ঢাকা ০৫:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
“মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন … লালমনিরহাটে বৃষ্টির জন‍্য বিশেষ নামাজ আদায় মিছিল ও শোডাউন করায় মতলব উত্তর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মানিক দর্জিকে শোকজ –গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা এলাকায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামি শ্রী রুপেন দাশ’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব । চন্দনাইশে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু ইষ্টার্ণ হাউজিংয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ায় সাংবাদিকদের উপর হামলা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে কোরআন শরিফ অবমাননা করায় মানববন্ধন রাঙ্গুনিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনার চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু

কমলা ফলের পরিচিতি ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রতিবেদন

এ.এস.এ সোহাগ,চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ

কমলা আমাদের চোখে দেখা খুব পরিচিত একটি সুস্বাদু ফল। কমলা লেবু দেখতে যেমন চমৎকার এর পুষ্টিগুণও অনেক। গোলগাল আকৃতির এই ফলটি সবাই খেতে পছন্দ করে।

বিশ্বে সাইট্রাস (লেবুজাতীয় ফল) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফল। উৎপাদনের দিক থেকে পৃথিবীর ফলগুলোর মধ্যে এর স্থান দ্বিতীয় কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দিক থেকে এ ফলের স্থান প্রথম (স্যামসন, ১৯৮৬)। বাংলাদেশের আবহাওয়া লেবুজাতীয় ফল (বিশেষ করে এলাচিলেবু, কাগজিলেবু, জাম্বুরা বেশি ভালো হয়) উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। এ দেশে লেবুজাতীয় ফলের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এ দেশের লেবুজাতীয় ফলচাষিরা প্রতি বছর রোগবালাই ও পোকামাকড় দ্বারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শীতের সময়ে বাজারে কমলালেবু বেশ সহজলভ্য। তাই কমলা লেবু খেতে খেতেই শরীরের জন্য করতে পারেন বেশ কিছু উপকার-যেমন:

