ঢাকা ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ “২৬শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ” –মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে ৫৩ কেজি গাঁজাসহ ০৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; মাদক বহনে ব্যবহৃত পিকআপ জব্দ। “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ

দেবিদ্বারে মায়ের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় একমাত্র ৫ বছরের মেয়েকে হত্যা। দেবিদ্বারে পরকীয়া ও আপত্তিকর ঘটনা ধামাচাপা দিতে নিজের ৫ বছরের সন্তানকে হত্যা।

মনির খাঁন স্টাফ রিপোর্টার।

পরকীয়া ও আপত্তিকর ঘটনা ধামাচাপা দিতেই নিজের ৫ বছরের সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাবা আমির হোসেন। এমনকি ফাহিমাকে হত্যার পর স্ত্রীকেও হত্যা কিংবা ডিভোর্স দিয়ে প্রতিবেশী লাইলি আক্তারকে নিয়ে সংসার শুরু করার পরিকল্পনা ছিল তার। মেয়েকে খুনের পর বাবা নিজেই নিখোঁজ সন্তানের সন্ধ্যান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করেন, বিভিন্ন স্থানে খোঁজা-খুঁজি করেন। থানায় জিডি ও মামলা দায়ের করেন।
পরে শিশু ফাহিমার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের পর ব্যবহৃত বস্তার সূত্র ধরে বাবা আমির হোসেনসহ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১১)। কুমিল্লার দেবিদ্বারে এ ঘটনা ঘটেছে।
গ্রেফতাররা হলেন শিশুটির বাবা আমির হোসেন (২৫), রবিউল আউয়াল (১৯), রেজাউল ইসলাম ইমন (২২), মোসা. লাইলি আক্তার (৩০) ও সোহেল রানা (২৭)।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর বিকেলে কুমিল্লার দেবিদ্বারে ৫ বছরের শিশু ফাহিমা আক্তার নিখোঁজ হয়। ফাহিমার বাবা আমির হোসেন দেবিদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজ হওয়ার পর ভিকটিমের বাবা আমির ৭ ও ৮ নভেম্বর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে। এমনকি ৮ নভেম্বর ঝাড়-ফুঁক দিয়ে মেয়েকে খোঁজার জন্য একজন ফকির-কবিরাজকেও খবর দেয়।
১৪ নভেম্বর দেবিদ্বারের এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর নজরুল মাস্টারের বাড়ির সামনে কালভার্টের নিচে থেকে নিহত ভিকটিমের বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ঘাতক বাবা আমির বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছায়া তদন্তের ধারাবাহিকতায় শিশুটির বাবাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিহত ফাহিমার বাবা আমিরের সঙ্গে গ্রেফতার লাইলির পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। ৫ নভেম্বর লাইলি ও আমিরকে ফাহিমা আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। এতে লাইলি ও আমির উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং লাইলি এই বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমিরকে চাপ দিতে থাকেন।

লাইলির প্ররোচনায় ৬ নভেম্বর ঘাতক আমির অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ফাহিমাকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করার জন্য ধারালো ছুরি ও হত্যার পর মরদেহ লুকানোর জন্য দুইটি প্লাস্টিকের বস্তা সংগ্রহ করেন। পরে তারা ফাহিমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ৭ নভেম্বর বিকেলে কৌশলে চকলেট কিনে দেওয়া ও বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে সোহেল রানার সিএনজিতে করে দেবিদ্বার পুরান বাজারের দক্ষিণে নদীর নির্জন স্থানে ফাহিমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লাইলির উপস্থিতিতে আমির তার মেয়ে ফাহিমার মুখে চেপে ধরে রাখে ও সর্ব প্রথম নিজেই মেয়েকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে আমির। রবিউল ভিকটিমের পায়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে, রেজাউল ইসলাম ইমন ছুরি দিয়ে পায়ে ও শরীরে এলোপাথাড়ি আঘাত করে, সোহেল ছুরি দিয়ে ভিকটিমের পেছনে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। পরে বাবা আমির নিজেই ফাহিমার গলায় চেপে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে মেয়েটির মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সিএনজিতে করে ইমনের গরুর ঘরে ড্রামে লুকিয়ে রাখে। ৯ নভেম্বর রাতে সোহেল রানার সিএনজিতে করে আমির, রবিউল, ইমন বস্তাবন্দি ফাহিমার মরদেহ দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর কালভার্টের নিচে ডোবায় ফেলে দেয়।

র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, ফাহিমাকে হত্যার পর গরুর খাবারের ২৫ কেজির একটি বস্তায় ভরে ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল মরদেহটি। সেটিই প্রথম আমলে নেয় র‍্যাব ও গোয়েন্দার সদস্যরা। বস্তার খোঁজে পার্শ্ববর্তী দুটি গরুর খামারে অভিযানে যায়। সেখানে ইমনের বাবার খামারে গিয়ে ২৫ কেজি গরুর খাবারের বস্তা দেখেন র‍্যাব সদস্যরা। এরপর ইমনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য। এরপর একে একে গ্রেফতার করা হয় বাবা আমিরসহ বাকিদের।
তারিখ:- ১৭-১১-২১ ইং

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

দেবিদ্বারে মায়ের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় একমাত্র ৫ বছরের মেয়েকে হত্যা। দেবিদ্বারে পরকীয়া ও আপত্তিকর ঘটনা ধামাচাপা দিতে নিজের ৫ বছরের সন্তানকে হত্যা।

আপডেট টাইম ০৬:৫৮:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১

মনির খাঁন স্টাফ রিপোর্টার।

পরকীয়া ও আপত্তিকর ঘটনা ধামাচাপা দিতেই নিজের ৫ বছরের সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাবা আমির হোসেন। এমনকি ফাহিমাকে হত্যার পর স্ত্রীকেও হত্যা কিংবা ডিভোর্স দিয়ে প্রতিবেশী লাইলি আক্তারকে নিয়ে সংসার শুরু করার পরিকল্পনা ছিল তার। মেয়েকে খুনের পর বাবা নিজেই নিখোঁজ সন্তানের সন্ধ্যান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করেন, বিভিন্ন স্থানে খোঁজা-খুঁজি করেন। থানায় জিডি ও মামলা দায়ের করেন।
পরে শিশু ফাহিমার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের পর ব্যবহৃত বস্তার সূত্র ধরে বাবা আমির হোসেনসহ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১১)। কুমিল্লার দেবিদ্বারে এ ঘটনা ঘটেছে।
গ্রেফতাররা হলেন শিশুটির বাবা আমির হোসেন (২৫), রবিউল আউয়াল (১৯), রেজাউল ইসলাম ইমন (২২), মোসা. লাইলি আক্তার (৩০) ও সোহেল রানা (২৭)।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর বিকেলে কুমিল্লার দেবিদ্বারে ৫ বছরের শিশু ফাহিমা আক্তার নিখোঁজ হয়। ফাহিমার বাবা আমির হোসেন দেবিদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজ হওয়ার পর ভিকটিমের বাবা আমির ৭ ও ৮ নভেম্বর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে। এমনকি ৮ নভেম্বর ঝাড়-ফুঁক দিয়ে মেয়েকে খোঁজার জন্য একজন ফকির-কবিরাজকেও খবর দেয়।
১৪ নভেম্বর দেবিদ্বারের এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর নজরুল মাস্টারের বাড়ির সামনে কালভার্টের নিচে থেকে নিহত ভিকটিমের বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ঘাতক বাবা আমির বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছায়া তদন্তের ধারাবাহিকতায় শিশুটির বাবাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিহত ফাহিমার বাবা আমিরের সঙ্গে গ্রেফতার লাইলির পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। ৫ নভেম্বর লাইলি ও আমিরকে ফাহিমা আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। এতে লাইলি ও আমির উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং লাইলি এই বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমিরকে চাপ দিতে থাকেন।

লাইলির প্ররোচনায় ৬ নভেম্বর ঘাতক আমির অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ফাহিমাকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করার জন্য ধারালো ছুরি ও হত্যার পর মরদেহ লুকানোর জন্য দুইটি প্লাস্টিকের বস্তা সংগ্রহ করেন। পরে তারা ফাহিমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ৭ নভেম্বর বিকেলে কৌশলে চকলেট কিনে দেওয়া ও বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে সোহেল রানার সিএনজিতে করে দেবিদ্বার পুরান বাজারের দক্ষিণে নদীর নির্জন স্থানে ফাহিমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লাইলির উপস্থিতিতে আমির তার মেয়ে ফাহিমার মুখে চেপে ধরে রাখে ও সর্ব প্রথম নিজেই মেয়েকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে আমির। রবিউল ভিকটিমের পায়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে, রেজাউল ইসলাম ইমন ছুরি দিয়ে পায়ে ও শরীরে এলোপাথাড়ি আঘাত করে, সোহেল ছুরি দিয়ে ভিকটিমের পেছনে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। পরে বাবা আমির নিজেই ফাহিমার গলায় চেপে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে মেয়েটির মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সিএনজিতে করে ইমনের গরুর ঘরে ড্রামে লুকিয়ে রাখে। ৯ নভেম্বর রাতে সোহেল রানার সিএনজিতে করে আমির, রবিউল, ইমন বস্তাবন্দি ফাহিমার মরদেহ দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর কালভার্টের নিচে ডোবায় ফেলে দেয়।

র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, ফাহিমাকে হত্যার পর গরুর খাবারের ২৫ কেজির একটি বস্তায় ভরে ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল মরদেহটি। সেটিই প্রথম আমলে নেয় র‍্যাব ও গোয়েন্দার সদস্যরা। বস্তার খোঁজে পার্শ্ববর্তী দুটি গরুর খামারে অভিযানে যায়। সেখানে ইমনের বাবার খামারে গিয়ে ২৫ কেজি গরুর খাবারের বস্তা দেখেন র‍্যাব সদস্যরা। এরপর ইমনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য। এরপর একে একে গ্রেফতার করা হয় বাবা আমিরসহ বাকিদের।
তারিখ:- ১৭-১১-২১ ইং