ঢাকা ০৮:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ

প্রচারে নামলো করোনা ভাইরাস নিজে

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা

রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোটবড় বিভিন্ন আকৃতির অনেকগুলো করোনা ভাইরাস৷ ঘুরেঘুরে তারা মানুষকে মাস্ক পরিধান, স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ করোনার প্রযোজ্য সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছে। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে চট্টগ্রামে এমন অভিনব উপায়েই করোনা সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়েছেন চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।

বিশ্বব্যাপী প্রবল গতিতে আছড়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। বৈশ্বিক ও দেশীয়, দুই সূচকেই প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে দেশব্যাপী এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হলেও সাধারণ জনগণের তরফে এই লকডাউন মানার ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এই পরিস্থিতির মধ্যেই চট্টগ্রামের এএসপির এই নজিরবিহীন উদ্যোগ।

আজ (৬ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলাধীন পাহাড়তলী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন পুলিশ সদস্য ঢাউস আকারের দুটি এবং ছোট আকারের অনেকগুলো করোনা ভাইরাসের পুত্তলিকা নিয়ে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে হাঁটছেন। এ সময় তারা বিভিন্ন কাজে বাইরে আসা মানুষকে করোনার বিপদ সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি মাস্ক উপহার দিচ্ছিলেন। পুলিশ ফোর্সকে করোনার রেপ্লিকা নিয়ে হাঁটতে দেখে অনেক দোকানিকে নিজে থেকেই দোকান বন্ধ করে চলে যেতে দেখা যায়। পথচারীরা থুতনির নিচে ঝুলিয়ে রাখা মাস্ক আনমনেই তুলে দিচ্ছিলেন নাকের উপরভাগ পর্যন্ত।

পুলিশের সাবধানবাণীর পাশাপাশি করোনা ভাইরাস নিজেও ডাবিংকৃত গুরুগম্ভীর কন্ঠে ছন্দের তালে পরামর্শ দিয়ে চলছিলেন জনসাধারণকে।
“আমি করোনা ভাইরাস বলছি….
আমার থেকে নিরাপদ থাকতে যদি চাও, সামাজিক দূরত্ব মানো মুখে মাস্ক লাগাও।
সাবান দিয়ে হাত দুইটা ধুইলে ভাল করে, তোমাদের কাছ থেকে আমি যাব দূরে সরে।
স্বাস্থ্যবিধি মানো যদি আর কয়েকটা মাস, লোকালয় ছেড়ে আমি যাব বনবাস।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই স্লোগান রচনা করেছেন সার্কেল এএসপি নিজেই। আর ডাবিংয়ে করোনা ভাইরাসের কণ্ঠ দিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আসাদুল আলম। একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এই ভাবনা মূলত করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা প্রসার করার জন্য। যদিও, সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণার পরেও মানুষ বাইরে যাচ্ছেন, সেখানে দাঁড়িয়ে একটু ভয় দেখানোর কৌশল বলেও মনে করছেন কেউ কেউ!

অভিনব এই জনসচেতনতামূলক উদ্যোগে খুশি স্থানীয়রাও। পথচারী আব্দুল জব্বার বলছিলেন, কখনো নিজ চোখে করোনা ভাইরাসকে দেখতে পারব, আবার তারা নিজেদের কণ্ঠে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সাবধান করবে, তা কোনদিন ভাবি নাই। এরকম সুন্দর উপায়ে মানুষকে বুঝানোর জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ।

এ প্রসঙ্গে এই উদ্যোগের পরিকল্পনাকারী এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, শুধু মুখে বলে সচেতন করার বদলে করোনা ভাইরাসের রেপ্লিকা দেখিয়ে, করোনা ভাইরাসের কণ্ঠে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি আমরা। বিশেষ করে কম বয়সীদের মনে এটা বেশি করে দাগ কাটবে বলে আমি মনে করি। আমি আশা করছি এর ফলে সকলের আচরণে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানের বিভিন্ন জায়গায় দিনব্যাপী চলেছে পুলিশের এই কর্মযজ্ঞ। যা দেখে তাজ্জব বনে গেছেন উত্তর চট্টগ্রামবাসী! ‘লকডাউনে’র আবহে পুলিশের এই কৌশল নজর কেড়েছে দেশবাসীর।নেটিজেনদের প্রশংসা কুড়াচ্ছে চট্টগ্রাম পুলিশ।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত

প্রচারে নামলো করোনা ভাইরাস নিজে

আপডেট টাইম ০৮:১৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ এপ্রিল ২০২১

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা

রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোটবড় বিভিন্ন আকৃতির অনেকগুলো করোনা ভাইরাস৷ ঘুরেঘুরে তারা মানুষকে মাস্ক পরিধান, স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ করোনার প্রযোজ্য সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছে। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে চট্টগ্রামে এমন অভিনব উপায়েই করোনা সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়েছেন চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।

বিশ্বব্যাপী প্রবল গতিতে আছড়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। বৈশ্বিক ও দেশীয়, দুই সূচকেই প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে দেশব্যাপী এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হলেও সাধারণ জনগণের তরফে এই লকডাউন মানার ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এই পরিস্থিতির মধ্যেই চট্টগ্রামের এএসপির এই নজিরবিহীন উদ্যোগ।

আজ (৬ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলাধীন পাহাড়তলী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন পুলিশ সদস্য ঢাউস আকারের দুটি এবং ছোট আকারের অনেকগুলো করোনা ভাইরাসের পুত্তলিকা নিয়ে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে হাঁটছেন। এ সময় তারা বিভিন্ন কাজে বাইরে আসা মানুষকে করোনার বিপদ সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি মাস্ক উপহার দিচ্ছিলেন। পুলিশ ফোর্সকে করোনার রেপ্লিকা নিয়ে হাঁটতে দেখে অনেক দোকানিকে নিজে থেকেই দোকান বন্ধ করে চলে যেতে দেখা যায়। পথচারীরা থুতনির নিচে ঝুলিয়ে রাখা মাস্ক আনমনেই তুলে দিচ্ছিলেন নাকের উপরভাগ পর্যন্ত।

পুলিশের সাবধানবাণীর পাশাপাশি করোনা ভাইরাস নিজেও ডাবিংকৃত গুরুগম্ভীর কন্ঠে ছন্দের তালে পরামর্শ দিয়ে চলছিলেন জনসাধারণকে।
“আমি করোনা ভাইরাস বলছি….
আমার থেকে নিরাপদ থাকতে যদি চাও, সামাজিক দূরত্ব মানো মুখে মাস্ক লাগাও।
সাবান দিয়ে হাত দুইটা ধুইলে ভাল করে, তোমাদের কাছ থেকে আমি যাব দূরে সরে।
স্বাস্থ্যবিধি মানো যদি আর কয়েকটা মাস, লোকালয় ছেড়ে আমি যাব বনবাস।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই স্লোগান রচনা করেছেন সার্কেল এএসপি নিজেই। আর ডাবিংয়ে করোনা ভাইরাসের কণ্ঠ দিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আসাদুল আলম। একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এই ভাবনা মূলত করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা প্রসার করার জন্য। যদিও, সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণার পরেও মানুষ বাইরে যাচ্ছেন, সেখানে দাঁড়িয়ে একটু ভয় দেখানোর কৌশল বলেও মনে করছেন কেউ কেউ!

অভিনব এই জনসচেতনতামূলক উদ্যোগে খুশি স্থানীয়রাও। পথচারী আব্দুল জব্বার বলছিলেন, কখনো নিজ চোখে করোনা ভাইরাসকে দেখতে পারব, আবার তারা নিজেদের কণ্ঠে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সাবধান করবে, তা কোনদিন ভাবি নাই। এরকম সুন্দর উপায়ে মানুষকে বুঝানোর জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ।

এ প্রসঙ্গে এই উদ্যোগের পরিকল্পনাকারী এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, শুধু মুখে বলে সচেতন করার বদলে করোনা ভাইরাসের রেপ্লিকা দেখিয়ে, করোনা ভাইরাসের কণ্ঠে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি আমরা। বিশেষ করে কম বয়সীদের মনে এটা বেশি করে দাগ কাটবে বলে আমি মনে করি। আমি আশা করছি এর ফলে সকলের আচরণে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানের বিভিন্ন জায়গায় দিনব্যাপী চলেছে পুলিশের এই কর্মযজ্ঞ। যা দেখে তাজ্জব বনে গেছেন উত্তর চট্টগ্রামবাসী! ‘লকডাউনে’র আবহে পুলিশের এই কৌশল নজর কেড়েছে দেশবাসীর।নেটিজেনদের প্রশংসা কুড়াচ্ছে চট্টগ্রাম পুলিশ।