ঢাকা ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন “বাংলাদেশের হিট অফিসার কী করছেন? হিট নিয়ন্ত্রণে “ অগ্নিকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে অনুদানের নগদ অর্থ সহায়তায়: আ জ ম নাসির “স্মার্ট সুদহারে বিপাকে ব্যবসায়ীরা ঢাকা মতিঝিলে ইসতেস্কার নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

টাঙ্গাইলে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশে চাকরি পেল ১১ নারী’সহ ৭৫ জন

মোঃ মশিউর রহমান/টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ গোপালপুর উপজেলার কৃষকের মেয়ে তানিয়া খাতুন ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতো পুলিশ হবে।
সে উপজেলার বাংলা বাজার মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন। অন্যের কাছে শুনেছে পুলিশে চাকরি নিতে অনেক টাকা লাগে। সামর্থ না থাকায় তার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। তারপরও নিজ ইচ্ছে শক্তি থেকে ১০০ টাকা ব্যাংক চালান ও অনলাইন খরচ ৩০ টাকা দিয়ে আবেদন করেন। অবশেষে তার স্বপ্নপূরণ হয়। এই নিয়োগ পরীক্ষায় তার মতো ১৩০ টাকা খরচ করে ১১ নারীসহ ৭৫ জন পুলিশে চাকরি পান। জেলা পুলিশ লাইনস মাঠের গ্রিল শেডে ফলাফল ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। এসময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কাজী নুজহাত এদীব লুনা, গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজ উদ্দিন প্রমুখ।
তানিয়া খাতুন বলেন, স্বপ্ন ছিল পুলিশ হবো। চাকরি নিতে অনেক টাকা লাগে, তাই ভয় পেতাম। ১০০ টাকায় পুলিশের চাকরি হবে কল্পনাও করিনি। চাকরি পাওয়ায় আল্লাহ তালার কাছে শুকরিয়া জানাই। বাংলাদেশ পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞ কাউকে কোনো অর্থ দিতে হয়নি। জেলা পুলিশ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ পরীক্ষায় অংশ নিতে সর্বমোট তিন হাজার নারী-পুরুষ আবেদন করেন। প্রথম দিন উচ্চতা ও প্রার্থীদের সনদ যাচাই করে ২২৪৭ থেকে ১১৪৮ জনকে শারিরীক সক্ষমতার জন্য উত্তীর্ণ করা হয়েছিলো। এদের মধ্যে ধাপে ধাপে পরীক্ষা দিয়ে ৭৬৩ জন উত্তীর্ণ হয়। এদের মধ্যে ৪৯৭ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য রাখা হয়। এদের মধ্যে ১৬৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ১৬ থেকে ১৮ নভেম্বর পুলিশের ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে’ শারিরীকভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ১৯ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা হয়। ২৬ নভেম্বর দিনব্যাপী ১৬৫ জনের মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে ৭৫ জনকে নির্বাচন করা হয়। টাঙ্গাইলে ১০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফটে পুলিশে (ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে) চাকরি পেয়েছেন তারা। কোনো অর্থ ছাড়াই চাকরি পেয়ে তাদের অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এসব চূড়ান্ত প্রার্থীর অভিভাবকরা কখনো বিশ্বাসই করতে পারেননি তাদের সন্তানদের টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে। স্বচ্ছতা ও সততার এ বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। পরীক্ষায় প্রথম হওয়া সিরাজুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার আগে অনেকেই বলেছেন, দালাল ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে না। তাদের ধারণা ভুল। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল দুর্নীতিমুক্ত পরীক্ষা হবে। ঠিক তাই হয়েছে, মাঠে না আসলে বুঝতাম না বর্তমান সময়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি হয়। সাকিব আল হাসান শ্রাবণ বলেন, আমার বাবা কৃষি কাজ করায় আয় রোজগার কম। তারপরও ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করবো, মানুষের মতো মানুষ হয়ে পিতা মাতা দেশ ও জনগণের সেবা করবো। সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রচুর কষ্ট করেছি জীবনে। কষ্টের কারণেই আল্লাহ পাক মুখ তুলে তাকিয়েছেন। এতে পুলিশের আইজিপি ও টাঙ্গাইলের এসপিকে ধন্যবাদ জানাই। দেশের জন্য কাজ করতে চাই। সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই। তাসলিমা রশিদ জানান, ব্যাংক চালান ১০০, ভ্যাট, অনলাইন ও এসএমএস চার্জ দিয়ে আরও ৩০ টাকা লেগেছে। সব মিলে ১৩০ টাকা খরচ করে পুলিশের চাকরি পেয়েছেন। লিটন নামের এক অভিভাবক বলেন, আমি পেশায় ডোম। আমি কখনও চাইনি আমার ছেলেও এই পেশায় আসুক। বিনা টাকায় পুলিশে চাকরি হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, বিগত বছরে যে ধারাবাহিকতা ছিল, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির নির্দেশে সেই ধারাবাহিকতার পরিবর্তন এনেছি। নতুন পদ্ধতিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কাউকে চালান ফি ছাড়া অন্য কোনো ফি দিয়ে চাকরি নিতে হয়নি। মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন

টাঙ্গাইলে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশে চাকরি পেল ১১ নারী’সহ ৭৫ জন

আপডেট টাইম ০৯:৩০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১

মোঃ মশিউর রহমান/টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ গোপালপুর উপজেলার কৃষকের মেয়ে তানিয়া খাতুন ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতো পুলিশ হবে।
সে উপজেলার বাংলা বাজার মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন। অন্যের কাছে শুনেছে পুলিশে চাকরি নিতে অনেক টাকা লাগে। সামর্থ না থাকায় তার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। তারপরও নিজ ইচ্ছে শক্তি থেকে ১০০ টাকা ব্যাংক চালান ও অনলাইন খরচ ৩০ টাকা দিয়ে আবেদন করেন। অবশেষে তার স্বপ্নপূরণ হয়। এই নিয়োগ পরীক্ষায় তার মতো ১৩০ টাকা খরচ করে ১১ নারীসহ ৭৫ জন পুলিশে চাকরি পান। জেলা পুলিশ লাইনস মাঠের গ্রিল শেডে ফলাফল ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। এসময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কাজী নুজহাত এদীব লুনা, গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজ উদ্দিন প্রমুখ।
তানিয়া খাতুন বলেন, স্বপ্ন ছিল পুলিশ হবো। চাকরি নিতে অনেক টাকা লাগে, তাই ভয় পেতাম। ১০০ টাকায় পুলিশের চাকরি হবে কল্পনাও করিনি। চাকরি পাওয়ায় আল্লাহ তালার কাছে শুকরিয়া জানাই। বাংলাদেশ পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞ কাউকে কোনো অর্থ দিতে হয়নি। জেলা পুলিশ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ পরীক্ষায় অংশ নিতে সর্বমোট তিন হাজার নারী-পুরুষ আবেদন করেন। প্রথম দিন উচ্চতা ও প্রার্থীদের সনদ যাচাই করে ২২৪৭ থেকে ১১৪৮ জনকে শারিরীক সক্ষমতার জন্য উত্তীর্ণ করা হয়েছিলো। এদের মধ্যে ধাপে ধাপে পরীক্ষা দিয়ে ৭৬৩ জন উত্তীর্ণ হয়। এদের মধ্যে ৪৯৭ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য রাখা হয়। এদের মধ্যে ১৬৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ১৬ থেকে ১৮ নভেম্বর পুলিশের ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে’ শারিরীকভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ১৯ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা হয়। ২৬ নভেম্বর দিনব্যাপী ১৬৫ জনের মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে ৭৫ জনকে নির্বাচন করা হয়। টাঙ্গাইলে ১০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফটে পুলিশে (ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে) চাকরি পেয়েছেন তারা। কোনো অর্থ ছাড়াই চাকরি পেয়ে তাদের অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এসব চূড়ান্ত প্রার্থীর অভিভাবকরা কখনো বিশ্বাসই করতে পারেননি তাদের সন্তানদের টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে। স্বচ্ছতা ও সততার এ বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। পরীক্ষায় প্রথম হওয়া সিরাজুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার আগে অনেকেই বলেছেন, দালাল ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে না। তাদের ধারণা ভুল। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল দুর্নীতিমুক্ত পরীক্ষা হবে। ঠিক তাই হয়েছে, মাঠে না আসলে বুঝতাম না বর্তমান সময়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি হয়। সাকিব আল হাসান শ্রাবণ বলেন, আমার বাবা কৃষি কাজ করায় আয় রোজগার কম। তারপরও ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করবো, মানুষের মতো মানুষ হয়ে পিতা মাতা দেশ ও জনগণের সেবা করবো। সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রচুর কষ্ট করেছি জীবনে। কষ্টের কারণেই আল্লাহ পাক মুখ তুলে তাকিয়েছেন। এতে পুলিশের আইজিপি ও টাঙ্গাইলের এসপিকে ধন্যবাদ জানাই। দেশের জন্য কাজ করতে চাই। সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই। তাসলিমা রশিদ জানান, ব্যাংক চালান ১০০, ভ্যাট, অনলাইন ও এসএমএস চার্জ দিয়ে আরও ৩০ টাকা লেগেছে। সব মিলে ১৩০ টাকা খরচ করে পুলিশের চাকরি পেয়েছেন। লিটন নামের এক অভিভাবক বলেন, আমি পেশায় ডোম। আমি কখনও চাইনি আমার ছেলেও এই পেশায় আসুক। বিনা টাকায় পুলিশে চাকরি হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, বিগত বছরে যে ধারাবাহিকতা ছিল, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির নির্দেশে সেই ধারাবাহিকতার পরিবর্তন এনেছি। নতুন পদ্ধতিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কাউকে চালান ফি ছাড়া অন্য কোনো ফি দিয়ে চাকরি নিতে হয়নি। মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।