ঢাকা ১১:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল। গজারিয়া বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে সিকদার পরিবারে আমিরুল ইসলাম এর সর্মথনে আলোচনা সভা ও ইফতার দোয়া মাহফিল চসিকের ৬ ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৮ তম সাধারণ সভায় মশা কমাতে কার্যক্রম বাড়াবে : মেয়র রেজাউল “বিড়ি শিল্পে ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে রংপুর শ্রমিকদের মানববন্ধন” ইন্দুরকানী প্রেসক্লাবে ইফতার মাহফিল বরিশাল চকবাজার এবায়দুল্লাহ মসজিদে অগ্নিকান্ড। টাঙ্গাইলে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার পাঠক ফোরাম গঠিত চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার চট্টগ্রামে জালনোটসহ প্রতারকচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ রমজান মাসের পবিত্রতা লঙ্ঘন করছে নারায়ণগঞ্জ চিশতিয়া বাউল সমিত

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর-১০ ডিসেম্বর) ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস, ২০২১

এম.আর.ইসলাম রফিক:-
আজ – জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তন, জাতীয় প্রেসক্লাব, ২৫ নভেম্বর ২০২১ ৷৷ সকাল ১১.০০ টা ঢাকা।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সংবাদ সম্মেলন

আপনারা জানেন, ২৫ নভেম্বর- ১০ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘের উদ্যোগে সারাবিশ্বে ১৬দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালিত হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী নারী আন্দোলন ও মানবাধিকার আন্দোলন এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রচার-প্রচারণামূলক নানান কর্মসূচি পালিত হয়। বিগত বছরগুলোর মত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদও আজ ২৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি সমাপ্ত হবে।

জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২১ এর আহ্বান “Orange the World: END VIOLENCE AGAINST WOMEN NOW!” এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২০২১ এ “নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ কর, সমঅধিকার নিশ্চিত কর” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল জেলা ও তৃণমূল শাখায় আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ(২৫ নভেম্বর -১০ ডিসেম্বর ) ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে ১৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বছর ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে। সমতাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্খায় এদেশ স্বাধীন হয়েছিল। বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের যে লক্ষনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, সেখানে নারীর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কিন্তু নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এখনো সম্ভব হয়নি। বাস্তবতা এই যে, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংতার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক যা মানবাধিকার ও উন্নয়নের পরিপন্থী। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নারী আন্দোলন, মানবাধিকার আন্দোলন এবং সরকারি-বেসরকারি নানাবিধ উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা ও ভয়বহতা ক্রমাগত উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত এই সংকটকে গভীরতর করে তুলেছে।

কোভিডকালীন সময়ে পারিবারিক সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। লকডাউনকালীন সময়ে অধিকসংখ্যক পুরুষ সদস্য ঘরে অবস্থান করছে। নারীর গৃহস্থালীর কাজ, সেবামূলক কাজ ও সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের চাপ অনেকগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীদের মানসিক চাপও বৃদ্ধি পেয়েছে। উপার্জনহারা পুরুষ সদস্য সংসার ব্যবস্থাপনায় স্ত্রীর সামান্য ত্রুটির অজুহাতে অনেক ক্ষেত্রেই ছোটখাটো পারিবারিক কলহ, নির্যাতন, বিবাহ বিচ্ছেদ এবং হত্যার মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। গৃহবন্দী থাকার কারণে অনেকক্ষেত্রেই স্বজনদের দ্বারাই শিশু, প্রতিবন্ধী নারী যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে, পর্ণগ্রাফির মাধ্যমে, ভয়ভীতি, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রনহীনভাবে নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরণের অমর্যাদাকর বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। এই সমস্ত কারনে নারী ও কন্যারা মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাল্য
বিবাহের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা শিশুদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকের ব্যবহার বেড়েছে। তাছাড়াও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। আদিবাসী নারী, প্রতিবন্ধী নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এ সময়কালে দেখা যাচ্ছে তরুণীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। করোনা সংকটকালীন সময়ে সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যাদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি ও বেসরকারি সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের কাছ থেকে সহায়তা প্রাপ্তির সুযোগও সীমিত হয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিকালে রাজধানীর কলাবাগানের স্কুলছাত্রীকে বন্ধু কর্তৃক বিকৃত যৌনাচারের মাধ্যমে ধর্ষণ ও হত্যা, উত্তরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে সহপাঠী কর্তৃক ধর্ষণ, গুলশানে তরুণী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অবৈধ সম্পদের মালিকানা, মাদকের ব্যবহার, সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তি এই সব ঘটনার পেছনে কাজ করছে। নারীর পোশাক, পেশা, স্বাধীন চলাচল, নারী সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য, সহিংসতার শিকার নারীকে ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়। চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, আইনের শাসনের অভাব, বিচারকার্যের দীর্ঘসূত্রিতা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুর্বলতা, নারীর মানবাধিকার রক্ষাকল্পে নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি, অনাচার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পরিস্থিতিকে এক ভয়াবহ সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

