ঢাকা ০৫:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রাঙ্গুনিয়ায় নববর্ষ বৈশাখী উৎসবে জলকেলি ও বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে বেলখাইন স্পোটিং ক্লাবের অলনাইট ফুটবল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল সম্পন্ন বগুড়ায় চাঞ্চ্যল্যকর শিশু বন্ধনকে গলাকেটে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন গজারিয়ায় দুই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলাম এর পক্ষে গনসংযোগ ও লিফলেট বিতরন প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে আলোচনা ও পুরুষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান –অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৪ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। চট্টগ্রামে দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে-২ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা বিএমএর হকার আর যত্রতত্র আবর্জনা কমাতে অভিযানের ঘোষণা মেয়র রেজাউলের রামগঞ্জে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ২০২৪ অনুষ্ঠিত। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

দেশ ও জাতির মঙ্গল চিন্তায়ই সাংবাদিক জীবনের প্রধান উপজীব্য-মুহম্মদ আলতাফ হোসেন

মোঃ রাব্বী মোল্লা , বিএনএসঃ

সংবাদপত্রকে চতুর্থ রাষ্ট্র বা স্তম্ভ বলে অভিহিত করা হয়। এ থেকেই বুঝতে পারা যায় যে, রাষ্ট্রের সুপরিচালন ও সুনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সংবাদপত্রের দায়িত্ব অপরিসীম। রাষ্ট্রের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ওপর সংবাদপত্রের প্রত্যক্ষ হাত নেই বটে, কিন্তু যারা সে ব্যাপারে রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত, সংবাদপত্র তাদের কাজকে প্রভাবিত করতে পারে যুক্তিসহ সুপরামর্শ দিয়ে। এই যায়গায় সংবাদপত্রের দায়িত্বের কথা ওঠে। সংবাদপত্র যদি তার এ দায়িত্ব সুবিবেচনা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে পালন করতে পারে তবে যারা রাষ্ট্রের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ কাজে প্রত্যক্ষভাবে নিযুক্ত, তারা উপকৃত হতে পারেন। শুধু তাই নয়, সংবাদপত্রের পরামর্শ গ্রহণ করে নিজেদের ভুলভ্রান্তিও সংশোধন করতে পারেণ। কাজেই, প্রত্যক্ষভাবে না হলেও রাষ্ট্রের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পরোক্ষভাবে যে সংবাদপত্রের প্রভাব অনেকখানিই তা অনস্বীকার্য।

কিন্তু এ বিরাট দায়িত্বের ব্যাপারে যদি সংবাদপত্র সম্যক সচেতন না থাকে, যদি সংবাদপত্র ব্যক্তি বিশেষের বা সস্তা উচ্ছৃঙ্খল জনমতের দ্বারা পরিচালিত হয়, কিংবা জাতির ভালমন্দ ও সে সম্বন্ধে রাষ্ট্রের কর্তব্য কি হতে পারে, সে বিষয়ে কোন চিন্তা না করেই নিজের খোশ খেয়ালে চালিত হয়, সে সংবাদপত্র শুধু নিজের উপর অর্পিত দায়িত্বেরই অবমাননা করে তা নয়, তার অস্তিত্ব তখন রাষ্ট্র ও জাতিরও ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। কাজেই সংবাদপত্রের কাজে নিযুক্ত সাংবাদিকের ওপর বিরাট দায়িত্বভার ন্যস্ত এ বোধ পুরোপুরিভাবে সাংবাদিকদের না থাকলে সংবাদপত্র সেবা তার দ¦ারা সুষ্ঠভাবে হয়ে উঠতে পারে না। রাষ্ট্র ও জাতির মঙ্গল চিন্তাই যে সাংবাদিক জীবনের প্রধান উপজীব্য সে সম্পর্কে সম্যক সচেতনতা না থাকলে কেউ দায়িত্বশীল সাংবাদিক হতে পারেন না। বর্তমান গণতান্ত্রিকতার যুগে জাতীয় জীবনে জনমতের স্থান খুবই উচ্চে এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই জনমত গড্ডালিকা প্রবাহে সাংবাদিকদের সব সময় ভেসে যাওয়া চলে না। জনমতকে রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণের পথে পরিচালনার নির্দেশণাই সাংবাদিক প্রদান করেন। একথা ঠিক জাতি ও রাষ্টের মঙ্গল চিন্তায় উদ্ধুদ্ধ এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবান সাংবাদিক কখনো জনমতের ওপর উপেক্ষাশীল হতে পারেন না, জনমতের প্রকাশ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্তও করতে বা হতে দেয়াও সাংবাদিকের কাজ নয়। কিন্তু জনমত সব সময় সুস্থ নাও হতে পারে, এমন কি, সময় সময় তা রাষ্ট্রীয় ও জাতীর স্বার্থের পরিপন্থী হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। তেমন অবস্থায়, রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণকামী সাংবাদিক কখনও সে জনমতকে সমর্থন দিতে পারেন না। সে জনমতের ভুল-ভ্রান্তি ও অনিষ্টকর সম্ভাবনার কথা যুক্তিপূর্ণ সুস্পষ্ট ভাষায় তাঁকে প্রকাশ করতে হবে। সুস্থ জনমতের সমর্থন অসুস্থ জনমতের যুক্তিসহ সমালোচনাই সত্যিকার সাংবাদিকের কর্মনীতি।

ঠিক একই ধরণের রাষ্ট্রের কাজে সরকার কর্তৃক নিয়োজিত এবং জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কার্যকলাপও সাংবাদিকের আলোচনা সমালোচনার বিষয়ীভুত। রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণই যেহেতু সাংবাদিকদের মূল লক্ষ্য, তাই সরকারি কর্মচারী ও জনসাধরণের প্রতিনিধিদের কার্যকলাপ রাষ্ট্র ও জাতির সত্যিকার কল্যণভিসারী কি-না, সেদিকে তীক্ষè নজর রাখা সাংবাদিকের পরম কর্তব্য বৈকি।

এমন কি, যিনি রাষ্ট্রের কর্ণধারের আসনে উপবিষ্ট, তিনিও ভুল-ভ্রান্তির উর্দ্ধে নন; তার কাজের সমালোচনা করার অধিকারও সাংবাদিকের আছে, সন্দেহ নেই। তবে এসব সমালোচনা করার সময়ে সাংবাদিককে লক্ষ্য রাখতে হবে, তার অভিমত জাতির কল্যণভিত্তিক কি-না।

তবে রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণভিত্তিক যে সমালোচনা, তা থেকে সাংবাদিককে নিরস্ত করার অধিকার কারুর নেই। কেউ যদি অধিকারের নামে সে সম্পর্কে কোন রূপ বিধিনিষেধ সাংবাদিকের ওপর জারি করেন, তবে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক তার নিকট কখনো নতিস্বীকার করতে পারেন না। তবে রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণভিত্তিক সমালোচনার অবাধ অধিকার সাংবাদিকের থাকলেও সে সমালোচনা গঠনমুলক হওয়া উচিত। আক্রমণমূলক সমালোচনায় কল্যাণের চাইতে অকল্যাণই হয় বেশি। কারণ আক্রমণমূলক সমালোচনায় আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বিতীয় রিপুর উত্তেজনাকেই বাড়িয়ে দেয়া হয় মাত্র, তার ভুল ত্রুটির সংশোধনে তাকে সাহায্য করা হয়না। ফলে সমালোচনার আাসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। এই কারণে দায়িত্বশীল সাংবাদিক এই শ্রেণীর সমালোচনাকে সাংবাদিকের অধিকার ও কর্তব্যের অপব্যবহার বলেই মনে করেন।

রাষ্ট্রের কাজে যারা নিযুক্ত, তাঁরা যাতে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেন, সে সম্পর্কে তাদেরকে সুবিবেচিত পরামর্শ দেওয়া সাংবাদিকের অন্যতম কাজ। জাতিকেও উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে সরকারকে ভাল কাজে সহযোগিতা করার জন্য। তাছাড়া রাষ্ট্রের যারা দুশমন, জাতির ক্ষতিকর কাজে যারা নিয়োজিত, তাদের মুখোশ খুলে ফেলাও সাংবাদিকের একটা বড় দায়িত্ব। কারণ রাষ্ট্র বিরোধিতা কাজে যারা নেমেছে, তাদের মুখোশ যথাসমায়ে খুলে না ধরলে তাদের দ্বারা রাষ্ট্রের ও জাতির যে ক্ষতি হবে, তার ভাবী ফল রাষ্ট্রের ও জাতির জন্য ভয়াভহ হয়ে উঠতে পারে। যথাসময় ওদের স্বরূপ জাতির সামনে তুলে ধরলে রাষ্ট্র ও জাতি সে বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারে। এই কারণে সত্যিকার সাংবাদিক অপ্রীতিকর কর্তব্য পালনের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেনা।”
জনমতকে রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণের পথে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা এবং জনশক্তিকে দেশ গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে উদ্বুদ্ধ করে তোলা সাংবাদিকদের প্রধানতম দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সংবাদপত্রের ভূমিকা ও দায়িত্ব বলতে বোঝায় সাংবাদিকদের সম্মিলিত ভূমিকা ও দায়িত্বের যোগফল। সুষ্ঠভাবে সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের সেবা, দেশ ও জাতির খেদমত করার জন্য দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্য সচেতনতাই যথেষ্ট নয়। এর জন্য এই বিশেষ পেশায় জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার দরকার। সংবাদপত্র সেবার মাধ্যমে সাংবাদিকতা বিষয়ে জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় বটে, কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণের বিশেষ প্রয়োজনীয়তার মূল্য আছে। সুষ্ঠু সাংবাদিকতা উন্নতমানের সংবাদপত্র পরিচালনা, দেশ ও জাতি গঠন এবং উন্নয়ন যাই বলিনা কেন, ফোর্থ এজেন্ট অর্থৎ শক্তিশালী গণসংযোগ ও প্রচার মাধ্যম সংবাদপত্র সেবিদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অপরিহার্য। সভ্যতার অগ্রগতি ও বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উন্নতির যুগেও বর্তমান জ্ঞানের এলাকা ও দিগন্ত অনেক প্রসারিত হয়েছে। সুষ্ঠ ও উন্নতমানের সাংবাদিকতা, সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশ ও জাতি গঠন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দরকার বিভিন্ন বিষয়ে যথাসম্ভব নির্ভুল ও গভীর জ্ঞান অর্জন। উন্নয়ন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ওপর নির্ভশীল। জ্ঞান বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজনীতি, ইতিহাস – ভুগোল, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, সব কিছুই জ্ঞানের ক্ষেত্রে পরস্পর সম্পৃক্ত। সুষ্ঠু ও সার্থক সাংবাদিকতার জন্যে সব বিষয়েই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন দরকার।

লেখক- প্রবীণ সাংবাদিক ও জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাঙ্গুনিয়ায় নববর্ষ বৈশাখী উৎসবে জলকেলি ও বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে

দেশ ও জাতির মঙ্গল চিন্তায়ই সাংবাদিক জীবনের প্রধান উপজীব্য-মুহম্মদ আলতাফ হোসেন

আপডেট টাইম ০৪:৩৮:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩

মোঃ রাব্বী মোল্লা , বিএনএসঃ

সংবাদপত্রকে চতুর্থ রাষ্ট্র বা স্তম্ভ বলে অভিহিত করা হয়। এ থেকেই বুঝতে পারা যায় যে, রাষ্ট্রের সুপরিচালন ও সুনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সংবাদপত্রের দায়িত্ব অপরিসীম। রাষ্ট্রের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ওপর সংবাদপত্রের প্রত্যক্ষ হাত নেই বটে, কিন্তু যারা সে ব্যাপারে রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত, সংবাদপত্র তাদের কাজকে প্রভাবিত করতে পারে যুক্তিসহ সুপরামর্শ দিয়ে। এই যায়গায় সংবাদপত্রের দায়িত্বের কথা ওঠে। সংবাদপত্র যদি তার এ দায়িত্ব সুবিবেচনা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে পালন করতে পারে তবে যারা রাষ্ট্রের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ কাজে প্রত্যক্ষভাবে নিযুক্ত, তারা উপকৃত হতে পারেন। শুধু তাই নয়, সংবাদপত্রের পরামর্শ গ্রহণ করে নিজেদের ভুলভ্রান্তিও সংশোধন করতে পারেণ। কাজেই, প্রত্যক্ষভাবে না হলেও রাষ্ট্রের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পরোক্ষভাবে যে সংবাদপত্রের প্রভাব অনেকখানিই তা অনস্বীকার্য।

