ঢাকা ১০:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল। গজারিয়া বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে সিকদার পরিবারে আমিরুল ইসলাম এর সর্মথনে আলোচনা সভা ও ইফতার দোয়া মাহফিল চসিকের ৬ ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৮ তম সাধারণ সভায় মশা কমাতে কার্যক্রম বাড়াবে : মেয়র রেজাউল “বিড়ি শিল্পে ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে রংপুর শ্রমিকদের মানববন্ধন” ইন্দুরকানী প্রেসক্লাবে ইফতার মাহফিল বরিশাল চকবাজার এবায়দুল্লাহ মসজিদে অগ্নিকান্ড। টাঙ্গাইলে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার পাঠক ফোরাম গঠিত চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার চট্টগ্রামে জালনোটসহ প্রতারকচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ রমজান মাসের পবিত্রতা লঙ্ঘন করছে নারায়ণগঞ্জ চিশতিয়া বাউল সমিত

বসন্তের চিঠি

প্রিয় বসন্ত
ঘড়ির কাঁটার মতো চলতে চলতে সময়ের গণ্ডিতে যখন থেমে গেলাম তখন তুমি ডাকলে তোমার কুহু কুহু রবে।কী করে বরণ করি তোমায়! শুণ্যের বৃত্তে আমি এখন আবর্তিত হই।ভেসে বেড়ায় কালো মেঘের সারথী হয়ে।।তুমি হয়তো জানো না,পঞ্চাশ বছর ধরে আমি অপেক্ষায় থেকেছি তোমার জন্য।।অথচ এত বছর পর যখন তুমি এলে তখন আমার ক্ষীণদৃষ্টি। এলে আমার কপালের ভাঁজে। আমার খসখসে ঝুলন্ত ত্বকের ভাঁজে।এলে আমার ভগ্ন হৃদয়ে।কোথায় রাখবো তোমায় বল? তুমি হয়তো জানো না, আমি ক্ষণে ক্ষণে ডুবে যায় ঢেউহীন নদীর কান্নার নোনাজলে। যেখানে মাছেরাও আসেনা প্রজননে বেলায়- অবেলায়।

প্রিয় বসন্ত,জীবনের ক্যানভাসে সাতরঙে সাজিয়েছিলাম এক সময় তোমাকে।সায়রের কল্লোলে ভাসতাম তোমায় নিয়ে।শরতের তুলোট মেঘে নাও ভাসাতাম। গোধুলি আবিরে রাঙিয়ে যেতো মন। কাশঁফুলের পরশে পরশে আঁকতাম তোমায়।দু’চোখে মাখতাম প্রেমের অঞ্জন।।প্রেমের আগুনে তুষের মতো পুড়তাম নিজে।সে কী ভাললাগা! কী শিহরণ!আজ যখন এত বছর পর এলে আমার দ্বারে তখন তোমায় আর কী শোনায় বলো।তবুও তুমি নাছোড়। শুনতে চাও আমার কথা।হ্যাঁ, আজ আমি তোমাকে শোনাবো।পারবে তো তুমি সইতে?

প্রিয় বসন্ত, ঘাসের মতো পায়ের আঘাত আমাকে সহ্য করতে হয় প্রতিনিয়ত। বুকের উপর পথ করে হেঁটে চলে পথিকেরা।আমার ইচ্ছেগুলো ঝুলে থাকে ইলেকট্রিক তারে। একটু একটু করে শক দিয়ে সংকুচিত করে আমার রক্ত প্রবাহ।হাত পোড়ে,পা পোড়ে।সেই পোড়ানো তাপে আমার হৃদয় রাখি। হৃদয় পোড়া পারফিউম মাখি প্রতিদিন।তুমি কী শুনেছো? কচি সবুজ পাতার আড়ালে ঝরা পাতার কান্না?দেখেছো কী? গ্লানির শেকড়ের গভীরতা? পৌঢ়ত্বের বিগলিত আঁখিতে শ্রাবণের বারিধারা?
শিশিরে ঝরে যাওয়া শিউলী’র কান্না? তুমি কী শুনতে পাও? ঝরা পাতার মড় মড় শব্দে ভাঙনের সুর?
প্রিয় বসন্ত, ভৌতিক সুরে হুতুম পেঁচা কাঁদে গ্রেনেড হামলায়।বৈষয়িক চাহিদার নগ্ন হাত আমার মনুষ্যত্বকে হরণ করেছে।শহরের নিয়ন আলাোয় তরুণরা পান করছে মদের সাম্পান।চোখে-মুখে তেজ নেই।রক্তে বারুদ ফোটে না।যোনি ছেড়া রক্তে পরিতৃপ্ত দু্’পা ওয়ালা পশুর দল।ধর্মের লেবাসে ঢেকে যায় বিজ্ঞানের আলো।আমার ঈশ্বর বকধার্মিকদের পদতলে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হয়।ঈশ্বরও পালিয়ে বেড়ায় ইউক্রেনের প্রেগনেন্ট নারী ও শিশুদের মতো।কাচের মতো ভাঙছে পরিবার ধর্ম,বর্ণ,গোত্র,সমাজ রাষ্ট্র। ভাঙছে বিশ্ব নিখিল। সেখানে তুমি আর আমি কী করতে পারি বলো!

প্রিয় বসন্ত, কিছু কিছু দুঃখ আছে যা সাগরের মতো প্রাণবন্ত, দেয়ালে পেরেক বিদ্ধের মতো লেগে থাকে জীবনের মসৃন দেওয়ালে।যেটা দেখলে আৎকে উঠি মুহুমর্হু। বিশ্ব নিখিল পান করছে নিকোটিনের বিষ।জলোচ্ছ্বাসের মতো ফুঁসে উঠছে মৃত্যুর নগর।রাশিয়া,ইউক্রেনের নির্লজ্জ্ব আগ্রাসনে বইছে মৃত্যুর ঢেউ।সভ্যতার আড়ালে ভিতর-বাহির পুড়ছে চিতার আগুনে।।উপুড় হয়ে পড়ে আছে লক্ষ লক্ষ যুদ্ধাহত সমর সৈনিক।।দেখো, সাগরের জলরাশি খণ্ড খণ্ড তামায় পরিণত হয়েছে পারমানবিক বিস্ফোরণে।

প্রিয় বসন্ত, তোমার সমীরেও এখন লাশ পোড়া গন্ধ। সারা বিশ্বের আকাশ বারুদের কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে থাকে। লক্ষ লক্ষ মানুষের আর্তনাদ,আহাজারি বেদনার সুর হয়ে বাজে বাঁশের বাঁশিতে।নীড়হারা বিহঙ্গী ঘুরতে ঘুরতে আছড়ে পড়ে পোড়া মৃত্তিকায়।
তবুও আমি বেঁচে আছি। তোমার অপেক্ষায়।তুমি কী জানো? সংসারগুলোতে এখন প্রতিনিয়ত চলছে ভাঙনের হলিখেলা।ভাঙছে পরিবার। হৃদয়ের টান আর নেই।প্রেমে নেই চুম্বক শক্তি। আছে বিস্ফোরণ। নেগেটিভ পজেটিভের মহা বিস্ফোরণ। প্রেমে এখন হেমলকের বিষ।এখন কারোর অপেক্ষায় ভেজে না শাড়ির আঁচল। এিশ বছরের হাড় ভাঙা খাটুনির কঙ্কালসার স্ত্রী কে ছুড়ে ফেলা হয় ব্যাকডেটেট বাক্সে। প্রেমিক এখন খুঁজে বেড়ায় অভিনব প্রেমিকার মিলনের ঘার্মাক্ত শরীরের গন্ধ। ক্ষুধার্ত নিশিগন্ধ্যা ছুটে বেড়ায় রাতের আঁধারে। ধর্ষিত শিশু- নারীর যোনির রক্তে ভিজে আমার লাল- সবুজের পতাকা।তাই তো বসুমতী এখন প্রতিদিন জন্ম দেয় হাজারও অবাঞ্ছিত সন্তান।

প্রিয় বসন্ত, ভেবেছিলাম বিবেক,মনুষ্যত্ব,মূল্যবোধের জায়গা মানুষ গঠনের কারখানার এক কোণে হয়ত তোমাকে একটু ঠাঁই করে দিতে পারবো।তাই চৈত্রের খরায় উতপ্ত পথ মাড়িয়ে ঘুরেছিলাম দ্বারে দ্বারে।পায়ের তলার বড় বড় ফোসকাগুলোর যন্রণা সহেছিলাম নিরবে। কিন্তু দেখলাম, কারিগরদের মেরুদণ্ড ভেঙে মুখ খুবড়ে পড়ে আছে সরীসৃপদের মতো। মস্তিষ্কের নিউরন গুলো নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই।ক্যালসিয়ামের অভাবে দু’একজনের ক্ষয়ে যাওয়া মেরুদণ্ড নিয়ে লাঠি ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে। তুমি শুনে বিস্মিত হবে, ভূবনগুলোও সেদিন আমাকে দেখে বিদ্রুপের হাসি হেসেছিলো।