নারীর প্রতি বিরাজমান বৈষম্যের চরম বহি:প্রকাশ নারীর প্রতি সহিংসতা। পারিবারিক আইন যেমননারীর প্রতি অধ:স্তন দৃষ্টিভঙ্গী ও বৈষম্যের প্রতিফলন তেমনি তা নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মূল কারণ যা বিস্তৃত হয় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে। পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও মৌলবাদী ধ্যানধারণা প্রতিনিয়ত নারীর সমঅধিকারকে চ্যালেঞ্জ করে যা নারীর প্রতি সহিংসতাকে উস্কে দেয়। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের কথা বলা থাকলেও বিবাহ-বিচ্ছেদ, সম্পত্তির অধিকার, সন্তানের অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকার প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আইন বিদ্যমান। প্রচলিত বৈষম্যমূলক আইন সংস্কারের মাধ্যমে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন, মানবাধিকারের আলোকে শিক্ষা কার্যক্রম এবং নারী ও কন্যার প্রতি সকল ধরণের সহিংসতামুক্ত মানবিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষে সারাদেশে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ১৬দিন ব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালন উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকলক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের অন্যতম শর্ত।

ইতিপূর্বে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গৃহীত সকল কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে সমন্বিত বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বিনিয়োগ করতে হবে। তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করে ব্যাপকভাবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বৈষম্যমূলক আইন, নীতি, প্রথা বাতিল করে সকলক্ষেত্রে নারীবান্ধব ও জেন্ডার সংবেদনশীল বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধের লক্ষে সুপারিশসমূহঃ

১. পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন করে নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত ২. মানবাধিকার সম্পর্কে সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে। ৩. নারীর জন্য ক্ষতিকর প্রথা (বাল্যবিবাহ, যৌতুক, পারিবারিক সহিংসতা, বিচার বহির্ভূত সালিশী

সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে।

বহুবিবাহ) বন্ধ করতে হবে।

কার্যক্রম,

৪. আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন ও বিচারিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত সংবেদনশীল করে তুলতে হবে। সিডওসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিলসমূহ প্রশিক্ষণের অন্তর্ভূক্ত করতে

সকলকে নারীবান্ধব ও জেন্ডার

হবে। ৫. পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০ এর প্রচার ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ৬. ধর্ষণের ঘটনার বিচার সংক্রান্ত আইনের সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।

৭. অপরাধীকে কোনরকম রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক আশ্রয়-প্রশ্রয় প্রদান বন্ধ করতে হবে।

৮. সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সমাবেশের নামে নারীর প্রতি নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা (অনলাইন, অফলাইন) কঠোরভাবে দমন করতে হবে। ৯. গণমাধ্যমে নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য, ছবি প্রকাশ ও প্রচারনা বন্ধ করতে

হবে।

১০. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নরোধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে আইন প্রণয়ন করতে হবে।

১১. নির্যাতনের শিকার নারীকে দোষারোপ করা বন্ধ করতে হবে।

১২. তরুণ সমাজকে পরিকল্পিতভাবে মানবাধিকারে উদ্বুদ্ধ করে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ১৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

