হাবিবুর রহমান বাবু।
আর কিছু দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে তাই জমে উঠেছে ঢাকার সবগুলো পশুর হাট। মহান আল্লাহ’র নৈকট্য লাভের আশায় পশু কুরবানী দিতে ঢাকার বিভিন্ন হাটে ঘুরতে শুরু করেছেন ক্রেতারাও। মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন পশুর হাটে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গরু-ছাগলের এ হাট গুলোতে উপচে পড়া ভিড়। দূর-দূরন্ত থেকে গরু-ছাগল নিয়ে বিক্রেতারা হাটে আসতে শুরু করেছে আরো কয়েকদিন আগে থেকেই।
ক্রেতারা দেখে-শুনে পছন্দের গরুটির দরদাম করছেন। পছন্দ হলে ন্যায্য দামে কিনে খুশি মনে কোরবানীর পশু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন দু’একজন।
তবে বেশিরভাগ ক্রেতাগন এখন আসছেন ঘুরে দেখতে,যার ফলে এখনো বেচা-বিক্রি খুবই কম। তবে যতই সময় যাবে ততই বেচা-বিক্রি বারবে বলে আশাবাদী বিক্রেতারা।
রাজধানী’র শাহজাহানপুর হাটে আসা ব্যবসায়ী তানভীর হাসান জানান, কোরবানির গরু ঈদের অনেকদিন আগেই কিনতে ইচ্ছে করে তার।
গরু রাখার জায়গার সংকটের কারণে তিনি ঈদের ১ দিন আগে গরু কিনেন। ৭ বছরের শিশু ফাহিম কে নিয়ে আফতাবনগর হাটে আসেন ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম।তিনি বলেন, ছেলে বায়না ধরেছে তাই হাটে এসেছি, হাটে প্রচুর গরুর আমদানি রয়েছে। আমরা ঘুরছি দেখছি দু’একটি গরুর দাম করেছি দামে মিলে গেলে হয়তো বা কিনে ফেলব। এখন দামে না মিললে ঈদের একদিন আগে কেনার চিন্তা আছে। তবে তুলনামূলক গরুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছে বলে জানান তিনি।
হাট গুলোর চারপাশ ঘুরে দেখা যায়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিলো লক্ষণীয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে হাট কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন। ফলে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা গরু বিক্রেতারা জানান, ভারত থেকে গরু না আসলেও হাটে প্রচুর গরু। এবার গরুর দামও মোটামুটি ভালো পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
ব্যাপারীরা আরো জানান, প্রতি বছরের মত হাটে গরু এনেছেন এবারও। হাটে এবার ভারতীয় গরু না আসলেও দেশী গরুতে জমজমাট পশুর হাট। তবে দাম একটু বেশি হলেও কোরবানিতে দেশি গরু কিনতে আগ্রহ বেশী ক্রেতাদের। খামারিরা বলছেন, ভারতীয় গরু না আসার কারনে এ বছর তারা ভালো দামে গরু বিক্রি করতে পারছেন। তবে, ঈদকে ঘিরে গো-খাদ্যের দাম একটু বেড়ে গেছে। এ কারনে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
কয়েকটি হাটের ইজারাদারদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ঢাকার হাট গুলোতে স্থানীয় খামারিসহ ব্যাপারিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। আশা করছি এবারের কোরবানিতে পশুর কোনও সংকট হবে না। পশুর হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক প্রশাসনের তদারকি চলছে। তবে অনেকেই বাড়ীতে বসেই বিভিন্ন খামার থেকে অনলাইনে গরু কিনছেন। নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে, প্রতি টি হাটে নিশ্চিত করা হয়েছে জালনোট চিহ্নিত করার যন্ত্র।এতে ক্রেতা ও বিক্রেতারা খুব খুশি।
রাজধানীতে বসা হাটগুলোর নিরাপত্তা বিষয়ে ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কোরবানীর বাজারে গরু নিয়ে আসার সড়ক পথে চাঁদাবাজি বা কোন রকমের হয়রানির অভিযোগ যেন না হয় সেদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে মনিটরিং করার মাধ্যমে পশুর হাটে গমন, অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়, সার্বিক বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটে আসার পরামর্শ দেওয়া হয় ডিএমপি’র পক্ষ থেকে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছরের কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু। প্রায় ২৮ লাখ গবাদি পশু সেবার বিক্রি হয়নি।