ডিগ্রী পাস করেও চাকরি না পেয়ে,নার্সারি করে সফল ফরিদগঞ্জের সফিউল্লাহ
এফ.এ.মানিক (ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি)
চাঁদপুর জেলায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার বড়ালী গ্রামের সফিউল্লাহ ডিগ্রী পাস করে ও চাকরি না পেয়ে নার্সারি করে বর্তমানে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ি।সফিউল্লার গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডের বড়ালী গ্রামে, সফিউল্লাহ একজন সফল মানুষ,তার জীবনে সফল হন উদ্যোক্তা হয়ে।অন্যের অধীনে চাকরি করে জীবনে খুব কম মানুষ উন্নতি করতে পারে। উদ্যোগতা সবাই হতে পারে না,আত্ত বিশ্বাসী সবাই হয় না। সবুজ শ্যামল বসুন্ধরা গড়ে তোলার একজন প্রথম স্বপ্ন উদ্যোগী শফিউল্লাহ। ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার পূর্ব বড়ালী ও পশ্চিম গাব্দেরগাও দুই গ্রামে সকলের কাছে খুবই সহজ সরল মনের একটি যুবক,পড়ালেখার পাশাপাশি শিশু কাল থেকে গাছ লাগানো সে খুব ভালোবাসতো।বসন্তকালে তার বাড়ির চারিপাশ থাকতো ফুলে সুভাষিত।শফিউল্লাহ ১৯৯৪ সালে পূর্ব বড়ালী গ্রামে একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।পূর্ব বড়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করে পাশাপাশি গ্রামের মাদ্রাসা থেকে আরবি শিক্ষা গ্রহন করেন।তার বাবার নাম মোঃ বিল্লাল হোসেন,মায়ের নাম ফিরোজা বেগম।শফিউল্লাহ তিন ভাই বোনের মধ্যে,সে সবার বড়।বাবার পেশা কৃষি। নিজের জমি ও অন্যের জমি তে রবি শস্য করে সংসার চালাতেন।শফিউল্লাহ ফরিদগঞ্জ এ.আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০৫ সালে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন।সংসারের দারিদ্র্যতা তাকে বার বার পড়ালেখায় বাঁধা দিতে থাকে।কিন্তু সে দমে যায়নি,রবিশস্য থেকে সে তার বাবাকে চারা উৎপাদনের কাজে উৎসাহিত করে।নিজেদের জমি গুলো বর্ষায় ডুবে যেত।তাই তারা উচু জমি ইজারা নিয়ে চারা উৎপাদন শুরু করে। পড়ালেখার পাশাপাশি শফিউল্লাহ তার বাবাকে কাজে সহায়তা করতো।
এই ভাবে সে মাধ্যমিকে সফলতার সহিত পড়ালেখা শেষ করে।ভর্তি হন ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রী কলেজে ২০১০ সালে।তখন আবার আসে বাধা,পড়ালেখা থেমে গিয়েছিল। কিন্তু শফিউল্লাহ টিউশনি শুরু করে এবং পাশাপাশি গৃহে গরু লালন পালন শুরু করেন।তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে,ছোট ভাইয়ের সহায়তা নিয়ে সংসারের হাল ধরেন।পড়ালেখা বন্ধ না করে,মাঝে মাঝে কলেজে আসা যাওয়া করতো।
মেধাবী হওয়ায় সে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনীতে ভালো ফলাফল করে।
ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার টাকা ছিলো না তার কাছে,ঋন করে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা ছিলো না।তাই সে টাকা সংগ্রহ শুরু করেন।
ইন্টার মিডিয়েট পাশ করার ১ বছর পর সে ডিগ্রি তে একই কলেজে ভর্তি হন।
সেশন জট ও ইয়ার লস করতে করতে ২০২০ সালে সে ডিগ্রি পাশ করেন। অনেক কাজের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও ডিগ্রি পাশ করার পর চাকরি করার চেষ্টা করেন। কোথাও চাকরি পান নি,দারিদ্র্য পীড়িত সংসারের বড় ছেলে হওয়ার কারনে চোখে মুখে সে শূন্য দেখছিলো সব সময়। ছোট বেলা থেকে পিতাকে করা বিভিন্ন কাজের অভিজ্ঞতা তিনি কাজ লাগাতে শুরু করলেন।
ছোট পরিসর থেকে শুরু করে গত কয়েক বছরে শফিউল্লাহ এখন একজন সফল উদ্যোক্তা,শফিউল্লার নার্সারিতে এখন ৫-৬ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে।
এক একরের উপর তার নার্সারিতে রয়েছে ফুল, ফল, ঔষধি,ও বনজ গাছের চারা। হাজার হাজার চারা উৎপাদন হয় প্রতিটি বছর।ফরিদগঞ্জের সকল বাজারে চারা গুলো সে নিজে গিয়ে বিক্রি করেন,এছাড়া রায়পুর,চাঁদপুর সদর থানা গুলো থেকে পাইকারি বিক্রিতা রা চারা কিনে নিয়ে বিক্রি করেন।
শফিউল্লাহর নার্সারিতে জোড় কলম,চোখ কলম এর মাধ্যমে আমের চারা,কাঁঠালের চারা উৎপাদন করা হয়।
একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে সে তার পরিবারের হাল ধরেছেন।
বর্তমানে সে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে।