ঢাকা ১০:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ “২৬শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ” –মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে ৫৩ কেজি গাঁজাসহ ০৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; মাদক বহনে ব্যবহৃত পিকআপ জব্দ। “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ

দাম্পত্যজীবনের একযুগ পূরণ করলেন এড. তাপস

স্টাফ রিপোর্টার।। দাম্পত্যজীবনের একযুগ পার করেছে দম্পতি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি প্রেসক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক ও ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলাধীন লামচরী গ্রামের কৃতি সন্তান এডভোকেট তাপস চন্দ্র সরকার ও রিতা রাণী মজুমদার। গত ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর কালিয়াজুরীতে নিজবাস ভবনে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় আনন্দঘন পরিবেশে তাদের ১২তম বিবাহবার্ষিকী পালিত হয়। বৈবাহিক জীবনে দুই সন্তান নিয়ে সুখের সংসার তাদের। এই দম্পতি (তাপস ও রিতা) কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কুমিল্লা বারের বিজ্ঞ আইনজীবী ও কুমিল্লায় কর্মরত সাংবাদিক বন্ধুরা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এড. তাপস ও তাঁর পরিবার কখনোই বিবাহবার্ষিকী এবং জন্মদিন ধুমধামভাবে করে পালন করেন না। এক্ষেত্রে সবার কাছে আশীর্বাদ চেয়েছেন এই দম্পতি। এড. তাপস এর পিতা স্বর্গীয় নিখিল চন্দ্র সরকার ছিলেন- কুমিল্লা আইনজীবী সহকারী সমিতির সিনিয়র সদস্য।
তদুপলক্ষে আগত অতিথিদের মাঝে বিভিন্ন রকমের ফল-ফলাদি ও মিষ্টিসহ মুখরোচক খাবার বিতরণ করা হয়।
এদিকে, যুগলজীবনের একযুগ পূর্তিতে এডভোকেট তাপস চন্দ্র সরকার বলেন- দেখতে দেখতে বিয়ের ১২ বছর কাটিয়ে দিলাম। এই ১২ বছরের সংসারজীবনে সবচাইতে সুন্দর উপহার আমাদের পুত্র-কন্যা।বিয়ের ৩ বছর পর আমাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেন ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুআরি কন্যা অর্পিতা সরকার এবং বিয়ের পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুত্র অরণ্য সরকার প্রিন্স। ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্থাৎ বিজয় দিবসের দিন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কেরণখাল ইউনিয়নস্থিত ডুমুরিয়া গ্রামের মজুমদার বাড়ীর নিবাসী স্বর্গীয় যোগেশ চন্দ্র মজুমদার এর জ্যেষ্ঠ ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ি সুবাস চন্দ্র মজুমদার এর ঔরসজাত ও কাজল রাণী মজুমদার এর গর্ভজাত একমাত্র কন্যা সন্তান রিতা রাণী মজুমদার এর সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। সবাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন।
