ঢাকা ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পুলিশের বিশেষ অভিযানে ভয়ঙ্কর ডাকাত সর্দার মামুন গ্রেফতার বগুড়ায় অবকাশ হোটেলে অবৈধ কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ৯ জন খরিদ্দারকে দুই দিনের কারাদণ্ড দিলেন আদালত নানা বাড়ি বেড়াতে এসে নদীতে ডুবে কিশোর কিশোরীর মৃত্যু চরফ্যাসনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ৯।। দুমকিতে নবজাতক শিশুকে হসপিটালে রেখে পালিয়ে গেলো মা। গজারিয়ার বালুয়াকান্দীতে আমিরুল ইসলাম এর নির্বাচনী কর্মী সভা রাঙ্গুনিয়ায় দাওয়াতে তাবলীগের নিছবতে ওলামায়েকেরামের আলোচনা সভা চট্টগ্রামে উপজেলা নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য গরমিল, ২ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল নিয়ামতপুরে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত বাড়াইপাড়া খাল খননের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ মেয়র রেজাউলের

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর : প্রধানমন্ত্রী

মাতৃভূমির খবর ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের এমপি মাহফুজুর রহমানের তারকাচিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

আরো পড়ুন: মুজিববর্ষে বাড়ি পাবে ৬৮ হাজার দরিদ্র পরিবার

প্রধানমন্ত্রী সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য সরকার যথাযথ আইন সংস্কার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার নিশ্চিত করা আমাদের সরকারের মূল লক্ষ্য। একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আধুনিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের মাঝে উপলব্ধি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যে- সব নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং কোনো অপরাধী অপরাধ করে পার পাবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ৭৫এর পরবর্তী সময়ে এদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই শরিয়ত বয়াতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিশ্চয়ই কোনো অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত বলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি বিশেষ অপরাধে সম্পৃক্ত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাউল শিল্পীরা এমন কোনো কাজ যেন না করে যার জন্য বাউল গান বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান করে নিয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তারা যেন সেই ধরনের কাজ যেন না করে। সেই ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকা দরকার আর তাদেরও সচেতন করা দরকার।

জাসদের সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এ সময় বাউল গান ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে ইনু সম্প্রতি শরিয়ত বয়াতির গ্রেপ্তার হওয়ার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আইসিটি আইনে শরিয়ত বাউলকে গ্রেপ্তার ও ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, বাউল শিল্পীদের চুল কেটে দেয়া হচ্ছে। গ্রাম থেকে তাড়িয়ে বের করে দেয়া হচ্ছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক শাসকেরা যে জবর দখলের রাজনীতি শুরু করেছিল, তখন যাত্রা, পালাগানসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর একটি আক্রমণাত্মক তৎপরতা পরিচালনা করেছিল। তার রেশ এখনও চলছে।

প্রধানমন্ত্রী ও সরকার বিশ্ব ঐতিহ্যের বাউল সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেবেন কি না, সে প্রশ্ন করেন জাসদ সভাপতি।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়ে বাউল গানকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। তবে বাউল গানের তো কোনো দোষ নেই। কিন্তু বাউল গান যারা করেন তাদের ব্যক্তি বিশেষ কোনো অপরাধে সম্পৃক্ত হলে আইন তার আপন গতিতে চলবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর সাথে গানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর যারা বাউল গান গাচ্ছেন তারা সবাই অপরাধের ঊর্ধ্বে-এই গ্যারান্টি কি কেউ দিতে পারবেন? বাউল শিল্পীরা কোনো অপরাধ করেন না বা করেননি- এটা তো ঠিক নয়। নিশ্চয়ই কোনো অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত বলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাই উপজেলার রৌহাট্টেক পীর এ কামেল হযরত হেলাল শাহ’র দশম বার্ষিক মিলন মেলায় পরিবেশনায় মুসলমানদের ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে’ আঘাতের অভিযোগ ওঠে শরিয়ত বয়াতির বিরুদ্ধে।

এই অভিযোগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আগধল্যা গ্রামের জামে মসজিদের ঈমাম ফরিদুল ইসলাম মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।

পরে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে তাকে জেল হাজতে নেওয়া হয়।

ইনুর প্রশ্নের সূত্র ধরে সামরিক শাসন আমলের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় ছিল সেখানে গণতান্ত্রিক ধারা ছিল না। সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতায় এসেছে। একের পর এক ‘ক্যু’ হয়েছে। মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় এসেই রেডিও-টেলিভিশনে ঘোষণা দেয়, আজকের থেকে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম। আর হয়েই তাদের কাজ ছিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। সুইপারের কাজটাই তারা আগেই করে। এটা আমরা সব সময় দেখেছি। প্রথমে দেখা যায়, রাস্তার পাশে কঁচু-ঘেচু যা থাকে কেটেকুটে ছাপ করে। দেয়াল মুছে পরিষ্কার করা। আবার কেউ সাইকেল চালিয়ে সাশ্রয় করেন। সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর সব থেকে দামি গাড়ি নিয়ে চলে আসছে। কেউ বলছে কৃচ্ছতা সাধন করছি বলে টি-শার্ট পরে লেগে গেলেন। কিন্তু দেখা গেল প্যারিস থেকে স্যুট আসে। ফ্রেঞ্চ শিফন শাড়ি আছে। তখনকার যুগের দামি এবং ব্র্যান্ড সানগ্লাস ‘রে-বেন’ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

