ঢাকা ০৬:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল। গজারিয়া বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে সিকদার পরিবারে আমিরুল ইসলাম এর সর্মথনে আলোচনা সভা ও ইফতার দোয়া মাহফিল চসিকের ৬ ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৮ তম সাধারণ সভায় মশা কমাতে কার্যক্রম বাড়াবে : মেয়র রেজাউল “বিড়ি শিল্পে ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে রংপুর শ্রমিকদের মানববন্ধন” ইন্দুরকানী প্রেসক্লাবে ইফতার মাহফিল বরিশাল চকবাজার এবায়দুল্লাহ মসজিদে অগ্নিকান্ড। টাঙ্গাইলে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার পাঠক ফোরাম গঠিত চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার চট্টগ্রামে জালনোটসহ প্রতারকচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ রমজান মাসের পবিত্রতা লঙ্ঘন করছে নারায়ণগঞ্জ চিশতিয়া বাউল সমিত

পোশাকে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোতে টাকার অঙ্কে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে। তবে কমেছে শেয়ার ধারণের পরিমাণ। বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকা বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় শেয়ার ধারণের পরিমাণ কমলেও টাকার অঙ্কে বিনিয়োগ বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তৈরি করা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পোশাক খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৫০টি। চলতি বছরের জুলাই মাস শেষে এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র ১৩টিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে। আগের মাস জুনেও ১৩টি কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল। তবে ২০১৭ সালের জুনে পোশাক খাতের ১৫টি কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল। এর মধ্যে আর্গন ডেনিম ও নূরানী ডাইং থেকে বিদেশিরা সম্পূর্ণ বিনিয়োগ উঠিয়ে নিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ পোশাক খাতের কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এই খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি দুর্বল মৌলভিত্তির এবং তাদের পারফরমেন্স খারাপ। আবার কোম্পানিগুলোর মালিকানায় যারা রয়েছেন তাদের নৈতিকতা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। যে কারণে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কম।

চলতি বছরের জুলাই শেষে বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকা পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অ্যাপেক্স স্পিনিং, ঢাকা ডা্ইং, ইনভয় টেক্সটাইল, এইচআর টেক্সটাইল, হা-ওয়েল টেক্সটাইল, মালেক স্পিনিং, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং, নূরানী ডাইং, প্যাসেফিক ডেনিম, প্রাইম টেক্সটাইল, কুইন সাউথ টেক্সটাইল, শাশা ডেনিম, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও স্কয়ার টেক্সটাইল।

এই ১৩ কোম্পানির সাত কোটি ৯৭ লাখ ৫৩ হাজার শেয়ার রয়েছে বিদেশিদের কাছে। বর্তমান বাজারদরে শেয়ারগুলোতে বিদেশিদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৩২১ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। জুন মাসে এই কোম্পানিগুলোর আট কোটি ১৪ লাখ ৯৬ হাজার শেয়ার ছিল বিদেশিদের কাছে। জুন মাসের শেষ কার্যদিবসের বাজারদর অনুযায়ী, মাসটিতে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোতে বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল ৩১৩ কোটি ৫৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

এই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোতে টাকার অঙ্কে বিদেশিদের বিনিয়োগ বেড়েছে সাত কোটি ৬২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বিপরীতে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোর ১৭ লাখ ৪৩ হাজার শেয়ার বিদেশিরা জুলাই মাসে বিক্রি করে দেন।

বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকা ১৩টি কোম্পানির মধ্যে জুলাই মাসে দুটি কোম্পানির কিছু শেয়ার নতুন করে কিনেছে বিদেশিরা। বিপরীতে সাতটি কোম্পানির শেয়ারের কিছু অংশ বিক্রি করে দিয়েছে। বাকি চার কোম্পানির শেয়ার জুন মাসে যা ছিল তাই রয়েছে।

বিদেশিরা যে দুটি কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন তার মধ্যে রয়েছে অ্যাপেক্স স্পিানিং ও এইচআর টেক্সটাইল। এর মধ্যে জুলাই শেষে অ্যাপেক্স স্পিানিংয়ের এক লাখ ৪১ হাজার শেয়ার রয়েছে বিদেশিদের কাছে, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের এক দশমিক ৬৮ শতাংশ। জুন মাসে এ কোম্পানিটির ৭৯ হাজার বা দশমিক ৯৪ শতাংশ শেয়ার ছিল বিদেশিদের কাছে।

