চাষের ইচ্ছা রয়েছে।’ কুষ্টিয়া পৌর মার্কেটের তরমুজ বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম জানান, প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে বাজারে তরমুজের ব্যাপক চাহিদা। বিক্রিও বেশ ভালো। বর্তমানে ব্ল্যাক বেবি তরমুজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তরমুজ ক্রেতা সাহেদ আলম জানান, মৌসুমি ফল হিসেবে তরমুজ একটি সুস্বাদু ফল। এর পুষ্টিগুণ অনেক। তবে দামটা আরেকটু নাগালের মধ্যে হওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় বারুইপাড়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকরা যথাসময়ে বীজ পাওয়ায় তা সময়মতো রোপণ করতে পেরেছেন। প্রাকৃতিক কোনও সমস্যা না হওয়ায় এ বছর তরমুজের ফলনও ভালো।’ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘নতুন জাতের তরমুজ উৎপাদনে কৃষিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। তরমুজ চাষ সহজ ও লাভজনক হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। এবার উপজেলার ২০ হেক্টর জমিতে এই তরমুজের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে।’