ঢাকা ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ

কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভা সরকার দলীয় মেয়র শওকতের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ

মোহাম্মদ আলী কুমিল্লা উত্তর জেলা প্রতিনিধি

কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার সরকার দলীয় মেয়র শওকত হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে লুটপাটসহ ব্যপক নিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া এ মেয়র পৌরসভার সকল প্রকল্প থেকে নানা ভাবে কমিশনসহ বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। মাস্টার রুল, বিভিন্ন কোটেশন এবং ভূয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, সকল উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমিশন বাণিজ্য, একই সড়ক বার বার সংস্কার দেখিয়ে অর্থ লুট, সিন্ডিকেট পরিচালনাসহ নানা দূর্নীতির অভিযোগ ওই মেয়রের বিরুদ্ধে। মেয়র শওকতের
দুর্নীতির অভিযোগ এখন চান্দিনা পৌরসভার বাসিন্দাদের মুখে মুখে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসককে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে ওই মেয়রের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ খোদ আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা এবং পরিষদের কাউন্সিলরগণ। তদন্ত করে মেয়র শওকতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি দলীয় নেতাকর্মীসহ কাউন্সিলরদের।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারী কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে মেয়র পদে নির্বাচিত হন শওকত হোসেন ভূইয়া। একই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারী তিনি দায়িত্বভার গ্রহন করেন। অভিযোগ রয়েছে নির্বাচিত হওয়ার পর দুই ছেলেসহ ওই মেয়র বেপরোয়া হয়ে উঠেন। একটি সিন্ডিকেট গঠন করে পৌরসভাকে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। মেয়রের এমন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে পৌরসভার বাসিন্দারা। মেয়রের সুনির্দিষ্ট অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরে চান্দিনা বাজারের ব্যবসায়ী হাজী শামীম হোসেন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মেয়র ভূয়া বিল ভাউচার এর মাধ্যমে নিয়মিত অর্থ আত্মসাত করে যাচ্ছেন। ড্রেন পরিষ্কার, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, ক্ষুদ্র মেরামত, কম্পিউটার মেরামত, কোভিড সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়, মশক নিধন, পানির লাইন মেরামতসহ নানা কার্যক্রম দেখিয়ে বিল ভাউচারের মাধ্যমে
জনগণের করের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। পৌরসভার ইস্যুকৃত চেক এবং বিল ভাইচার যাচাই করলেই মেয়রের অর্থ আত্মসাতের চিত্র বেড়িয়ে আসবে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়। গত অর্থ বছরে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং ৭০ লাখ টাকার এডিবি প্রকল্প থেকে তিনি মোটা অংকের কমিশন নিয়েছেন। যার ফলে এ পৌরসভায় প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এসব প্রকল্পের রাস্তা-ঘাট পুনরায় বেহাল হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নামেমাত্র কাজ দেখিয়ে নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এডিবি প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাছাড়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে প্রতিদিন হাজিরা ভিত্তিক বেশ কিছু কর্মচারী দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করাচ্ছেন। কোন প্রকার নিয়োগ ছাড়াই চলছে এ কাজ। প্রতিদিন কাগজে কলমে ২০-২৫ জন কর্মচারী কাজ করলেও বাস্তবে দু-চার জনের বেশী কাজ করতে দেখা যায় না। টিকাদান সুপারভাইজার মোঃ ওয়াদুদের মাধ্যমে মাস্টার রুল প্রকল্প থেকে মেয়র মাসে ৩০ হাজার টাকা করে কমিশন নিচ্ছেন। কাগজে কলমে আর নামেমাত্র কাজ
দেখিয়ে মেয়র কোটেশনের সিংহভাগ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি অডিট টিমের দৃস্টিগোচর হলে নানাভাবে তাদেরকে ম্যানেজ করা হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গত অর্থ বছরে এডিবি খাত থেকে পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ছায়কোট হতে তুলাতুলী রাস্তার গর্ত মেরামত করার জন্য ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৪ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। স্থানীয়রা জানায়, ২০-৩০ হাজার টাকার কংক্রিট দিয়ে নামমাত্র প্রলেপ দিয়ে ওই প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। চান্দিনা ডা: ফিরোজা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা মেরামতের জন্য ৪ লাখ ১১ হাজার ৩১১ টাকা বরাদ্দের মধ্যেও একইভাবে ৩০-৪০ হাজার টাকার লামছাম মেরামত দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। কোটেশনের মাধ্যমে একই রাস্তা মেরামতের জন্য গত এক মাস আগে পুনরায় ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। লামছাম মেরামত করে সেই টাকাও হাতিয়ে নেয়া হয়। অর্থাৎ কয়েকমাসের ব্যবধানে বিনা টেন্ডারে কোটেশনের মাধ্যমে একই রাস্তায় দুইবার বরাদ্দ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। ঢাকা-চট্রগ্রাম পুরাতন হাইওয়ে থেকে পুর্ব দিকে পালকি সিনেমা পর্যন্ত মেরামতের নামে বরাদ্দের ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৭৫৩ টাকার ৯০ভাগ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ প্রকল্পে ৩-৪ হাজার নিন্মমানের ইট ব্যবহার করে ক্ষুদ্র মেরামত করে পুরো টাকাই হাতিয়ে নেয়া হয়। একইভাবে কোরবানপুর ব্রিজের অতিরিক্ত কাজের নামে ২লাখ ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। কোটেশনের নামে নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মেয়র শওকত হোসেন এসব অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। অভিযোগকারী হাজী শামীম হোসেন বলেন, মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া এবং তার ছেলেরা পৌরসভাকে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রƑপান্তর করেছেন, এডিবি এবং রাজস্ব খাতের অর্থায়নে কোটেশনের মাধ্যমে একই সড়ক বার বার সংস্কার দেখিয়ে জনগনের করের অর্থ লুটে নিচ্ছেন, কোটেশনের প্রতিটি প্রকল্পে রাবিশ ইটের খোয়া দিয়ে নামেমাত্র সংস্কার দেখিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৯০ভাগ টাকা লুটে নিচ্ছেন, মেয়রের অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়টি নিয়ে আমরা এলাকার বাসিন্দারা দফায় দফায় বৈঠক করে তাকে এসব না করতে আহবান করেছি, কিন্তু বেপরোয়া মেয়র সিন্ডিকেট নাগরিকদের কোন আহবানে সাড়া

দিচ্ছে না, তাই বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি, তিনি জেলা প্রশাসককে বিষয় গুলো তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এ মেয়রের অনিয়ম-দুনর্ীতিতে চরমভাবে লজ্জিত, তাকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা জরুরী।
চান্দিনা উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি শাহ সেলিম প্রধান বলেন, মেয়র হওয়ার পুর্বে শওকত ভূইয়ার আর্থিক স্বচ্চছলতা তেমন ছিল না, কিন্তু কয়েকমাসের মধ্যেই তার দুই ছেলে দুটি বিলাস বহুল গাড়ী ক্রয় চলাফেরা করছেন, কোত্থেকে আসলো এসব টাকা? তিনি কি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন? গত দেড় বছরে এতো অর্থ কোত্থেকে পেলো? এ মেয়রকে নিয়ে আমরা বিব্রত, দলীয় নেতাকমর্ীরা তার কর্মকান্ডে ক্ষুব্দ, দলীয় প্রতিক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি যেসকল দুনর্ীতি করছেন তাতে দলের ভাবমুর্তি নস্ট হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু কাউছার বলেন, বিভিন্ন ঠিকাদারের লাইসেন্সে মেয়র শওকত হোসেনের দুই ছেলে অধিকাংশ কোটেশন এবং ঠিকাদারী কাজ করছেন, তারা নামেমাত্র কাজ করে জোরপুর্বক বিল তুলে নিচ্ছেন, ওনার দুই ছেলে পৌরসভাটাকে জিম্মি করে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেন, আমরা মাসিক সমন্বয় মিটিংএ এসব অভিযোগ করলেও তিনি তা আমলে না নিয়ে ছেলেদেরকে আরো উৎসাহিত করছেন, সব মিলিয়ে এ পৌরসভা মেয়র পরিবারের কাছে জিম্মি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া বলেন, আমি এবং আমার ছেলেরা কোন অনিয়ম-দুরর্নীতিতে জড়িত নই, যথাযথ বিধি অনুসরন করেই আমি পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছি, আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে। তদন্তেই আমি নির্দোষ প্রমানিত হবো।
এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, চান্দিনা মেয়রের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি, অভিযোগ গুলোর সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত

কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভা সরকার দলীয় মেয়র শওকতের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ

আপডেট টাইম ০৯:০৪:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ অক্টোবর ২০২২

মোহাম্মদ আলী কুমিল্লা উত্তর জেলা প্রতিনিধি

কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার সরকার দলীয় মেয়র শওকত হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে লুটপাটসহ ব্যপক নিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া এ মেয়র পৌরসভার সকল প্রকল্প থেকে নানা ভাবে কমিশনসহ বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। মাস্টার রুল, বিভিন্ন কোটেশন এবং ভূয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, সকল উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমিশন বাণিজ্য, একই সড়ক বার বার সংস্কার দেখিয়ে অর্থ লুট, সিন্ডিকেট পরিচালনাসহ নানা দূর্নীতির অভিযোগ ওই মেয়রের বিরুদ্ধে। মেয়র শওকতের
দুর্নীতির অভিযোগ এখন চান্দিনা পৌরসভার বাসিন্দাদের মুখে মুখে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসককে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে ওই মেয়রের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ খোদ আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা এবং পরিষদের কাউন্সিলরগণ। তদন্ত করে মেয়র শওকতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি দলীয় নেতাকর্মীসহ কাউন্সিলরদের।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারী কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে মেয়র পদে নির্বাচিত হন শওকত হোসেন ভূইয়া। একই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারী তিনি দায়িত্বভার গ্রহন করেন। অভিযোগ রয়েছে নির্বাচিত হওয়ার পর দুই ছেলেসহ ওই মেয়র বেপরোয়া হয়ে উঠেন। একটি সিন্ডিকেট গঠন করে পৌরসভাকে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। মেয়রের এমন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে পৌরসভার বাসিন্দারা। মেয়রের সুনির্দিষ্ট অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরে চান্দিনা বাজারের ব্যবসায়ী হাজী শামীম হোসেন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মেয়র ভূয়া বিল ভাউচার এর মাধ্যমে নিয়মিত অর্থ আত্মসাত করে যাচ্ছেন। ড্রেন পরিষ্কার, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, ক্ষুদ্র মেরামত, কম্পিউটার মেরামত, কোভিড সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়, মশক নিধন, পানির লাইন মেরামতসহ নানা কার্যক্রম দেখিয়ে বিল ভাউচারের মাধ্যমে
জনগণের করের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। পৌরসভার ইস্যুকৃত চেক এবং বিল ভাইচার যাচাই করলেই মেয়রের অর্থ আত্মসাতের চিত্র বেড়িয়ে আসবে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়। গত অর্থ বছরে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং ৭০ লাখ টাকার এডিবি প্রকল্প থেকে তিনি মোটা অংকের কমিশন নিয়েছেন। যার ফলে এ পৌরসভায় প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এসব প্রকল্পের রাস্তা-ঘাট পুনরায় বেহাল হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নামেমাত্র কাজ দেখিয়ে নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এডিবি প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাছাড়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে প্রতিদিন হাজিরা ভিত্তিক বেশ কিছু কর্মচারী দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করাচ্ছেন। কোন প্রকার নিয়োগ ছাড়াই চলছে এ কাজ। প্রতিদিন কাগজে কলমে ২০-২৫ জন কর্মচারী কাজ করলেও বাস্তবে দু-চার জনের বেশী কাজ করতে দেখা যায় না। টিকাদান সুপারভাইজার মোঃ ওয়াদুদের মাধ্যমে মাস্টার রুল প্রকল্প থেকে মেয়র মাসে ৩০ হাজার টাকা করে কমিশন নিচ্ছেন। কাগজে কলমে আর নামেমাত্র কাজ
দেখিয়ে মেয়র কোটেশনের সিংহভাগ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি অডিট টিমের দৃস্টিগোচর হলে নানাভাবে তাদেরকে ম্যানেজ করা হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গত অর্থ বছরে এডিবি খাত থেকে পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ছায়কোট হতে তুলাতুলী রাস্তার গর্ত মেরামত করার জন্য ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৪ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। স্থানীয়রা জানায়, ২০-৩০ হাজার টাকার কংক্রিট দিয়ে নামমাত্র প্রলেপ দিয়ে ওই প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। চান্দিনা ডা: ফিরোজা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা মেরামতের জন্য ৪ লাখ ১১ হাজার ৩১১ টাকা বরাদ্দের মধ্যেও একইভাবে ৩০-৪০ হাজার টাকার লামছাম মেরামত দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। কোটেশনের মাধ্যমে একই রাস্তা মেরামতের জন্য গত এক মাস আগে পুনরায় ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। লামছাম মেরামত করে সেই টাকাও হাতিয়ে নেয়া হয়। অর্থাৎ কয়েকমাসের ব্যবধানে বিনা টেন্ডারে কোটেশনের মাধ্যমে একই রাস্তায় দুইবার বরাদ্দ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। ঢাকা-চট্রগ্রাম পুরাতন হাইওয়ে থেকে পুর্ব দিকে পালকি সিনেমা পর্যন্ত মেরামতের নামে বরাদ্দের ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৭৫৩ টাকার ৯০ভাগ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ প্রকল্পে ৩-৪ হাজার নিন্মমানের ইট ব্যবহার করে ক্ষুদ্র মেরামত করে পুরো টাকাই হাতিয়ে নেয়া হয়। একইভাবে কোরবানপুর ব্রিজের অতিরিক্ত কাজের নামে ২লাখ ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। কোটেশনের নামে নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মেয়র শওকত হোসেন এসব অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। অভিযোগকারী হাজী শামীম হোসেন বলেন, মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া এবং তার ছেলেরা পৌরসভাকে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রƑপান্তর করেছেন, এডিবি এবং রাজস্ব খাতের অর্থায়নে কোটেশনের মাধ্যমে একই সড়ক বার বার সংস্কার দেখিয়ে জনগনের করের অর্থ লুটে নিচ্ছেন, কোটেশনের প্রতিটি প্রকল্পে রাবিশ ইটের খোয়া দিয়ে নামেমাত্র সংস্কার দেখিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৯০ভাগ টাকা লুটে নিচ্ছেন, মেয়রের অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়টি নিয়ে আমরা এলাকার বাসিন্দারা দফায় দফায় বৈঠক করে তাকে এসব না করতে আহবান করেছি, কিন্তু বেপরোয়া মেয়র সিন্ডিকেট নাগরিকদের কোন আহবানে সাড়া

দিচ্ছে না, তাই বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি, তিনি জেলা প্রশাসককে বিষয় গুলো তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এ মেয়রের অনিয়ম-দুনর্ীতিতে চরমভাবে লজ্জিত, তাকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা জরুরী।
চান্দিনা উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি শাহ সেলিম প্রধান বলেন, মেয়র হওয়ার পুর্বে শওকত ভূইয়ার আর্থিক স্বচ্চছলতা তেমন ছিল না, কিন্তু কয়েকমাসের মধ্যেই তার দুই ছেলে দুটি বিলাস বহুল গাড়ী ক্রয় চলাফেরা করছেন, কোত্থেকে আসলো এসব টাকা? তিনি কি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন? গত দেড় বছরে এতো অর্থ কোত্থেকে পেলো? এ মেয়রকে নিয়ে আমরা বিব্রত, দলীয় নেতাকমর্ীরা তার কর্মকান্ডে ক্ষুব্দ, দলীয় প্রতিক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি যেসকল দুনর্ীতি করছেন তাতে দলের ভাবমুর্তি নস্ট হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু কাউছার বলেন, বিভিন্ন ঠিকাদারের লাইসেন্সে মেয়র শওকত হোসেনের দুই ছেলে অধিকাংশ কোটেশন এবং ঠিকাদারী কাজ করছেন, তারা নামেমাত্র কাজ করে জোরপুর্বক বিল তুলে নিচ্ছেন, ওনার দুই ছেলে পৌরসভাটাকে জিম্মি করে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেন, আমরা মাসিক সমন্বয় মিটিংএ এসব অভিযোগ করলেও তিনি তা আমলে না নিয়ে ছেলেদেরকে আরো উৎসাহিত করছেন, সব মিলিয়ে এ পৌরসভা মেয়র পরিবারের কাছে জিম্মি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া বলেন, আমি এবং আমার ছেলেরা কোন অনিয়ম-দুরর্নীতিতে জড়িত নই, যথাযথ বিধি অনুসরন করেই আমি পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছি, আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে। তদন্তেই আমি নির্দোষ প্রমানিত হবো।
এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, চান্দিনা মেয়রের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি, অভিযোগ গুলোর সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।