(১) কমলা বা কমলা লেবুর রস অত্যন্ত পুষ্টিকর, অধিকাংশ রোগে পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।(২) কমলা খেলে খিদে বাড়ে, খাওয়ার রুচি ও শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়।(৩) অনেক পরিশ্রমের পর অন্য খাবারের সঙ্গে কমলা খেলে ক্লান্তি দূর হয়।(৪) কমলা কৃমি দূর করতে সাহায্য করে।(৫) অন্যান্য লেবুর মতো কমলালেবুও শরীরে ভিটামিন-সি এর ঘাটতি পূরন করে।(৬) টক স্বাদের কমলা খেলে শরীরের চর্বি কমে।(৭) শরীরে বেশিমাত্রায় ও অনেক দিনের মেদ জমে থাকলে খুব একটা উপকার পাওয়া যায় না। তবে শরীরে সদ্য মেদ জমতে শুরু করলে, সেই মেদ ঝরিয়ে দেয় কমলা।(৮) কমলা রস করে খাওয়ার চেয়ে কোয়া খাওয়াই শরীরের পক্ষে ভাল।(৯) কমলা টক হলে লবণ মিশিয়ে খাওয়া ঠিক নয়।
(১০) ওজন কমানো, ত্বকের পুষ্টি এমন কি হৃদযন্ত্র ভালো রেখে শরীরে রক্ত চলাচল নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে কমলা। টক মিষ্টি স্বাদের ফল কমলায় রয়েছে ভরপুর ভিটামিন। তাছাড়া আরও আছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু উপাদান।
(১১) রক্তে থাকা ক্ষতিকর ও প্রোদাহজনক মৌল থেকে রক্ষা করে ভিটামিন সি। সিট্রাসজাতীয় ফলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। আর কমলা হচ্ছে ভিটামিন সি’র অন্যতম উৎস।
(১২) কমলায় রয়েছে নারিজেনিনের মতো বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান যা উন্নত মানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্লামাটর।  এছাড়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরের অক্সিজেনের অণু স্থিতিশীল করতে এবং ফ্রি রাডিক্যালস নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে।  এই নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতার কারণে ত্বক পরিষ্কার হয় এবং বয়সের ছাপ সহজে পড়ে না। তাছাড়া ত্বক ভিতর থেকে উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করে কমলা। তাই একটু বেশি বয়সি মহিলাদের জন্য কমলা খুবই উপকারী।
(১৩) কমলার ভিটামিন ত্বক নমীয়, কোমল এবং সুন্দর করতে সাহায্য করে। প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কমলা ব্যবহার করে।
(১৪) কমলা ‘ক্যালরি ফ্রি’ ফল হিসেবে পরিচিত, আর এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই কমলার পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করে। মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক পুষ্টি যেমন থিয়ামাইন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি সিক্স, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে কমলায়।
(১৫) শরীরে ওষুধ গ্রহণে সাহায্য করে কমলা। এই ফলের রস ওষুধের বায়োকেমিক্যাল ও সাইকলজিকাল প্রভাব শরীরে গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
(১৬) চোখের জন্য ভিটামিন এ দরকার। আর কমলায় বেশ ভালো পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। (১৭) কমলায় আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান যা হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম এবং ক্যালশিয়ামের মতো খনিজ উপাদানগুলো শরীরে সোডিয়ামের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কমলার চর্বিহীণ আঁশ, সোডিয়াম মুক্ত এবং কোলেস্টেরল মুক্ত উপাদানগুলো হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে।
(১৮) কমলায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিনের পাশাপাশি রয়েছে আলফা ও বেটা ক্যারোটিনের মতো ফ্ল্যাভনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কমলার উচ্চমাত্রার পুষ্টিগুণ হচ্ছে ফ্ল্যাভনয়েড যা ফুসফুস এবং ক্যাভিটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর।
(১৯) কমলার খোসায় চিনির পরিমাণ নেই বললেই চলে, তাই এটা রক্তে শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলে। ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক সিন্ড্রম রোগীদের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রেণ রাখতে হয়। তাই কমলার পুষ্টিগুণ ডায়াবেটিকদের জন্য উপকারী।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

“মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন”

কমলা ফলের পরিচিতি ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রতিবেদন

আপডেট টাইম ১১:৩৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০২০

এ.এস.এ সোহাগ,চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ

কমলা আমাদের চোখে দেখা খুব পরিচিত একটি সুস্বাদু ফল। কমলা লেবু দেখতে যেমন চমৎকার এর পুষ্টিগুণও অনেক। গোলগাল আকৃতির এই ফলটি সবাই খেতে পছন্দ করে।

বিশ্বে সাইট্রাস (লেবুজাতীয় ফল) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফল। উৎপাদনের দিক থেকে পৃথিবীর ফলগুলোর মধ্যে এর স্থান দ্বিতীয় কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দিক থেকে এ ফলের স্থান প্রথম (স্যামসন, ১৯৮৬)। বাংলাদেশের আবহাওয়া লেবুজাতীয় ফল (বিশেষ করে এলাচিলেবু, কাগজিলেবু, জাম্বুরা বেশি ভালো হয়) উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। এ দেশে লেবুজাতীয় ফলের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এ দেশের লেবুজাতীয় ফলচাষিরা প্রতি বছর রোগবালাই ও পোকামাকড় দ্বারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শীতের সময়ে বাজারে কমলালেবু বেশ সহজলভ্য। তাই কমলা লেবু খেতে খেতেই শরীরের জন্য করতে পারেন বেশ কিছু উপকার-যেমন:

(১) কমলা বা কমলা লেবুর রস অত্যন্ত পুষ্টিকর, অধিকাংশ রোগে পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।(২) কমলা খেলে খিদে বাড়ে, খাওয়ার রুচি ও শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়।(৩) অনেক পরিশ্রমের পর অন্য খাবারের সঙ্গে কমলা খেলে ক্লান্তি দূর হয়।(৪) কমলা কৃমি দূর করতে সাহায্য করে।(৫) অন্যান্য লেবুর মতো কমলালেবুও শরীরে ভিটামিন-সি এর ঘাটতি পূরন করে।(৬) টক স্বাদের কমলা খেলে শরীরের চর্বি কমে।(৭) শরীরে বেশিমাত্রায় ও অনেক দিনের মেদ জমে থাকলে খুব একটা উপকার পাওয়া যায় না। তবে শরীরে সদ্য মেদ জমতে শুরু করলে, সেই মেদ ঝরিয়ে দেয় কমলা।(৮) কমলা রস করে খাওয়ার চেয়ে কোয়া খাওয়াই শরীরের পক্ষে ভাল।(৯) কমলা টক হলে লবণ মিশিয়ে খাওয়া ঠিক নয়।
(১০) ওজন কমানো, ত্বকের পুষ্টি এমন কি হৃদযন্ত্র ভালো রেখে শরীরে রক্ত চলাচল নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে কমলা। টক মিষ্টি স্বাদের ফল কমলায় রয়েছে ভরপুর ভিটামিন। তাছাড়া আরও আছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু উপাদান।
(১১) রক্তে থাকা ক্ষতিকর ও প্রোদাহজনক মৌল থেকে রক্ষা করে ভিটামিন সি। সিট্রাসজাতীয় ফলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। আর কমলা হচ্ছে ভিটামিন সি’র অন্যতম উৎস।
(১২) কমলায় রয়েছে নারিজেনিনের মতো বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান যা উন্নত মানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্লামাটর।  এছাড়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরের অক্সিজেনের অণু স্থিতিশীল করতে এবং ফ্রি রাডিক্যালস নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে।  এই নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতার কারণে ত্বক পরিষ্কার হয় এবং বয়সের ছাপ সহজে পড়ে না। তাছাড়া ত্বক ভিতর থেকে উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করে কমলা। তাই একটু বেশি বয়সি মহিলাদের জন্য কমলা খুবই উপকারী।
(১৩) কমলার ভিটামিন ত্বক নমীয়, কোমল এবং সুন্দর করতে সাহায্য করে। প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কমলা ব্যবহার করে।
(১৪) কমলা ‘ক্যালরি ফ্রি’ ফল হিসেবে পরিচিত, আর এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই কমলার পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করে। মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক পুষ্টি যেমন থিয়ামাইন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি সিক্স, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে কমলায়।
(১৫) শরীরে ওষুধ গ্রহণে সাহায্য করে কমলা। এই ফলের রস ওষুধের বায়োকেমিক্যাল ও সাইকলজিকাল প্রভাব শরীরে গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
(১৬) চোখের জন্য ভিটামিন এ দরকার। আর কমলায় বেশ ভালো পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। (১৭) কমলায় আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান যা হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম এবং ক্যালশিয়ামের মতো খনিজ উপাদানগুলো শরীরে সোডিয়ামের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কমলার চর্বিহীণ আঁশ, সোডিয়াম মুক্ত এবং কোলেস্টেরল মুক্ত উপাদানগুলো হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে।
(১৮) কমলায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিনের পাশাপাশি রয়েছে আলফা ও বেটা ক্যারোটিনের মতো ফ্ল্যাভনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কমলার উচ্চমাত্রার পুষ্টিগুণ হচ্ছে ফ্ল্যাভনয়েড যা ফুসফুস এবং ক্যাভিটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর।
(১৯) কমলার খোসায় চিনির পরিমাণ নেই বললেই চলে, তাই এটা রক্তে শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলে। ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক সিন্ড্রম রোগীদের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রেণ রাখতে হয়। তাই কমলার পুষ্টিগুণ ডায়াবেটিকদের জন্য উপকারী।