কিন্তু এ বিরাট দায়িত্বের ব্যাপারে যদি সংবাদপত্র সম্যক সচেতন না থাকে, যদি সংবাদপত্র ব্যক্তি বিশেষের বা সস্তা উচ্ছৃঙ্খল জনমতের দ্বারা পরিচালিত হয়, কিংবা জাতির ভালমন্দ ও সে সম্বন্ধে রাষ্ট্রের কর্তব্য কি হতে পারে, সে বিষয়ে কোন চিন্তা না করেই নিজের খোশ খেয়ালে চালিত হয়, সে সংবাদপত্র শুধু নিজের উপর অর্পিত দায়িত্বেরই অবমাননা করে তা নয়, তার অস্তিত্ব তখন রাষ্ট্র ও জাতিরও ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। কাজেই সংবাদপত্রের কাজে নিযুক্ত সাংবাদিকের ওপর বিরাট দায়িত্বভার ন্যস্ত এ বোধ পুরোপুরিভাবে সাংবাদিকদের না থাকলে সংবাদপত্র সেবা তার দ¦ারা সুষ্ঠভাবে হয়ে উঠতে পারে না। রাষ্ট্র ও জাতির মঙ্গল চিন্তাই যে সাংবাদিক জীবনের প্রধান উপজীব্য সে সম্পর্কে সম্যক সচেতনতা না থাকলে কেউ দায়িত্বশীল সাংবাদিক হতে পারেন না। বর্তমান গণতান্ত্রিকতার যুগে জাতীয় জীবনে জনমতের স্থান খুবই উচ্চে এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই জনমত গড্ডালিকা প্রবাহে সাংবাদিকদের সব সময় ভেসে যাওয়া চলে না। জনমতকে রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণের পথে পরিচালনার নির্দেশণাই সাংবাদিক প্রদান করেন। একথা ঠিক জাতি ও রাষ্টের মঙ্গল চিন্তায় উদ্ধুদ্ধ এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবান সাংবাদিক কখনো জনমতের ওপর উপেক্ষাশীল হতে পারেন না, জনমতের প্রকাশ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্তও করতে বা হতে দেয়াও সাংবাদিকের কাজ নয়। কিন্তু জনমত সব সময় সুস্থ নাও হতে পারে, এমন কি, সময় সময় তা রাষ্ট্রীয় ও জাতীর স্বার্থের পরিপন্থী হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। তেমন অবস্থায়, রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণকামী সাংবাদিক কখনও সে জনমতকে সমর্থন দিতে পারেন না। সে জনমতের ভুল-ভ্রান্তি ও অনিষ্টকর সম্ভাবনার কথা যুক্তিপূর্ণ সুস্পষ্ট ভাষায় তাঁকে প্রকাশ করতে হবে। সুস্থ জনমতের সমর্থন অসুস্থ জনমতের যুক্তিসহ সমালোচনাই সত্যিকার সাংবাদিকের কর্মনীতি।

ঠিক একই ধরণের রাষ্ট্রের কাজে সরকার কর্তৃক নিয়োজিত এবং জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কার্যকলাপও সাংবাদিকের আলোচনা সমালোচনার বিষয়ীভুত। রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণই যেহেতু সাংবাদিকদের মূল লক্ষ্য, তাই সরকারি কর্মচারী ও জনসাধরণের প্রতিনিধিদের কার্যকলাপ রাষ্ট্র ও জাতির সত্যিকার কল্যণভিসারী কি-না, সেদিকে তীক্ষè নজর রাখা সাংবাদিকের পরম কর্তব্য বৈকি।

এমন কি, যিনি রাষ্ট্রের কর্ণধারের আসনে উপবিষ্ট, তিনিও ভুল-ভ্রান্তির উর্দ্ধে নন; তার কাজের সমালোচনা করার অধিকারও সাংবাদিকের আছে, সন্দেহ নেই। তবে এসব সমালোচনা করার সময়ে সাংবাদিককে লক্ষ্য রাখতে হবে, তার অভিমত জাতির কল্যণভিত্তিক কি-না।

