ঢাকা ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
“মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন … লালমনিরহাটে বৃষ্টির জন‍্য বিশেষ নামাজ আদায় মিছিল ও শোডাউন করায় মতলব উত্তর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মানিক দর্জিকে শোকজ –গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা এলাকায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামি শ্রী রুপেন দাশ’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব । চন্দনাইশে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু ইষ্টার্ণ হাউজিংয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ায় সাংবাদিকদের উপর হামলা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে কোরআন শরিফ অবমাননা করায় মানববন্ধন রাঙ্গুনিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনার চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু

নড়াইলে বাধা পেরিয়ে ছুটে চলছে স্কুল ছাত্রীরা

শরিফুজ্জামান, নড়াইল প্রতিনিধি :
সাইকেল চালিয়ে দলবেঁধে নিয়মিত স্কুলে আসা-যাওয়া করছে শতাধিক ছাত্রী। এতে একদিকে সময় মতো শ্রেণিতে উপস্থিত হতে পারছে, অন্যদিকে অভিভাবকের বাড়তি খরচও সাশ্রয় হচ্ছে। সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে এলাকার বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, নারী নির্যাতনসহ সমাজ থেকে সকল প্রকার কুসংস্কার দূর করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছে ওরা। এ চিত্র নড়াইল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের। ১৯৮৩ সালে স্থাপিত গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিনশত যার মধ্যে ছাত্রী রয়েছে ১৪৩ জন। বিদ্যালয়টি নড়াইল সদর ও যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় এলাকাটি অনেকটা অবহেলিত এবং অধিকাংশ রাস্তাঘাট কাঁচা। আশেপাশের প্রায় ১১টি গ্রামের শিক্ষার্থীদের ৫/৭ কিলোমিটার দূর থেকে নিয়মিত এই বিদ্যালয়ে আসতে হয়। ৪/৫ বছর আগে শুধু ছেলেরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করলেও মেয়েদের ভ্যানে ও পায়ে হেঁটে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হতো। দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ প্রয়াসে মেয়েদের সাইকেল কিনে দেওয়া হয়। চার বছর আগে প্রথমে হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্রী সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু করলেও ধীরে ধীরে এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে শতাধিক ছাত্রী নিয়মিত সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করে এবং তাদের বান্ধবীদেরও সাইকেলের পেছনে বসিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। বর্তমানে তাদের সাইকেল রাখার জন্য বিদ্যালয়ে রয়েছে গ্যারেজের ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঝুমা গুপ্ত বলে, বাবার কাছ থেকেই সাইকেল চালোনা শিখেছে। সাইকেল চালানোর মাধ্যমে স্কুলে আসা যাওয়া অনেক সহজ হয়। আগে যখন সাইকেল ছিল না তখন যাতায়াতে অর্থ ও বেশি সময় ব্যয় হয়েছে। কিন্তু সাইকেল চালানো শেখার পর সে অনেক সহজে স্কুলে আসতে পারে। হেঁটে আসার সময় রাস্তাঘাটে আগে ছেলেরা বিরক্ত করলেও এখন আর তারা সে সুযোগ পায় না। মেয়ে হয়ে সাইকেল চালানো নিয়ে কেউ মন্দ কথা বললে সেটাকে কানেই নেয় না এই শিক্ষার্থী। নবম শ্রেণির ছাত্রী অনন্যা সিংহ জানায়, সাইকেল চালানো নিয়ে প্রতিবেশীদের নানা কথা শুনতে হয়েছে। তবে অনন্যার বাবা-মা প্রতিবেশীদের কথা না শুনে মেয়েকে সমর্থন দিয়েছেন। সবক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। তাই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে কোন বাঁধা মনে করেন না অনন্যা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মালো বলেন, ছেলে ও মেয়েদের সমানভাবে দেখা হয়। তাই সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসতে ছাত্রীদের এখন সময় কম লাগছে, অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে এবং নিয়মিত ও সময়মত শ্রেণিতে উপস্থিত হতে পারছে। মেয়েদের সাইকেল চালানোকে আগে অনেকেই আড়চোখে দেখলেও এখন সবাই পজিটিভ ভাবেই দেখছে। সারাদেশেই ছেলে-মেয়ে উভয়ের সাইকেলের ব্যবহার বাড়ানো উচিত বলেও তিনি মনে করেন।

নড়াইল জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মৌসুমি রাণী মজুমদার বলেন, প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েরা যে নিজেরা সাইকেল চালিয়ে আসা-যাওয়া করছে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তাদের এই সাহসী মনোভাব পরবর্তীতে তাদের কর্মক্ষেত্রেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

“মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন”

নড়াইলে বাধা পেরিয়ে ছুটে চলছে স্কুল ছাত্রীরা

আপডেট টাইম ০৪:১১:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩

শরিফুজ্জামান, নড়াইল প্রতিনিধি :
সাইকেল চালিয়ে দলবেঁধে নিয়মিত স্কুলে আসা-যাওয়া করছে শতাধিক ছাত্রী। এতে একদিকে সময় মতো শ্রেণিতে উপস্থিত হতে পারছে, অন্যদিকে অভিভাবকের বাড়তি খরচও সাশ্রয় হচ্ছে। সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে এলাকার বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, নারী নির্যাতনসহ সমাজ থেকে সকল প্রকার কুসংস্কার দূর করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছে ওরা। এ চিত্র নড়াইল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের। ১৯৮৩ সালে স্থাপিত গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিনশত যার মধ্যে ছাত্রী রয়েছে ১৪৩ জন। বিদ্যালয়টি নড়াইল সদর ও যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় এলাকাটি অনেকটা অবহেলিত এবং অধিকাংশ রাস্তাঘাট কাঁচা। আশেপাশের প্রায় ১১টি গ্রামের শিক্ষার্থীদের ৫/৭ কিলোমিটার দূর থেকে নিয়মিত এই বিদ্যালয়ে আসতে হয়। ৪/৫ বছর আগে শুধু ছেলেরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করলেও মেয়েদের ভ্যানে ও পায়ে হেঁটে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হতো। দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ প্রয়াসে মেয়েদের সাইকেল কিনে দেওয়া হয়। চার বছর আগে প্রথমে হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্রী সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু করলেও ধীরে ধীরে এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে শতাধিক ছাত্রী নিয়মিত সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করে এবং তাদের বান্ধবীদেরও সাইকেলের পেছনে বসিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। বর্তমানে তাদের সাইকেল রাখার জন্য বিদ্যালয়ে রয়েছে গ্যারেজের ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঝুমা গুপ্ত বলে, বাবার কাছ থেকেই সাইকেল চালোনা শিখেছে। সাইকেল চালানোর মাধ্যমে স্কুলে আসা যাওয়া অনেক সহজ হয়। আগে যখন সাইকেল ছিল না তখন যাতায়াতে অর্থ ও বেশি সময় ব্যয় হয়েছে। কিন্তু সাইকেল চালানো শেখার পর সে অনেক সহজে স্কুলে আসতে পারে। হেঁটে আসার সময় রাস্তাঘাটে আগে ছেলেরা বিরক্ত করলেও এখন আর তারা সে সুযোগ পায় না। মেয়ে হয়ে সাইকেল চালানো নিয়ে কেউ মন্দ কথা বললে সেটাকে কানেই নেয় না এই শিক্ষার্থী। নবম শ্রেণির ছাত্রী অনন্যা সিংহ জানায়, সাইকেল চালানো নিয়ে প্রতিবেশীদের নানা কথা শুনতে হয়েছে। তবে অনন্যার বাবা-মা প্রতিবেশীদের কথা না শুনে মেয়েকে সমর্থন দিয়েছেন। সবক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। তাই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে কোন বাঁধা মনে করেন না অনন্যা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মালো বলেন, ছেলে ও মেয়েদের সমানভাবে দেখা হয়। তাই সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসতে ছাত্রীদের এখন সময় কম লাগছে, অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে এবং নিয়মিত ও সময়মত শ্রেণিতে উপস্থিত হতে পারছে। মেয়েদের সাইকেল চালানোকে আগে অনেকেই আড়চোখে দেখলেও এখন সবাই পজিটিভ ভাবেই দেখছে। সারাদেশেই ছেলে-মেয়ে উভয়ের সাইকেলের ব্যবহার বাড়ানো উচিত বলেও তিনি মনে করেন।

নড়াইল জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মৌসুমি রাণী মজুমদার বলেন, প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েরা যে নিজেরা সাইকেল চালিয়ে আসা-যাওয়া করছে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তাদের এই সাহসী মনোভাব পরবর্তীতে তাদের কর্মক্ষেত্রেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।