ঢাকা ১১:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল। গজারিয়া বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে সিকদার পরিবারে আমিরুল ইসলাম এর সর্মথনে আলোচনা সভা ও ইফতার দোয়া মাহফিল চসিকের ৬ ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৮ তম সাধারণ সভায় মশা কমাতে কার্যক্রম বাড়াবে : মেয়র রেজাউল “বিড়ি শিল্পে ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে রংপুর শ্রমিকদের মানববন্ধন” ইন্দুরকানী প্রেসক্লাবে ইফতার মাহফিল বরিশাল চকবাজার এবায়দুল্লাহ মসজিদে অগ্নিকান্ড। টাঙ্গাইলে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার পাঠক ফোরাম গঠিত চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার চট্টগ্রামে জালনোটসহ প্রতারকচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ রমজান মাসের পবিত্রতা লঙ্ঘন করছে নারায়ণগঞ্জ চিশতিয়া বাউল সমিত

কুষ্টিয়া সমর্পণ মাদকাসক্তি পূনর্বাসন কেন্দ্রে কলেজ ছাত্রকে হত্যার ঘটনায় পরিচালকসহ ৩ জন আটক 

মোহাম্মদ রফিক, কুষ্টিয়া:  কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার জুগিগ্রামের ‘সমর্পণ’ মাদকাসক্তি মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র যেন টর্চার সেল। নেই চিকিৎসক, নেই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেবক। ইতিমধ্যে এক ছাত্র এই টর্চার সেল নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঐ ছাত্রটি মানসিক ভারসাম্যহীন। নাম কামরুজ্জামান ইমন। সে রাজশাহী সিটি কলেজে পড়াশোনা করতো।
জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে কুষ্টিয়ার মিরপুরের মাদকাসক্ত ছাত্র ইমন আলীকে ভর্তি করা হয় মিরপুর বিজিবি সেক্টর এলাকার সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। মানসিক (মাদকের কারণে) সমস্যাজনিত কারণে তাকে ওই কেন্দ্রে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ফিরে যান।
ঐ দিন পরিবারের লোকজন চলে যাওয়ার পর সমর্পণ এর পরিচালক আব্দুল মতিন, সেখানকার অফিস স্টাফ মঙ্গলবাড়ীয়ার হাবিব, আব্দুল মতিনের শ্যালক মিন্টু ও কুষ্টিয়া আমলাপাড়া পচার ছেলে অসিত ও একই এলাকার সন্নাসীর ছেলে জিকু, মিরপুর দাতা ক্লিনিকের রনি শুরু করে নির্যাতন। এরপর গত ২০ নভেম্বর ইমনের মৃত্যু হয়। পরে তড়িঘড়ি করে মিরপুর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। মঙ্গলবার সকালে সিসি টিভির ফুটেজে কলেজছাত্র হত্যার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। তবে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের দাবি ওই কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকে। এমন দাবি করা হলেও সিসি টিভির ফুটেজে দেখা গেছে ওই ছাত্রকে পিটিয়ে ও ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করা হচ্ছে। মিরপুর সমর্পণ মাদকাসক্তি পূনর্বাসনের পরিচালক আব্দুল মতিন জানান, ভর্তির পর পরই ইমন বেপড়োয়া হয়ে ওঠে। তখন আমার প্রতিষ্টানের ষ্টাফ জনি, অসিত, হাবীব ও ইসিজি করতে আসা দাতা ক্লিনিকের রনি ইমনের হাত ও পা বেঁধে ফেলে। সে সময় আমি ডাক্তার সাইফুল উদ্দিনের কাছে মোবাইল ফোন করলে তিনি জানান, একটি সিডিল ইনজেকশন ও একটি সার্জেল ইনজেকশন দিতে বলেন। তখন আমি ডাক্তারের কথা মতো নিজ হাতে নিহত ইমনের শরীরে দুইটা ইনজেকশন পুশ করি। ইমন ঘুমিয়ে পড়ে। পরে রাতে ডাক্তার সাইফুল উদ্দিনের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষুধ খাওয়ায়। সকাল ৮টায় ইমনের অবস্থার অবনতি হলে আমরা তাকে মিরপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
 হাসপাতালের কর্তৃব্যরত চিকিৎসক জানান হাসপাতালে আসার আগেই ইমন মারা গেছে। তিনি আরো জানান, ইমন আমাদের এখানে থাকা রোগীদের মারধর করছিল। এই কারণে তাকে বেঁধে রাখা হয়। আমাদের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়নি বলে জানান তিনি। সেখানে নিয়মিত ডাঃ কে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন কোন সার্বক্ষণিক ডাক্তার নেই। সপ্তাহের একদিন ডাক্তার আছেন। ১০ বেডের জায়গায় রোগী রাখা ছিল ২০ জন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন শুধু আমাদের এখানেই নয় কুষ্টিয়াতে যতগুলা মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র আছে সবগুলো এভাবেই চলে।
এই ব্যাপারে ডাঃ সাইফুদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, আমি নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার। মাঝে মাঝে যায়। কিন্তু আমি এই রোগী সম্পর্কে কিছু জানিনা। নিহত ইমন উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের কাদেরপুর গ্রামের এজাজুল আজিম রিপনের ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে কলেজছাত্র ইমনকে ভর্তি করা হয় মিরপুর বিজিবি সেক্টর এলাকার সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
মানসিক সমস্যাজনিত কারণে ভর্তি শেষে পরিবারের সদস্যরা ফিরে যান বাড়িতে। পরদিন ২০ নভেম্বর সকালে ইমনের পরিবারকে জানানো হয় ইমনকে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে। সেখানে ইমনের বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন গিয়ে দেখতে পান তাদের ইমন আর বেঁচে নেই। ইমনের শরীরে বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। তবে ইমনের মৃত্যু যে স্বাভাবিক নয়, তাকে নির্যাতন করেই মেরে ফেলা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে। ক্যামেরায় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন ইমনকে হাত-পা বেঁধে মারধর করছে, শরীরে পুশ করা হচ্ছে ইনজেকশনও। নিহত ইমনের পিতা এজাজুল আজিম রিপন বলেন, কোনো নেশার সাথে জড়িত ছিল না ইমন। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল। এ কথা বলেছিল ডাক্তার। তাই মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইমনের মা কামরুন্নাহারের অভিযোগ, ইমনকে সুস্থ অবস্থায় ওখানে রেখে আসা হয়েছিল। পরে তাকে নির্যাতন করেই হত্যা করা হয়। ইমনের কয়েকজন বন্ধু জানান, কোনো নেশার সাথে জড়িত ছিল না ইমন। আমরা কখনই নেশা করতে দেখিনি। মৃত্যুর প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল।
এদিকে সেখানে থাকা চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বললে তারা জানান ওখানে প্রতিনিয়তই রোগীদের ওপর শারীরিক টর্চার করা হয়। যদি প্রতিবাদ করা হয় তাহলে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়। কোন অফিসার ভিজিটে আসলে সবাইকে কি বলতে হবে সেগুলো শিখিয়ে দেয়া হয়। শিখানো কথার বাইরে কিছু বললেই শুরু করে শারীরিক নির্যাতন। কোন ঔষধ চাইলে ঔষধ দেয়া হয় না। যদি ভাত একটু বেশি চাই তবে একবারে ৫ প্লেট ভাত চাপিয়ে দিয়ে বলে সব খেয়ে উঠবি। যদি মরে যায় তবুও তোকে খেয়ে উঠতে হবে। এমনকি আমাদের দিয়ে বাথরুম পরিষ্কার রান্নাবান্না করানো থালা বাসন ধোয়া সহ সব কাজ করিয়ে নেয় সমর্পণ কর্তৃপক্ষ।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও মিরপুর থানা পুলিশ মিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূূমি) রফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে অভিযান চালায়। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সমর্পণ মাদকাসক্তি মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সিলগালা করা হয়। হত্যার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরিচালক আব্দুল মতিন, তত্ত্বাবধায়ক হাবিব উদ্দিন ও মিন্টু কে থানা হেফাজতে নেয়া হয়।
মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম জানান, আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমর্পণের পরিচালক আব্দুল মতিন, কুষ্টিয়া মঙ্গলবাড়ীয়ার হাবিব উদ্দিন ও মিন্টুু কে থানা হেফাজতে নিয়েছি। যদি তারা দোষী সাব্যস্ত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আজিজুল হক জানান, প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আমরা প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করেছি।
Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল।

কুষ্টিয়া সমর্পণ মাদকাসক্তি পূনর্বাসন কেন্দ্রে কলেজ ছাত্রকে হত্যার ঘটনায় পরিচালকসহ ৩ জন আটক 

আপডেট টাইম ০২:০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৯
মোহাম্মদ রফিক, কুষ্টিয়া:  কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার জুগিগ্রামের ‘সমর্পণ’ মাদকাসক্তি মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র যেন টর্চার সেল। নেই চিকিৎসক, নেই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেবক। ইতিমধ্যে এক ছাত্র এই টর্চার সেল নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঐ ছাত্রটি মানসিক ভারসাম্যহীন। নাম কামরুজ্জামান ইমন। সে রাজশাহী সিটি কলেজে পড়াশোনা করতো।
জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে কুষ্টিয়ার মিরপুরের মাদকাসক্ত ছাত্র ইমন আলীকে ভর্তি করা হয় মিরপুর বিজিবি সেক্টর এলাকার সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। মানসিক (মাদকের কারণে) সমস্যাজনিত কারণে তাকে ওই কেন্দ্রে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ফিরে যান।
ঐ দিন পরিবারের লোকজন চলে যাওয়ার পর সমর্পণ এর পরিচালক আব্দুল মতিন, সেখানকার অফিস স্টাফ মঙ্গলবাড়ীয়ার হাবিব, আব্দুল মতিনের শ্যালক মিন্টু ও কুষ্টিয়া আমলাপাড়া পচার ছেলে অসিত ও একই এলাকার সন্নাসীর ছেলে জিকু, মিরপুর দাতা ক্লিনিকের রনি শুরু করে নির্যাতন। এরপর গত ২০ নভেম্বর ইমনের মৃত্যু হয়। পরে তড়িঘড়ি করে মিরপুর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। মঙ্গলবার সকালে সিসি টিভির ফুটেজে কলেজছাত্র হত্যার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। তবে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের দাবি ওই কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকে। এমন দাবি করা হলেও সিসি টিভির ফুটেজে দেখা গেছে ওই ছাত্রকে পিটিয়ে ও ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করা হচ্ছে। মিরপুর সমর্পণ মাদকাসক্তি পূনর্বাসনের পরিচালক আব্দুল মতিন জানান, ভর্তির পর পরই ইমন বেপড়োয়া হয়ে ওঠে। তখন আমার প্রতিষ্টানের ষ্টাফ জনি, অসিত, হাবীব ও ইসিজি করতে আসা দাতা ক্লিনিকের রনি ইমনের হাত ও পা বেঁধে ফেলে। সে সময় আমি ডাক্তার সাইফুল উদ্দিনের কাছে মোবাইল ফোন করলে তিনি জানান, একটি সিডিল ইনজেকশন ও একটি সার্জেল ইনজেকশন দিতে বলেন। তখন আমি ডাক্তারের কথা মতো নিজ হাতে নিহত ইমনের শরীরে দুইটা ইনজেকশন পুশ করি। ইমন ঘুমিয়ে পড়ে। পরে রাতে ডাক্তার সাইফুল উদ্দিনের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষুধ খাওয়ায়। সকাল ৮টায় ইমনের অবস্থার অবনতি হলে আমরা তাকে মিরপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
 হাসপাতালের কর্তৃব্যরত চিকিৎসক জানান হাসপাতালে আসার আগেই ইমন মারা গেছে। তিনি আরো জানান, ইমন আমাদের এখানে থাকা রোগীদের মারধর করছিল। এই কারণে তাকে বেঁধে রাখা হয়। আমাদের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়নি বলে জানান তিনি। সেখানে নিয়মিত ডাঃ কে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন কোন সার্বক্ষণিক ডাক্তার নেই। সপ্তাহের একদিন ডাক্তার আছেন। ১০ বেডের জায়গায় রোগী রাখা ছিল ২০ জন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন শুধু আমাদের এখানেই নয় কুষ্টিয়াতে যতগুলা মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র আছে সবগুলো এভাবেই চলে।