তবে রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণভিত্তিক যে সমালোচনা, তা থেকে সাংবাদিককে নিরস্ত করার অধিকার কারুর নেই। কেউ যদি অধিকারের নামে সে সম্পর্কে কোন রূপ বিধিনিষেধ সাংবাদিকের ওপর জারি করেন, তবে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক তার নিকট কখনো নতিস্বীকার করতে পারেন না। তবে রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণভিত্তিক সমালোচনার অবাধ অধিকার সাংবাদিকের থাকলেও সে সমালোচনা গঠনমুলক হওয়া উচিত। আক্রমণমূলক সমালোচনায় কল্যাণের চাইতে অকল্যাণই হয় বেশি। কারণ আক্রমণমূলক সমালোচনায় আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বিতীয় রিপুর উত্তেজনাকেই বাড়িয়ে দেয়া হয় মাত্র, তার ভুল ত্রুটির সংশোধনে তাকে সাহায্য করা হয়না। ফলে সমালোচনার আাসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। এই কারণে দায়িত্বশীল সাংবাদিক এই শ্রেণীর সমালোচনাকে সাংবাদিকের অধিকার ও কর্তব্যের অপব্যবহার বলেই মনে করেন।

রাষ্ট্রের কাজে যারা নিযুক্ত, তাঁরা যাতে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেন, সে সম্পর্কে তাদেরকে সুবিবেচিত পরামর্শ দেওয়া সাংবাদিকের অন্যতম কাজ। জাতিকেও উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে সরকারকে ভাল কাজে সহযোগিতা করার জন্য। তাছাড়া রাষ্ট্রের যারা দুশমন, জাতির ক্ষতিকর কাজে যারা নিয়োজিত, তাদের মুখোশ খুলে ফেলাও সাংবাদিকের একটা বড় দায়িত্ব। কারণ রাষ্ট্র বিরোধিতা কাজে যারা নেমেছে, তাদের মুখোশ যথাসমায়ে খুলে না ধরলে তাদের দ্বারা রাষ্ট্রের ও জাতির যে ক্ষতি হবে, তার ভাবী ফল রাষ্ট্রের ও জাতির জন্য ভয়াভহ হয়ে উঠতে পারে। যথাসময় ওদের স্বরূপ জাতির সামনে তুলে ধরলে রাষ্ট্র ও জাতি সে বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারে। এই কারণে সত্যিকার সাংবাদিক অপ্রীতিকর কর্তব্য পালনের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেনা।”
জনমতকে রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণের পথে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা এবং জনশক্তিকে দেশ গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে উদ্বুদ্ধ করে তোলা সাংবাদিকদের প্রধানতম দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সংবাদপত্রের ভূমিকা ও দায়িত্ব বলতে বোঝায় সাংবাদিকদের সম্মিলিত ভূমিকা ও দায়িত্বের যোগফল। সুষ্ঠভাবে সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের সেবা, দেশ ও জাতির খেদমত করার জন্য দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্য সচেতনতাই যথেষ্ট নয়। এর জন্য এই বিশেষ পেশায় জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার দরকার। সংবাদপত্র সেবার মাধ্যমে সাংবাদিকতা বিষয়ে জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় বটে, কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণের বিশেষ প্রয়োজনীয়তার মূল্য আছে। সুষ্ঠু সাংবাদিকতা উন্নতমানের সংবাদপত্র পরিচালনা, দেশ ও জাতি গঠন এবং উন্নয়ন যাই বলিনা কেন, ফোর্থ এজেন্ট অর্থৎ শক্তিশালী গণসংযোগ ও প্রচার মাধ্যম সংবাদপত্র সেবিদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অপরিহার্য। সভ্যতার অগ্রগতি ও বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উন্নতির যুগেও বর্তমান জ্ঞানের এলাকা ও দিগন্ত অনেক প্রসারিত হয়েছে। সুষ্ঠ ও উন্নতমানের সাংবাদিকতা, সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশ ও জাতি গঠন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দরকার বিভিন্ন বিষয়ে যথাসম্ভব নির্ভুল ও গভীর জ্ঞান অর্জন। উন্নয়ন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ওপর নির্ভশীল। জ্ঞান বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজনীতি, ইতিহাস – ভুগোল, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, সব কিছুই জ্ঞানের ক্ষেত্রে পরস্পর সম্পৃক্ত। সুষ্ঠু ও সার্থক সাংবাদিকতার জন্যে সব বিষয়েই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন দরকার।

লেখক- প্রবীণ সাংবাদিক ও জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি।