চৌগাছা প্রতিনিধি ) যশোরের চৌগাছায় উপজেলা নির্বাচনে প্রশাসনের সুষ্ঠু সহযোগিতা ও কঠোর ভূমিকা দেখা যায়। দেখা যায় নিরপেক্ষ নির্বাচন। ভোটারকর্মীদের মাঝে প্রধান বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে নৌকা ও আনারস প্রতীকের। নির্বাচনের পূর্বে আনারসের পক্ষে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নৌকাপ্রেমীদের উপর হুমকি, মারধর ইত্যাদি চালিয়ে যাওয়ার ফল এটিই বলে ব্যক্ত করেছেন এলাকার সাধারণ ভোটাররা।
সহিংসতা শুরু হয়েছে একই দলের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মাঝে। এ যেনো একই মায়ের দুই সন্তানের মাঝে চলা বিরোধ। তাইতো প্রশাসন শুধুই থামানোর কাজে ব্যস্ত। সহিংসতার পক্ষে নয়। সমাজ, জাতি ও উন্নয়নের পথেই প্রশাসন। চৌগাছায় নির্বাচনী সহিংসতায় অর্ধশতাধিক আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
আহতদের কেউ কেউ চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। আর অনেকে জীবনের ভয়ে চিকিৎসা নিয়ে পলাতক হয়েছেন। এদিকে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ.ড. এম মোস্তানিছুর রহমান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পরাজিত উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম হাবিবুর রহমান উভয়ই আজ সোমবার চৌগাছা হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ খবর নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আহত উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম খান জানায়, আমার রাজনৈতিক নেতা এস এম হাবিবের আনারসের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করি। যে কারনে প্রতিপক্ষ ড. এম মোস্তানিছুর রহমানের নৌকা প্রতীকের কর্মীরা আমাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর করে ক্ষতিসাধনসহ দা ও সাপল দিয়ে মাথায় আঘাত করে।
এ সময় আমার ভাই মিলনকেও তারা ওই দা সাফল দিয়ে মাথায় আঘাত করে মারাত্বকভাবে জখম করে। এছাড়া বাকী দুজনকে বেদমভাবে পিটিয়ে আহত করে তারা। বর্তমানে আমরা চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি আছি।
অপরদিকে ধূলিয়ানী ইউনিয়নে হামলায় আহত হয়ে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন- রামভদ্র পুরের হোসেনের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫৫), সিরাজুল ইসলামের ছেলে ইদ্রিস (৩০), সিরাজুলের স্ত্রী ভীরকুটি খাতুন (৪৫), মৃত ইদুর ছেলে ফারুক হোসেন মেম্বার (৪০), ধুলিয়ানী বাজার এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে সরোয়ার হোসেন (৪০), আফসার উদ্দিনের মেয়ে মোছা. আছিয়া খাতুন (২২), ইসমাইল হোসেনের ছেলে জায়েদ আলী (৩৮), সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী সেফালী খাতুন (৩৫), আব্দুল মালেকের ছেলে আক্তার হোসেন (৪২), মোস্তফার ছেলে বাবু (৩০), গোলাম রসুলসহ (৩২) প্রায় অর্ধাশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা আহতদের অভিযোগ- চৌগাছা ৪ নং ধুলিয়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান স্থানীয় জামায়াত নেতা রেজাউল ইসলাম, তাইফুল ইসলাম, রফিকুলসহ জামায়াত-বিএনপি‘র নেতাকর্মীদেরও সাথে নিয়ে ভাংচুর, মারপিট ও লুটতরাজ করে। আওয়ামীলীগের অনেকে বাড়ি ছাড়া হয়েছে।
ধুলিয়ানী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বর গোলাম মোস্তফাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তাকে এলাকা ছাড়া করেছে বলে আহতদের কাছ থেকে জানা গেছে।
যশোর-২ আসনে সাংসদ ডা. মো. নাছির উদ্দিনের উপস্থিতে এসএম হাবিবকে দলীয় একক প্রার্থীও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তার প্রতিপক্ষ কেন্দ্রীয় মনোনয়ন কমিটির কাছে নানা বিষোধগার অভিযোগ তুলে ধরেন। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষিত হওয়ায় তারা চৌগাছা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমান চৌগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান হাবিবকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বেঁছে নেয়। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। অন্যদিকে, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড. মুস্তানিছুর রহমানের পক্ষ নেয়। আর এ পক্ষে সুযোগ পায় দীর্ঘ দিনের ভোট বঞ্চিত বিএনপি‘র নেতাকর্মী সমর্থকরা।
নির্বাচনী সহিংসতা হামলা ঘটনায় চৌগাছা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।
চৌগাছা থানার অফিসিয়াল ফেসবুক আইডি থেকে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই নির্বাচনের পরে কেউ যদি সহিংসতা করে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।