তিনি আরও বলেন- সে আমাকে সহ্য করেছে, আমি তাকে সহ্য করেছি-দীর্ঘ বারোটি বছর। দিনটি ছিল ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর । তার আর আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। আজ থেকে একযুগ আগে ঠিক এই দিনটিতে আমরা একে অন্যের হাত ধরেছিলাম, জীবনের পথে একসঙ্গে হাঁটবো বলে (মাঝে মাঝে ঝগড়া করবো বলে) । পুরোহিতের মাধ্যমে মন্ত্রপাঠপূর্বক শপথ নিয়েছিলাম সারাজীবন পাশাপাশি থাকবো। তারপর দেখতে দেখতে বারটি বছর । এই দীর্ঘ সময় আমরা একই ছাদের নিচে বাস করেছি, একে অন্যকে সহ্য করেছি, ভালোবেসেছি, ঝগড়া করেছি (পাড়া প্রতিবেশী সাক্ষী), সুখ-দুঃখ শেয়ার করেছি, একে অন্যের নিঃশ্বাসের ব্যবধানে থেকে রচনা করেছি কতো আনন্দ-বেদনার কাব্য; নির্মাণ করেছি কত স্মৃতি, যাপন করেছি একটি টক-ঝাল-মিষ্টি এবং তিতা দাম্পত্য জীবন। হ্যাঁ বন্ধুরা, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিবাহের একযুগ পূর্তি হলো । মুনি-ঋষিরা বলে গেছেন- মানুষ চিনতে নাকি বারো বছর লাগে (একদম মিছা কথা, টাইম আরো বেশী লাগে ) । কিন্তু দীর্ঘ বার বছরের দাম্পত্যজীবনে আমি তাকে কতটুকু চিনেছি জানিনা, তবে এটুকুই বলতে পারি, তাকে ছাড়া এবং তার সান্নিধ্য ছাড়া আমার একদিনও চলবে না (এইটা সত্য কথা )। সে আমার স্বপ্নদ্রষ্টা, সে আমার সুখ-দুঃখের সঙ্গী (ঝগড়ার সাথীও), আমার সকল কাজের প্রেরণা, সে আমার ভালোবাসা। আবার সে আমার প্রথম সমালোচক (নাকি নিন্দুক )। আমার প্রতিটি ভুল পদক্ষেপ সে দেখিয়ে দেয় (চোখে আঙুল দিয়ে) । আমার প্রতিটি অসংযত আচরণ সহ্য করে পরম ধৈর্য আর সহনশীলতা নিয়ে। আমি প্রায়ই তার যুক্তির কাছে (প্যাঁচের কাছে ) হেরে যাই, তার ভালোবাসার কাছে অবনত হই, তার আচরণের কাছে বিনম্র হই। তবে পাশাপাশি এটাও সত্য যে মাঝে মাঝে তাকে আমার অসহ্য লাগে (একদম খাঁটি কথা )। তার একরোখা (স্বৈরাচারী ) মনোভাব, তুখোড় খবরদারিতে অতিষ্ঠ হয়ে প্রায়ই ভাবি, আমার স্বাধীনতা বুঝি তার হাতে বন্দী ! কিন্তু তারপরও আমি প্রতি পলে পলে তার ভালোবাসা অনুভব করি। আমার সামান্য অসুস্থতায় তার গভীর উৎকণ্ঠা আমাকে যার পর নাই তৃপ্তি দেয় । নিজের সৌভাগ্য দেখে মাঝে মাঝে নিজেরই ঈর্ষা হয় আমার । তাই যতদিন বাঁচি, তার পাশেই থাকতে চাই, তাকে নিয়েই শেষ করতে চাই সকল পথ চলা (সে ছাড়া ঝগড়া করমু কার লগে)। আমি পরজনমে বিশ্বাসী নই, তবুও পরজনম বলে যদি সত্যিই কিছু থাকে, সে জনমেও জীবন সঙ্গী হিসেবে শুধু তাকেই চাই (তার লগে কাঁঠালের আঠার মতো লাইগা থাকতে চাই )।
তিনি বলেন- দাম্পত্য জীবনে সুখের জন্য দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রেম করার সময় আমাদের আবেগ বেড়ে যায়, আর বিয়ে করার পরপরই আমাদের বিবেক ও মনুষ্যত্ব দুটিই লোপ পায়। সংসার জীবনে সুখে থাকতে একে অন্যের প্রতি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সঠিক বোঝাপড়া, সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাভাব জাগ্রত হওয়া উচিত। অথচ আমরা অনেক সময় একে অন্যকে অবহেলা করি, শারীরিক আকর্ষণের উন্মাদনা শেষে একজনের কাছে অন্যজনকে অসহ্য লাগা শুরু হয়, সামান্য বিষয় নিয়ে একে অন্যের প্রতি ভুল বোঝাবোঝির শুরু করি। অধিকাংশ সময় আমরা ভুলেই যাই যে, সংসার জীবন মানে একটি দায়িত্ববোধের ব্যাপার। আমরা শুধু ভোগ করাকেই সংসার ভাবি ! অথচ ভোগ আর উপভোগের মাঝখানে যে একটা বিরাট ফারাক আছে, সেটা বুঝতে কষ্ট হয় বলেই আমাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি চলে আসে। প্রতিদিন নিয়ম করে একে অন্যের নগ্ন দেহ ভোগ করার মানে সংসার নয়! সংসার মানে দুটি তরুণ-তরুণী অজস্র সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার মধ্যদিয়ে সারা জীবন একত্রে চলার জন্য দৃঢ়ভাবে শপথ নেয়া। প্রকৃত ভালবাসায় কখনো অনিহা আসেনা। তাই যৌন চাহিদা মেটানোর পরেই বিপরীত লিঙ্গের