ঢাকা ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন “বাংলাদেশের হিট অফিসার কী করছেন? হিট নিয়ন্ত্রণে “ অগ্নিকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে অনুদানের নগদ অর্থ সহায়তায়: আ জ ম নাসির “স্মার্ট সুদহারে বিপাকে ব্যবসায়ীরা ঢাকা মতিঝিলে ইসতেস্কার নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

করোনা কিংবা বজ্র থেকে বাঁচতে ঘরই ভরসা

মাতৃভূমির খবর ডেস্ক: করোনাভাইরাসে প্রতিদিন মৃত্যু সংবাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশে বজ্রাঘাতে মানুষের মৃত্যুর খবর। শুরু হয়েছে বজ্রপাতের মৌসুম। এদিকে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের ফলে পরিবেশে জীবন ফিরেছে। মনে করা হচ্ছিলো চলতি বছর এজন্য বজ্রপাতের পরিমাণ কমে আসতে পারে। কিন্তু এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে গত শনিবার (১৮ এপ্রিল) বজ্রাঘাতে সুনামগঞ্জে চারজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে এর আগে ২১ এবং ২২ মার্চ দেশে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। আর বজ্রাঘাতে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে আকাশে মেঘ ডাকলে ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। বলা হচ্ছে, করোনা ও বজ্র বাঁচতে হলে ঘরে থাকাই বড় ভরসা।

আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, শীতকালে সাধারণত উত্তর দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হয়। আর শীতের পর তা দক্ষিণ দিক থেকে বইতে শুরু করে। এই বাতাসে প্রচুর পরিমাণে জ্বলীয় বাষ্প থাকে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে তাপীয় লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এই লঘুচাপগুলো পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে, সেই সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে মধ্যাঞ্চলে রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ এসব এলাকায় বজ্রমেঘ তৈরি হয়। সেখান থেকেই বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। এ সময় আকাশ অনেক কালো মেঘে ঢেকে যায়। আর সেই মেঘের উচ্চতা হয় অনেক বেশি।

কিভাবে এর বজ্রপাতের বিষয়ে সতর্ক থাকা যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসগুলো নিয়মিত দেখা। আমরা চারবার নদীবন্দরের বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়ে থাকি। ১০৯০ এই নম্বরে ফোন দিয়ে এই পূর্বাভাস জানা যাবে। আবহাওয়ার দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাসেও বলা হয়, চলতি মাসে বেশ কয়েকদিন বজ্রসহ বৃষ্টি,  কালবৈশাখী ঝড় এবং শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ক্রমাগতভাবে পরিবেশ দূষণকেই বজ্রপাতের প্রধান কারণ মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী লকডাউন চলছে। শিল্পের চাকা যেমন ঘুরছে না, ছুটছে না উন্নয়নের গাড়িও। এতে করে এবার অন্তত প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ কিছুটা হলেও কম হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই হিসেব উল্টে দিয়েছে সুনামগঞ্জে এক দিনে চার মৃত্যুর খবর। শনিবার মাত্র দুই ঘণ্টার কালবৈশাখীতে বজ্রপাতের ঘটনায় চারজন মারা গেছে হাওড় জেলা সুনামগঞ্জে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাওড়ে সাধারণত এখন ধান কাটার কাজ চলে। এইসময় মানুষ ধান কাটতে গিয়ে বেশিরভাগ বজ্রাঘাতে মারা যায়। মার্চের শেষ ভাগ থেকে জুনের প্রথম ভাগ পর্যন্ত বজ্রাঘাতের আঘাতে প্রতি বছর ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়। গত ৯ বছর ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় যে হিসেব দিয়েছে তার গড় হিসেব করলে এই পরিমাণ মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, বজ্রপাতের সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতার এক যোগ আছে। পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় আকাশে মেঘের পরিমাণ বেড়েছে। এতে বজ্রপাতও বেড়েছে। যেহেতু বৈশ্বিক উষ্ণতা কমেনি ফলে বজ্রপাতও কমার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জে। এরইমধ্যে  বেশ কজন মারাও গিয়েছেন। করোনায় সব থেমে যাওয়ায় পরিবেশ দূষণ কমেছে। কিন্তু গ্রিন হাউজ গ্যাস তো কমেনি। সেটি তো আগেই জমা হয়ে আছে। এখন বলা যায়, পরিবেশ দূষণ কম হবার কারণে নতুন করে হয়তো কম জমছে। কিন্তু গ্রিন হাউজের প্রভাবে যে উষ্ণায়ন তা তো অব্যাহত আছেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও খুব বেশি কিছু করা হয়নি বজ্রপাত নিরোধে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে কিভাবে মানুষকে বাঁচানো যায় তার বিকল্প দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। সরকার বজ্রপাত কমাতে তাল গাছ লাগানোর প্রকল্প নিয়েছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কিভাবে বজ্রনিরোধ এলাকা গড়ে তোলা সম্ভব— সে বিষয়ে এখনও তেমন কোনও কাজ হয়নি দেশে। এ বিষয়ে যথেষ্ট গবেষণা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন

করোনা কিংবা বজ্র থেকে বাঁচতে ঘরই ভরসা

আপডেট টাইম ০২:০৩:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ এপ্রিল ২০২০

মাতৃভূমির খবর ডেস্ক: করোনাভাইরাসে প্রতিদিন মৃত্যু সংবাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশে বজ্রাঘাতে মানুষের মৃত্যুর খবর। শুরু হয়েছে বজ্রপাতের মৌসুম। এদিকে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের ফলে পরিবেশে জীবন ফিরেছে। মনে করা হচ্ছিলো চলতি বছর এজন্য বজ্রপাতের পরিমাণ কমে আসতে পারে। কিন্তু এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে গত শনিবার (১৮ এপ্রিল) বজ্রাঘাতে সুনামগঞ্জে চারজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে এর আগে ২১ এবং ২২ মার্চ দেশে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। আর বজ্রাঘাতে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে আকাশে মেঘ ডাকলে ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। বলা হচ্ছে, করোনা ও বজ্র বাঁচতে হলে ঘরে থাকাই বড় ভরসা।

আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, শীতকালে সাধারণত উত্তর দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হয়। আর শীতের পর তা দক্ষিণ দিক থেকে বইতে শুরু করে। এই বাতাসে প্রচুর পরিমাণে জ্বলীয় বাষ্প থাকে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে তাপীয় লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এই লঘুচাপগুলো পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে, সেই সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে মধ্যাঞ্চলে রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ এসব এলাকায় বজ্রমেঘ তৈরি হয়। সেখান থেকেই বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। এ সময় আকাশ অনেক কালো মেঘে ঢেকে যায়। আর সেই মেঘের উচ্চতা হয় অনেক বেশি।

কিভাবে এর বজ্রপাতের বিষয়ে সতর্ক থাকা যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসগুলো নিয়মিত দেখা। আমরা চারবার নদীবন্দরের বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়ে থাকি। ১০৯০ এই নম্বরে ফোন দিয়ে এই পূর্বাভাস জানা যাবে। আবহাওয়ার দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাসেও বলা হয়, চলতি মাসে বেশ কয়েকদিন বজ্রসহ বৃষ্টি,  কালবৈশাখী ঝড় এবং শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ক্রমাগতভাবে পরিবেশ দূষণকেই বজ্রপাতের প্রধান কারণ মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী লকডাউন চলছে। শিল্পের চাকা যেমন ঘুরছে না, ছুটছে না উন্নয়নের গাড়িও। এতে করে এবার অন্তত প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ কিছুটা হলেও কম হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই হিসেব উল্টে দিয়েছে সুনামগঞ্জে এক দিনে চার মৃত্যুর খবর। শনিবার মাত্র দুই ঘণ্টার কালবৈশাখীতে বজ্রপাতের ঘটনায় চারজন মারা গেছে হাওড় জেলা সুনামগঞ্জে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাওড়ে সাধারণত এখন ধান কাটার কাজ চলে। এইসময় মানুষ ধান কাটতে গিয়ে বেশিরভাগ বজ্রাঘাতে মারা যায়। মার্চের শেষ ভাগ থেকে জুনের প্রথম ভাগ পর্যন্ত বজ্রাঘাতের আঘাতে প্রতি বছর ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়। গত ৯ বছর ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় যে হিসেব দিয়েছে তার গড় হিসেব করলে এই পরিমাণ মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, বজ্রপাতের সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতার এক যোগ আছে। পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় আকাশে মেঘের পরিমাণ বেড়েছে। এতে বজ্রপাতও বেড়েছে। যেহেতু বৈশ্বিক উষ্ণতা কমেনি ফলে বজ্রপাতও কমার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জে। এরইমধ্যে  বেশ কজন মারাও গিয়েছেন। করোনায় সব থেমে যাওয়ায় পরিবেশ দূষণ কমেছে। কিন্তু গ্রিন হাউজ গ্যাস তো কমেনি। সেটি তো আগেই জমা হয়ে আছে। এখন বলা যায়, পরিবেশ দূষণ কম হবার কারণে নতুন করে হয়তো কম জমছে। কিন্তু গ্রিন হাউজের প্রভাবে যে উষ্ণায়ন তা তো অব্যাহত আছেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও খুব বেশি কিছু করা হয়নি বজ্রপাত নিরোধে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে কিভাবে মানুষকে বাঁচানো যায় তার বিকল্প দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। সরকার বজ্রপাত কমাতে তাল গাছ লাগানোর প্রকল্প নিয়েছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কিভাবে বজ্রনিরোধ এলাকা গড়ে তোলা সম্ভব— সে বিষয়ে এখনও তেমন কোনও কাজ হয়নি দেশে। এ বিষয়ে যথেষ্ট গবেষণা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।