ইব্রাহিম মিন্টু স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রামঃ
চট্টগ্রাম -২৮ নভেম্বর’২০২২খ্রি:
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে ৪ ডিসেম্বরের জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে হবে। চট্টগ্রাম নগরীকে আধুনিক নগরীতে রূপান্তরের জন্য সম্প্রতি শতভাগ সরকারি অর্থায়নে ২৫০০ কোটি টাকার সড়ক ও ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ প্রকল্প, ১৩০০কোটি টাকার বারাইপাড়া খাল-খনন প্রকল্প প্রদান করায় নগরবাসীর পক্ষ থেকে মননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল, বে-টার্মিনাল, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, মিরসরাইতে বঙ্গবন্ধু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্টোরেলের সম্ভ্যব্যতা যাচাই প্রকল্প, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেইনে উন্নীত করণ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন ও ঢাকার সাথে চট্টগ্রামের যোগযোগ ব্যবস্থা উন্নীত করণের মাধ্যমে চট্টগ্রামের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধিত হবে । বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সড়ক যোগযোগের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক দিক উম্মোচিত হবে। সেই সাথে চট্টগ্রাম নগরী চীনের সাংহাই নগরীর আদলে “ওয়ান সিটি টু টাউন” বাস্তবায়নের ক্ষেত্র তৈরী হবে। তিনি কর মূল্যায়ন বিষয়ে ঘোষনা করে বলেন, নগরীর বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার, গরীব-দুঃস্থ ও কাঁচা ঘরের মালিকদের কোন গৃহকর পরিশোধ করতে হবে না এবং তাদের হোল্ডিং ট্যাক্সের আওতায় বাইরে রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। আজ সোমবার সকালে আন্দরকিল্লাস্থ পুরাতন নগর ভবনের কে বি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত পরিষদের ২২তম সাধারণ সভায় এ ঘোষনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে আগমন ও মহাসমাবেশ উপলক্ষে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর নগরীকে বর্ণিলভাবে সজ্জিত করা হয়েছে। জনসভায় আগ্রতদের জনসাধারনের সুবিধার্থে পানীয় জল সরবরাহ, ভ্র্যম্যমান টয়লেট স্থাপন এবং মেডিকেল টিমসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সভাস্থলের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ১০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। নগরীর বিভিন্ন সরকারী সেবা সংস্থা গুলো কতৃক গৃহীত কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য আগামী দুই এক দিনের মধ্যে সমন্বয় সভা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার অনুমোদিত জনবল কাঠামোর বাইরে জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় অস্থায়ী ভিত্তিতে কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করা হয়েছিল। এদের মধ্যে অনেকেই অস্থায়ী হিসেবে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেকে অস্থায়ীভাবে চাকুরী শেষ করে অবসর যাচ্ছেন। কিন্তু চাকুরী শেষে তেমন আর্থিক সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তাছাড়া অস্থায়ীভাবে কর্মরতরা স্থায়ীদের সমান কাজ করেও চাকুরী স্থায়ী না হওয়ার ফলে পদোন্নতিসহ সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চসিকের সুষ্ঠভাবে নাগরিক সেবা প্রদান কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী গত ১৯এপ্রিল একনেক সভায় অস্থায়ী কর্মচারীদের আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থায়ী করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শ্রমিক কর্মচারী লীগ সি.বি.এ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে কর্মচারীদের স্থায়ী করণের নিমিত্তে যথাযথ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার প্রদত্ত দুই হাজার পাঁচশত কোটি টাকার কাজের অন্তত ১০০০ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা এবং অন্তত ১০টি ফুট ওভারব্রীজের কাজ শুরু করার নির্দেশনা প্রদান করেন মেয়র। তিনি প্রতি ওয়ার্ডে ছোট বড় সকল সড়কের খানাখন্দক মেরামত ও সংস্কার কাজ করারও নির্দেশনা দেন।
মেয়র চট্টগ্রাম ওয়াসা অনুমতি বিহীন কোন রোড কার্টিং করছে কিনা তা সঠিকভাবে তদারকীর জন্য প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দেন। ইতোমধ্যে চসিকের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের মাসওয়ারী অগ্রগতির প্রতিবেদন প্রদানেরও নির্দেশনা দেন।
সভায় রাজস্ব আদায়ের গতি বৃদ্ধি করার উপর জোর দিয়ে মেয়র বলেন, অনুমতি বিহীন যেসব ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে উপযুক্ত ফি আদায় করার জন্য কর আদায়কারীদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে তা বাস্তবায়ন করা, ট্রেড লাইসেন্স বিহীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনা, ভূ-সম্পত্তি শাখার অধীনে থাকা সম্পত্তি গুলোকে ডেভেলপারের মাধ্যমে উন্নয়ন বা নিজস্ব উদ্যোগে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।এছাড়া নগরীর রিকসা, ভ্যানগুলোর বারকোড যুক্ত লাইসেন্স প্রদানের জন্য প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
যান্ত্রিক শাখার কাজের গতি বৃদ্ধি করার উপর গুরুত্বারোপ করে মেয়র বলেন, মাদারবাড়ীতে চসিকের মালিকানাধীণ জায়গায় গাড়ী পার্কিং ও রক্ষণা-বেক্ষনের ব্যবস্থা করণ কাজ দ্রত শেষ পরামর্শ্য দেন এবং কাজের গুনগত মান প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে নজর রাখার কথা উল্লেখ করেন।
বিদ্যুৎ শাখার কর্মকর্তাদের উপর মেয়র ক্ষোভ প্রকাশ করে নগরীতে নিরবিচ্ছন্ন আলোকায়নের ক্ষেত্রে যে অভিযোগ পাওয়া যায় তার পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, নগরীর মশক নিধণের জন্য কার্যকর ঔষধ সংগ্রহ করা হয়েছে।
নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মশক নিধনে প্রণীত সপ্তাহ ব্যাপী কর্মসূচী যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা তদারকীর জন্য নির্দেশনা দেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে শুস্ক মৌসুমের মধ্যে চসিকের আওতাধীন সকল খাল, নালা-নর্দমা নিজস্ব স্কেভেটরের মাধ্যমে পরিস্কার করার কথা বলেন। তিনি উচ্ছেদ কাজে সি.এম.পির সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, উচ্ছেদকৃত স্থানগুলো যাতে পুর্ন: দখল হতে না পারে সে ব্যাপারে স্থানীয় থানাগুলোকে ভূমিকা রাখার আহবান জানান। নগরীর যানজট নিরসনের ফ্লাইওভারে নিচে ও উপযুক্ত স্থানে চসিক ও সি.এম.পি যৌথ উদ্যোগে পে-পার্কিং ব্যবস্থা চালুকরণের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান। এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হতে কন্টেইনার ও ট্রাকের উপর চসিকের সুনির্দিষ্ট চার্জ আদায়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং কাষ্টমসের বিল অব এন্ট্রি থেকে চার্জ আদায়ের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। সভায় ২১তম সাধারণ সভার কার্যাবলী পাঠ ও অনুমোদন করা হয়।
চসিক সচিব খালেদ মাহমুদের সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহীদুল আলম, প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর, বিভাগীয় প্রধান এবং বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ। সভার শুরুতে নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন চসিক মাদ্রাসা পরির্দশক মাওলানা মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী।