ঢাকা ০৯:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রাঙ্গুনিয়ায় নববর্ষ বৈশাখী উৎসবে জলকেলি ও বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে বেলখাইন স্পোটিং ক্লাবের অলনাইট ফুটবল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল সম্পন্ন বগুড়ায় চাঞ্চ্যল্যকর শিশু বন্ধনকে গলাকেটে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন গজারিয়ায় দুই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলাম এর পক্ষে গনসংযোগ ও লিফলেট বিতরন প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে আলোচনা ও পুরুষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান –অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৪ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। চট্টগ্রামে দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে-২ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা বিএমএর হকার আর যত্রতত্র আবর্জনা কমাতে অভিযানের ঘোষণা মেয়র রেজাউলের রামগঞ্জে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ২০২৪ অনুষ্ঠিত। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

টাঙ্গাইলে একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রক্ষায় বিলাসবহুল রিসোর্টের গেইট সরানোর নির্দেশ

মোঃ মশিউর রহমান,টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের বাসাইলে দাপনাজোর গ্রামের মার্থা লিন্ডষ্ট্রম-নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে পাশের ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের গেইট অপসারণের জন্যে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটি সরেজমিনে গিয়ে রিসোর্ট কতৃপক্ষকে এই সময় বেঁধে দেয়।
অতি সম্প্রতি টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের সভা কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) শরিফুল ইসলামকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সদস্যরা মঙ্গলবার বাসাইলের দাপনাজোর গ্রামে মার্থা লিন্ডষ্ট্রম-নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম ও বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়াও স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মনসুর রহমান, কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রমজান মিয়া, রিসোর্টের পক্ষ থেকে জেনারেল ম্যানেজারসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে গিয়ে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় বৈধ কাজপত্র দেখতে চাইলে তাৎক্ষনিকভাবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ তা দেখাতে পারেনি। তদন্ত কমিটি এ সময় স্কুলের আঙ্গিনা ও রিসোর্টের জায়গা ঘুরে দেখেন। এ সময় উভয় পক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পর্যালোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়। এদিকে মঙ্গলবার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “বাসাইলে রিসোর্ট ও স্পা সেন্টারের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েরা” শিরোনামে বিশেষ সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে জেলার পাঠক, শিক্ষানুরাগী ও সুশীল সমাজের মাঝে।

প্রসঙ্গতঃ টাঙ্গাইলের বাসাইলের দাপনাজোর গ্রামে ব্যক্তি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত একটি রিসোর্টের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে এমপিওভুক্ত একটি বালিকা বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পাশে ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের বেড়াতে আসা লোকজনের নানা অশ্লীলতার কারণে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে স্থানীয়রা। এছাড়া রিসোর্টের আলাদা কোন ফটক না থাকায় বালিকা বিদ্যালয়ের উপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী সেখানে প্রবেশ করছে। এছাড়াও প্রতিদিন রিসোর্টে বেড়াতে আসে প্রচুর উঠতি বয়সী যুবক যুবতীসহ নানান শ্রেণির মানুষ। তাদের অশ্লীল চলাফেরা, আচরণ ও ব্যক্তিগত যানবাহন অবাধে চলাচল এবং পার্কিংয়ের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে। এর সাথে সাথে শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে।

তাছাড়া এই ধরণের অশ্লীল আচরণের সম্মুখীন হতে হতে উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ নষ্ট ও বিপথগামী হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকরা। সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অভিভাবকরা মেয়েদের অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে বলে জানিয়েছে স্কুলের কতৃপক্ষ।

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার দাপনাজের গ্রামে ১৯৯২ সালে সুদুর নরওয়ের নাগরিক কার্ল ফ্রেডরিক লিন্ডষ্ট্রম ও তার এদেশীয় বন্ধু দাপনাজোর গ্রামের স্থপতি আখতার হামিদ মাসুদ তাদের দু’জনের মায়ের নামে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তারা এ প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন ‘মার্থা লিন্ডস্ট্রম-নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’। এর আগে বাংলাদেশে নরওয়ে দূতাবাসের পদস্থ কর্মকর্তা ও নরওয়ের নাগরিক কার্ল ফ্রেডরিক লিন্ডষ্ট্রম তার বন্ধু আখতার হামিদ মাসুদের আমন্ত্রনে দাপনাজের গ্রামে বেড়াতে আসেন। সবুজে ঘেরা ছায়া শ্যামল দাপনাজোর গ্রামের মানুষের আতিথিয়তায় মুগ্ধ হন তিনি। এরপর সময় পেলেই এ গ্রামে বেড়াতে আসতেন। এভাবে গ্রামের মানুষের কাছে তিনি খুবই জনপ্রিয় একজন মানুষ হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে দাপনাজোর গ্রামের পিছিয়ে পড়া মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগ্রহ থেকে তিনি তার মা ও বন্ধুর মায়ের নামে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়ের জমিদাতা আখতার হামিদ মাসুদ ও বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতা আবুল কালাম মোস্তফা লাবু। এছাড়াও সে সময়ে আর্থিক সহযোগীতার হাত বাড়ান টাঙ্গাইলের বিশিষ্ট কবি ও লেখক এবং কলেজ শিক্ষক মাহমুদ কামাল’সহ স্থানীয় অনেকে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি।
১৯৯৩ সালের ৯ এপ্রিল খুবই জাকজমকপূর্ন আয়োজনের মধ্যদিয়ে স্কুলের উদ্বোধন করা হয়। সেদিন দেশী-বিদেশী মেহমানদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে দাপনাজোর গ্রাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নরওয়ের এদেশীয় কাউন্সিলর মি. রোয়ার উইক, ডেপুটি কাউন্সিলর টোরেং টোরেং ও মি. হোলটিনসহ নরওয়ের ৩৫ জন নাগরিক দাপনাজোর গ্রামে আসেন। বিদেশীদের পদচারনা ও স্থানীয়দের আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে স্কুলটির শ্রেনীকক্ষে পাঠদানের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা ব্যাক্তি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত একটি রিসোর্র্ট ও স্পা সেন্টারের কারনে দিনদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
গ্রামের মনোরম পরিবেশে বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুনাম অর্জন করে। মানসম্মত শিক্ষাদান ও চমৎকার পরিবেশের কারনে দাপনাজোর এলাকা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছাত্রীরা ভর্তি হতে শুরু করে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে স্কুলটি। একপর্যায়ে সরকারী এমপিওভুক্ত হয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি। বর্তমানে সরকরী অর্থায়নে একটি দোতলা ভবন, বিশাল খেলার মাঠ ও প্রধান শিক্ষকের আবাসিক ভবন রয়েছে এখানে। স্কুলের ছাত্রীর সংখ্যা আশি থেকে নব্বই জন। যদিও এক বছর আগে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল তিন শতাধিক। রিসোর্টের কারনে বর্তমানে ছাত্রীর সংখা ৮০ থেকে নব্বই জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও শিক্ষক ও কর্মচারী মিলে প্রায় ১৭ জন দায়িত্ব পালন করছে।
এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে দাপনাজোর গ্রামের ড. আহসান মনসুর স্কুলের জায়গা ও আশপাশের কৃষি জমি নিয়ে ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার নামের একটি রিসোর্ট এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ২০২০ সালের শেষের দিকে রিসোর্ট এর কার্যক্রম শুরু হয়।
Attachments area

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

রাঙ্গুনিয়ায় নববর্ষ বৈশাখী উৎসবে জলকেলি ও বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে

টাঙ্গাইলে একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রক্ষায় বিলাসবহুল রিসোর্টের গেইট সরানোর নির্দেশ

আপডেট টাইম ০৪:৪৯:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২২

মোঃ মশিউর রহমান,টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের বাসাইলে দাপনাজোর গ্রামের মার্থা লিন্ডষ্ট্রম-নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে পাশের ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের গেইট অপসারণের জন্যে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটি সরেজমিনে গিয়ে রিসোর্ট কতৃপক্ষকে এই সময় বেঁধে দেয়।
অতি সম্প্রতি টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের সভা কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) শরিফুল ইসলামকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সদস্যরা মঙ্গলবার বাসাইলের দাপনাজোর গ্রামে মার্থা লিন্ডষ্ট্রম-নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম ও বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়াও স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মনসুর রহমান, কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রমজান মিয়া, রিসোর্টের পক্ষ থেকে জেনারেল ম্যানেজারসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে গিয়ে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় বৈধ কাজপত্র দেখতে চাইলে তাৎক্ষনিকভাবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ তা দেখাতে পারেনি। তদন্ত কমিটি এ সময় স্কুলের আঙ্গিনা ও রিসোর্টের জায়গা ঘুরে দেখেন। এ সময় উভয় পক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পর্যালোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়। এদিকে মঙ্গলবার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “বাসাইলে রিসোর্ট ও স্পা সেন্টারের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বালিকা বিদ্যালয়ের মেয়েরা” শিরোনামে বিশেষ সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে জেলার পাঠক, শিক্ষানুরাগী ও সুশীল সমাজের মাঝে।