বর্তমান বাজারদরে অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের শেয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে এক কোটি ৮৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। যা জুন মাসে ছিল এক কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটিতে বিদেশিদের ৪৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বিনিয়োগ বেড়েছে। শেয়ার ধারণ বেড়েছে ৬২ হাজার।

এইচআর টেক্সটাইলে বিদেশিদের বিনিয়োগ বেড়েছে এক কোটি ৫০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। জুলাই শেষে কোম্পানিটির পাঁচ লাখ ১৬ হাজার শেয়ার রয়েছে বিদেশিদের কাছে, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের দুই দশমিক শূন্য চার শতাংশ। বর্তমান বাজারদরে এ শেয়ারগুলোতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে দুই কোটি ৫১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আগের মাস জুনে কোম্পানিটির দুই লাখ ৪৮ হাজার শেয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল এক কোটি সাত লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

অপরদিকে শেয়ার ধারণ কমলেও টাকার অঙ্কে বিনিয়োগ বেড়েছে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, স্কয়ার টেক্সটাইল ও মালেক স্পিনিংয়ে। এর মধ্যে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজে ২৮ কোটি ৫০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, স্কয়ার টেক্সটাইলে এক কোটি তিন লাখ ৭৯ হাজার টাকা এবং মালিক স্পিনিংয়ে ৭৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা বিনিয়োগ বেড়েছে বিদেশিদের।

এদিকে শেয়ার সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকলেও জুলাই মাসে টাকার অঙ্কে দুটি কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ বেড়েছে এবং দুটিতে কমেছে। বিনিয়োগ বাড়া দুই কোম্পানির মধ্যে শাশা ডেনিমে বিনিয়োগ বেড়েছে পাঁচ লাখ ১২ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারদরে কোম্পানিটির শেয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ২৯ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, যা জুনে ছিল ২৯ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।

অপর প্রতিষ্ঠান প্রাইম টেক্সটাইলে বিদেশিদের বিনিয়োগ বেড়েছে ১৯ হাজার টাকা। কোম্পানিটিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ৩৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা, যা জুনে ছিল ৩৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

শেয়ার সংখ্যা একই থাকার পরও টাকার অঙ্কে বিনিয়োগ কমে যাওয়া দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কুইন সাউথ টেক্সটাইলে ২২ কোটি ৮৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা বিনিয়োগ কমেছে। বর্তমান বাজারদরে কোম্পানিটির শেয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ৮১ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, যা জুনে ছিল ১০৪ কোটি ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

অপর প্রতিষ্ঠান হা-ওয়েল টেক্সটাইলে ৫৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ কমেছে। বর্তমানে কোম্পানিটিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ৩০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, যা জুনে ছিল ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

পোশাক খাতের কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগচিত্র-

কোম্পানি

জুলাই

জুন

শেয়ার সংখ্যা

বিনিয়োগ (টাকা)

শেয়ার সংখ্যা

বিনিয়োগ(টাকা)

