ঢাকা ১১:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ “২৬শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ” –মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে ৫৩ কেজি গাঁজাসহ ০৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; মাদক বহনে ব্যবহৃত পিকআপ জব্দ। “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ

জ্যোৎস্না এখন কোথায় যাবে নিজেই জানেনা। ।

পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালী সমাজসেবা অধিদপ্তরের এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছেন জ্যোৎস্না।
শৈশবেই বাবা মারা যান জ্যোৎস্নার (২৬)। এরপর একটি মামলায় তাঁর মাকে কারাগারে যেতে হয়। কয়েক বছর মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকতে হয়। আনুমানিক সাত বছর বয়সে কারাগার থেকে ঠাঁই হয় সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা)। এর মধ্যে কারাগারেই মায়ের মৃত্যু হয়।
জ্যোৎস্না বর্তমানে পটুয়াখালী সমাজসেবা অধিদপ্তরের এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছেন। তাঁকে হাঁস-মুরগি লালনপালনের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জ্যোৎস্নার দেওয়া তথ্যমতে, তাঁর দুই খালার নাম আয়শা ও শেফালি। দুই মামার নাম ছিল হারুন ও শাহজাহান। তবে তাঁরা কোথায় আছেন, তা বলতে পারেননি। ফলে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে যাওয়ার জায়গা নেই এতিম এই তরুণীর। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন জ্যোৎস্না। এরপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘লেখাপড়া মনে থাকে না। হাঁস-মুরগি পালা শিখছি। এইহান থ্যাইক্যা মামুরা নিয়ে গেলে এই কাজ কইরা চলতে পারুম। কিন্তু কেউ আমারে নিতে আয় না।’ কথা বলার সময় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল জ্যোৎস্নার। অসহায় এই তরুণী বলেন, ‘মামা-খালারা কেন আমারে নিতে আয় না। আমি হেগো কাছে যাইতে চাই।’
পটুয়াখালীর ওই কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, জ্যোৎস্নার বাবার নাম জয়নাল খাঁ ও মা জুলি বেগম। বাড়ি ছিল ফরিদপুরের জাজিরা উপজেলার গঙ্গানগর গ্রামে। শৈশবে বাবাকে হারান জ্যোৎস্না। এরপর মায়ের সঙ্গে ঢাকায় মিরপুর–১–এ সনি সিনেমা হল এলাকায় একটি বস্তিতে থাকতেন।
জুলি বেগম বাসাবাড়িতে কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়ে মা ও মেয়ের চলে যেত। তবে শিশু চুরির দায়ে তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জেল হয় তাঁর। তখন জ্যোৎস্নার বয়স আনুমানিক চার বছর। অভিভাবক না থাকায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকার অনুমতি মেলে জ্যোৎস্নার।
২০০৩ সালের ২২ মার্চ সাত বছর বয়সে জ্যোৎস্নাকে কারাগার থেকে পাঠানো হয় ঢাকা আজিমপুর সরকারি শিশু পরিবারে। এর মধ্যে কারাগারে জ্যোৎস্নার মায়ের মৃত্যু হয়। আজিমপুরে তিন বছর থাকার পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার সরকারি শিশু সদনে (বালিকা) পাঠানো হয় তাঁকে।
১৫ বছর সরকারি শিশু সদনে ছিলেন জ্যোৎস্না। ২০১৮ সালে রূপগঞ্জের শিশু সদন লেখাপড়ায় অমনোযোগী হওয়ায় তাঁকে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। এরপর তাঁকে পটুয়াখালীর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। চার বছর ধরে জ্যোৎস্না এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাস করছেন। এখান থেকে হাঁস-মুরগি পালনের ওপর দুটি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
পটুয়াখালীতে এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপপরিচালক কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন এখানে আছেন জ্যোৎস্না। দুবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন স্বজনদের কাছে যেতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন বারবার জিজ্ঞাসা করেন, কেউ তাঁর খোঁজে এসেছিল কি না।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

জ্যোৎস্না এখন কোথায় যাবে নিজেই জানেনা। ।

আপডেট টাইম ০২:৩৪:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২

পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালী সমাজসেবা অধিদপ্তরের এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছেন জ্যোৎস্না।
শৈশবেই বাবা মারা যান জ্যোৎস্নার (২৬)। এরপর একটি মামলায় তাঁর মাকে কারাগারে যেতে হয়। কয়েক বছর মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকতে হয়। আনুমানিক সাত বছর বয়সে কারাগার থেকে ঠাঁই হয় সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা)। এর মধ্যে কারাগারেই মায়ের মৃত্যু হয়।
জ্যোৎস্না বর্তমানে পটুয়াখালী সমাজসেবা অধিদপ্তরের এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছেন। তাঁকে হাঁস-মুরগি লালনপালনের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জ্যোৎস্নার দেওয়া তথ্যমতে, তাঁর দুই খালার নাম আয়শা ও শেফালি। দুই মামার নাম ছিল হারুন ও শাহজাহান। তবে তাঁরা কোথায় আছেন, তা বলতে পারেননি। ফলে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে যাওয়ার জায়গা নেই এতিম এই তরুণীর। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন জ্যোৎস্না। এরপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘লেখাপড়া মনে থাকে না। হাঁস-মুরগি পালা শিখছি। এইহান থ্যাইক্যা মামুরা নিয়ে গেলে এই কাজ কইরা চলতে পারুম। কিন্তু কেউ আমারে নিতে আয় না।’ কথা বলার সময় চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল জ্যোৎস্নার। অসহায় এই তরুণী বলেন, ‘মামা-খালারা কেন আমারে নিতে আয় না। আমি হেগো কাছে যাইতে চাই।’
পটুয়াখালীর ওই কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, জ্যোৎস্নার বাবার নাম জয়নাল খাঁ ও মা জুলি বেগম। বাড়ি ছিল ফরিদপুরের জাজিরা উপজেলার গঙ্গানগর গ্রামে। শৈশবে বাবাকে হারান জ্যোৎস্না। এরপর মায়ের সঙ্গে ঢাকায় মিরপুর–১–এ সনি সিনেমা হল এলাকায় একটি বস্তিতে থাকতেন।
জুলি বেগম বাসাবাড়িতে কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়ে মা ও মেয়ের চলে যেত। তবে শিশু চুরির দায়ে তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জেল হয় তাঁর। তখন জ্যোৎস্নার বয়স আনুমানিক চার বছর। অভিভাবক না থাকায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকার অনুমতি মেলে জ্যোৎস্নার।
২০০৩ সালের ২২ মার্চ সাত বছর বয়সে জ্যোৎস্নাকে কারাগার থেকে পাঠানো হয় ঢাকা আজিমপুর সরকারি শিশু পরিবারে। এর মধ্যে কারাগারে জ্যোৎস্নার মায়ের মৃত্যু হয়। আজিমপুরে তিন বছর থাকার পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার সরকারি শিশু সদনে (বালিকা) পাঠানো হয় তাঁকে।
১৫ বছর সরকারি শিশু সদনে ছিলেন জ্যোৎস্না। ২০১৮ সালে রূপগঞ্জের শিশু সদন লেখাপড়ায় অমনোযোগী হওয়ায় তাঁকে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। এরপর তাঁকে পটুয়াখালীর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। চার বছর ধরে জ্যোৎস্না এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাস করছেন। এখান থেকে হাঁস-মুরগি পালনের ওপর দুটি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
পটুয়াখালীতে এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপপরিচালক কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন এখানে আছেন জ্যোৎস্না। দুবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন স্বজনদের কাছে যেতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন বারবার জিজ্ঞাসা করেন, কেউ তাঁর খোঁজে এসেছিল কি না।