মানুষটিকে পাশ কাটিয়ে শুয়ে পরার মানে সংসার বলা যায়না। যৌন তৃপ্তির পরেও বিপরীত লিঙ্গের মানুষটিকে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, ঘুম পারিয়ে দেয়ার নাম সংসার। সংসার জীবন এক মধুর বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে সংসার জীবনের ভিত্তি শুরু হয়। সংসার জীবনে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি পারস্পারিক স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, দায়িত্ব ও কর্তব্য নিহিত রয়েছে। বিপরীত লিঙ্গের সমস্ত চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছা-অনিচ্ছার সাথে নিজের চাওয়া-পাওয়া ও ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে এক ও অভিন্ন ভাবে মিলিয়ে নিয়ে একত্রিত অনুভুতিতে প্রতিষ্ঠা করার নাম দাম্পত্য জীবন বা সংসার জীবন। আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক আছে যারা মনে করে, বিয়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র একে অন্যের দেহ ভোগ করার মানেই দাম্পত্য জীবন বা সংসার জীবন। তারা মনে করে যৌন মিলনের ছাড়পত্রই হচ্ছে বিয়ে। জোর করে শুধুমাত্র দেহ ভোগ করা যায় কিন্তু ভালোবাসা পাওয়া যায় না। ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা পেতে হয়। আর ভালোবাসার সাথে দেহ শব্দটা অভিচ্ছেদ্য। আমরা শুধুমাত্র বিপরীত লিঙ্গের দেহের স্বাদ ভোগ করতে শিখেছি। প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসতে শিখিনি। যার ফলে আমাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি চলে আসে। একে অন্যের প্রতি অবহেলা যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রকট আকার ধারণ করছে। বিপরীত লিঙ্গের সাথে নানা ধরনের মনোমালিন্যের সৃষ্টি হচ্ছে ভালবাসার অভাবে। দাম্পত্য জীবনে দেখা দিচ্ছে সমঝোতার পরিবর্তে ঝাগড়া-বিবাদের। ফলে যুবসমাজ বিয়ের প্রতি দিনদিন আগ্রহ হারাচ্ছে। সমকামিতার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে সমাজের একটি বিরাট অংশ। আমরা ছেলেরা সবচেয়ে বেশি স্বার্থপর। বিয়ের আগে প্রেম করার সময় কত সুন্দর আচরণ করি প্রেমিকার সাথে। অথচ বিয়ের পর আমরা ভুলে যাই যে, মেয়েদেরও ব্যক্তিত্ব বলে একটি জিনিস আছে। স্বতন্ত্র একটি মন আছে। আমরা সব সময় মেয়েদের উপর প্রভুত্ব করার চেষ্টা করি। অথচ আমরা যদি প্রভুত্ব করার পরিবর্তে সমঝোতার পথে চলতে পারতাম, তাহলে আমাদের দাম্পত্য জীবন সুখ শান্তিতে ভরে যেতো। বউ কোন যৌন দাসী নয়, জীবনসঙ্গী। এটাই হোক আমাদের দাম্পত্য জীবনের মৌলিক বিশ্বাস।
জানা যায়- দু’টি মানুষের সামাজিক বন্ধন নিয়ে তৈরি হওয়া একটি পথের নামই দাম্পত্য জীবন। বিবাহবন্ধন আসলে দুই পরিবারের দুইটি মানুষের একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার। আপাত দৃষ্টিতে দু’জন মানুষ নিয়ে তৈরি হওয়া একটি সম্পর্ক দেখা গেলেও এটা শুধুমাত্র দু’জনের নয় এখানে অনেক মানুষের সম্পর্ক জড়িত। দাম্পত্যজীবন মানেই বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে দুইটি পরিবারের গাঁথনি, সন্তান জন্ম দিয়ে তাদের গড়ে তোলা আর একসাথে পথচলার প্রতিশ্রুতি। সময় প্রবাহে ভিন্ন দুইটি মানুষের মধ্যে জন্ম নেয় প্রবল আস্থা। সূতা নেই তবুও বন্ধন, হাসি কান্নার এক মায়াবী জাল। এক কথায় সংসার মানেই মায়া। একে অপরের পছন্দের প্রতি সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হয়ে পথ চলাই দাম্পত্যজীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

দাম্পত্যজীবনের একযুগ পূরণ করলেন এড. তাপস

আপডেট টাইম ১২:৪৩:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার।। দাম্পত্যজীবনের একযুগ পার করেছে দম্পতি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি প্রেসক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক ও ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলাধীন লামচরী গ্রামের কৃতি সন্তান এডভোকেট তাপস চন্দ্র সরকার ও রিতা রাণী মজুমদার। গত ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর কালিয়াজুরীতে নিজবাস ভবনে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় আনন্দঘন পরিবেশে তাদের ১২তম বিবাহবার্ষিকী পালিত হয়। বৈবাহিক জীবনে দুই সন্তান নিয়ে সুখের সংসার তাদের। এই দম্পতি (তাপস ও রিতা) কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কুমিল্লা বারের বিজ্ঞ আইনজীবী ও কুমিল্লায় কর্মরত সাংবাদিক বন্ধুরা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এড. তাপস ও তাঁর পরিবার কখনোই বিবাহবার্ষিকী এবং জন্মদিন ধুমধামভাবে করে পালন করেন না। এক্ষেত্রে সবার কাছে আশীর্বাদ চেয়েছেন এই দম্পতি। এড. তাপস এর পিতা স্বর্গীয় নিখিল চন্দ্র সরকার ছিলেন- কুমিল্লা আইনজীবী সহকারী সমিতির সিনিয়র সদস্য।
তদুপলক্ষে আগত অতিথিদের মাঝে বিভিন্ন রকমের ফল-ফলাদি ও মিষ্টিসহ মুখরোচক খাবার বিতরণ করা হয়।
এদিকে, যুগলজীবনের একযুগ পূর্তিতে এডভোকেট তাপস চন্দ্র সরকার বলেন- দেখতে দেখতে বিয়ের ১২ বছর কাটিয়ে দিলাম। এই ১২ বছরের সংসারজীবনে সবচাইতে সুন্দর উপহার আমাদের পুত্র-কন্যা।বিয়ের ৩ বছর পর আমাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেন ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুআরি কন্যা অর্পিতা সরকার এবং বিয়ের পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুত্র অরণ্য সরকার প্রিন্স। ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্থাৎ বিজয় দিবসের দিন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কেরণখাল ইউনিয়নস্থিত ডুমুরিয়া গ্রামের মজুমদার বাড়ীর নিবাসী স্বর্গীয় যোগেশ চন্দ্র মজুমদার এর জ্যেষ্ঠ ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ি সুবাস চন্দ্র মজুমদার এর ঔরসজাত ও কাজল রাণী মজুমদার এর গর্ভজাত একমাত্র কন্যা সন্তান রিতা রাণী মজুমদার এর সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। সবাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন।
তিনি আরও বলেন- সে আমাকে সহ্য করেছে, আমি তাকে সহ্য করেছি-দীর্ঘ বারোটি বছর। দিনটি ছিল ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর । তার আর আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। আজ থেকে একযুগ আগে ঠিক এই দিনটিতে আমরা একে অন্যের হাত ধরেছিলাম, জীবনের পথে একসঙ্গে হাঁটবো বলে (মাঝে মাঝে ঝগড়া করবো বলে) । পুরোহিতের মাধ্যমে মন্ত্রপাঠপূর্বক শপথ নিয়েছিলাম সারাজীবন পাশাপাশি থাকবো। তারপর দেখতে দেখতে বারটি বছর । এই দীর্ঘ সময় আমরা একই ছাদের নিচে বাস করেছি, একে অন্যকে সহ্য করেছি, ভালোবেসেছি, ঝগড়া করেছি (পাড়া প্রতিবেশী সাক্ষী), সুখ-দুঃখ শেয়ার করেছি, একে অন্যের নিঃশ্বাসের ব্যবধানে থেকে রচনা করেছি কতো আনন্দ-বেদনার কাব্য; নির্মাণ করেছি কত স্মৃতি, যাপন করেছি একটি টক-ঝাল-মিষ্টি এবং তিতা দাম্পত্য জীবন। হ্যাঁ বন্ধুরা, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিবাহের একযুগ পূর্তি হলো । মুনি-ঋষিরা বলে গেছেন- মানুষ চিনতে নাকি বারো বছর লাগে (একদম মিছা কথা, টাইম আরো বেশী লাগে ) । কিন্তু দীর্ঘ বার বছরের দাম্পত্যজীবনে আমি তাকে কতটুকু চিনেছি জানিনা, তবে এটুকুই বলতে পারি, তাকে ছাড়া এবং তার সান্নিধ্য ছাড়া আমার একদিনও চলবে না (এইটা সত্য কথা )। সে আমার স্বপ্নদ্রষ্টা, সে আমার সুখ-দুঃখের সঙ্গী (ঝগড়ার সাথীও), আমার সকল কাজের প্রেরণা, সে আমার ভালোবাসা। আবার সে আমার প্রথম সমালোচক (নাকি নিন্দুক )। আমার প্রতিটি ভুল পদক্ষেপ সে দেখিয়ে দেয় (চোখে আঙুল দিয়ে) । আমার প্রতিটি অসংযত আচরণ সহ্য করে পরম ধৈর্য আর সহনশীলতা নিয়ে। আমি প্রায়ই তার যুক্তির কাছে (প্যাঁচের কাছে ) হেরে যাই, তার ভালোবাসার কাছে অবনত হই, তার আচরণের কাছে বিনম্র হই। তবে পাশাপাশি এটাও সত্য যে মাঝে মাঝে তাকে আমার অসহ্য লাগে (একদম খাঁটি কথা )। তার একরোখা (স্বৈরাচারী ) মনোভাব, তুখোড় খবরদারিতে অতিষ্ঠ হয়ে প্রায়ই ভাবি, আমার স্বাধীনতা বুঝি তার হাতে বন্দী ! কিন্তু তারপরও আমি প্রতি পলে পলে তার ভালোবাসা অনুভব করি। আমার সামান্য অসুস্থতায় তার গভীর উৎকণ্ঠা আমাকে যার পর নাই তৃপ্তি দেয় । নিজের সৌভাগ্য দেখে মাঝে মাঝে নিজেরই ঈর্ষা হয় আমার । তাই যতদিন বাঁচি, তার পাশেই থাকতে চাই, তাকে নিয়েই শেষ করতে চাই সকল পথ চলা (সে ছাড়া ঝগড়া করমু কার লগে)। আমি পরজনমে বিশ্বাসী নই, তবুও পরজনম বলে যদি সত্যিই কিছু থাকে, সে জনমেও জীবন সঙ্গী হিসেবে শুধু তাকেই চাই (তার লগে কাঁঠালের আঠার মতো লাইগা থাকতে চাই )।
তিনি বলেন- দাম্পত্য জীবনে সুখের জন্য দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রেম করার সময় আমাদের আবেগ বেড়ে যায়, আর বিয়ে করার পরপরই আমাদের বিবেক ও মনুষ্যত্ব দুটিই লোপ পায়। সংসার জীবনে সুখে থাকতে একে অন্যের প্রতি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সঠিক বোঝাপড়া, সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাভাব জাগ্রত হওয়া উচিত। অথচ আমরা অনেক সময় একে অন্যকে অবহেলা করি, শারীরিক আকর্ষণের উন্মাদনা শেষে একজনের কাছে অন্যজনকে অসহ্য লাগা শুরু হয়, সামান্য বিষয় নিয়ে একে অন্যের প্রতি ভুল বোঝাবোঝির শুরু করি। অধিকাংশ সময় আমরা ভুলেই যাই যে, সংসার জীবন মানে একটি দায়িত্ববোধের ব্যাপার। আমরা শুধু ভোগ করাকেই সংসার ভাবি ! অথচ ভোগ আর উপভোগের মাঝখানে যে একটা বিরাট ফারাক আছে, সেটা বুঝতে কষ্ট হয় বলেই আমাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি চলে আসে। প্রতিদিন নিয়ম করে একে অন্যের নগ্ন দেহ ভোগ করার মানে সংসার নয়! সংসার মানে দুটি তরুণ-তরুণী অজস্র সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার মধ্যদিয়ে সারা জীবন একত্রে চলার জন্য দৃঢ়ভাবে শপথ নেয়া। প্রকৃত ভালবাসায় কখনো অনিহা আসেনা। তাই যৌন চাহিদা মেটানোর পরেই বিপরীত লিঙ্গের মানুষটিকে পাশ কাটিয়ে শুয়ে পরার মানে সংসার বলা যায়না। যৌন তৃপ্তির পরেও বিপরীত লিঙ্গের মানুষটিকে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, ঘুম