ঢাকা ০২:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ

ঘূর্ণিঝড়ের রাতে জন্ম নেওয়া সেই সিডরের আজ জন্মদিন।

পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ মা মাহমুদা বেগম ও বাবা মিজানুর রহমানের সঙ্গে সিডর। গতকাল সোমবার উপজেলার উত্তর রানীপুর গ্রামে।‘প্রসববেদনা নিয়ে অন্ধকারে সারা রাত কলাগাছের পাতা ধরে স্রোতের পানিতে যুদ্ধ করে ভেসেছিলাম। বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় পরিবারের সবাই বেঁচে গেছি সেই রাতে। সূর্যোদয়ের কিছু আগে জন্ম হয় আমার সিডরের।’ ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর রানীপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদা বেগম। সেই ভয়াবহ রাতের শেষে তাঁর কোলজুড়ে যে সন্তানের জন্ম হয়েছিল, তার নামও রাখা হয় ‘সিডর’। মাহমুদা বেগম বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তিনি। ওই দিন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার জন্য যাওয়া হয়নি। রাত যতই গভীর হয়, ততই বাড়তে থাকে সুপার সাইক্লোন সিডরের তাণ্ডব আর পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মাহমুদা বেগমের প্রসববেদনা। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঝোড়ো হাওয়া ও পানির স্রোত মাহমুদা বেগমের ঘর উড়িয়ে নিয়ে যায়। তাঁর স্বামী মো. মিজানুর রহমান, বড় ছেলে সজীবসহ বাড়ির কয়েক কয়েকটি কলাগাছ কেটে দড়ি দিয়ে বেঁধে সেগুলোর পাতা ধরে পানিতে ভেসেছিলেন। অন্ধকার রাত, চারদিকে শুধু পানি আর চিৎকার-চেঁচামেচি। সূর্যোদয়ের কিছু আগে মাহমুদা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে নেওয়া হয় বড় সড়কের পাশে একটি বাড়িতে। সেখানে কোনো চিকিৎসকের সাহায্য ছাড়াই জন্ম নেয় ফুটফুটে এক শিশু। সুপার সাইক্লোনের সঙ্গে মিল রেখে শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল ‘সিডর’।
১৫ নভেম্বর সেই সিডরের জন্মদিন। সে বর্তমানে মির্জাগঞ্জ উপজেলার চরখালী সমবায় বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তার পুরো নাম রাশেদুল ইসলাম ওরফে সিডর। তবে এলাকায় সবাই তাকে ‘সিডর’ নামেই ডাকে।
মাহমুদা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী মো. মিজানুর রহমান ছোট শিশুদের কাঠের খেলনা তৈরি করে বিক্রি করতেন। ঘূর্ণিঝড় সিডরের রাতে তাঁদের খেলনা তৈরির কারখানা ও উপকরণ এবং বাড়িঘর তছনছ হয়ে যায়। তাঁদের দুরবস্থা দেখে বেসরকারি সংস্থা মুসলিম এইড একটি ঘর তুলে দেয়। জমিজমা তেমন না থাকলেও হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল লালন পালন করে আবার তাঁরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এখন তাঁরা ভালো আছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ‘সিডর’ বাড়ির কাজে মাকে সাহায্য করে। আর স্বামী মিজানুর রহমান এখন গভীর নলকূপ বসানোর ঠিকাদারি কাজ করছেন। দুই ছেলে সজীব, সিডর আর এক মেয়েকে নিয়ে ভালোই চলছে তাঁদের সংসার।###

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত

ঘূর্ণিঝড়ের রাতে জন্ম নেওয়া সেই সিডরের আজ জন্মদিন।

আপডেট টাইম ১২:১৯:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২

পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ মা মাহমুদা বেগম ও বাবা মিজানুর রহমানের সঙ্গে সিডর। গতকাল সোমবার উপজেলার উত্তর রানীপুর গ্রামে।‘প্রসববেদনা নিয়ে অন্ধকারে সারা রাত কলাগাছের পাতা ধরে স্রোতের পানিতে যুদ্ধ করে ভেসেছিলাম। বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় পরিবারের সবাই বেঁচে গেছি সেই রাতে। সূর্যোদয়ের কিছু আগে জন্ম হয় আমার সিডরের।’ ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর রানীপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদা বেগম। সেই ভয়াবহ রাতের শেষে তাঁর কোলজুড়ে যে সন্তানের জন্ম হয়েছিল, তার নামও রাখা হয় ‘সিডর’। মাহমুদা বেগম বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তিনি। ওই দিন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার জন্য যাওয়া হয়নি। রাত যতই গভীর হয়, ততই বাড়তে থাকে সুপার সাইক্লোন সিডরের তাণ্ডব আর পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মাহমুদা বেগমের প্রসববেদনা। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঝোড়ো হাওয়া ও পানির স্রোত মাহমুদা বেগমের ঘর উড়িয়ে নিয়ে যায়। তাঁর স্বামী মো. মিজানুর রহমান, বড় ছেলে সজীবসহ বাড়ির কয়েক কয়েকটি কলাগাছ কেটে দড়ি দিয়ে বেঁধে সেগুলোর পাতা ধরে পানিতে ভেসেছিলেন। অন্ধকার রাত, চারদিকে শুধু পানি আর চিৎকার-চেঁচামেচি। সূর্যোদয়ের কিছু আগে মাহমুদা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে নেওয়া হয় বড় সড়কের পাশে একটি বাড়িতে। সেখানে কোনো চিকিৎসকের সাহায্য ছাড়াই জন্ম নেয় ফুটফুটে এক শিশু। সুপার সাইক্লোনের সঙ্গে মিল রেখে শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল ‘সিডর’।
১৫ নভেম্বর সেই সিডরের জন্মদিন। সে বর্তমানে মির্জাগঞ্জ উপজেলার চরখালী সমবায় বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তার পুরো নাম রাশেদুল ইসলাম ওরফে সিডর। তবে এলাকায় সবাই তাকে ‘সিডর’ নামেই ডাকে।
মাহমুদা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী মো. মিজানুর রহমান ছোট শিশুদের কাঠের খেলনা তৈরি করে বিক্রি করতেন। ঘূর্ণিঝড় সিডরের রাতে তাঁদের খেলনা তৈরির কারখানা ও উপকরণ এবং বাড়িঘর তছনছ হয়ে যায়। তাঁদের দুরবস্থা দেখে বেসরকারি সংস্থা মুসলিম এইড একটি ঘর তুলে দেয়। জমিজমা তেমন না থাকলেও হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল লালন পালন করে আবার তাঁরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এখন তাঁরা ভালো আছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ‘সিডর’ বাড়ির কাজে মাকে সাহায্য করে। আর স্বামী মিজানুর রহমান এখন গভীর নলকূপ বসানোর ঠিকাদারি কাজ করছেন। দুই ছেলে সজীব, সিডর আর এক মেয়েকে নিয়ে ভালোই চলছে তাঁদের সংসার।###