ফরহাদ হোসেন ফখরুলঃ
হাফেজ আঃ বাসারের স্ত্রী হাসিনা আক্তার ও তার ভাই কাতার প্রবাসী কামাল হোসেন ওই অভিযোগ করে।
হাসিনা আক্তারের বড় ভাই কামাল জানান, আমার বোন হাসিনার স্বামী হাফেজ আঃ বাশারের রাতে বুকে ব্যাথা শুরু হলে, তাকে গত শনিবার ৬ জুন ২০২০ আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। সে ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় একটি মসজিদে ঈমামতি করত। সেখান থেকে গত ৫ জুন কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের নোয়াদ্দা গ্রামে নিজ বাড়িতে আসে। তার করোনা পজিটিভ ছিলকিনা তা পরীক্ষা নীরিক্ষা করা সম্ভব হয় নি। নাকি অন্য কোন রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে তাও জানা যায় নি। আসাদ নগর থেকে এলাকার প্রায় ৫/৬ জন মিলে আমার বোনকে মোহনপুরে স্বামীকে দেখতে কিংবা মাটি দিতে না যেতে বারণ করে। যদি যায় সিএনজি ড্রাইভার সহ সিএনজিতে থাকা সবাইকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি ও দমকি দিতে থাকে। অথচ আমার মা ( বাশারের শাশুড়ী) কিন্তু মোহনপুরে লাশের বাড়িতে অবস্থান করছিল। পরে আমার চাচা মনিরুল ইসলামসহ আসাদ নগর থেকে আত্মীয়তার খাতিরে মোহনপুর ইউপি মেম্বার নূরুল ইসলামের বাড়িতে গেলে মেম্বার আমার বোনকে সেখানে যেতে বারণ করে। বলেযে ছেলেটি করোনায় মারা গেছে তোমরা আসতে পারবে না। তোমরা বাড়িতে ফিরে যাও। অনুরোধ করেও মানবিক আচরন পায়নি। পরে উপায়ান্ত না পেয়ে আমার বোন মনের ভিতর দুঃখ নিয়ে স্বামীর শেষ মুখটি না দেখে ফিরতে হয়। দেখতে পেলনা আমার ৫ বছরের একমাত্র ভাগিনা তার বাবার শেষ মুখটি। আমার এলাকার কিছু লোক ও মেম্বার নূরুল ইসলাম কি স্বার্থ পেল এ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে। নাকি করোনার দোহাই দিয়ে ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক দন্দের প্রতিশোধ নিল আমাদের উপর। মেম্বার নূরুল ইসলাম আমার বাড়ির পাশে বিয়ে করেছে। তার শালারাও বাঁধা দিয়েছে। কিভাবে মেম্বার নূরুল ইসলাম ও আমার এলকার কিছু লোক বুঝল যে, আমার বোন জামাইয়ের করোনা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। অথচ এই মেম্বারই লাশ মাটি দেওয়ার সময় লাশের পাশে ছিল। লাশটি মাটি দিতে সহযোগিতা করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মিঠু ভাই ও কুমিল্লা উঃ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু কাউসার অনিকের নেতৃত্বে ওরা ৪১ জনের টিমের সদস্যরা। আসাদনগর থেকে বাধাঁদানকারী অভিযুক্তরা হলঃ১) জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া ও ২) গিয়াসউদ্দিন ভুঁইয়া, উভয় পিতা- মৃত সুন্দর আলী, ৩) মোঃ আঃ হারুন, পিতা – মৃত জয়নাল আবেদীন, ও ৪) আল আমিন, পিতা- আবুল কাশেম।
কার নিকট অভিযোগ করেছেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মৌখিকভাবে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। এছাড়াও স্থানীয় চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন সম্মানিত নেতাদের নিকট বিষয়টি অভিযোগ করেছি।
পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে দাবী করে তিনি বলেন, আমি প্রবাসে থাকি। অভিযোগ করার কারনে আমার পরিবারকে হুমকি দমকি দিচ্ছে। এমতাবস্থায় আমার পরিবার ভয় ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
