মনির খাঁন স্টাফ রিপোর্টার জাতীয় দৈনিক মাতৃভূমির খবর: কুমিল্লার দেবিদ্বারে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ উপ-নির্বাচনে নৌকা ডুবেছে জেলা এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট নেতাদের নিজস্ব ভোট কেন্দ্রে। বর্তমান সরকারের ক্ষমতার আশীর্বাদে জেলা এবং উপজেলায় দাঁপিয়ে বেড়ানো এসব নেতাদের নিজস্ব ভোট কেন্দ্রে কেন নৌকার ভরাডুবি হলো এমন বিশ্লেষন এখন তৃনমুল নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আবুল কালাম আজাদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে এ নির্বাচনে জেলা এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট নেতাদের নিজস্ব ভোটকেন্দ্রে নৌকার ভরাডুবির ঘটনায় এলাকায় বেশ তোলপাড় চলছে। এদিকে দলের সুসময়ের বড় বড় পদ ভাগিয়ে নেয়া সুবিধাভূগী এসব নেতাদের কেন্দ্রে কেন নৌকার ভরাডুবি হয়েছে তা নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন। শুন্য এ পদে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে জয়লাভ করেন জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে ব্যপক টানাপোড়েন সৃস্টি হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ঘের ঘটনাও ঘটে। তবে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন। দলের সিনিয়র নেতাদের ভূমিকা কেমন ছিল তা ফল বিশ্লেষন করলেই বুঝা যায়। তবে মাইকে বড় বড় বক্তব্য প্রদানকারী এসব নেতাদের রহস্য জনক ভূমিকা এখন তৃনমুলে প্রশ্নবিদ্ধ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেবিদ্বারের সাবেক এমপি এবং কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এবিএম গোলাম মোস্তফা এবং সহ-সভাপতি এড. নিজামুল হকের নিজ এলাকায় বড় শালঘর তিনটি এবং ছোট শালঘর এলাকার একটি ভোট কেন্দ্রেই নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। এ চারটি কেন্দ্রে ধানের শীষ পেয়েছে ২৫৪২ ভোট আর নৌকা পেয়েছে ৯৩৯ ভোট। আরেক সহ-সভাপতি আব্দুল মতিন মুন্সির বনকোট কেন্দ্রে ধানের শীষ পেয়েছে ৯৮১ ভোট আর নৌকা পেয়েছে ১৬ ভোট। তবে বিএনপির চেয়ারম্যান পার্থীর এএফএম তারেক মুন্সি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এ কেন্দ্রের ভোটার বলে জানা গেছে। জেলা আওয়ামীলীগের আরেক সহ-সভাপতি শেখ আব্দুল আউয়ালের মাশিকাড়া কেন্দ্রে ধানের শীষ পেয়েছে ১২০৯ ভোট, আর নৌকা পেয়েছে ৩৪৫ ভোট। কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা কামাল চৌধুরীর শীবপুর কেন্দ্রে ধানের শীষ পেয়েছে ৪৭৯ ভোট,আর নৌকা পেয়েছে ৪৪৪ ভোট,। এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা এবং পৌর আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সভাপতি আবুল কাশেম চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সফিকুল আলম কামালের দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষ পেয়েছে ৭৮২ ভোট আর নৌকা পেয়েছে ৩৬৩ ভোট। জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলামের গুনাইঘর দক্ষিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষ পেয়েছে ৭৯২ ভোট, আর নৌকা পেয়েছে ১৯১ ভোট।
তবে হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টারের ভোট কেন্দ্রে নৌকা বিজয় লাভ করেছে। অপর দিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাস্টারের গঙ্গামন্ডল রাজ ইন্সটিটিউশন কেন্দ্র, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন মাস্টারের জয়পুর কেন্দ্র এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিকুর রহমান ভূইয়ার এলাহাবাদ পুর্ব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রেও নৌকার ভরাডুবী হয়েছে।
কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়াীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ন কবির বলেন, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করেছি। যেসব নেতাদের কেন্দ্রে নৌকা হেরেছে তারাও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে ভালো ফলাফলের জন্য, কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য সম্ভব হয়নি
এবিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ম. রুহুল আমীন বলেন, দেবিদ্বারে উপজেলা পরিষদ উপ-নির্বাচনে আমাদের দলীয় প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ জয়লাভ করেছে, তবে জেলা আওয়ামীলীগের যেসকল নেতৃবৃন্দের এলাকায় নৌকার ভরাডুবি হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, কি কারণে তাদের কেন্দ্রে নৌকা পরাজিত হয়েছে সে বিষয়ে তাদের কাছে ব্যাখা চাওয়া হবে এবং সকল ভূলভ্রান্ত্রি কাটিয়ে আগামীতে যেন ওইসব কেন্দ্রে ভালো ফলাফল করতে পারে সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হবে।