বিশ্ব ক্রিকেটের তুখোড় খেলোয়াড় ছিলেন পাকিস্তানের ইমরান খান। তাঁর হাত ধরেই পাকিস্তান বিশ্বকাপ ক্রিকেট জিতেছিল। বিশ্বকাপ জয়ের দুই দশক পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। কিন্তু খেলোয়াড় থেকে রাজনীতির মাঠ কাঁপানোর তালিকায় তিনিই একমাত্র ব্যক্তি নন। আছেন আরও অনেকে। এমন সাবেক তারকা খেলোয়াড়কে নিয়ে এই প্রতিবেদন, যাঁরা রাজনীতিতেও সফল হয়েছেন
জর্জ উইয়াহ
ইমরানের উত্থানের সঙ্গে একেবারে মিলে যায় জর্জ উইয়াহর রাজনৈতিক সফলতা। গত জানুয়ারিতে তিনি আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। রাজধানী মনরোভিয়া বস্তিতে বেড়ে ওঠা উইয়াহ ব্যালন ডি’অর জেতা প্রথম নন-ইউরোপিয়ান ও একমাত্র আফ্রিকান ফুটবলার। ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরে যান। তবে ঠিক এক যুগ পর জয়ী হয়ে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।
আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার
রুপালি পর্দা ও রাজনীতিতে আসার আগে অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার বিশ্বের একজন সেরা শরীরচর্চাবিদ ছিলেন। বডিবিল্ডার হিসেবে তিনি সবচেয়ে কম বয়সী বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এরপর ১৯৮০-এর দশকে হলিউডে একের পর এক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র উপহার দেন আর্নল্ড। মধ্যপন্থী রিপাবলিকান হিসেবে তিনি ২০০৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচিত হন।
ম্যানি পেকিয়াও
ফিলিপাইনের দারিদ্র্যকবলিত লাখ লাখ তরুণের আদর্শ ম্যানি পেকিয়াও। একেবারে রাস্তা থেকে তিনি আরোহণ করেছেন বক্সিংয়ের শীর্ষে। ১২টি ওয়ার্ল্ড খেতাব জিতেছেন তিনি। বক্সিংয়ের খ্যাতি নিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হন পেকিয়াও। প্রথমে তিনি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ, পরে সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন। এখন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চিন্তা করছেন।
ভিতালি ক্লিচকো
হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নদের একজন ইউক্রেনের ভিতালি ক্লিচকোর ঘুষিতে কতজনই না নাকানিচুবানি খেয়েছেন। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে অরেঞ্জ বিপ্লবের সময় সরকারবিরোধীদের সরাসরি সমর্থন জানিয়ে রাজনীতিতে ঝড় তোলেন তিনি। বর্তমানে তিনি রাজধানী কিয়েভের মেয়র।
অর্জুনা রানাতুঙ্গা
ইমরানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের চার বছর পর শিরোপা জেতে শ্রীলঙ্কা। ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিতে ইমরানের মতোই ভূমিকা রাখেন অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা। পরে তিনি রাজনীতিতে আসেন। ২০১৫ সালে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি জ্বালানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এর আগে তিনি জুনিয়র পর্যটনমন্ত্রী ছিলেন।
নভজ্যোত সিং সিধু
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সিধু ২০০৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির মনোনয় নিয়ে পাঞ্জাবের অমৃতসর থেকে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি এই আসনের সাংসদ ছিলেন। ২০১৬ সালে সিধুকে রাজ্য সভার সদস্য মনোনীত করা হয়। কিন্তু ওই বছরই তিনি রাজ্য সভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৭ সালে বিজেপি ছেড়ে ভারতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। পাঞ্জাবের বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি পাঞ্জাবের স্থানীয় সরকার, পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন।
বাংলাদেশের জয়-দুর্জয়
দুজনই ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের অধিনায়ক। একজন ফুটবল দলের, অন্যজন ক্রিকেটের। আরিফ খান জয় ও নাঈমুর রহমান দুর্জয় দুজনই বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে আছেন। জয় তো ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন। এই প্রথম কোনো সাবেক ক্রীড়াবিদ এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। ২০১৪ সালে নেত্রকোনা-২ থেকে নির্বাচিত হন তিনি। একই নির্বাচনে মানিকগঞ্জ ১ থেকে নির্বাচিত হন নাঈমুর রহমান। নাঈমুর বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ওই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটও নিয়েছিলেন তিনি।