এই ব্যাপারে ডাঃ সাইফুদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, আমি নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার। মাঝে মাঝে যায়। কিন্তু আমি এই রোগী সম্পর্কে কিছু জানিনা। নিহত ইমন উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের কাদেরপুর গ্রামের এজাজুল আজিম রিপনের ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে কলেজছাত্র ইমনকে ভর্তি করা হয় মিরপুর বিজিবি সেক্টর এলাকার সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
মানসিক সমস্যাজনিত কারণে ভর্তি শেষে পরিবারের সদস্যরা ফিরে যান বাড়িতে। পরদিন ২০ নভেম্বর সকালে ইমনের পরিবারকে জানানো হয় ইমনকে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে। সেখানে ইমনের বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন গিয়ে দেখতে পান তাদের ইমন আর বেঁচে নেই। ইমনের শরীরে বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। তবে ইমনের মৃত্যু যে স্বাভাবিক নয়, তাকে নির্যাতন করেই মেরে ফেলা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে। ক্যামেরায় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন ইমনকে হাত-পা বেঁধে মারধর করছে, শরীরে পুশ করা হচ্ছে ইনজেকশনও। নিহত ইমনের পিতা এজাজুল আজিম রিপন বলেন, কোনো নেশার সাথে জড়িত ছিল না ইমন। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল। এ কথা বলেছিল ডাক্তার। তাই মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইমনের মা কামরুন্নাহারের অভিযোগ, ইমনকে সুস্থ অবস্থায় ওখানে রেখে আসা হয়েছিল। পরে তাকে নির্যাতন করেই হত্যা করা হয়। ইমনের কয়েকজন বন্ধু জানান, কোনো নেশার সাথে জড়িত ছিল না ইমন। আমরা কখনই নেশা করতে দেখিনি। মৃত্যুর প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল।
এদিকে সেখানে থাকা চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বললে তারা জানান ওখানে প্রতিনিয়তই রোগীদের ওপর শারীরিক টর্চার করা হয়। যদি প্রতিবাদ করা হয় তাহলে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়। কোন অফিসার ভিজিটে আসলে সবাইকে কি বলতে হবে সেগুলো শিখিয়ে দেয়া হয়। শিখানো কথার বাইরে কিছু বললেই শুরু করে শারীরিক নির্যাতন। কোন ঔষধ চাইলে ঔষধ দেয়া হয় না। যদি ভাত একটু বেশি চাই তবে একবারে ৫ প্লেট ভাত চাপিয়ে দিয়ে বলে সব খেয়ে উঠবি। যদি মরে যায় তবুও তোকে খেয়ে উঠতে হবে। এমনকি আমাদের দিয়ে বাথরুম পরিষ্কার রান্নাবান্না করানো থালা বাসন ধোয়া সহ সব কাজ করিয়ে নেয় সমর্পণ কর্তৃপক্ষ।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও মিরপুর থানা পুলিশ মিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূূমি) রফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে অভিযান চালায়। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সমর্পণ মাদকাসক্তি মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সিলগালা করা হয়। হত্যার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরিচালক আব্দুল মতিন, তত্ত্বাবধায়ক হাবিব উদ্দিন ও মিন্টু কে থানা হেফাজতে নেয়া হয়।
মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম জানান, আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমর্পণের পরিচালক আব্দুল মতিন, কুষ্টিয়া মঙ্গলবাড়ীয়ার হাবিব উদ্দিন ও মিন্টুু কে থানা হেফাজতে নিয়েছি। যদি তারা দোষী সাব্যস্ত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আজিজুল হক জানান, প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আমরা প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করেছি।