ঢাকা ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন “বাংলাদেশের হিট অফিসার কী করছেন? হিট নিয়ন্ত্রণে “ অগ্নিকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে অনুদানের নগদ অর্থ সহায়তায়: আ জ ম নাসির “স্মার্ট সুদহারে বিপাকে ব্যবসায়ীরা ঢাকা মতিঝিলে ইসতেস্কার নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

দিল্লির সংঘাতের মূলে, কাজিয়ার গোড়ায় রয়েছে ফ্যাসিজম, ধর্ম নয়

মাতৃভূমি ডেস্ক : ‘যারা শুধু হিন্দু মুসলিম নিয়ে আলাপ করছেন, তাদের জন্য করুণা হয়। ধর্ম যদি না থাকতো তবে সাদা-কালো নিয়ে সংঘাত সৃষ্টি হতো, করতো এখন যারা করছেন তারাই। সাদা-কালো না হলেও পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ নিয়ে কাজিয়া শুরু করতো তাদের ছায়ারাই।

এখানে কোনো ধর্মের সংঘাত নেই, বর্ণের নেই, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব নেই। এ দ্বন্দ্ব-সংঘাত ফ্যাসিজমের, ফ্যাসিস্ট সৃষ্ট।’ এ লেখাটুকু আমার সামাজিকমাধ্যমে করা মন্তব্য। ভারতের দিল্লিকান্ডে এর বেশি আর আমার বুদ্ধিতে কুলালো না। গুজরাটের ঘটনার পরও একই রকম কথা বলেছিলাম। বিজেপি আসার পর ভারত জুড়ে যা ঘটছে তা শুধুই রাজনীতি এবং সেই রাজনীতি ফ্যাসিজমের মধ্যরূপ। প্রথম রূপ ছিলো মিষ্টি কথা বলে ক্ষমতায় আসা। যেমন হিটলার এসেছিলেন।

রাজনীতিতে এসে তিনি প্রথমে জাতীয়তাবাদের কথা বলেন। তারপর ছড়ান ইহুদি বিদ্বেষ, বলেন সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে। আর সে কথা বলার ধরণ ছিল মোহনীয়। মানুষ তাতে আকৃষ্ট হয় এবং হিটলার জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। একই অবস্থা ভারতের।

বিজেপি এবং মোদি একই কাজটি করেছেন। প্রথমে জাতীয়তাবাদের নামে মানুষকে আপ্লুত করেছেন। পরে মুসলিম বিদ্বেষের নামে মানুষকে তাতিয়ে তুলেছেন। তারপর বলেছেন সেকুলারিজম নিয়ে। সে বলার ভঙ্গিও ছিলো আকর্ষণীয়। ফলে জনপ্রিয় হয়েছিলেন মোদি এবং বিজেপি। এই পরিসরে বলে রাখি, ভারতের সেকুলারিজম আর আমাদের এখানে সেকুলারিজমের নামে প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষতার পার্থক্য রয়েছে। ভারতের সেকুলারিজম সব ধর্মকে সাথে নিয়েই, সবাইকে সমান স্পেস দেয়ার লক্ষ্যে। কোন ধর্মকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে নয়। আর আমাদের সেকুলারিজম বেশিটাই হলো ইসলাম বিদ্বেষ। বিজেপি সব ধর্মকে সমান স্পেস দেয়া সেকুলারিজমেরই বিরুদ্ধাচারণ করেছে-করছে।

এই হয়। সব ফ্যাসিস্টের ফর্ম মোটামুটি এক। ফ্যাসিজমের কার্যক্রমও তাই। সেটা মোদির বিজেপি হোক বা হোক অন্য কেউ বা কারো দল। সেদিনও দেখলাম ‘ডয়চে ভেলে’ ফ্যাসিজমের দশটি উপসর্গের কথা মনে করিয়ে দিলো। তবে ফ্যাসিজমের বড় দিক হলো কথা বলতে না দেয়া। মানুষকে প্রতিবাদ করতে না দেয়া। সে হোক শ্লোগান, বক্তব্য- বিবৃতি কিংবা লেখনিতে। দিল্লিতেও তাই হচ্ছে। সাংবাদিকদের প্যান্ট খুলে ধর্ম যাচাই তারই উদাহরণ।

প্রায় সবাই দিল্লি ম্যাসাকারকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন। এটা স্রেফ বোকামী। অ্যামেরিকাতেও সংঘাত হয় এবং তা ধর্ম নয় বর্ণ নিয়ে। সেখানে এই সভ্য যুগেও টিকে আছে সাদা আর কালোর বিভেদ। হুতু-তুতসিদের মধ্যে ম্যাসাকার সবারই জানা, সেটাও ধর্ম নিয়ে নয়, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়গত। রাজনীতিতেও সংঘাত রয়েছে। রয়েছে নিজদলের মধ্যে উপদলীয় কোন্দল। এর কোনটারই সঙ্গে ধর্মের যোগসাজশ নেই, তবু সংঘাত হয়, প্রাণ যায় মানুষের। ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী, উপদল এগুলো হলো সংঘাতের উছিলা। অন্য কথায় উপকরণ। আর এই উছিলা বা উপকরণের ব্যবহার হয় ক্ষমতা আর বিত্তের লোভে। লোভী মানুষেরা নিজেদের প্রয়োজনে যখন যে উপকরণ সেটা বেছে নেয়।

আপনি সারা ভারতবর্ষের মানুষদের ধর্মহীন বলে ঘোষণা দিন, ভাবছেন সংঘাত থেমে যাবে। যাবে না। শুরু হবে গোষ্ঠীগত সংঘাত। আঞ্চলিকতা নিয়ে সংঘাত। সামাজিক আচার-আচরণ নিয়ে সংঘর্ষ। এগুলো করবে তারাই, এখন যারা ধর্ম নিয়ে করছেন। সুযোগ পেলে তারা দক্ষিণ ভারতীয়দের অপেক্ষাকৃত কালো বর্ণের সাথে কাশ্মিরের ফর্সা মানুষের সংঘাত বাধিয়ে দেবে। তাদের প্রয়োজন বিভেদের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখা। সুতরাং ঝামেলা এরা করবেই।

ফ্যাসিজম মানেই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতেই বিভেদ তৈরি। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতার মোহ ক্রমেই মারাত্মক হয়ে উঠছে। যার ফলেই বাকস্বাধীনতার উপর আঘাত আসছে। গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তবে এরমধ্যে কিছুটা আশার আলো জ্বালিয়েছে ইমরান খানের একটি টুইট। তিনি কঠিন ভাবে নিজ দেশের লোকদের সতর্ক করেছেন কোনো মাইনরিটি’র ওপর চড়াও না হতে। পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছেন, তারাও নাগরিক পাকিস্তানের এবং সমান। এটা অনেকে রাজনীতি ভাবতে পারেন, বলতেও পারেন। তবে বাস্তবতা এটাই। অন্তত ইমরান খান অনুভব করেছেন, ভারতের সংঘাতের ঢেউ উপমহাদেশে আছড়ে পড়তে পারে। যা থেকে পাকিস্তানও রেহাই পাবে না। তিনি অন্তত বিষয়টি শুধু ভারতেই আভ্যন্তরীণ এমন ভেবে এবং বলে ক্ষান্ত হননি। নিজ দেশের মাইনরিটি’র কথা ভেবেছেন।

পাকিস্তানের মতন বিতর্কিত এবং সাম্প্রদায়িক তকমা পাওয়া দেশের সরকার প্রধানের এমন টুইট সত্যিই আশা জাগায়। তবে নিরাশার দিকও রয়েছে। তা হলো, কোনো ক্ষেত্রে বিষয়টিকে স্রেফ ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে ভাবা। ভারতের মতন একটা বড় দেশ, যেখানে সব জাতি-ধর্মের লোক রয়েছে, সেখানে কোনো কিছু ঘটলে তার রেশ সারা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়াবে এটাই স্বাভাবিক। বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাপ্রবাহ তাই প্রমান করে। তারপরেও বিষয়টি ভারতের নিজস্ব এমন ভাবা কতটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহণ করে প্রশ্নটা সেখানেই।

একই সঙ্গে দিল্লির ঘটনার সঙ্গে যারা ধর্মকে জড়াতে চান তারাও রয়েছেন বোকার স্বর্গে। খুনিদের কোনো ধর্ম নেই। নিরস্তর মানুষকে যারা খুন করে এবং তাদের যারা সমর্থন ও সাহস জোগান তারা ধর্ম বিশ্বাসী বা ধর্মপ্রাণ এটা মানার কোনো যুক্তি নেই। ধর্ম মানুষকে নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া প্রাণহরণের অনুমতি দেয় না। সে যে ধর্মই হোক। আইনও তাই বলে। শুধু ফ্যাসিজমের ভাষা অন্যটা। ধ্বংস আর মৃত্যুই হলো ফ্যাসিজমের সঞ্জীবনি। ধ্বংস আর মৃত্যুর উপরই ফ্যাসিজম টিকে থাকে। ভয়-ধ্বংস-মৃত্যু এই তিনটি জিনিসই ফ্যাসিজমের মূল কাজ। মানুষের মনে ভয় ঢুকাতে ফ্যাসিস্টরা প্রথমে ধ্বংস করে এবং পরে হত্যা করে। যেমন দিল্লিতে করছে। যেমন হিটলার করেছেন। উগান্ডার ইদি আমিন আরেকজন। দক্ষিণ এশিয়াও আক্রান্ত আজ ‘হিটলার সিনড্রমে’।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন

দিল্লির সংঘাতের মূলে, কাজিয়ার গোড়ায় রয়েছে ফ্যাসিজম, ধর্ম নয়

আপডেট টাইম ০৭:০৫:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ মার্চ ২০২০

মাতৃভূমি ডেস্ক : ‘যারা শুধু হিন্দু মুসলিম নিয়ে আলাপ করছেন, তাদের জন্য করুণা হয়। ধর্ম যদি না থাকতো তবে সাদা-কালো নিয়ে সংঘাত সৃষ্টি হতো, করতো এখন যারা করছেন তারাই। সাদা-কালো না হলেও পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ নিয়ে কাজিয়া শুরু করতো তাদের ছায়ারাই।

এখানে কোনো ধর্মের সংঘাত নেই, বর্ণের নেই, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব নেই। এ দ্বন্দ্ব-সংঘাত ফ্যাসিজমের, ফ্যাসিস্ট সৃষ্ট।’ এ লেখাটুকু আমার সামাজিকমাধ্যমে করা মন্তব্য। ভারতের দিল্লিকান্ডে এর বেশি আর আমার বুদ্ধিতে কুলালো না। গুজরাটের ঘটনার পরও একই রকম কথা বলেছিলাম। বিজেপি আসার পর ভারত জুড়ে যা ঘটছে তা শুধুই রাজনীতি এবং সেই রাজনীতি ফ্যাসিজমের মধ্যরূপ। প্রথম রূপ ছিলো মিষ্টি কথা বলে ক্ষমতায় আসা। যেমন হিটলার এসেছিলেন।

রাজনীতিতে এসে তিনি প্রথমে জাতীয়তাবাদের কথা বলেন। তারপর ছড়ান ইহুদি বিদ্বেষ, বলেন সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে। আর সে কথা বলার ধরণ ছিল মোহনীয়। মানুষ তাতে আকৃষ্ট হয় এবং হিটলার জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। একই অবস্থা ভারতের।

বিজেপি এবং মোদি একই কাজটি করেছেন। প্রথমে জাতীয়তাবাদের নামে মানুষকে আপ্লুত করেছেন। পরে মুসলিম বিদ্বেষের নামে মানুষকে তাতিয়ে তুলেছেন। তারপর বলেছেন সেকুলারিজম নিয়ে। সে বলার ভঙ্গিও ছিলো আকর্ষণীয়। ফলে জনপ্রিয় হয়েছিলেন মোদি এবং বিজেপি। এই পরিসরে বলে রাখি, ভারতের সেকুলারিজম আর আমাদের এখানে সেকুলারিজমের নামে প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষতার পার্থক্য রয়েছে। ভারতের সেকুলারিজম সব ধর্মকে সাথে নিয়েই, সবাইকে সমান স্পেস দেয়ার লক্ষ্যে। কোন ধর্মকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে নয়। আর আমাদের সেকুলারিজম বেশিটাই হলো ইসলাম বিদ্বেষ। বিজেপি সব ধর্মকে সমান স্পেস দেয়া সেকুলারিজমেরই বিরুদ্ধাচারণ করেছে-করছে।

এই হয়। সব ফ্যাসিস্টের ফর্ম মোটামুটি এক। ফ্যাসিজমের কার্যক্রমও তাই। সেটা মোদির বিজেপি হোক বা হোক অন্য কেউ বা কারো দল। সেদিনও দেখলাম ‘ডয়চে ভেলে’ ফ্যাসিজমের দশটি উপসর্গের কথা মনে করিয়ে দিলো। তবে ফ্যাসিজমের বড় দিক হলো কথা বলতে না দেয়া। মানুষকে প্রতিবাদ করতে না দেয়া। সে হোক শ্লোগান, বক্তব্য- বিবৃতি কিংবা লেখনিতে। দিল্লিতেও তাই হচ্ছে। সাংবাদিকদের প্যান্ট খুলে ধর্ম যাচাই তারই উদাহরণ।

প্রায় সবাই দিল্লি ম্যাসাকারকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন। এটা স্রেফ বোকামী। অ্যামেরিকাতেও সংঘাত হয় এবং তা ধর্ম নয় বর্ণ নিয়ে। সেখানে এই সভ্য যুগেও টিকে আছে সাদা আর কালোর বিভেদ। হুতু-তুতসিদের মধ্যে ম্যাসাকার সবারই জানা, সেটাও ধর্ম নিয়ে নয়, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়গত। রাজনীতিতেও সংঘাত রয়েছে। রয়েছে নিজদলের মধ্যে উপদলীয় কোন্দল। এর কোনটারই সঙ্গে ধর্মের যোগসাজশ নেই, তবু সংঘাত হয়, প্রাণ যায় মানুষের। ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী, উপদল এগুলো হলো সংঘাতের উছিলা। অন্য কথায় উপকরণ। আর এই উছিলা বা উপকরণের ব্যবহার হয় ক্ষমতা আর বিত্তের লোভে। লোভী মানুষেরা নিজেদের প্রয়োজনে যখন যে উপকরণ সেটা বেছে নেয়।

আপনি সারা ভারতবর্ষের মানুষদের ধর্মহীন বলে ঘোষণা দিন, ভাবছেন সংঘাত থেমে যাবে। যাবে না। শুরু হবে গোষ্ঠীগত সংঘাত। আঞ্চলিকতা নিয়ে সংঘাত। সামাজিক আচার-আচরণ নিয়ে সংঘর্ষ। এগুলো করবে তারাই, এখন যারা ধর্ম নিয়ে করছেন। সুযোগ পেলে তারা দক্ষিণ ভারতীয়দের অপেক্ষাকৃত কালো বর্ণের সাথে কাশ্মিরের ফর্সা মানুষের সংঘাত বাধিয়ে দেবে। তাদের প্রয়োজন বিভেদের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখা। সুতরাং ঝামেলা এরা করবেই।

ফ্যাসিজম মানেই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতেই বিভেদ তৈরি। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতার মোহ ক্রমেই মারাত্মক হয়ে উঠছে। যার ফলেই বাকস্বাধীনতার উপর আঘাত আসছে। গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তবে এরমধ্যে কিছুটা আশার আলো জ্বালিয়েছে ইমরান খানের একটি টুইট। তিনি কঠিন ভাবে নিজ দেশের লোকদের সতর্ক করেছেন কোনো মাইনরিটি’র ওপর চড়াও না হতে। পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছেন, তারাও নাগরিক পাকিস্তানের এবং সমান। এটা অনেকে রাজনীতি ভাবতে পারেন, বলতেও পারেন। তবে বাস্তবতা এটাই। অন্তত ইমরান খান অনুভব করেছেন, ভারতের সংঘাতের ঢেউ উপমহাদেশে আছড়ে পড়তে পারে। যা থেকে পাকিস্তানও রেহাই পাবে না। তিনি অন্তত বিষয়টি শুধু ভারতেই আভ্যন্তরীণ এমন ভেবে এবং বলে ক্ষান্ত হননি। নিজ দেশের মাইনরিটি’র কথা ভেবেছেন।

পাকিস্তানের মতন বিতর্কিত এবং সাম্প্রদায়িক তকমা পাওয়া দেশের সরকার প্রধানের এমন টুইট সত্যিই আশা জাগায়। তবে নিরাশার দিকও রয়েছে। তা হলো, কোনো ক্ষেত্রে বিষয়টিকে স্রেফ ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে ভাবা। ভারতের মতন একটা বড় দেশ, যেখানে সব জাতি-ধর্মের লোক রয়েছে, সেখানে কোনো কিছু ঘটলে তার রেশ সারা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়াবে এটাই স্বাভাবিক। বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাপ্রবাহ তাই প্রমান করে। তারপরেও বিষয়টি ভারতের নিজস্ব এমন ভাবা কতটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহণ করে প্রশ্নটা সেখানেই।

একই সঙ্গে দিল্লির ঘটনার সঙ্গে যারা ধর্মকে জড়াতে চান তারাও রয়েছেন বোকার স্বর্গে। খুনিদের কোনো ধর্ম নেই। নিরস্তর মানুষকে যারা খুন করে এবং তাদের যারা সমর্থন ও সাহস জোগান তারা ধর্ম বিশ্বাসী বা ধর্মপ্রাণ এটা মানার কোনো যুক্তি নেই। ধর্ম মানুষকে নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া প্রাণহরণের অনুমতি দেয় না। সে যে ধর্মই হোক। আইনও তাই বলে। শুধু ফ্যাসিজমের ভাষা অন্যটা। ধ্বংস আর মৃত্যুই হলো ফ্যাসিজমের সঞ্জীবনি। ধ্বংস আর মৃত্যুর উপরই ফ্যাসিজম টিকে থাকে। ভয়-ধ্বংস-মৃত্যু এই তিনটি জিনিসই ফ্যাসিজমের মূল কাজ। মানুষের মনে ভয় ঢুকাতে ফ্যাসিস্টরা প্রথমে ধ্বংস করে এবং পরে হত্যা করে। যেমন দিল্লিতে করছে। যেমন হিটলার করেছেন। উগান্ডার ইদি আমিন আরেকজন। দক্ষিণ এশিয়াও আক্রান্ত আজ ‘হিটলার সিনড্রমে’।