পারিয়ে দেয়ার নাম সংসার। সংসার জীবন এক মধুর বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে সংসার জীবনের ভিত্তি শুরু হয়। সংসার জীবনে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি পারস্পারিক স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, দায়িত্ব ও কর্তব্য নিহিত রয়েছে। বিপরীত লিঙ্গের সমস্ত চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছা-অনিচ্ছার সাথে নিজের চাওয়া-পাওয়া ও ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে এক ও অভিন্ন ভাবে মিলিয়ে নিয়ে একত্রিত অনুভুতিতে প্রতিষ্ঠা করার নাম দাম্পত্য জীবন বা সংসার জীবন। আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক আছে যারা মনে করে, বিয়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র একে অন্যের দেহ ভোগ করার মানেই দাম্পত্য জীবন বা সংসার জীবন। তারা মনে করে যৌন মিলনের ছাড়পত্রই হচ্ছে বিয়ে। জোর করে শুধুমাত্র দেহ ভোগ করা যায় কিন্তু ভালোবাসা পাওয়া যায় না। ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা পেতে হয়। আর ভালোবাসার সাথে দেহ শব্দটা অভিচ্ছেদ্য। আমরা শুধুমাত্র বিপরীত লিঙ্গের দেহের স্বাদ ভোগ করতে শিখেছি। প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসতে শিখিনি। যার ফলে আমাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি চলে আসে। একে অন্যের প্রতি অবহেলা যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রকট আকার ধারণ করছে। বিপরীত লিঙ্গের সাথে নানা ধরনের মনোমালিন্যের সৃষ্টি হচ্ছে ভালবাসার অভাবে। দাম্পত্য জীবনে দেখা দিচ্ছে সমঝোতার পরিবর্তে ঝাগড়া-বিবাদের। ফলে যুবসমাজ বিয়ের প্রতি দিনদিন আগ্রহ হারাচ্ছে। সমকামিতার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে সমাজের একটি বিরাট অংশ। আমরা ছেলেরা সবচেয়ে বেশি স্বার্থপর। বিয়ের আগে প্রেম করার সময় কত সুন্দর আচরণ করি প্রেমিকার সাথে। অথচ বিয়ের পর আমরা ভুলে যাই যে, মেয়েদেরও ব্যক্তিত্ব বলে একটি জিনিস আছে। স্বতন্ত্র একটি মন আছে। আমরা সব সময় মেয়েদের উপর প্রভুত্ব করার চেষ্টা করি। অথচ আমরা যদি প্রভুত্ব করার পরিবর্তে সমঝোতার পথে চলতে পারতাম, তাহলে আমাদের দাম্পত্য জীবন সুখ শান্তিতে ভরে যেতো। বউ কোন যৌন দাসী নয়, জীবনসঙ্গী। এটাই হোক আমাদের দাম্পত্য জীবনের মৌলিক বিশ্বাস।
জানা যায়- দু’টি মানুষের সামাজিক বন্ধন নিয়ে তৈরি হওয়া একটি পথের নামই দাম্পত্য জীবন। বিবাহবন্ধন আসলে দুই পরিবারের দুইটি মানুষের একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার। আপাত দৃষ্টিতে দু’জন মানুষ নিয়ে তৈরি হওয়া একটি সম্পর্ক দেখা গেলেও এটা শুধুমাত্র দু’জনের নয় এখানে অনেক মানুষের সম্পর্ক জড়িত। দাম্পত্যজীবন মানেই বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে দুইটি পরিবারের গাঁথনি, সন্তান জন্ম দিয়ে তাদের গড়ে তোলা আর একসাথে পথচলার প্রতিশ্রুতি। সময় প্রবাহে ভিন্ন দুইটি মানুষের মধ্যে জন্ম নেয় প্রবল আস্থা। সূতা নেই তবুও বন্ধন, হাসি কান্নার এক মায়াবী জাল। এক কথায় সংসার মানেই মায়া। একে অপরের পছন্দের প্রতি সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হয়ে পথ চলাই দাম্পত্যজীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।