তুমি জানো কী?মাঝে মাঝে আমার কী মনে হয়?
মনে হয়, এই কলুষিত ধরিত্রী ভেঙে -চুরে গুড়িয়ে দিয়ে নতুন করে গড়ি। আমার আত্মার অন্তর্ভেদী আর্তনাদে প্রকপ্লিত হয় আকাশ- বাতাস।আবার থমকে যায়।নাম না জানা প্রাণীগুলো পদতলে পিষ্ট হবার ভয়ে।জানিনা, কী করবো!তাড়া খাওয়া হরিণের মতো পালিয়ে বেড়ায় যুদ্ধের জলন্ত উনুনের মুখে।আমি জানি, তুমি পড়তে পড়তে অধৈর্য্য হয়ে পড়বে।তাই তোমার ধৈর্যের বিচ্যুতি ঘটাতে আর চাই না। তবুও বলি বসন্ত, আজও ভালবাসি তোমায়।ভালবাসব তোমায় আজীবন।।জীবন প্রদীপটা যদি ধুপ করে নিভে না যায়।তোমায় নিয়ে আবার সাজাবো প্রেমের বাশঁরি।আমি স্বপ্ন দেখি একটু আশায়,একটু ভালবাসায়। আবার ভরাতে চাই ভালবাসার ফুলেল বাগান যেখানে তোমার আমার ভালবাসার কাননে পাখি কিচিরমিচির করবে।সবুজে সবুজে সাজবে নতুন করে একটি সুন্দর ধরিত্রী।ফসলের হাসিতে হাসবে বিস্তৃত সবুজ মাঠ।কৃষক হাসবে নতুন সূর্যোদয়ে।তুমি অপেক্ষা করো।

প্রিয় বসন্ত, শুধু একটু অনুরোধ করবো তোমায়।আমি যখন থাকবো না, তুমি আমার অনাগত প্রিয় সন্তানের আগামীর জন্য একখণ্ড উর্বর ভূমি রেখো। রেখো নির্মল বাতাস।মরুভূমির তলে লুকিয়ে রেখো বিশুদ্ধ অমিয় বারি।রেখো হেমন্তের একমুঠো সোনারোদ।যেখানে ভালবাসার সাম্পানে ফুটবে প্রেমের অঙ্কুর।যেখানে থাকবে না কোন যুদ্ধ,স্বার্থের আর আধিপত্যের কোনো দ্বন্দ্ব, সংঘাত।যেখানে থাকবে না মৃত্যুর হলিখেলা।যেখানে রচিত হবে তোমার আমার মিলনে সাম্য,মৈত্রী,সম্প্রীতি ভালোবাসার এক স্বর্গীয় উদ্যান।

শাহানাজ পারভীন শিউলী
সহকারী শিক্ষিকা
আড়পড়া,কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল।

বসন্তের চিঠি

আপডেট টাইম ০৭:৫৫:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২

প্রিয় বসন্ত
ঘড়ির কাঁটার মতো চলতে চলতে সময়ের গণ্ডিতে যখন থেমে গেলাম তখন তুমি ডাকলে তোমার কুহু কুহু রবে।কী করে বরণ করি তোমায়! শুণ্যের বৃত্তে আমি এখন আবর্তিত হই।ভেসে বেড়ায় কালো মেঘের সারথী হয়ে।।তুমি হয়তো জানো না,পঞ্চাশ বছর ধরে আমি অপেক্ষায় থেকেছি তোমার জন্য।।অথচ এত বছর পর যখন তুমি এলে তখন আমার ক্ষীণদৃষ্টি। এলে আমার কপালের ভাঁজে। আমার খসখসে ঝুলন্ত ত্বকের ভাঁজে।এলে আমার ভগ্ন হৃদয়ে।কোথায় রাখবো তোমায় বল? তুমি হয়তো জানো না, আমি ক্ষণে ক্ষণে ডুবে যায় ঢেউহীন নদীর কান্নার নোনাজলে। যেখানে মাছেরাও আসেনা প্রজননে বেলায়- অবেলায়।

প্রিয় বসন্ত,জীবনের ক্যানভাসে সাতরঙে সাজিয়েছিলাম এক সময় তোমাকে।সায়রের কল্লোলে ভাসতাম তোমায় নিয়ে।শরতের তুলোট মেঘে নাও ভাসাতাম। গোধুলি আবিরে রাঙিয়ে যেতো মন। কাশঁফুলের পরশে পরশে আঁকতাম তোমায়।দু’চোখে মাখতাম প্রেমের অঞ্জন।।প্রেমের আগুনে তুষের মতো পুড়তাম নিজে।সে কী ভাললাগা! কী শিহরণ!আজ যখন এত বছর পর এলে আমার দ্বারে তখন তোমায় আর কী শোনায় বলো।তবুও তুমি নাছোড়। শুনতে চাও আমার কথা।হ্যাঁ, আজ আমি তোমাকে শোনাবো।পারবে তো তুমি সইতে?

প্রিয় বসন্ত, ঘাসের মতো পায়ের আঘাত আমাকে সহ্য করতে হয় প্রতিনিয়ত। বুকের উপর পথ করে হেঁটে চলে পথিকেরা।আমার ইচ্ছেগুলো ঝুলে থাকে ইলেকট্রিক তারে। একটু একটু করে শক দিয়ে সংকুচিত করে আমার রক্ত প্রবাহ।হাত পোড়ে,পা পোড়ে।সেই পোড়ানো তাপে আমার হৃদয় রাখি। হৃদয় পোড়া পারফিউম মাখি প্রতিদিন।তুমি কী শুনেছো? কচি সবুজ পাতার আড়ালে ঝরা পাতার কান্না?দেখেছো কী? গ্লানির শেকড়ের গভীরতা? পৌঢ়ত্বের বিগলিত আঁখিতে শ্রাবণের বারিধারা?
শিশিরে ঝরে যাওয়া শিউলী’র কান্না? তুমি কী শুনতে পাও? ঝরা পাতার মড় মড় শব্দে ভাঙনের সুর?
প্রিয় বসন্ত, ভৌতিক সুরে হুতুম পেঁচা কাঁদে গ্রেনেড হামলায়।বৈষয়িক চাহিদার নগ্ন হাত আমার মনুষ্যত্বকে হরণ করেছে।শহরের নিয়ন আলাোয় তরুণরা পান করছে মদের সাম্পান।চোখে-মুখে তেজ নেই।রক্তে বারুদ ফোটে না।যোনি ছেড়া রক্তে পরিতৃপ্ত দু্’পা ওয়ালা পশুর দল।ধর্মের লেবাসে ঢেকে যায় বিজ্ঞানের আলো।আমার ঈশ্বর বকধার্মিকদের পদতলে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হয়।ঈশ্বরও পালিয়ে বেড়ায় ইউক্রেনের প্রেগনেন্ট নারী ও শিশুদের মতো।কাচের মতো ভাঙছে পরিবার ধর্ম,বর্ণ,গোত্র,সমাজ রাষ্ট্র। ভাঙছে বিশ্ব নিখিল। সেখানে তুমি আর আমি কী করতে পারি বলো!

প্রিয় বসন্ত, কিছু কিছু দুঃখ আছে যা সাগরের মতো প্রাণবন্ত, দেয়ালে পেরেক বিদ্ধের মতো লেগে থাকে জীবনের মসৃন দেওয়ালে।যেটা দেখলে আৎকে উঠি মুহুমর্হু। বিশ্ব নিখিল পান করছে নিকোটিনের বিষ।জলোচ্ছ্বাসের মতো ফুঁসে উঠছে মৃত্যুর নগর।রাশিয়া,ইউক্রেনের নির্লজ্জ্ব আগ্রাসনে বইছে মৃত্যুর ঢেউ।সভ্যতার আড়ালে ভিতর-বাহির পুড়ছে চিতার আগুনে।।উপুড় হয়ে পড়ে আছে লক্ষ লক্ষ যুদ্ধাহত সমর সৈনিক।।দেখো, সাগরের জলরাশি খণ্ড খণ্ড তামায় পরিণত হয়েছে পারমানবিক বিস্ফোরণে।

প্রিয় বসন্ত, তোমার সমীরেও এখন লাশ পোড়া গন্ধ। সারা বিশ্বের আকাশ বারুদের কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে থাকে। লক্ষ লক্ষ মানুষের আর্তনাদ,আহাজারি বেদনার সুর হয়ে বাজে বাঁশের বাঁশিতে।নীড়হারা বিহঙ্গী ঘুরতে ঘুরতে আছড়ে পড়ে পোড়া মৃত্তিকায়।
তবুও আমি বেঁচে আছি। তোমার অপেক্ষায়।তুমি কী জানো? সংসারগুলোতে এখন প্রতিনিয়ত চলছে ভাঙনের হলিখেলা।ভাঙছে পরিবার। হৃদয়ের টান আর নেই।প্রেমে নেই চুম্বক শক্তি। আছে বিস্ফোরণ। নেগেটিভ পজেটিভের মহা বিস্ফোরণ। প্রেমে এখন হেমলকের বিষ।এখন কারোর অপেক্ষায় ভেজে না শাড়ির আঁচল। এিশ বছরের হাড় ভাঙা খাটুনির কঙ্কালসার স্ত্রী কে ছুড়ে ফেলা হয় ব্যাকডেটেট বাক্সে। প্রেমিক এখন খুঁজে বেড়ায় অভিনব প্রেমিকার মিলনের ঘার্মাক্ত শরীরের গন্ধ। ক্ষুধার্ত নিশিগন্ধ্যা ছুটে বেড়ায় রাতের আঁধারে। ধর্ষিত শিশু- নারীর যোনির রক্তে ভিজে আমার লাল- সবুজের পতাকা।তাই তো বসুমতী এখন প্রতিদিন জন্ম দেয় হাজারও অবাঞ্ছিত সন্তান।

প্রিয় বসন্ত, ভেবেছিলাম বিবেক,মনুষ্যত্ব,মূল্যবোধের জায়গা মানুষ গঠনের কারখানার এক কোণে হয়ত তোমাকে একটু ঠাঁই করে দিতে পারবো।তাই চৈত্রের খরায় উতপ্ত পথ মাড়িয়ে ঘুরেছিলাম দ্বারে দ্বারে।পায়ের তলার বড় বড় ফোসকাগুলোর যন্রণা সহেছিলাম নিরবে। কিন্তু দেখলাম, কারিগরদের মেরুদণ্ড ভেঙে মুখ খুবড়ে পড়ে আছে সরীসৃপদের মতো। মস্তিষ্কের নিউরন গুলো নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই।ক্যালসিয়ামের অভাবে দু’একজনের ক্ষয়ে যাওয়া মেরুদণ্ড নিয়ে লাঠি ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে। তুমি শুনে বিস্মিত হবে, ভূবনগুলোও সেদিন আমাকে দেখে বিদ্রুপের হাসি হেসেছিলো।

তুমি জানো কী?মাঝে মাঝে আমার কী মনে হয়?
মনে হয়, এই কলুষিত ধরিত্রী ভেঙে -চুরে গুড়িয়ে দিয়ে নতুন করে গড়ি। আমার আত্মার অন্তর্ভেদী আর্তনাদে প্রকপ্লিত হয় আকাশ- বাতাস।আবার থমকে যায়।নাম না জানা প্রাণীগুলো পদতলে পিষ্ট হবার ভয়ে।জানিনা, কী করবো!তাড়া খাওয়া হরিণের মতো পালিয়ে বেড়ায় যুদ্ধের জলন্ত উনুনের মুখে।আমি জানি, তুমি পড়তে পড়তে অধৈর্য্য হয়ে পড়বে।তাই তোমার ধৈর্যের বিচ্যুতি ঘটাতে আর চাই না। তবুও বলি বসন্ত, আজও ভালবাসি তোমায়।ভালবাসব তোমায় আজীবন।।জীবন প্রদীপটা যদি ধুপ করে নিভে না যায়।তোমায় নিয়ে আবার সাজাবো প্রেমের বাশঁরি।আমি স্বপ্ন দেখি একটু আশায়,একটু ভালবাসায়। আবার ভরাতে চাই ভালবাসার ফুলেল বাগান যেখানে তোমার আমার ভালবাসার কাননে পাখি কিচিরমিচির করবে।সবুজে সবুজে সাজবে নতুন করে একটি সুন্দর ধরিত্রী।ফসলের হাসিতে হাসবে বিস্তৃত সবুজ মাঠ।কৃষক হাসবে নতুন সূর্যোদয়ে।তুমি অপেক্ষা করো।

প্রিয় বসন্ত, শুধু একটু অনুরোধ করবো তোমায়।আমি যখন থাকবো না, তুমি আমার অনাগত প্রিয় সন্তানের আগামীর জন্য একখণ্ড উর্বর ভূমি রেখো। রেখো নির্মল বাতাস।মরুভূমির তলে লুকিয়ে রেখো বিশুদ্ধ অমিয় বারি।রেখো হেমন্তের একমুঠো সোনারোদ।যেখানে ভালবাসার সাম্পানে ফুটবে প্রেমের অঙ্কুর।যেখানে থাকবে না কোন যুদ্ধ,স্বার্থের আর আধিপত্যের কোনো দ্বন্দ্ব, সংঘাত।যেখানে থাকবে না মৃত্যুর হলিখেলা।যেখানে রচিত হবে তোমার আমার মিলনে সাম্য,মৈত্রী,সম্প্রীতি ভালোবাসার এক স্বর্গীয় উদ্যান।

শাহানাজ পারভীন শিউলী
সহকারী শিক্ষিকা
আড়পড়া,কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