সংসদ নেতা বলেন, এ রকম বহু নাটক মিলিটারি ডিক্টেটররা করে থাকে। কাজেই চুল কাটা শুরু নয়, এছাড়া অনেক কাজই তারা করেছেন। এ রকম বহু কিছু আমরা জীবদ্দশায় দেখেছি। অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার পর যে কাজটা করলে ক্ষমতা একটু পোক্ত করা যায় বা নিজেদের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করা যেতে পারে, তা করতে চায়। তবে তাদের এসব উদ্যোগ বেশি দিন টেকে না। মাস ছয়েক থাকে তারপরই চেহারা পাল্টে যায়। আর এখনও যদি কেউ কিছু করে থাকে অন্যায় অপরাধ করলে আমরা তা দেখব। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। অহেতুক কারও চুল কাটা বা গানের প্রতিবন্ধকতা করা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

সরকারি দলের শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিবান্ধব কর্মসূচি ও নীতি বাস্তবায়নের কারণেই কৃষি উন্নয়নে সফলতা বাংলাদেশকে বিশ্বপরিমণ্ডলে ‘মর্যাদার নতুন আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে’। বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু উৎপাদনে অষ্টম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মৎস্য আহরণে তৃতীয় স্থান অজর্নকারী দেশ।

সংরক্ষিত আসনের আরমা দত্তের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের চার হাজার ৫৬৯টি ইউনিয়ন পরিষদে মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছাড়াও সারা বছরজুড়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেয়াল পত্রিকা, স্মরণিকা প্রকাশ, কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন করা হবে।

ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকাল ছেলে-মেয়ে সবাই কাজ করে। শাক-সবজি, তরি-তরকারি প্রক্রিয়াজাত করা থাকলে সুবিধা। করা গেলে মেয়েদের সুবিধা হবে।

আমাদের দেশে আসলে ছেলেরাতো কাজ-টাজ করতে চায় না। হয়ত দুজন একসাথেই অফিসে যায়, অফিস থেকে ফিরলে দেখা যাবে যিনি পুরুষ নিজেকে বেশি শক্তিশালী মনে করে সেই ‘টায়ার্ড’। তখন বলে এক কাপ চা দাও তো। আর যিনি মহিলা চা বানানো, খাবার বানানো সবকিছু তাকেই করতে হয়। আমি এই কথাগুলো বলছি দেখে এখন কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। দুজন যদি একসঙ্গে কাজ করে তাহলে সহজ হয়ে যায়।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

পুলিশের বিশেষ অভিযানে ভয়ঙ্কর ডাকাত সর্দার মামুন গ্রেফতার

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট টাইম ০৫:৪০:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২০

মাতৃভূমির খবর ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের এমপি মাহফুজুর রহমানের তারকাচিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

আরো পড়ুন: মুজিববর্ষে বাড়ি পাবে ৬৮ হাজার দরিদ্র পরিবার

প্রধানমন্ত্রী সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য সরকার যথাযথ আইন সংস্কার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার নিশ্চিত করা আমাদের সরকারের মূল লক্ষ্য। একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আধুনিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের মাঝে উপলব্ধি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যে- সব নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং কোনো অপরাধী অপরাধ করে পার পাবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ৭৫এর পরবর্তী সময়ে এদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই শরিয়ত বয়াতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিশ্চয়ই কোনো অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত বলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি বিশেষ অপরাধে সম্পৃক্ত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাউল শিল্পীরা এমন কোনো কাজ যেন না করে যার জন্য বাউল গান বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান করে নিয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তারা যেন সেই ধরনের কাজ যেন না করে। সেই ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকা দরকার আর তাদেরও সচেতন করা দরকার।

জাসদের সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এ সময় বাউল গান ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে ইনু সম্প্রতি শরিয়ত বয়াতির গ্রেপ্তার হওয়ার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আইসিটি আইনে শরিয়ত বাউলকে গ্রেপ্তার ও ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, বাউল শিল্পীদের চুল কেটে দেয়া হচ্ছে। গ্রাম থেকে তাড়িয়ে বের করে দেয়া হচ্ছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক শাসকেরা যে জবর দখলের রাজনীতি শুরু করেছিল, তখন যাত্রা, পালাগানসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর একটি আক্রমণাত্মক তৎপরতা পরিচালনা করেছিল। তার রেশ এখনও চলছে।

প্রধানমন্ত্রী ও সরকার বিশ্ব ঐতিহ্যের বাউল সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেবেন কি না, সে প্রশ্ন করেন জাসদ সভাপতি।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়ে বাউল গানকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। তবে বাউল গানের তো কোনো দোষ নেই। কিন্তু বাউল গান যারা করেন তাদের ব্যক্তি বিশেষ কোনো অপরাধে সম্পৃক্ত হলে আইন তার আপন গতিতে চলবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর সাথে গানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর যারা বাউল গান গাচ্ছেন তারা সবাই অপরাধের ঊর্ধ্বে-এই গ্যারান্টি কি কেউ দিতে পারবেন? বাউল শিল্পীরা কোনো অপরাধ করেন না বা করেননি- এটা তো ঠিক নয়। নিশ্চয়ই কোনো অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত বলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাই উপজেলার রৌহাট্টেক পীর এ কামেল হযরত হেলাল শাহ’র দশম বার্ষিক মিলন মেলায় পরিবেশনায় মুসলমানদের ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে’ আঘাতের অভিযোগ ওঠে শরিয়ত বয়াতির বিরুদ্ধে।

এই অভিযোগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আগধল্যা গ্রামের জামে মসজিদের ঈমাম ফরিদুল ইসলাম মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।

পরে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে তাকে জেল হাজতে নেওয়া হয়।

ইনুর প্রশ্নের সূত্র ধরে সামরিক শাসন আমলের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় ছিল সেখানে গণতান্ত্রিক ধারা ছিল না। সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতায় এসেছে। একের পর এক ‘ক্যু’ হয়েছে। মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় এসেই রেডিও-টেলিভিশনে ঘোষণা দেয়, আজকের থেকে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম। আর হয়েই তাদের কাজ ছিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। সুইপারের কাজটাই তারা আগেই করে। এটা আমরা সব সময় দেখেছি। প্রথমে দেখা যায়, রাস্তার পাশে কঁচু-ঘেচু যা থাকে কেটেকুটে ছাপ করে। দেয়াল মুছে পরিষ্কার করা। আবার কেউ সাইকেল চালিয়ে সাশ্রয় করেন। সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর সব থেকে দামি গাড়ি নিয়ে চলে আসছে। কেউ বলছে কৃচ্ছতা সাধন করছি বলে টি-শার্ট পরে লেগে গেলেন। কিন্তু দেখা গেল প্যারিস থেকে স্যুট আসে। ফ্রেঞ্চ শিফন শাড়ি আছে। তখনকার যুগের দামি এবং ব্র্যান্ড সানগ্লাস ‘রে-বেন’ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

সংসদ নেতা বলেন, এ রকম বহু নাটক মিলিটারি ডিক্টেটররা করে থাকে। কাজেই চুল কাটা শুরু নয়, এছাড়া অনেক কাজই তারা করেছেন। এ রকম বহু কিছু আমরা জীবদ্দশায় দেখেছি। অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার পর যে কাজটা করলে ক্ষমতা একটু পোক্ত করা যায় বা নিজেদের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করা যেতে পারে, তা করতে চায়। তবে তাদের এসব উদ্যোগ বেশি দিন টেকে না। মাস ছয়েক থাকে তারপরই চেহারা পাল্টে যায়। আর এখনও যদি কেউ কিছু করে থাকে অন্যায় অপরাধ করলে আমরা তা দেখব। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। অহেতুক কারও চুল কাটা বা গানের প্রতিবন্ধকতা করা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

সরকারি দলের শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিবান্ধব কর্মসূচি ও নীতি বাস্তবায়নের কারণেই কৃষি উন্নয়নে সফলতা বাংলাদেশকে বিশ্বপরিমণ্ডলে ‘মর্যাদার নতুন আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে’। বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু উৎপাদনে অষ্টম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মৎস্য আহরণে তৃতীয় স্থান অজর্নকারী দেশ।

সংরক্ষিত আসনের আরমা দত্তের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের চার হাজার ৫৬৯টি ইউনিয়ন পরিষদে মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছাড়াও সারা বছরজুড়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেয়াল পত্রিকা, স্মরণিকা প্রকাশ, কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন করা হবে।

ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকাল ছেলে-মেয়ে সবাই কাজ করে। শাক-সবজি, তরি-তরকারি প্রক্রিয়াজাত করা থাকলে সুবিধা। করা গেলে মেয়েদের সুবিধা হবে।

আমাদের দেশে আসলে ছেলেরাতো কাজ-টাজ করতে চায় না। হয়ত দুজন একসাথেই অফিসে যায়, অফিস থেকে ফিরলে দেখা যাবে যিনি পুরুষ নিজেকে বেশি শক্তিশালী মনে করে সেই ‘টায়ার্ড’। তখন বলে এক কাপ চা দাও তো। আর যিনি মহিলা চা বানানো, খাবার বানানো সবকিছু তাকেই করতে হয়। আমি এই কথাগুলো বলছি দেখে এখন কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। দুজন যদি একসঙ্গে কাজ করে তাহলে সহজ হয়ে যায়।