অ্যাপেক্স স্পিনিং

১ লাখ ৪১ হাজার

১ কোটি ৮৫ লাখ ৫৭ হাজার

৭৯ হাজার

১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার

ঢাকা ডাইং

৬ লাখ ১৯ হাজার

৩৫ লাখ ২৭ হাজার

৭ লাখ ১৫ হাজার

৪৭ লাখ ৮০ হাজার

ইনভয় টেক্সটাইল

২৯ লাখ ৭৬ হাজার

১০ কোটি ৮৯ লাখ ৩৯ হাজার

৩৫ লাখ ৮৫ হাজার

১২ কোটি ৪৩ লাখ ৯৭ হাজার

এইচআর টেক্সটাইল

৫ লাখ ১৬ হাজার

২ কোটি ৫১ লাখ ৩৫ হাজার

২ লাখ ৪৮ হাজার

১ কোটি ৭ লাখ ৮৫ হাজার

হা-ওয়েল টেক্সটাইল

৭৮ হাজার

৩০ লাখ ৬৫ হাজার

৭৮ হাজার

৩১ লাখ ২০ হাজার

মালেক স্পিনিং

৮৩ লাখ ৮৩ হাজার

১৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার

৯৬ লাখ ২২ হাজার

১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৩৫ হাজার

মোজাফফর হোসেন স্পিনিং

৮৫ হাজার

১৪ লাখ ৬০ হাজার

১ লাখ ১৩ হাজার

১৭ লাখ ৯ হাজার

প্যাসেফিক ডেনিম

১৩ হাজার

২ লাখ ৬১ হাজার

২৫ হাজার

৪ লাখ ৭ হাজার

প্রাইম টেক্সটাইল

৯৬ হাজার

৩৩ লাখ ৮১ হাজার

৯৬ হাজার

৩৩ লাখ ৬২ হাজার

কুইন সাউথ টেক্সটাইল

১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার

৮১ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার

১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার

১০৪ কোটি ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার

শাশা ডেনিম

৫১ লাখ ১৭ হাজার

২৯ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার

৫১ লাখ ১৭ হাজার

২৯ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার

শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ

৩ কোটি ৩৯ লাখ ৭৯ হাজার

১১৯ কোটি ৬০ লাখ ৬২ হাজার

৩ কোটি ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার

৯১ কোটি ১০ লাখ ৪ হাজার

স্কয়ার টেক্সটাইল

১ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার

৫৬ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার

১ কোটি ৯ লাখ ৯০ হাজার

৫৫ কোটি ৭১ লাখ ৮১ হাজার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, পোশাক খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির পারফরমেন্স ভালো নয়। এগুলো দুর্বল কোম্পানি। এ খাতের কোম্পানিগুলোর মালিকরাও অসৎ। আর্থিক প্রতিবেদনে তারা নানা অনিয়মের আশ্রয় নেন। এসব কারণে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ কম।

তিনি বলেন, শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারী নয় দেশীয় বিনিয়োগকারীদেরও পোশাক খাতের কোম্পানির প্রতি আগ্রহ কম। কিন্তু সম্প্রতি পোশাক খাতের কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম হঠাৎ বেড়েছে। এটা অস্বাভাবিক। এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী এসব কোম্পানির শেয়ার মেনুপুলেট করে দাম বাড়াচ্ছে। এসব শেয়ার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাবধান থাকা উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিদেশিরা যখন কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন, তখন তারা তাদের মূলধন সুরক্ষার কথা চিন্তা করেন। তারা বিনিয়োগ করেন প্রফিটসহ মূলধন উঠিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে। দুর্বল কোম্পানিতে তারা সাধারণত বিনিয়োগ করেন না। আমাদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ পোশাক খাতের কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো নয় এবং তাদের স্বচ্ছতারও অভাব রয়েছে। এ কারণে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ কম।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, পোশাক খাতের ৫০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলেও এর মধ্যে ভালো কোম্পানি হাতেগোনা কয়েকটি। ভালো কোম্পানিতে বিদেশিদের কিছু বিনিয়োগ আছে। বাকি কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বিনিয়োগকারীদেরও তারা ভালো লভ্যাংশ দেয় না। ফলে এসব কোম্পানির প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ কম।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল।

পোশাকে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ

আপডেট টাইম ১০:৪৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোতে টাকার অঙ্কে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে। তবে কমেছে শেয়ার ধারণের পরিমাণ। বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকা বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় শেয়ার ধারণের পরিমাণ কমলেও টাকার অঙ্কে বিনিয়োগ বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তৈরি করা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পোশাক খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৫০টি। চলতি বছরের জুলাই মাস শেষে এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র ১৩টিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে। আগের মাস জুনেও ১৩টি কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল। তবে ২০১৭ সালের জুনে পোশাক খাতের ১৫টি কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল। এর মধ্যে আর্গন ডেনিম ও নূরানী ডাইং থেকে বিদেশিরা সম্পূর্ণ বিনিয়োগ উঠিয়ে নিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ পোশাক খাতের কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এই খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি দুর্বল মৌলভিত্তির এবং তাদের পারফরমেন্স খারাপ। আবার কোম্পানিগুলোর মালিকানায় যারা রয়েছেন তাদের নৈতিকতা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। যে কারণে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কম।

চলতি বছরের জুলাই শেষে বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকা পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অ্যাপেক্স স্পিনিং, ঢাকা ডা্ইং, ইনভয় টেক্সটাইল, এইচআর টেক্সটাইল, হা-ওয়েল টেক্সটাইল, মালেক স্পিনিং, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং, নূরানী ডাইং, প্যাসেফিক ডেনিম, প্রাইম টেক্সটাইল, কুইন সাউথ টেক্সটাইল, শাশা ডেনিম, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও স্কয়ার টেক্সটাইল।

