ঢাকা ১২:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল। গজারিয়া বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে সিকদার পরিবারে আমিরুল ইসলাম এর সর্মথনে আলোচনা সভা ও ইফতার দোয়া মাহফিল চসিকের ৬ ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৮ তম সাধারণ সভায় মশা কমাতে কার্যক্রম বাড়াবে : মেয়র রেজাউল “বিড়ি শিল্পে ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে রংপুর শ্রমিকদের মানববন্ধন” ইন্দুরকানী প্রেসক্লাবে ইফতার মাহফিল বরিশাল চকবাজার এবায়দুল্লাহ মসজিদে অগ্নিকান্ড। টাঙ্গাইলে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার পাঠক ফোরাম গঠিত চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার চট্টগ্রামে জালনোটসহ প্রতারকচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ রমজান মাসের পবিত্রতা লঙ্ঘন করছে নারায়ণগঞ্জ চিশতিয়া বাউল সমিত

চৌগাছায় পুরস্কার প্রাপ্ত সরকারি হাসপাতালের করুণ দশা, রোগীদের অশেষ ভোগান্তির অজানা কিছু কথা, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ঘুমাচ্ছে

চৌগাছা প্রতিনিধিঃ যশোরের চৌগাছায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যার নাম ডাক সারা বাংলাদেশে। পুরস্কারপ্রাপ্ত হয় মডেল হাসপাতাল হিসাবে। কিন্তু দেশ, জাতি, উপর মহল জানে না হাসপাতালের ভিতরের খবর। সামান্য কাটা ছেড়া থেকে শুরু করে ডেঙ্গু, ডায়রিয়া, হার্টের সমস্যা, ব্লাড প্রেসার বেড়ে স্টোকের উপক্রম, মারামারি জনীত রোগী আসলেই যেনো রেফার করাটা হাসপাতাল কতৃপক্ষের নিত্য ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।

হাসপাতালটি কি শুধু গর্ভবতীদের জন্য। কারণ ইহার উপর জরিপ করে পুরস্কার লাভ করে হাসপাতালটি। হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যাবস্থায় যেমন চিকিৎসকেরা অমনোযোগী তেমনটায় ব্যবসামূখী। রোগীর প্রতি সহনুভুতিশীল নয় তারা। রোগী মরবে কি বাঁচবে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসাটা অন্তত দিতে হবে এমন মনোভাব তাদের নেয়। তাহলে কি দেখে এত পুরস্কাপ্রাপ্ত হয়।

চিকিৎসা ব্যবস্থা যেমন অনুন্নত, হাসপাতালের ভিতরে রোগীর খাবার দেবার ব্যাপারেও তেমন অবহেলা আর ফাঁকি। আজ হাসপাতালে সরেজমিনে কয়েকজন সাংবাদিক হাসপাতালে গেলে দেখতে পায় রোগীর রাত্রের খাবার দিচ্ছে বিকাল ৫ টায়। খাবারের মেনুতে ছিলো এক মুঠো ভাত আর গোশতের মতো একটুকরা কিছু। যা একটি ছয় মাসের শিশুর জন্য প্রযোজ্য নয়। সাংবাদিকদের একজন বলেই ফেললেন গোশতোটি কত গ্রাম হতে পারে? আরেকজন উত্তরে বলেছিলো গ্রামে না এই গোশতের টুকরা আউন্সে পরিমাপ করলে হয়তো পরিমাপ করা যাবে।

হাসপাতালের ক্ষেত্রে বলতে গিয়ে সাংবাদিক আব্দুল আলীম বলেন, গত ১৭ ই জুলাই আমার পিতার প্রেসার বাড়তে থাকে এতে একসময় এক হাত ও এক পা পড়ে যাওয়ার মতো হচ্ছে। কিন্তু কথা বলা, সেন্স থাকা সবই ঠিক ছিলো। এতদ সত্ত্বেও আসা-ভরসা নিয়ে দৌড়িয়ে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে কোনোই প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে যশোর সদর হাসপাতালে রেফার করে। দেরি হয়ে যায় বাবার চিকিৎসা ব্যবস্থা। ফলে প্রেসার অতিরিক্ত বেড়ে পূর্ণ ব্রেন স্টোক হয়ে যায়। দুই দিন যশোর-ঢাকা করেও হারালেন পিতাকে। এমনভাবে ওনেককেই প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়েই রেফার করছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে জ্বালা তো একদিকে না। গতকাল শুক্রবার হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনের শুভ উদ্বোধন হলেও রয়ে যায় এক্সেরে ও ইসিজির অভাব।

উল্লেখ্য যশোরের চৌগাছা সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘ দিন নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডাঃ নাহিদ সিরাজ বলেন, দীর্ঘ প্রায় দুই মাস যাবৎ এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। মেশিনটি মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমরা উদ্ধোর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি জানিয়েছি। একটি নতুন মেশিন না দেওয়া পর্যন্ত এক্স-রে বিভাগটি বন্ধ থাকবে।

এ দিকে স্বাস্থ্য সেবাই দেশের মডেল হাসপাতালটির একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট থাকায় রোগী-সাধারণ দারুণ ভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পরপর ১৩ বার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সেটির এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট থাকায় পুরো এক্স-রে বিভাগটি বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ভূক্তভোগী উপজেলার আড়ারদহ গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন জানান আমার মা হাসিনা বেগম (৩৭) হঠাৎ করে বাড়ীতে পড়ে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ভ্যানযোগে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। সেখানকার চিকিৎসক আমার মায়ের পায়ের একটি এক্স-রে করার পরামর্শ দেন। মাকে নিয়ে এক্স-রে বিভাগে গিয়ে জানতে পারলাম এ বিভাগটি বন্ধ রয়েছ্। বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, মেশিনটি কয়েক মাস যাবৎ নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। পরে আমি এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে মাকে এক্স-রে করায়। এমনি ভাবে প্রতি দিন জরুরী রোগীরা দারুণ ভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা জানান এক্স-রে মেশিনটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যশোর সিভিলসার্জনের মাধ্যমে লিখিত আবেদন প্রেরণ করেছি। আমি আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে তা মেরামত করা হবে।

আজও কোন ফলাফল আসেনি। রোগীদের ভোগান্তি রোয়েই যাচ্ছে। নতুন করে ভোগান্তির পার্সেন্টেন্স বেড়ে গেছে ইসিজি মেশিনের অকেজোতায়। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় দেখা যাচ্ছে হাসপাতালটি একটি বস্ত্রের দোকান এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দোকানে দাড় করিয়ে রাখা পুতুলের মতো দাড়িয়ে থাকছে। সব মিলে সরকারী হাসাপাতালটি শুধু বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস হিসাবে চলছে। চিকিৎসার ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করছে না।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল।

চৌগাছায় পুরস্কার প্রাপ্ত সরকারি হাসপাতালের করুণ দশা, রোগীদের অশেষ ভোগান্তির অজানা কিছু কথা, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ঘুমাচ্ছে

আপডেট টাইম ১১:১৩:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৯

চৌগাছা প্রতিনিধিঃ যশোরের চৌগাছায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যার নাম ডাক সারা বাংলাদেশে। পুরস্কারপ্রাপ্ত হয় মডেল হাসপাতাল হিসাবে। কিন্তু দেশ, জাতি, উপর মহল জানে না হাসপাতালের ভিতরের খবর। সামান্য কাটা ছেড়া থেকে শুরু করে ডেঙ্গু, ডায়রিয়া, হার্টের সমস্যা, ব্লাড প্রেসার বেড়ে স্টোকের উপক্রম, মারামারি জনীত রোগী আসলেই যেনো রেফার করাটা হাসপাতাল কতৃপক্ষের নিত্য ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।

হাসপাতালটি কি শুধু গর্ভবতীদের জন্য। কারণ ইহার উপর জরিপ করে পুরস্কার লাভ করে হাসপাতালটি। হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যাবস্থায় যেমন চিকিৎসকেরা অমনোযোগী তেমনটায় ব্যবসামূখী। রোগীর প্রতি সহনুভুতিশীল নয় তারা। রোগী মরবে কি বাঁচবে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসাটা অন্তত দিতে হবে এমন মনোভাব তাদের নেয়। তাহলে কি দেখে এত পুরস্কাপ্রাপ্ত হয়।

চিকিৎসা ব্যবস্থা যেমন অনুন্নত, হাসপাতালের ভিতরে রোগীর খাবার দেবার ব্যাপারেও তেমন অবহেলা আর ফাঁকি। আজ হাসপাতালে সরেজমিনে কয়েকজন সাংবাদিক হাসপাতালে গেলে দেখতে পায় রোগীর রাত্রের খাবার দিচ্ছে বিকাল ৫ টায়। খাবারের মেনুতে ছিলো এক মুঠো ভাত আর গোশতের মতো একটুকরা কিছু। যা একটি ছয় মাসের শিশুর জন্য প্রযোজ্য নয়। সাংবাদিকদের একজন বলেই ফেললেন গোশতোটি কত গ্রাম হতে পারে? আরেকজন উত্তরে বলেছিলো গ্রামে না এই গোশতের টুকরা আউন্সে পরিমাপ করলে হয়তো পরিমাপ করা যাবে।

হাসপাতালের ক্ষেত্রে বলতে গিয়ে সাংবাদিক আব্দুল আলীম বলেন, গত ১৭ ই জুলাই আমার পিতার প্রেসার বাড়তে থাকে এতে একসময় এক হাত ও এক পা পড়ে যাওয়ার মতো হচ্ছে। কিন্তু কথা বলা, সেন্স থাকা সবই ঠিক ছিলো। এতদ সত্ত্বেও আসা-ভরসা নিয়ে দৌড়িয়ে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে কোনোই প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে যশোর সদর হাসপাতালে রেফার করে। দেরি হয়ে যায় বাবার চিকিৎসা ব্যবস্থা। ফলে প্রেসার অতিরিক্ত বেড়ে পূর্ণ ব্রেন স্টোক হয়ে যায়। দুই দিন যশোর-ঢাকা করেও হারালেন পিতাকে। এমনভাবে ওনেককেই প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়েই রেফার করছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে জ্বালা তো একদিকে না। গতকাল শুক্রবার হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনের শুভ উদ্বোধন হলেও রয়ে যায় এক্সেরে ও ইসিজির অভাব।

উল্লেখ্য যশোরের চৌগাছা সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘ দিন নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডাঃ নাহিদ সিরাজ বলেন, দীর্ঘ প্রায় দুই মাস যাবৎ এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। মেশিনটি মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমরা উদ্ধোর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি জানিয়েছি। একটি নতুন মেশিন না দেওয়া পর্যন্ত এক্স-রে বিভাগটি বন্ধ থাকবে।

এ দিকে স্বাস্থ্য সেবাই দেশের মডেল হাসপাতালটির একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট থাকায় রোগী-সাধারণ দারুণ ভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পরপর ১৩ বার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সেটির এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট থাকায় পুরো এক্স-রে বিভাগটি বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ভূক্তভোগী উপজেলার আড়ারদহ গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন জানান আমার মা হাসিনা বেগম (৩৭) হঠাৎ করে বাড়ীতে পড়ে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ভ্যানযোগে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। সেখানকার চিকিৎসক আমার মায়ের পায়ের একটি এক্স-রে করার পরামর্শ দেন। মাকে নিয়ে এক্স-রে বিভাগে গিয়ে জানতে পারলাম এ বিভাগটি বন্ধ রয়েছ্। বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, মেশিনটি কয়েক মাস যাবৎ নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। পরে আমি এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে মাকে এক্স-রে করায়। এমনি ভাবে প্রতি দিন জরুরী রোগীরা দারুণ ভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা জানান এক্স-রে মেশিনটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যশোর সিভিলসার্জনের মাধ্যমে লিখিত আবেদন প্রেরণ করেছি। আমি আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে তা মেরামত করা হবে।

আজও কোন ফলাফল আসেনি। রোগীদের ভোগান্তি রোয়েই যাচ্ছে। নতুন করে ভোগান্তির পার্সেন্টেন্স বেড়ে গেছে ইসিজি মেশিনের অকেজোতায়। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় দেখা যাচ্ছে হাসপাতালটি একটি বস্ত্রের দোকান এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দোকানে দাড় করিয়ে রাখা পুতুলের মতো দাড়িয়ে থাকছে। সব মিলে সরকারী হাসাপাতালটি শুধু বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস হিসাবে চলছে। চিকিৎসার ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করছে না।