১৪. সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ধারা ১৫৫ (৪) বাতিল করতে হবে।

১৫. জাতিসংঘের সিডও সনদের অনুচ্ছেদ-২ ও ১৬(১)(গ) এর উপর হতে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে পূর্ণাঙ্গ

বাস্তবায়ন করতে হবে। ১৬.বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সকল নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করতে হবে (বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, দত্তক, সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়সমূহ)।

নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলার আহবান করেন।।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল।

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর-১০ ডিসেম্বর) ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস, ২০২১

আপডেট টাইম ০৭:৩৬:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১

এম.আর.ইসলাম রফিক:-
আজ – জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তন, জাতীয় প্রেসক্লাব, ২৫ নভেম্বর ২০২১ ৷৷ সকাল ১১.০০ টা ঢাকা।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সংবাদ সম্মেলন

আপনারা জানেন, ২৫ নভেম্বর- ১০ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘের উদ্যোগে সারাবিশ্বে ১৬দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালিত হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী নারী আন্দোলন ও মানবাধিকার আন্দোলন এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রচার-প্রচারণামূলক নানান কর্মসূচি পালিত হয়। বিগত বছরগুলোর মত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদও আজ ২৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি সমাপ্ত হবে।

জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২১ এর আহ্বান “Orange the World: END VIOLENCE AGAINST WOMEN NOW!” এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২০২১ এ “নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ কর, সমঅধিকার নিশ্চিত কর” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল জেলা ও তৃণমূল শাখায় আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ(২৫ নভেম্বর -১০ ডিসেম্বর ) ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে ১৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বছর ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে। সমতাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্খায় এদেশ স্বাধীন হয়েছিল। বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের যে লক্ষনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, সেখানে নারীর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কিন্তু নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এখনো সম্ভব হয়নি। বাস্তবতা এই যে, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংতার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক যা মানবাধিকার ও উন্নয়নের পরিপন্থী। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নারী আন্দোলন, মানবাধিকার আন্দোলন এবং সরকারি-বেসরকারি নানাবিধ উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা ও ভয়বহতা ক্রমাগত উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত এই সংকটকে গভীরতর করে তুলেছে।

কোভিডকালীন সময়ে পারিবারিক সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। লকডাউনকালীন সময়ে অধিকসংখ্যক পুরুষ সদস্য ঘরে অবস্থান করছে। নারীর গৃহস্থালীর কাজ, সেবামূলক কাজ ও সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের চাপ অনেকগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীদের মানসিক চাপও বৃদ্ধি পেয়েছে। উপার্জনহারা পুরুষ সদস্য সংসার ব্যবস্থাপনায় স্ত্রীর সামান্য ত্রুটির অজুহাতে অনেক ক্ষেত্রেই ছোটখাটো পারিবারিক কলহ, নির্যাতন, বিবাহ বিচ্ছেদ এবং হত্যার মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। গৃহবন্দী থাকার কারণে অনেকক্ষেত্রেই স্বজনদের দ্বারাই শিশু, প্রতিবন্ধী নারী যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে, পর্ণগ্রাফির মাধ্যমে, ভয়ভীতি, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রনহীনভাবে নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরণের অমর্যাদাকর বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। এই সমস্ত কারনে নারী ও কন্যারা মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাল্য
বিবাহের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা শিশুদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকের ব্যবহার বেড়েছে। তাছাড়াও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। আদিবাসী নারী, প্রতিবন্ধী নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এ সময়কালে দেখা যাচ্ছে তরুণীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। করোনা সংকটকালীন সময়ে সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যাদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি ও বেসরকারি সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের কাছ থেকে সহায়তা প্রাপ্তির সুযোগও সীমিত হয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিকালে রাজধানীর কলাবাগানের স্কুলছাত্রীকে বন্ধু কর্তৃক বিকৃত যৌনাচারের মাধ্যমে ধর্ষণ ও হত্যা, উত্তরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে সহপাঠী কর্তৃক ধর্ষণ, গুলশানে তরুণী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অবৈধ সম্পদের মালিকানা, মাদকের ব্যবহার, সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তি এই সব ঘটনার পেছনে কাজ করছে। নারীর পোশাক, পেশা, স্বাধীন চলাচল, নারী সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য, সহিংসতার শিকার নারীকে ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়। চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, আইনের শাসনের অভাব, বিচারকার্যের দীর্ঘসূত্রিতা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুর্বলতা, নারীর মানবাধিকার রক্ষাকল্পে নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি, অনাচার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পরিস্থিতিকে এক ভয়াবহ সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