হাসিনা আক্তার তার ভাই কামাল হোসেনের সাথে একমত প্রকাশ করে বলেন, আমার ভাইয়ের সবগুলো অভিযোগ সত্য। আমার স্বামী পূর্বে থেকে হৃদরোগে ভোগেছিল। আমি ওকে অনেকবার চিকিৎসা করাই। আমাকে যখন মেম্বারের বাড়ি থেকে চলে আসতে বলে তখন আমি আমার চাচার পায়ে ধরে বলি – আমি চান্দিনা মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র নার্স আমার নিকট করোনা মোকাবেলার ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী সবই আছে। আমি জানি কিভাবে নিজেকে সুরক্ষা রাখতে হয়। আমার স্বামীর পূর্বে থেকে হার্টের সমস্যা ছিল। নূরুল মেম্বারের কথা সঠিক নয়। প্রয়োজনে ১৪ দিন কেন ১৪ বছর হোমকোয়ারেন্টাইনে আমি থাকতে প্রস্তুত। তবুও আমাকে যেতে দিন। চাচা আমাকে বলল এলাকা থেকে আমাকে অনেক প্রেসার ও ফোন দিচ্ছে। যাওয়া যাবে না। সমাজ নিয়ে আমাকে বসবাস করতে হবে। পরে সিএনজিটি মোহনপুর থেকে আসাদ নগরে আবার ফিরে আসতে হল। দেখতে পেলাম না আমার স্বামীর শেষ মুখটিও। আমার ছেলেও দেখতে পেলনা তার বাবার মুখটিও। আমার মোবাইলে তখন চার্জ না থাকার কারনে কার সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ ছিলনা। যার কারনে আমি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও স্থানীয় প্রসাশনের নিকট এই নিষ্ঠুর অপবাদ ও গুজবের বিচার চাই। আমি বা আমার পরিবার এলকার কি? ক্ষতি করেছি। আমরাত সু-শিক্ষিত বটে। আমি ও আমার ভাই এলাকার মানুষকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছি। কিন্তু পরের দিন যখন কাউকে না জানিয়ে চুপিচুপি আবার আমার শশুর বাড়িতে যাই তখন আমার ননদ আমাকে বলছে যে, তোমার জন্য ত লাশ মাটি দিতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করা হয়েছে।
আসাদ নগর গ্রামের মেয়ের চাচা মনিরুল ইসলামের নিকট ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন আমরা মেম্বারের বাড়িতে যাই তখন মেম্বার নূরুল ইসলাম আমাদের বলে বাশার করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আপনারা আসতে পারবেন না। আপনারা বাড়ি চলে যান। মেম্বার আমাদের গ্রামে বিয়ে করার কারনে তারা সালা এলকার কিছু মানুষকে সামনে রেখে ফোনে তাকে (মেম্বারকে) জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন করোনা হয়ে মারা গেছে। এই কারনে আমাদের এলাকা থেকে অনেকেই ওই বাড়িতে যেতে বারণ করে। এলাকাতে ঢুকতে দেওয়া হবে না সেই হুমকিও দেওয়া হয়।
অভিযোগের ব্যাপারে মোহনপুর ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার নূরুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমার সাথে কারোর কোন কথা হয় নি।
হসিনার শশুর মানে হাফেজ বাশারের বাবা আনোয়ারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলের আগে থেকেই হার্টে সমস্যা ছিল। আমরা মনে করেছি ভাল হয়ে গেছে কিন্তু ভাল ত হয় নি। আমার ছেলের মুখ দিয়ে রক্তও আসছে। আমি ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক হয়ে গেছি। তাই অনেকের সাথে আমার যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
ভানী ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ মামুনের নিকট বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়টি আমি অবগত নই। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।