শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামালী) সংবাদদাতা : ভাটার ধোয়া ও গন্ধে চোখ জ্বালায়, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, প্রতিদিন বই- খাতাসহ জামা কাপড় ধুলা জমে ময়লা হয়ে যায়। এভাবেই কথাগুলো বললো নীলফামারীর জলঢাকার ছিটমীরগঞ্জ শালনগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী তৃষা মনি। এই অভিযোগ শুধু তৃষা মনিরেরই নয়, অভিযোগ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষাথী-শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবকদের। এছাড়া একই অভিযোগ করেছেন ভাটার ২০ গজের মধ্যে থাকা ছিটমীরগঞ্জ শালনগ্রাম ফাযিল মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান ওই মাদ্রাসার সুপার সহ একাধিক অভিভাবক। উপজেলার ছিটমীরগঞ্জ শালনগ্রাম ফাযিল মাদ্রাসা ও ছিটমীরগঞ্জ শালনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই সকল নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে গড়ে উঠেছে একটি ইটভাটা। ভাটার চারপাশে জনবসতি ও ফসলি জমি। মাটি, ইট বোঝাই ট্রাকের পর ট্রাকের আসা যাওয়া। যান চলাচলের শব্দ, ধুলো আর ইট পোড়ানোর ধোঁয়া ও গন্ধে ভারী হয়ে উঠা পরিবেশ। এরই মধ্যে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠ ও খেলাধুলা। এমন অবস্থায় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিত রয়েছে ওই মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, কর্মচারীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানায়, ইটভাটার গন্ধের পাশাপাশি রাস্তায় যান চলাচলের কারনে ধুলাবালি এসে বই খাতার উপর ধুলোর আস্তরণ পড়ে যায়। শব্দে কানে তালা লেগে যায়। ইটভাটার পাশে বসবাসরত বাড়ীর একাধিক মানুষের অভিযোগ, এই ভাটা গড়ে ওঠার পর থেকে আমাদের পরিবারে বিভিন্ন রমক রোগ বালাই লেগেই আছে। বিশেষ কওে ছোট শিশুদের শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা ও ক্ষুধামন্দসহ নানান জটিল রোগে ভুগছে। এছাড়ার বাড়ীতে লাগানো ফলগাছ গুলোতে ফল ধরছে না, দিন দিন মরে যাচ্ছে। তারা আরও বলেন, আমরা এর প্রতিকার ও বাঁচতে চাই। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩তে বলা আছে, আবাসকি এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও ফসলি জমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ ছাড়া কোনো সড়ক ও মহাসড়কের থেকে অর্ধকিলোমিটার দূরত্বে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। এছাড়াও ইটভাটা তৈরী করতে বন বিভাগ, কৃষি বিভাগ, বিএসটিআই, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রত্যয়ন ও অনুমতি প্রয়োজন হলেও এ আইনের কোন তোয়াক্কা না করে উপজেলায় গড়ে উঠেছে ৭টি ইট ভাটা। ক্ষোভ প্রকাশ করে ছিটমীরগঞ্জ শালনগ্রাম ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদ বলেন, ভাটায় ইট পোড়ানোর গন্ধে মাদ্রাসা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে, অনেক সময় আগাম ছুটি দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়া অত্র মাদ্রাসাটি দাখিল, আলিম ও ফাযিল পরীক্ষা কেন্দ্র। পরীক্ষা শুরু হলে অত্র মাদ্রাসা কেন্দ্রে এই গন্ধে চরম বিপাকে পড়ে পরীক্ষাথীসহ সংশি¬ষ্টগণ। কর্তৃপক্ষকে লিখিত ও মৌখিক ভাবে জানানোর পরেও কোন প্রতিকার না হওয়ায় আমি হতাশ। ছিটমীরগঞ্জ শালনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সালেমা বেগম বলেন, ‘ভাটার ধোঁয়া ও গন্ধের কারনে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁিেকত আছে বিদ্যালয়টির প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী। এতে শ্বাষকষ্টসহ নানান রোগে ভূগছে ফলে দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার আশংকা করছেন তিনি। ইটভাটার অনুমতির কাগজপত্রসহ অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স আর. এন ব্রিকস এর স্বতাধিকারী মাহবুবার রহমানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ইটভাটা পরিচলনা করা বে-আইনি বলে জানান, রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেজবাউল আলম। লোকবল সংকটের কারনে বিএসটিআই অনুমোদনহীন ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা যাচ্ছে, তবে অচিরেই অভিযান চালানো হবে বলে জানান, রংপুর বিভাগীয় অফিস প্রধান ও উপ- পরিচালক (পদার্থ) প্রকৌশলী এম এ হান্নান। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজাউদ্দৌলা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। নীলফামারী জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, জলঢাকার ইটভাটা গুলোতে অতিদ্রুত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
সংবাদ শিরোনাম ::
জলঢাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ির পাশে গড়ে উঠেছে ইটভাটা চরম ভোগান্তি
- মাতৃভূমির খবর ডেস্ক
- আপডেট টাইম ০৬:৪৮:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৯
- ৮৭৬ বার পড়া হয়েছে
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