নারীর প্রতি বিরাজমান বৈষম্যের চরম বহি:প্রকাশ নারীর প্রতি সহিংসতা। পারিবারিক আইন যেমননারীর প্রতি অধ:স্তন দৃষ্টিভঙ্গী ও বৈষম্যের প্রতিফলন তেমনি তা নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মূল কারণ যা বিস্তৃত হয় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে। পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও মৌলবাদী ধ্যানধারণা প্রতিনিয়ত নারীর সমঅধিকারকে চ্যালেঞ্জ করে যা নারীর প্রতি সহিংসতাকে উস্কে দেয়। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের কথা বলা থাকলেও বিবাহ-বিচ্ছেদ, সম্পত্তির অধিকার, সন্তানের অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকার প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আইন বিদ্যমান। প্রচলিত বৈষম্যমূলক আইন সংস্কারের মাধ্যমে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন, মানবাধিকারের আলোকে শিক্ষা কার্যক্রম এবং নারী ও কন্যার প্রতি সকল ধরণের সহিংসতামুক্ত মানবিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষে সারাদেশে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ১৬দিন ব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালন উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকলক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের অন্যতম শর্ত।

ইতিপূর্বে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গৃহীত সকল কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে সমন্বিত বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বিনিয়োগ করতে হবে। তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করে ব্যাপকভাবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বৈষম্যমূলক আইন, নীতি, প্রথা বাতিল করে সকলক্ষেত্রে নারীবান্ধব ও জেন্ডার সংবেদনশীল বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধের লক্ষে সুপারিশসমূহঃ

১. পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন করে নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত ২. মানবাধিকার সম্পর্কে সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে। ৩. নারীর জন্য ক্ষতিকর প্রথা (বাল্যবিবাহ, যৌতুক, পারিবারিক সহিংসতা, বিচার বহির্ভূত সালিশী

সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে।

বহুবিবাহ) বন্ধ করতে হবে।

কার্যক্রম,

৪. আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন ও বিচারিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত সংবেদনশীল করে তুলতে হবে। সিডওসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিলসমূহ প্রশিক্ষণের অন্তর্ভূক্ত করতে

সকলকে নারীবান্ধব ও জেন্ডার

হবে। ৫. পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০ এর প্রচার ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ৬. ধর্ষণের ঘটনার বিচার সংক্রান্ত আইনের সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।

৭. অপরাধীকে কোনরকম রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক আশ্রয়-প্রশ্রয় প্রদান বন্ধ করতে হবে।

৮. সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সমাবেশের নামে নারীর প্রতি নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা (অনলাইন, অফলাইন) কঠোরভাবে দমন করতে হবে। ৯. গণমাধ্যমে নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য, ছবি প্রকাশ ও প্রচারনা বন্ধ করতে

হবে।

১০. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নরোধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে আইন প্রণয়ন করতে হবে।

১১. নির্যাতনের শিকার নারীকে দোষারোপ করা বন্ধ করতে হবে।

১২. তরুণ সমাজকে পরিকল্পিতভাবে মানবাধিকারে উদ্বুদ্ধ করে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ১৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

১৪. সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ধারা ১৫৫ (৪) বাতিল করতে হবে।

১৫. জাতিসংঘের সিডও সনদের অনুচ্ছেদ-২ ও ১৬(১)(গ) এর উপর হতে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে পূর্ণাঙ্গ

বাস্তবায়ন করতে হবে। ১৬.বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সকল নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করতে হবে (বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, দত্তক, সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়সমূহ)।

নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলার আহবান করেন।।