ঢাকা ১০:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ “২৬শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ” –মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে ৫৩ কেজি গাঁজাসহ ০৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; মাদক বহনে ব্যবহৃত পিকআপ জব্দ। “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ

কী খেলা খেললেন মাহাথির!

শাহেদ হোসেন : বয়স তার ৯৪। বয়সের তুলনায় দেহের গঠন বেশ সুঠাম। রাজনীতির মাঠেও যে তিনি যথেষ্ঠ শক্তিশালী ও প্রজ্ঞার অধিকারী তার প্রমাণ দিয়েছেন একাধিকবার। তবে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে তিনি যে খেলাটি খেললেন তার নজির বিরলই বলতে হবে। যেই জোটের শরিকদের ‘ষড়যন্ত্রে’ প্রধানমন্ত্রীত্ব ও দল থেকে তিনি সরে দাঁড়িয়েছিলেন তারাই শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলো তাকে ফিরিয়ে আনতে। মাহাথির মোহাম্মদ বুঝিয়ে দিলেন রাজনীতির খেলার মাঠে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

দুই দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর পর ২০০৩ সালে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় নেন মাহাথির। তবে অবসর ভেঙে ২০১৮ সালে আবার তিনি রাজনীতিতে ফেরেন।  নিজের দল বারিসান ন্যাশনালের নেতা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ক্ষমতাচ্যুত করতে জোট বাঁধেন এক সময় দল থেকে বের করে দেওয়া আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে।‘পাকাতান হারাপান’ নামের জোট থেকে ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসেন মাহাথির। কথা ছিল, আনোয়ারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তিনি বিদায় নেবেন। তবে তার কোনো সময় জানাননি মাহাথির। ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ প্রায় দুই বছর হয়ে এলেও তিনি বিদায়ের ব্যাপারটি স্পষ্ট করেন নি। এরই মধ্যে মাহাথিরের দল থেকে দাবি উঠতে থাকে, তিনি যেন প্রধানমন্ত্রীত্বের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেন।

জোটের প্রধান শরিক দল পিপলস জাস্টিস পার্টির  নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম চলতি মাসের প্রথম দিকে অভিযোগ করেছিলেন, তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ রূদ্ধ করার চেষ্টা করছেন মাহাথির। এর জন্য তার দল পর্দার অন্তরালে বিরোধীদের সঙ্গে জোট করার চেষ্টা করছেন। মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো গত সপ্তাহে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, আনোয়ারের দল থেকেও বেশ কিছু এমপিকে ভাগিয়ে আনার চেষ্টা করছে মাহাথিরের দলের। এরপরই সোমবার আকস্মিকভাবে দল ও প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন মাহাথির। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনের জন্য তার দলের নেতা মহিউদ্দিনের নাম ঘোষণা করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার মাহাথির জানান, নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে আগামী ২ মার্চে পার্লামেন্টে ভোট হওয়া উচিত। কিন্তু দেশটির নবম সুলতান সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।  তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচনের জন্য পার্লামেন্টকে সময় দেন।

আনোয়ার ইব্রাহিম রাজার সঙ্গে বৈঠকে নিজেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। এরপরই তার দলের পক্ষ থেকে ফের যোগাযোগ করা হয় মাহাথিরের সঙ্গে।

শনিবার এক বিবৃতিতে মাহাথির বলেছেন,‘আমি এখন খুবই আত্মবিশ্বাসী যে প্রধানমন্ত্রী হতে যতটা সংখ্যাগরিষ্ঠতার দরকার, তা আমার রয়েছে।’

রাজনৈতিক খেলায় পরাজিত আনোয়ার ইব্রাহিম অবশ্য  মাহাথিরকে আবারও প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী করায় জোটকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এবং যেই পুরোনো ব্যবস্থাকে আমরা ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম তা ফিরিয়ে আনা থেকে পিছু হটা ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহাথিরকে এগিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আমার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত পোষণ করায় জোটকে ধন্যবাদ।’

আনোয়ারকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী করার ব্যাপারে মাহাথির অবশ্য তার বিবৃতিতে কিছুই বলেননি। আর আনোয়ারও এ ব্যাপারে মুখে তালা দিয়েছেন। আরে দেবেন নাই বা কেন? মাহাথির বুঝিয়ে দিয়েছেন, মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক মাঠে তার কোনো বিকল্প নেই। তার সরে যাওয়া মানে আনোয়ারেরও ক্ষমতার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়া।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

কী খেলা খেললেন মাহাথির!

আপডেট টাইম ১০:২৪:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০
শাহেদ হোসেন : বয়স তার ৯৪। বয়সের তুলনায় দেহের গঠন বেশ সুঠাম। রাজনীতির মাঠেও যে তিনি যথেষ্ঠ শক্তিশালী ও প্রজ্ঞার অধিকারী তার প্রমাণ দিয়েছেন একাধিকবার। তবে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে তিনি যে খেলাটি খেললেন তার নজির বিরলই বলতে হবে। যেই জোটের শরিকদের ‘ষড়যন্ত্রে’ প্রধানমন্ত্রীত্ব ও দল থেকে তিনি সরে দাঁড়িয়েছিলেন তারাই শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলো তাকে ফিরিয়ে আনতে। মাহাথির মোহাম্মদ বুঝিয়ে দিলেন রাজনীতির খেলার মাঠে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

দুই দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর পর ২০০৩ সালে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় নেন মাহাথির। তবে অবসর ভেঙে ২০১৮ সালে আবার তিনি রাজনীতিতে ফেরেন।  নিজের দল বারিসান ন্যাশনালের নেতা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ক্ষমতাচ্যুত করতে জোট বাঁধেন এক সময় দল থেকে বের করে দেওয়া আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে।‘পাকাতান হারাপান’ নামের জোট থেকে ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসেন মাহাথির। কথা ছিল, আনোয়ারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তিনি বিদায় নেবেন। তবে তার কোনো সময় জানাননি মাহাথির। ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ প্রায় দুই বছর হয়ে এলেও তিনি বিদায়ের ব্যাপারটি স্পষ্ট করেন নি। এরই মধ্যে মাহাথিরের দল থেকে দাবি উঠতে থাকে, তিনি যেন প্রধানমন্ত্রীত্বের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেন।

জোটের প্রধান শরিক দল পিপলস জাস্টিস পার্টির  নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম চলতি মাসের প্রথম দিকে অভিযোগ করেছিলেন, তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ রূদ্ধ করার চেষ্টা করছেন মাহাথির। এর জন্য তার দল পর্দার অন্তরালে বিরোধীদের সঙ্গে জোট করার চেষ্টা করছেন। মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো গত সপ্তাহে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, আনোয়ারের দল থেকেও বেশ কিছু এমপিকে ভাগিয়ে আনার চেষ্টা করছে মাহাথিরের দলের। এরপরই সোমবার আকস্মিকভাবে দল ও প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন মাহাথির। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনের জন্য তার দলের নেতা মহিউদ্দিনের নাম ঘোষণা করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার মাহাথির জানান, নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে আগামী ২ মার্চে পার্লামেন্টে ভোট হওয়া উচিত। কিন্তু দেশটির নবম সুলতান সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।  তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচনের জন্য পার্লামেন্টকে সময় দেন।

আনোয়ার ইব্রাহিম রাজার সঙ্গে বৈঠকে নিজেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। এরপরই তার দলের পক্ষ থেকে ফের যোগাযোগ করা হয় মাহাথিরের সঙ্গে।

শনিবার এক বিবৃতিতে মাহাথির বলেছেন,‘আমি এখন খুবই আত্মবিশ্বাসী যে প্রধানমন্ত্রী হতে যতটা সংখ্যাগরিষ্ঠতার দরকার, তা আমার রয়েছে।’

রাজনৈতিক খেলায় পরাজিত আনোয়ার ইব্রাহিম অবশ্য  মাহাথিরকে আবারও প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী করায় জোটকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এবং যেই পুরোনো ব্যবস্থাকে আমরা ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম তা ফিরিয়ে আনা থেকে পিছু হটা ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহাথিরকে এগিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আমার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত পোষণ করায় জোটকে ধন্যবাদ।’

আনোয়ারকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী করার ব্যাপারে মাহাথির অবশ্য তার বিবৃতিতে কিছুই বলেননি। আর আনোয়ারও এ ব্যাপারে মুখে তালা দিয়েছেন। আরে দেবেন নাই বা কেন? মাহাথির বুঝিয়ে দিয়েছেন, মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক মাঠে তার কোনো বিকল্প নেই। তার সরে যাওয়া মানে আনোয়ারেরও ক্ষমতার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়া।