ঢাকা ০৫:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল। গজারিয়া বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে সিকদার পরিবারে আমিরুল ইসলাম এর সর্মথনে আলোচনা সভা ও ইফতার দোয়া মাহফিল চসিকের ৬ ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৮ তম সাধারণ সভায় মশা কমাতে কার্যক্রম বাড়াবে : মেয়র রেজাউল “বিড়ি শিল্পে ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে রংপুর শ্রমিকদের মানববন্ধন” ইন্দুরকানী প্রেসক্লাবে ইফতার মাহফিল বরিশাল চকবাজার এবায়দুল্লাহ মসজিদে অগ্নিকান্ড। টাঙ্গাইলে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার পাঠক ফোরাম গঠিত চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার চট্টগ্রামে জালনোটসহ প্রতারকচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ রমজান মাসের পবিত্রতা লঙ্ঘন করছে নারায়ণগঞ্জ চিশতিয়া বাউল সমিত

ডাক্তার হয়ে উঠা হলো না ফাতেমার’ সড়কে ঝরল প্রাণ

শেখ নাদিম, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়ন এর কালুশাহ নগরের বাসিন্দা মো: ফারুকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতল। সড়ক দুর্ঘটনায়
মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায় মা আয়েশা। কান্না করতে করতে মোঃ ফারুক বলেন,মেয়ে টা আমার মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেল। আমি ভাবতেই পারিনি যে সে মারা গেছে। কাছে গিয়ে বলেছি, ওঠ মা। কিন্তু কোনো কথা নেই। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, সব শেষ। মেয়ে আমার আর নেই। তখন আর বাঁচতে ইচ্ছে হয়নি। রাস্তায় শুয়ে ভেবেছিলাম, আমাকেও গাড়ি পিষে দিক। চোখের সামনে মেয়ের এমন মৃত্যু আমি সইব কেমন করে!’

গতকাল রোববার সকালে সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে মো. ফারুকের বাড়িতে গিয়ে এমন শোকাবহ পরিবেশ দেখা গেল। আগের দিন শনিবার দুপুরে নিজের মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে একমাত্র মেয়ে ফাতেহা জাহান জেবাকে (১৯) চট্টগ্রাম নগরের এনায়েত বাজার মহিলা কলেজে নিয়ে যাচ্ছিলেন ফারুক। পথে ফৌজদারহাট বায়েজিদ সংযোগ সড়কের ৩ নম্বর সেতু এলাকায় ব্রেক কষলে বাইক থেকে পড়ে যান ফাতেহা। মুহূর্তেই পেছন থেকে আসা কাভার্ড ভ্যানের চাপায় মৃত্যু হয় তাঁর।

নিহত ফাতেহা এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। শনিবার বেলা দুইটায় তাঁর ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল।

মো. ফারুকের তিন ছেলে–মেয়ের মধ্যে ফাতেহা সবার বড়। একমাত্র মেয়ে হলেও বাবা-মায়ের কাছে খুব বেশি চাহিদার কথা বলতেন না তিনি। লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। অনেকটা নিভৃতচারী ছিলেন তিনি। মেয়েকে নিয়ে ফারুকের অনেক স্বপ্ন ছিল। তিনি বলেন, ‘মেয়ের ইচ্ছা ছিল সে চিকিৎসক হবে। এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছিল। এইচএসসির প্রস্তুতিও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু এখন সব শেষ।’

বাড়ির সামনের একচিলতে জায়গায় স্বজন আর প্রতিবেশীদের ভিড়। সেখানে চেয়ারে বসে ফাতেহার কথা বলতে বলতে ক্ষণে ক্ষণে ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন ফারুক। তিনি বলেন, ‘১৮ বছর ধরে মেয়েকে তিল তিল করে বড় করেছি। কখনো কাছছাড়া করিনি। খুব শখ ছিল মেয়েকে সাজিয়ে-গুজিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠাব। এভাবে তাকে বিদায় দিতে হবে কখনো কল্পনাও করিনি। আমার বুকটা ভেঙে যাচ্ছে।’ নিহত ফাতেহার বাবা ফারুক আর মা আয়েশা বেগম সারা রাত ঘুমাননি। সকাল থেকে ফারুক তাঁর ঘরের সামনে লাগোয়া দোকানের চেয়ারে বসে কাঁদছিলেন। তাঁর স্ত্রী আয়েশা ঘরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। চিৎকার করে মেয়েকে ডাকছিলেন ক্ষণে ক্ষণে।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল।