এই ১৩ কোম্পানির সাত কোটি ৯৭ লাখ ৫৩ হাজার শেয়ার রয়েছে বিদেশিদের কাছে। বর্তমান বাজারদরে শেয়ারগুলোতে বিদেশিদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৩২১ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। জুন মাসে এই কোম্পানিগুলোর আট কোটি ১৪ লাখ ৯৬ হাজার শেয়ার ছিল বিদেশিদের কাছে। জুন মাসের শেষ কার্যদিবসের বাজারদর অনুযায়ী, মাসটিতে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোতে বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল ৩১৩ কোটি ৫৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

এই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোতে টাকার অঙ্কে বিদেশিদের বিনিয়োগ বেড়েছে সাত কোটি ৬২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বিপরীতে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোর ১৭ লাখ ৪৩ হাজার শেয়ার বিদেশিরা জুলাই মাসে বিক্রি করে দেন।

বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকা ১৩টি কোম্পানির মধ্যে জুলাই মাসে দুটি কোম্পানির কিছু শেয়ার নতুন করে কিনেছে বিদেশিরা। বিপরীতে সাতটি কোম্পানির শেয়ারের কিছু অংশ বিক্রি করে দিয়েছে। বাকি চার কোম্পানির শেয়ার জুন মাসে যা ছিল তাই রয়েছে।

বিদেশিরা যে দুটি কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন তার মধ্যে রয়েছে অ্যাপেক্স স্পিানিং ও এইচআর টেক্সটাইল। এর মধ্যে জুলাই শেষে অ্যাপেক্স স্পিানিংয়ের এক লাখ ৪১ হাজার শেয়ার রয়েছে বিদেশিদের কাছে, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের এক দশমিক ৬৮ শতাংশ। জুন মাসে এ কোম্পানিটির ৭৯ হাজার বা দশমিক ৯৪ শতাংশ শেয়ার ছিল বিদেশিদের কাছে।

বর্তমান বাজারদরে অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের শেয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে এক কোটি ৮৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। যা জুন মাসে ছিল এক কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটিতে বিদেশিদের ৪৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বিনিয়োগ বেড়েছে। শেয়ার ধারণ বেড়েছে ৬২ হাজার।

এইচআর টেক্সটাইলে বিদেশিদের বিনিয়োগ বেড়েছে এক কোটি ৫০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। জুলাই শেষে কোম্পানিটির পাঁচ লাখ ১৬ হাজার শেয়ার রয়েছে বিদেশিদের কাছে, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের দুই দশমিক শূন্য চার শতাংশ। বর্তমান বাজারদরে এ শেয়ারগুলোতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে দুই কোটি ৫১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আগের মাস জুনে কোম্পানিটির দুই লাখ ৪৮ হাজার শেয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল এক কোটি সাত লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

অপরদিকে শেয়ার ধারণ কমলেও টাকার অঙ্কে বিনিয়োগ বেড়েছে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, স্কয়ার টেক্সটাইল ও মালেক স্পিনিংয়ে। এর মধ্যে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজে ২৮ কোটি ৫০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, স্কয়ার টেক্সটাইলে এক কোটি তিন লাখ ৭৯ হাজার টাকা এবং মালিক স্পিনিংয়ে ৭৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা বিনিয়োগ বেড়েছে বিদেশিদের।

এদিকে শেয়ার সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকলেও জুলাই মাসে টাকার অঙ্কে দুটি কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ বেড়েছে এবং দুটিতে কমেছে। বিনিয়োগ বাড়া দুই কোম্পানির মধ্যে শাশা ডেনিমে বিনিয়োগ বেড়েছে পাঁচ লাখ ১২ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারদরে কোম্পানিটির শেয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ২৯ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, যা জুনে ছিল ২৯ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।

অপর প্রতিষ্ঠান প্রাইম টেক্সটাইলে বিদেশিদের বিনিয়োগ বেড়েছে ১৯ হাজার টাকা। কোম্পানিটিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ৩৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা, যা জুনে ছিল ৩৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

শেয়ার সংখ্যা একই থাকার পরও টাকার অঙ্কে বিনিয়োগ কমে যাওয়া দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কুইন সাউথ টেক্সটাইলে ২২ কোটি ৮৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা বিনিয়োগ কমেছে। বর্তমান বাজারদরে কোম্পানিটির শেয়ারে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ৮১ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, যা জুনে ছিল ১০৪ কোটি ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

অপর প্রতিষ্ঠান হা-ওয়েল টেক্সটাইলে ৫৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ কমেছে। বর্তমানে কোম্পানিটিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ৩০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, যা জুনে ছিল ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

পোশাক খাতের কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগচিত্র-

কোম্পানি

জুলাই

জুন

শেয়ার সংখ্যা

বিনিয়োগ (টাকা)

শেয়ার সংখ্যা

বিনিয়োগ(টাকা)

অ্যাপেক্স স্পিনিং

১ লাখ ৪১ হাজার

১ কোটি ৮৫ লাখ ৫৭ হাজার

৭৯ হাজার

১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার

ঢাকা ডাইং

৬ লাখ ১৯ হাজার

৩৫ লাখ ২৭ হাজার

৭ লাখ ১৫ হাজার

৪৭ লাখ ৮০ হাজার

ইনভয় টেক্সটাইল

২৯ লাখ ৭৬ হাজার

১০ কোটি ৮৯ লাখ ৩৯ হাজার

৩৫ লাখ ৮৫ হাজার

১২ কোটি ৪৩ লাখ ৯৭ হাজার

এইচআর টেক্সটাইল

৫ লাখ ১৬ হাজার

২ কোটি ৫১ লাখ ৩৫ হাজার

২ লাখ ৪৮ হাজার

১ কোটি ৭ লাখ ৮৫ হাজার

হা-ওয়েল টেক্সটাইল

৭৮ হাজার

৩০ লাখ ৬৫ হাজার

৭৮ হাজার

৩১ লাখ ২০ হাজার

মালেক স্পিনিং

৮৩ লাখ ৮৩ হাজার

১৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার

৯৬ লাখ ২২ হাজার

১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৩৫ হাজার

মোজাফফর হোসেন স্পিনিং

৮৫ হাজার

১৪ লাখ ৬০ হাজার

১ লাখ ১৩ হাজার

১৭ লাখ ৯ হাজার

প্যাসেফিক ডেনিম

১৩ হাজার

২ লাখ ৬১ হাজার

২৫ হাজার

৪ লাখ ৭ হাজার

প্রাইম টেক্সটাইল

৯৬ হাজার

৩৩ লাখ ৮১ হাজার

৯৬ হাজার

৩৩ লাখ ৬২ হাজার

কুইন সাউথ টেক্সটাইল

১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার

৮১ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার

১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার

১০৪ কোটি ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার

শাশা ডেনিম

৫১ লাখ ১৭ হাজার

২৯ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার

৫১ লাখ ১৭ হাজার

২৯ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার

শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ

৩ কোটি ৩৯ লাখ ৭৯ হাজার

১১৯ কোটি ৬০ লাখ ৬২ হাজার

৩ কোটি ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার

৯১ কোটি ১০ লাখ ৪ হাজার

স্কয়ার টেক্সটাইল

১ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার

৫৬ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার

১ কোটি ৯ লাখ ৯০ হাজার

৫৫ কোটি ৭১ লাখ ৮১ হাজার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, পোশাক খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির পারফরমেন্স ভালো নয়। এগুলো দুর্বল কোম্পানি। এ খাতের কোম্পানিগুলোর মালিকরাও অসৎ। আর্থিক প্রতিবেদনে তারা নানা অনিয়মের আশ্রয় নেন। এসব কারণে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ কম।

তিনি বলেন, শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারী নয় দেশীয় বিনিয়োগকারীদেরও পোশাক খাতের কোম্পানির প্রতি আগ্রহ কম। কিন্তু সম্প্রতি পোশাক খাতের কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম হঠাৎ বেড়েছে। এটা অস্বাভাবিক। এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী এসব কোম্পানির শেয়ার মেনুপুলেট করে দাম বাড়াচ্ছে। এসব শেয়ার থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাবধান থাকা উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিদেশিরা যখন কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন, তখন তারা তাদের মূলধন সুরক্ষার কথা চিন্তা করেন। তারা বিনিয়োগ করেন প্রফিটসহ মূলধন উঠিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে। দুর্বল কোম্পানিতে তারা সাধারণত বিনিয়োগ করেন না। আমাদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ পোশাক খাতের কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো নয় এবং তাদের স্বচ্ছতারও অভাব রয়েছে। এ কারণে পোশাক খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ কম।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, পোশাক খাতের ৫০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলেও এর মধ্যে ভালো কোম্পানি হাতেগোনা কয়েকটি। ভালো কোম্পানিতে বিদেশিদের কিছু বিনিয়োগ আছে। বাকি কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বিনিয়োগকারীদেরও তারা ভালো লভ্যাংশ দেয় না। ফলে এসব কোম্পানির প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ কম।