প্রসঙ্গতঃ টাঙ্গাইলের বাসাইলের দাপনাজোর গ্রামে ব্যক্তি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত একটি রিসোর্টের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে এমপিওভুক্ত একটি বালিকা বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পাশে ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের বেড়াতে আসা লোকজনের নানা অশ্লীলতার কারণে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে স্থানীয়রা। এছাড়া রিসোর্টের আলাদা কোন ফটক না থাকায় বালিকা বিদ্যালয়ের উপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী সেখানে প্রবেশ করছে। এছাড়াও প্রতিদিন রিসোর্টে বেড়াতে আসে প্রচুর উঠতি বয়সী যুবক যুবতীসহ নানান শ্রেণির মানুষ। তাদের অশ্লীল চলাফেরা, আচরণ ও ব্যক্তিগত যানবাহন অবাধে চলাচল এবং পার্কিংয়ের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে। এর সাথে সাথে শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে।

তাছাড়া এই ধরণের অশ্লীল আচরণের সম্মুখীন হতে হতে উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ নষ্ট ও বিপথগামী হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকরা। সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অভিভাবকরা মেয়েদের অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে বলে জানিয়েছে স্কুলের কতৃপক্ষ।

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার দাপনাজের গ্রামে ১৯৯২ সালে সুদুর নরওয়ের নাগরিক কার্ল ফ্রেডরিক লিন্ডষ্ট্রম ও তার এদেশীয় বন্ধু দাপনাজোর গ্রামের স্থপতি আখতার হামিদ মাসুদ তাদের দু’জনের মায়ের নামে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তারা এ প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন ‘মার্থা লিন্ডস্ট্রম-নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’। এর আগে বাংলাদেশে নরওয়ে দূতাবাসের পদস্থ কর্মকর্তা ও নরওয়ের নাগরিক কার্ল ফ্রেডরিক লিন্ডষ্ট্রম তার বন্ধু আখতার হামিদ মাসুদের আমন্ত্রনে দাপনাজের গ্রামে বেড়াতে আসেন। সবুজে ঘেরা ছায়া শ্যামল দাপনাজোর গ্রামের মানুষের আতিথিয়তায় মুগ্ধ হন তিনি। এরপর সময় পেলেই এ গ্রামে বেড়াতে আসতেন। এভাবে গ্রামের মানুষের কাছে তিনি খুবই জনপ্রিয় একজন মানুষ হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে দাপনাজোর গ্রামের পিছিয়ে পড়া মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগ্রহ থেকে তিনি তার মা ও বন্ধুর মায়ের নামে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়ের জমিদাতা আখতার হামিদ মাসুদ ও বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতা আবুল কালাম মোস্তফা লাবু। এছাড়াও সে সময়ে আর্থিক সহযোগীতার হাত বাড়ান টাঙ্গাইলের বিশিষ্ট কবি ও লেখক এবং কলেজ শিক্ষক মাহমুদ কামাল’সহ স্থানীয় অনেকে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি।
১৯৯৩ সালের ৯ এপ্রিল খুবই জাকজমকপূর্ন আয়োজনের মধ্যদিয়ে স্কুলের উদ্বোধন করা হয়। সেদিন দেশী-বিদেশী মেহমানদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে দাপনাজোর গ্রাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নরওয়ের এদেশীয় কাউন্সিলর মি. রোয়ার উইক, ডেপুটি কাউন্সিলর টোরেং টোরেং ও মি. হোলটিনসহ নরওয়ের ৩৫ জন নাগরিক দাপনাজোর গ্রামে আসেন। বিদেশীদের পদচারনা ও স্থানীয়দের আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে স্কুলটির শ্রেনীকক্ষে পাঠদানের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা ব্যাক্তি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত একটি রিসোর্র্ট ও স্পা সেন্টারের কারনে দিনদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
গ্রামের মনোরম পরিবেশে বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুনাম অর্জন করে। মানসম্মত শিক্ষাদান ও চমৎকার পরিবেশের কারনে দাপনাজোর এলাকা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছাত্রীরা ভর্তি হতে শুরু করে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে স্কুলটি। একপর্যায়ে সরকারী এমপিওভুক্ত হয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি। বর্তমানে সরকরী অর্থায়নে একটি দোতলা ভবন, বিশাল খেলার মাঠ ও প্রধান শিক্ষকের আবাসিক ভবন রয়েছে এখানে। স্কুলের ছাত্রীর সংখ্যা আশি থেকে নব্বই জন। যদিও এক বছর আগে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল তিন শতাধিক। রিসোর্টের কারনে বর্তমানে ছাত্রীর সংখা ৮০ থেকে নব্বই জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও শিক্ষক ও কর্মচারী মিলে প্রায় ১৭ জন দায়িত্ব পালন করছে।
এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে দাপনাজোর গ্রামের ড. আহসান মনসুর স্কুলের জায়গা ও আশপাশের কৃষি জমি নিয়ে ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার নামের একটি রিসোর্ট এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ২০২০ সালের শেষের দিকে রিসোর্ট এর কার্যক্রম শুরু হয়।
Attachments area