ডাক্তার হয়ে উঠা হলো না ফাতেমার’ সড়কে ঝরল প্রাণ

আপডেট টাইম ০৯:০২:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ জুলাই ২০২২

শেখ নাদিম, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়ন এর কালুশাহ নগরের বাসিন্দা মো: ফারুকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতল। সড়ক দুর্ঘটনায়
মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায় মা আয়েশা। কান্না করতে করতে মোঃ ফারুক বলেন,মেয়ে টা আমার মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেল। আমি ভাবতেই পারিনি যে সে মারা গেছে। কাছে গিয়ে বলেছি, ওঠ মা। কিন্তু কোনো কথা নেই। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, সব শেষ। মেয়ে আমার আর নেই। তখন আর বাঁচতে ইচ্ছে হয়নি। রাস্তায় শুয়ে ভেবেছিলাম, আমাকেও গাড়ি পিষে দিক। চোখের সামনে মেয়ের এমন মৃত্যু আমি সইব কেমন করে!’

গতকাল রোববার সকালে সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে মো. ফারুকের বাড়িতে গিয়ে এমন শোকাবহ পরিবেশ দেখা গেল। আগের দিন শনিবার দুপুরে নিজের মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে একমাত্র মেয়ে ফাতেহা জাহান জেবাকে (১৯) চট্টগ্রাম নগরের এনায়েত বাজার মহিলা কলেজে নিয়ে যাচ্ছিলেন ফারুক। পথে ফৌজদারহাট বায়েজিদ সংযোগ সড়কের ৩ নম্বর সেতু এলাকায় ব্রেক কষলে বাইক থেকে পড়ে যান ফাতেহা। মুহূর্তেই পেছন থেকে আসা কাভার্ড ভ্যানের চাপায় মৃত্যু হয় তাঁর।

নিহত ফাতেহা এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। শনিবার বেলা দুইটায় তাঁর ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল।

মো. ফারুকের তিন ছেলে–মেয়ের মধ্যে ফাতেহা সবার বড়। একমাত্র মেয়ে হলেও বাবা-মায়ের কাছে খুব বেশি চাহিদার কথা বলতেন না তিনি। লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। অনেকটা নিভৃতচারী ছিলেন তিনি। মেয়েকে নিয়ে ফারুকের অনেক স্বপ্ন ছিল। তিনি বলেন, ‘মেয়ের ইচ্ছা ছিল সে চিকিৎসক হবে। এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছিল। এইচএসসির প্রস্তুতিও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু এখন সব শেষ।’

বাড়ির সামনের একচিলতে জায়গায় স্বজন আর প্রতিবেশীদের ভিড়। সেখানে চেয়ারে বসে ফাতেহার কথা বলতে বলতে ক্ষণে ক্ষণে ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন ফারুক। তিনি বলেন, ‘১৮ বছর ধরে মেয়েকে তিল তিল করে বড় করেছি। কখনো কাছছাড়া করিনি। খুব শখ ছিল মেয়েকে সাজিয়ে-গুজিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠাব। এভাবে তাকে বিদায় দিতে হবে কখনো কল্পনাও করিনি। আমার বুকটা ভেঙে যাচ্ছে।’ নিহত ফাতেহার বাবা ফারুক আর মা আয়েশা বেগম সারা রাত ঘুমাননি। সকাল থেকে ফারুক তাঁর ঘরের সামনে লাগোয়া দোকানের চেয়ারে বসে কাঁদছিলেন। তাঁর স্ত্রী আয়েশা ঘরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। চিৎকার করে মেয়েকে ডাকছিলেন ক্ষণে ক্ষণে।