ঢাকা ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রাঙ্গুনিয়ায় নববর্ষ বৈশাখী উৎসবে জলকেলি ও বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে বেলখাইন স্পোটিং ক্লাবের অলনাইট ফুটবল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল সম্পন্ন বগুড়ায় চাঞ্চ্যল্যকর শিশু বন্ধনকে গলাকেটে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন গজারিয়ায় দুই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলাম এর পক্ষে গনসংযোগ ও লিফলেট বিতরন প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে আলোচনা ও পুরুষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান –অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৪ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। চট্টগ্রামে দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে-২ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা বিএমএর হকার আর যত্রতত্র আবর্জনা কমাতে অভিযানের ঘোষণা মেয়র রেজাউলের রামগঞ্জে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ২০২৪ অনুষ্ঠিত। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

একটি চর, একটি শিখনকেন্দ্র ও কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের গল্প

মো: আলতাফ হোসেন, ইন্দুরকানী, পিরোজপুর।

চর সাউদখালী গ্রাম। চারদিকে নদী বেষ্টিত একটি চর। এরই মাঝে বই-খাতা নিয়ে
অধীর আগ্রহে পড়তে এসেছে শিশুরা, দেখতে যে কারো কাছে খুবই ভাললাগে, তবে এ
শিশুদের গল্প অন্য শিশুদের মত নয়। তাদের পোশাক ও চেহারা দেখেই বলা যায়
তাদের পৃথিবীটা কত ছোট। অন্য পাঁচ জন শিশুদের মত অভিভাবকরা তাদের স্কুলে
নিয়ে এসে বসে থাকে না। সুন্দর পোশাক, ভাল স্কুল ব্যাগ, টিফিনের টাকা অথবা
ছুটির দিনে গাড়িতে করে একটু বেড়াতে যাওয়া এসব শিশুদের কাছে স্বপ্নমাত্র।

বলছি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের চর সাউদখালী
(মাঝের চর) আশ্রায়ন প্রকল্প এলাকার কথা। চারদিকে নদী বেষ্টিত প্রায় ৪০০
পরিবারের এ গ্রামটির প্রায় সকলেই জেলে পরিবারের। আর্থিক স্বচ্ছলতা না
থাকার কারণে তাদের জীবনযাপন অনেকটাই আলাদা। ২০০৭ সালে সিডর পরবর্তী একটি
সাইক্লোন সেল্টার কাম সরকারি প্রাইমারী স্কুল হওয়াতে কিছুটা আলোর মুখ
দেখতে শুরু করেছে এখানের শিশুরা। তবে অভিভাবকদের দারিদ্রতা এবং শিক্ষায়
অনাগ্রহ অনেকটাই বাধাগ্রস্থ করে সে আলোকে।

এইরূপ প্রেক্ষিতে দাতব্য প্রতিষ্ঠান এইডিটি এর সহায়তায় ২০১৮ সাল থেকে
এসকল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় আগ্রহ বৃদ্ধি করতে বাতিঘর
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রে কাজ করে যাচ্ছে রূপসী বাংলা উন্নয়ন
সংস্থা নামের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ ৫ বছরের এই সংগ্রামে
অনেকটাই এগিয়েছে শিশুরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় আশ্রায়ন প্রকল্পের একটি
ঘরে ৩০ জনের অধিক শিশুরাই পাঠদান করছে। শিক্ষিকা ফাহিমা বেগম জানান,
প্রথম দিকে শিশুরা আসতে চাইতো না, ঘরে ঘরে গিয়ে অভিভাবকদের বলে আসতাম।
কোলে করে শিশুদের শিখন কেন্দ্রে নিয়ে আসতাম, চকলেট-বিস্কুট দিতাম।
অভিভাবকরা শিশুদের জন্য কোন টাকা খরচ করতে চাইতো না, অনেক সময় সামর্থ ছিল
না অনেক পরিবারের। তবে এখন অনেক অভিভাবকই সচেতন হয়েছেন। নিজেরাই তাদের
ছেলে-মেয়েদের কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন। হাজিরা খাতায় ৩০ জনের নাম থাকলেও
বর্তমানে উপস্থিতি তার চেয়েও বেশী। এখান থেকে শিশুরা এক বছর পাঠ শিখে
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। ফলে শিশুদের কাছে সরকারি পাঠ্যবই অনেকটা
সহজ হয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোঃ আজাদ হোসেন
বাচ্চু জানান- সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমরা কাজটি করে আসছি। এখানে
শিশুরা লেখাপড়া শিখবে, মানুষ হবে এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি, আমাদের
প্রত্যাশা। এইডিটি পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন- প্রয়োজনের তুলনায় সার্বিক
সহায়তা দিতে না পারলেও অন্তত বিনামূল্য বই, খাতা, কলম, বার্ষিক ক্রীড়া
প্রতিযোগিতাসহ পাঠদান সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এতে করে অনেক শিশু ও অভিভাবকগন
পাঠদানে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সকলের সহযোগিতা পেলে হয়তো এ শিশুরাও দেখাতে
পারে নৈপুন্য, গড়তে পারে সম্ভবনাময় ভবিষ্যত।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাঙ্গুনিয়ায় নববর্ষ বৈশাখী উৎসবে জলকেলি ও বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে

একটি চর, একটি শিখনকেন্দ্র ও কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের গল্প

আপডেট টাইম ০৬:৪৯:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ অগাস্ট ২০২২

মো: আলতাফ হোসেন, ইন্দুরকানী, পিরোজপুর।

চর সাউদখালী গ্রাম। চারদিকে নদী বেষ্টিত একটি চর। এরই মাঝে বই-খাতা নিয়ে
অধীর আগ্রহে পড়তে এসেছে শিশুরা, দেখতে যে কারো কাছে খুবই ভাললাগে, তবে এ
শিশুদের গল্প অন্য শিশুদের মত নয়। তাদের পোশাক ও চেহারা দেখেই বলা যায়
তাদের পৃথিবীটা কত ছোট। অন্য পাঁচ জন শিশুদের মত অভিভাবকরা তাদের স্কুলে
নিয়ে এসে বসে থাকে না। সুন্দর পোশাক, ভাল স্কুল ব্যাগ, টিফিনের টাকা অথবা
ছুটির দিনে গাড়িতে করে একটু বেড়াতে যাওয়া এসব শিশুদের কাছে স্বপ্নমাত্র।

বলছি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের চর সাউদখালী
(মাঝের চর) আশ্রায়ন প্রকল্প এলাকার কথা। চারদিকে নদী বেষ্টিত প্রায় ৪০০
পরিবারের এ গ্রামটির প্রায় সকলেই জেলে পরিবারের। আর্থিক স্বচ্ছলতা না
থাকার কারণে তাদের জীবনযাপন অনেকটাই আলাদা। ২০০৭ সালে সিডর পরবর্তী একটি
সাইক্লোন সেল্টার কাম সরকারি প্রাইমারী স্কুল হওয়াতে কিছুটা আলোর মুখ
দেখতে শুরু করেছে এখানের শিশুরা। তবে অভিভাবকদের দারিদ্রতা এবং শিক্ষায়
অনাগ্রহ অনেকটাই বাধাগ্রস্থ করে সে আলোকে।

এইরূপ প্রেক্ষিতে দাতব্য প্রতিষ্ঠান এইডিটি এর সহায়তায় ২০১৮ সাল থেকে
এসকল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় আগ্রহ বৃদ্ধি করতে বাতিঘর
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রে কাজ করে যাচ্ছে রূপসী বাংলা উন্নয়ন
সংস্থা নামের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ ৫ বছরের এই সংগ্রামে
অনেকটাই এগিয়েছে শিশুরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় আশ্রায়ন প্রকল্পের একটি
ঘরে ৩০ জনের অধিক শিশুরাই পাঠদান করছে। শিক্ষিকা ফাহিমা বেগম জানান,
প্রথম দিকে শিশুরা আসতে চাইতো না, ঘরে ঘরে গিয়ে অভিভাবকদের বলে আসতাম।
কোলে করে শিশুদের শিখন কেন্দ্রে নিয়ে আসতাম, চকলেট-বিস্কুট দিতাম।
অভিভাবকরা শিশুদের জন্য কোন টাকা খরচ করতে চাইতো না, অনেক সময় সামর্থ ছিল
না অনেক পরিবারের। তবে এখন অনেক অভিভাবকই সচেতন হয়েছেন। নিজেরাই তাদের
ছেলে-মেয়েদের কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন। হাজিরা খাতায় ৩০ জনের নাম থাকলেও
বর্তমানে উপস্থিতি তার চেয়েও বেশী। এখান থেকে শিশুরা এক বছর পাঠ শিখে
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। ফলে শিশুদের কাছে সরকারি পাঠ্যবই অনেকটা
সহজ হয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোঃ আজাদ হোসেন
বাচ্চু জানান- সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমরা কাজটি করে আসছি। এখানে
শিশুরা লেখাপড়া শিখবে, মানুষ হবে এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি, আমাদের
প্রত্যাশা। এইডিটি পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন- প্রয়োজনের তুলনায় সার্বিক
সহায়তা দিতে না পারলেও অন্তত বিনামূল্য বই, খাতা, কলম, বার্ষিক ক্রীড়া
প্রতিযোগিতাসহ পাঠদান সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এতে করে অনেক শিশু ও অভিভাবকগন
পাঠদানে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সকলের সহযোগিতা পেলে হয়তো এ শিশুরাও দেখাতে
পারে নৈপুন্য, গড়তে পারে সম্ভবনাময় ভবিষ্যত।