ঢাকা ০১:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন “বাংলাদেশের হিট অফিসার কী করছেন? হিট নিয়ন্ত্রণে “ অগ্নিকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে অনুদানের নগদ অর্থ সহায়তায়: আ জ ম নাসির “স্মার্ট সুদহারে বিপাকে ব্যবসায়ীরা ঢাকা মতিঝিলে ইসতেস্কার নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

গল্প অন্যরকম গল্প

সে দিন ছিল স্নিগ্ধ আকাশ।নারিকেল গাছের মাথার উপর ডাবের মতো রুপালি চাঁদ।কী অপরূপ জোছনা! জোছনা ছড়ানো চাঁদ উকি দিলো কবির ঘরে। কবির অনেক দিনের স্বপ্ন একটা নিঃসঙ্গ রাতের সঙ্গী হবার। তাই তিনি দাঁড়ালেন দখিনা অলিন্দে।
মাঝে মাঝে হাসনা হেনার সুবাস কোথা থেকে যেন ভেসে আসছিলো।মাতাল করে তুললো কবির মন। ঝির ঝির বাতাসে শরীরটাকে শিহরিত করলো।কবি ভাবলেন, আজ রাতটা রাতের সঙ্গী হলে মন্দ হয়না।তাই তিনি নিঃশব্দে পদার্পণ করলেন বাড়ির বাইরে। কবির প্রথমে চোখ পড়লো ল্যাম্পপোষ্টে। তিনি দেখলেন,শহরের নিশিচোরা গলিতে মাতাল যুবকের বেসামাল জোড়া জোড়া চোখ। তিনি বিস্মিত হলেন।এ কি! আমি তো নিঃসঙ্গ রাতের সঙ্গী হতে চেয়েছিলাম, তাহলে এরা কারা? কৌতুহলী চোখ নিয়ে কবি আবার যাত্রা শূুরু করলেন।
খানিকটা পথ যেয়ে থমকে দাঁড়ালেন। কে যেন হন হন করে উধ্বর্শ্বাসে ছুটে চলেছে। পারফিউমের সুবাস ছড়াতে ছড়াতে।কবি উৎসুক চোখ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কে? কে তুমি?
এত রাত্রে কোথায় হেঁটে চলেছো?
পিছন ফিরে হেসে জবাব দিলো, আমি ক্ষধার্ত নিশিগন্ধ্যা। মানে? জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
মানে বুঝলেন না? মানে আমি দেহপসারিনী। নিসঃঙ্গ নিশুত রাতে গন্ধ্যা বিলাই। কবির মন আরো ভাবিয়ে তুললো।এরাও কি রাতের সঙ্গী হতে এসেছে? আমার মতো?।ভাবতে ভাবতে আবারও হাঁটা শুরু করলেন।
হঠাৎ কবির কানে একটা চিৎকার ভেসে এলো।আমাকে ছেড়ে দে। আমাকে ছেড়ে দে।।আমার খুব খিদে পেয়েছে।আমি মানচিত্র খাবো।আমি স্বাধীনতা খাবো।
কবি বোঝার চেষ্টা করলেেন, কোথা থেকে শব্দটা আসছে। দেখি, কে চিৎকার করছে?কবি দেখলেন,রাস্তার পাশে পড়ে থাকা একটা পাগলীনিকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে একদল মদিরা মত্ত যুবক।তাদের কামুক রসে ভিজিয়ে দিলো লাল সবুজের পতাকা।
কবি স্তব্ধ হয়ে গেলেন।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। কবি দেখলেন,জোড়া জোড়া জোক রক্ত চুষে খাচ্ছে জননীর বুক থেকে। কবির বুক হু হু করে কেঁদে উঠলো।নিঃসঙ্গ রাতের খেলায় ঘৃণার দীপশিখা জ্বলে উঠলো কবির চোখে। একদল গিরগিটি ছুটলো মাটির গর্তে।
কবি ভাবলেন,বিকলঙ্গ স্বপনের অলিন্দে গোলাপগুলো হয়ত আজ আর ফুটবেনা।তাই তিনি ফেরার জন্য প্রস্তুত নিলেন। কবি ফিরছিলেন ব্যথাতুর চিত্তে।খানিকটা পথ যেতেই তিনি এক ছায়া মানবীর কান্না শুনতে পেলেন।গুমরে গুমরে যেন কাঁদছে।না, ছায়া মানবী নয়।একজন ধর্ষিতা। নিঃসঙ্গ নিশুত রাত্রে তার আর্ত চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায় পড়শীর। কবি দেখলেন, অন্ধকারে শকুনেরা খামছে খাচ্ছে লাল-সবুজের পতাকা।
নিঃসঙ্গ রাতের সঙ্গীরা গায়ে মুড়িয়ে দিলো বিষাদের মোড়ক। রাতের সাথে জেগে থাকা জোছনা মলিন হতে শুরু করলো।কবির দু’চোখ ভিজে গেলো চাঁদের দুঃখের নোনাজলে।কবির স্বপনাতুর চোখে এখন ধোঁয়াটে আকাশ।রাতের আঁধারে মেঘেরা বিষাদের অঞ্জন মেখে দিলো কবির চোখে। স্বাধীনতাও গুমরে কাঁদছে রাতের আধারে।
কবি বাড়ি ফিরলেন। জানালার গ্রীলটাতে মুখ রাখলেন। তিনি দেখলেন,নিশাচর সঙ্গীদের দাপট ভোরের প্রান্তে ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে।নক্ষত্রের আলো নিবু নিবু।আবছা আবছা আলো-আধারে হারিয়ে গেলো দুরাকাশের তারা। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো এক অজগর সাপ।আস্তে আস্তে দিনের আলোয় মিশে গেলো একদল গিরগিটি।
নিশুত রাতের সঙ্গীরা ঢুলু ঢুলু চোখে গড়িয়ে পড়লো বিছানায়।কবি ভাবলেন, স্বাধীনতাও রাতের আঁধারে খেলে পুতুল নাচ।সে এখন দেশদ্রোহী মানুষের পকেটে বন্দী। গোটাকিছু মানুষের হাতের খেলনা। যেমনটি ইচ্ছা তেমনটা খেলা যায।ভাবতে ভাবতে কবির রাতজাগা নেত্রদ্বয় ক্লান্ত হয়ে আসলো। প্রত্যুষ আলোয় হারিয়ে গেলো একাকিত্বের সঙ্গী। স্বাধীনতার নিরব কান্নায় ভিজে গেলো বাংলার মাটি নিঃসঙ্গ রাতে।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন

গল্প অন্যরকম গল্প

আপডেট টাইম ১০:১৮:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২

সে দিন ছিল স্নিগ্ধ আকাশ।নারিকেল গাছের মাথার উপর ডাবের মতো রুপালি চাঁদ।কী অপরূপ জোছনা! জোছনা ছড়ানো চাঁদ উকি দিলো কবির ঘরে। কবির অনেক দিনের স্বপ্ন একটা নিঃসঙ্গ রাতের সঙ্গী হবার। তাই তিনি দাঁড়ালেন দখিনা অলিন্দে।
মাঝে মাঝে হাসনা হেনার সুবাস কোথা থেকে যেন ভেসে আসছিলো।মাতাল করে তুললো কবির মন। ঝির ঝির বাতাসে শরীরটাকে শিহরিত করলো।কবি ভাবলেন, আজ রাতটা রাতের সঙ্গী হলে মন্দ হয়না।তাই তিনি নিঃশব্দে পদার্পণ করলেন বাড়ির বাইরে। কবির প্রথমে চোখ পড়লো ল্যাম্পপোষ্টে। তিনি দেখলেন,শহরের নিশিচোরা গলিতে মাতাল যুবকের বেসামাল জোড়া জোড়া চোখ। তিনি বিস্মিত হলেন।এ কি! আমি তো নিঃসঙ্গ রাতের সঙ্গী হতে চেয়েছিলাম, তাহলে এরা কারা? কৌতুহলী চোখ নিয়ে কবি আবার যাত্রা শূুরু করলেন।
খানিকটা পথ যেয়ে থমকে দাঁড়ালেন। কে যেন হন হন করে উধ্বর্শ্বাসে ছুটে চলেছে। পারফিউমের সুবাস ছড়াতে ছড়াতে।কবি উৎসুক চোখ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কে? কে তুমি?
এত রাত্রে কোথায় হেঁটে চলেছো?
পিছন ফিরে হেসে জবাব দিলো, আমি ক্ষধার্ত নিশিগন্ধ্যা। মানে? জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
মানে বুঝলেন না? মানে আমি দেহপসারিনী। নিসঃঙ্গ নিশুত রাতে গন্ধ্যা বিলাই। কবির মন আরো ভাবিয়ে তুললো।এরাও কি রাতের সঙ্গী হতে এসেছে? আমার মতো?।ভাবতে ভাবতে আবারও হাঁটা শুরু করলেন।
হঠাৎ কবির কানে একটা চিৎকার ভেসে এলো।আমাকে ছেড়ে দে। আমাকে ছেড়ে দে।।আমার খুব খিদে পেয়েছে।আমি মানচিত্র খাবো।আমি স্বাধীনতা খাবো।
কবি বোঝার চেষ্টা করলেেন, কোথা থেকে শব্দটা আসছে। দেখি, কে চিৎকার করছে?কবি দেখলেন,রাস্তার পাশে পড়ে থাকা একটা পাগলীনিকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে একদল মদিরা মত্ত যুবক।তাদের কামুক রসে ভিজিয়ে দিলো লাল সবুজের পতাকা।
কবি স্তব্ধ হয়ে গেলেন।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। কবি দেখলেন,জোড়া জোড়া জোক রক্ত চুষে খাচ্ছে জননীর বুক থেকে। কবির বুক হু হু করে কেঁদে উঠলো।নিঃসঙ্গ রাতের খেলায় ঘৃণার দীপশিখা জ্বলে উঠলো কবির চোখে। একদল গিরগিটি ছুটলো মাটির গর্তে।
কবি ভাবলেন,বিকলঙ্গ স্বপনের অলিন্দে গোলাপগুলো হয়ত আজ আর ফুটবেনা।তাই তিনি ফেরার জন্য প্রস্তুত নিলেন। কবি ফিরছিলেন ব্যথাতুর চিত্তে।খানিকটা পথ যেতেই তিনি এক ছায়া মানবীর কান্না শুনতে পেলেন।গুমরে গুমরে যেন কাঁদছে।না, ছায়া মানবী নয়।একজন ধর্ষিতা। নিঃসঙ্গ নিশুত রাত্রে তার আর্ত চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায় পড়শীর। কবি দেখলেন, অন্ধকারে শকুনেরা খামছে খাচ্ছে লাল-সবুজের পতাকা।
নিঃসঙ্গ রাতের সঙ্গীরা গায়ে মুড়িয়ে দিলো বিষাদের মোড়ক। রাতের সাথে জেগে থাকা জোছনা মলিন হতে শুরু করলো।কবির দু’চোখ ভিজে গেলো চাঁদের দুঃখের নোনাজলে।কবির স্বপনাতুর চোখে এখন ধোঁয়াটে আকাশ।রাতের আঁধারে মেঘেরা বিষাদের অঞ্জন মেখে দিলো কবির চোখে। স্বাধীনতাও গুমরে কাঁদছে রাতের আধারে।
কবি বাড়ি ফিরলেন। জানালার গ্রীলটাতে মুখ রাখলেন। তিনি দেখলেন,নিশাচর সঙ্গীদের দাপট ভোরের প্রান্তে ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে।নক্ষত্রের আলো নিবু নিবু।আবছা আবছা আলো-আধারে হারিয়ে গেলো দুরাকাশের তারা। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো এক অজগর সাপ।আস্তে আস্তে দিনের আলোয় মিশে গেলো একদল গিরগিটি।
নিশুত রাতের সঙ্গীরা ঢুলু ঢুলু চোখে গড়িয়ে পড়লো বিছানায়।কবি ভাবলেন, স্বাধীনতাও রাতের আঁধারে খেলে পুতুল নাচ।সে এখন দেশদ্রোহী মানুষের পকেটে বন্দী। গোটাকিছু মানুষের হাতের খেলনা। যেমনটি ইচ্ছা তেমনটা খেলা যায।ভাবতে ভাবতে কবির রাতজাগা নেত্রদ্বয় ক্লান্ত হয়ে আসলো। প্রত্যুষ আলোয় হারিয়ে গেলো একাকিত্বের সঙ্গী। স্বাধীনতার নিরব কান্নায় ভিজে গেলো বাংলার মাটি নিঃসঙ্গ রাতে।