ঢাকা ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ “২৬শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ” –মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে ৫৩ কেজি গাঁজাসহ ০৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; মাদক বহনে ব্যবহৃত পিকআপ জব্দ। “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ

নির্দিষ্ট স্থানের অভাবে বিলীনের পথে কুয়াকাটার শুঁটকিপল্লি।

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ নির্দিষ্ট স্থানের অভাবে বিলীনের পথে কুয়াকাটার শুঁটকিপল্লি। সামুদ্রিক শুঁটকির চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। আর এই চাহিদার বিশাল একটি অংশের জোগান দিচ্ছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা শুঁটকিপল্লিগুলো। প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরোনো পেশাকে এখন টিকিয়ে রাখতে নির্দিষ্ট স্থানের অভাবে হিমশিম খাচ্ছে কলাপাড়া উপজেলার শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রায় ৪০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। শুধু শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ নয়, কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের ভ্রমণ স্পট হিসেবে পরিচিত এই পল্লি টিকিয়ে রাখাটা এখন জরুরি বলে মনে করেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের সুবিধার জন্য তাদের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার কোনো সরকারি পরিত্যক্ত জায়গা বেছে নিতে হয়। কয়েক দশক ভালোভাবে একই স্থানে এই কাজ করতে পারলেও গত কয়েক বছর ধরে কুয়াকাটাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনার কাজ শুরু হওয়ায় বার বার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যেতে হচ্ছে তাদের। যে কারণে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযুক্ত স্থান সংকটে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, কুয়াকাটাকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে শুঁটকিপল্লি অন্যতম। ইতোমধ্যে সরকার সব পল্লিকে এক স্থানে পরিপাটিভাবে বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরির স্থান বিনির্মাণের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে প্রায় ৩ হাজার ৬শ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে এখানে। এছাড়া স্থানীয় মার্কেটগুলোতে বেশ কিছু শুঁটকি খুচরা বিক্রি হয়েছে। এই শুঁটকি কেন্দ্র করে প্রতিটি পল্লিতে প্রায় ১৫-২০ জন শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় ছয় শতাধিক নারী শ্রমিক কাজ করছেন। স্থানীয় দিনমজুরদের কাছে এই পল্লিগুলো উপার্জনেরও একটি বড় জায়গা। চাহিদা অনুযায়ী শুঁটকি সরবরাহ করতে মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর থেকে প্রায় ৩৫-৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে লইট্যা, সুরমা, ছুরি, রূপচাদা, সুন্দরি, চ্যাপা, চাপিলা, কাঁচকি, চ্যালা, ব্যাইলা, বাঁশপাতা, মলা, বড় চিংড়ি, ছোট চিংড়ি, পোয়া, টোনা, ফ্যাসা, নোনা ইলিশ, ইলিশের ডিম, কাকিলা, কোরাল, লাক্কা, রইস্যা। এ মাছের শুঁটকিগুলো ৩৫০ থেকে ৩ হাজার টাকা কেজি দামে বিক্রি হয়।
কুয়াকাটা লেম্বুরবনের শুঁটকিপল্লির ব্যবসায়ী মো. বেল্লাল জাগো নিউজকে বলেন, আমি ২০ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত। কিন্তু একদিকে সামুদ্রিক মাছের সংকট অন্যদিকে দেশ-বিদেশে পাঠানোর জন্য বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরির নির্দিষ্ট স্থানের অভাবে এই পেশা বিলীনের পথে। ২৫ বছর ধরে এই পেশায় থেকেও এখন আর টিকে থাকতে না পেরে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন সেলিম হাওলাদার নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রথমে লাভবান হওয়ায় এই ব্যবসা শুরু করি। বেশ কিছুদিন খুব ভালোভাবে চলেছে। কিন্তু ৫ বছর ধরে নির্দিষ্ট জায়গা না পাওয়া, সমুদ্রে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়া, সুযোগ সুবিধা না থাকাসহ খুব খারাপ অবস্থা চলছিল। পরে তিন বছর হলো ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসায় জড়িত হয়েছি।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সদস্য ও হৈমন্তী ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আলমাস জাগো নিউজকে বলেন, এই শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরুর দিকে প্রায় একশ পল্লি থাকলেও এখন তা এক-তৃতীয়াংশে চলে এসেছে, যা এই পর্যটনকেন্দ্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। অনেক বেশি সুবিধা না দিতে পারলেও খুব জরুরি তাদের একটি নির্দিষ্ট স্থান। আমরা আশা করবো নিশ্চয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জাগো নিউজকে বলেন, কুয়াকাটায় যারা মাছ শুঁটকি করেন এরা বেশ অভিজ্ঞ এবং ভালো শুঁটকি বাজারজাত করেন। এদের একটি স্থায়ী জায়গা দেওয়া এবং আরও উন্নতমানের শুঁটকি তৈরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে করা হয়েছে। তবে সরকার আগামী মার্চ মাসের পরপরই শুঁটকি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি জায়গা তৈরির কাজ হাতে নিচ্ছে। আগামী মার্চ মাসের পরে সেই কাজ শুরুর কথা রয়েছে। সরকারেরও একটি পরিকল্পনা রয়েছে যাতে এ ব্যবসায়ীরাও ঋণ পেতে পারেন।###

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

নির্দিষ্ট স্থানের অভাবে বিলীনের পথে কুয়াকাটার শুঁটকিপল্লি।

আপডেট টাইম ০৫:৫১:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ নির্দিষ্ট স্থানের অভাবে বিলীনের পথে কুয়াকাটার শুঁটকিপল্লি। সামুদ্রিক শুঁটকির চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। আর এই চাহিদার বিশাল একটি অংশের জোগান দিচ্ছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা শুঁটকিপল্লিগুলো। প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরোনো পেশাকে এখন টিকিয়ে রাখতে নির্দিষ্ট স্থানের অভাবে হিমশিম খাচ্ছে কলাপাড়া উপজেলার শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রায় ৪০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। শুধু শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ নয়, কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের ভ্রমণ স্পট হিসেবে পরিচিত এই পল্লি টিকিয়ে রাখাটা এখন জরুরি বলে মনে করেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের সুবিধার জন্য তাদের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার কোনো সরকারি পরিত্যক্ত জায়গা বেছে নিতে হয়। কয়েক দশক ভালোভাবে একই স্থানে এই কাজ করতে পারলেও গত কয়েক বছর ধরে কুয়াকাটাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনার কাজ শুরু হওয়ায় বার বার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যেতে হচ্ছে তাদের। যে কারণে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযুক্ত স্থান সংকটে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, কুয়াকাটাকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে শুঁটকিপল্লি অন্যতম। ইতোমধ্যে সরকার সব পল্লিকে এক স্থানে পরিপাটিভাবে বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরির স্থান বিনির্মাণের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে প্রায় ৩ হাজার ৬শ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে এখানে। এছাড়া স্থানীয় মার্কেটগুলোতে বেশ কিছু শুঁটকি খুচরা বিক্রি হয়েছে। এই শুঁটকি কেন্দ্র করে প্রতিটি পল্লিতে প্রায় ১৫-২০ জন শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় ছয় শতাধিক নারী শ্রমিক কাজ করছেন। স্থানীয় দিনমজুরদের কাছে এই পল্লিগুলো উপার্জনেরও একটি বড় জায়গা। চাহিদা অনুযায়ী শুঁটকি সরবরাহ করতে মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর থেকে প্রায় ৩৫-৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে লইট্যা, সুরমা, ছুরি, রূপচাদা, সুন্দরি, চ্যাপা, চাপিলা, কাঁচকি, চ্যালা, ব্যাইলা, বাঁশপাতা, মলা, বড় চিংড়ি, ছোট চিংড়ি, পোয়া, টোনা, ফ্যাসা, নোনা ইলিশ, ইলিশের ডিম, কাকিলা, কোরাল, লাক্কা, রইস্যা। এ মাছের শুঁটকিগুলো ৩৫০ থেকে ৩ হাজার টাকা কেজি দামে বিক্রি হয়।
কুয়াকাটা লেম্বুরবনের শুঁটকিপল্লির ব্যবসায়ী মো. বেল্লাল জাগো নিউজকে বলেন, আমি ২০ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত। কিন্তু একদিকে সামুদ্রিক মাছের সংকট অন্যদিকে দেশ-বিদেশে পাঠানোর জন্য বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরির নির্দিষ্ট স্থানের অভাবে এই পেশা বিলীনের পথে। ২৫ বছর ধরে এই পেশায় থেকেও এখন আর টিকে থাকতে না পেরে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন সেলিম হাওলাদার নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রথমে লাভবান হওয়ায় এই ব্যবসা শুরু করি। বেশ কিছুদিন খুব ভালোভাবে চলেছে। কিন্তু ৫ বছর ধরে নির্দিষ্ট জায়গা না পাওয়া, সমুদ্রে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়া, সুযোগ সুবিধা না থাকাসহ খুব খারাপ অবস্থা চলছিল। পরে তিন বছর হলো ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসায় জড়িত হয়েছি।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সদস্য ও হৈমন্তী ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আলমাস জাগো নিউজকে বলেন, এই শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরুর দিকে প্রায় একশ পল্লি থাকলেও এখন তা এক-তৃতীয়াংশে চলে এসেছে, যা এই পর্যটনকেন্দ্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। অনেক বেশি সুবিধা না দিতে পারলেও খুব জরুরি তাদের একটি নির্দিষ্ট স্থান। আমরা আশা করবো নিশ্চয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জাগো নিউজকে বলেন, কুয়াকাটায় যারা মাছ শুঁটকি করেন এরা বেশ অভিজ্ঞ এবং ভালো শুঁটকি বাজারজাত করেন। এদের একটি স্থায়ী জায়গা দেওয়া এবং আরও উন্নতমানের শুঁটকি তৈরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে করা হয়েছে। তবে সরকার আগামী মার্চ মাসের পরপরই শুঁটকি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি জায়গা তৈরির কাজ হাতে নিচ্ছে। আগামী মার্চ মাসের পরে সেই কাজ শুরুর কথা রয়েছে। সরকারেরও একটি পরিকল্পনা রয়েছে যাতে এ ব্যবসায়ীরাও ঋণ পেতে পারেন।###