ছোটবেলায় সবারই স্বপ্ন থাকে, বড় হয়ে আমি এই ‘হব’। তবে বয়সের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নের পরিবর্তনও ঘটে। সফলতা তাদের বেলাতেই ঘটে যারা নিজের স্বপ্নতে দীর্ঘদিন লালনপালন করতে পারেন। আর তারা নিজেরাই নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিভিন্ন পথ বের করেন।
সাকিব আল হাসান তেমনই একজন। খেলোয়াড় হওয়ার ইচ্ছেতেই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভার্তি হওয়া। যদিও সাকিব আল হাসানের বাবা চেয়েছিলেন তার ছেলে তার মতোই ফুটবলার হয়ে গড়ে উঠুক। কিন্তু বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে পরিচয় হলে, মাশরাফির পরামর্শে ফুটবলের পরিবর্তে হয়ে যান ক্রিকেটার।
২০০৬ সালের ৬ আগস্ট। স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের এক সম্ভাবনাময় তরুণ ক্রিকেটারের। তার দারুণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সেদিন জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই তরুণটি আর কেউ নন, সাকিব আল হাসান। ঠিক ১২ বছর পর ৬ আগস্ট সেই সাকিবের নেতৃত্বেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
সোমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক যুগ পূর্ণ করলেন সাকিব। এখন তিনি বাংলাদেশের অধিনায়ক। ১২ বছরের বর্ণময় ক্যারিয়ারে অনেক রেকর্ড, অনেক কীর্তি গড়েছেন। এক যুগ পূর্তির দিনটা সিরিজসেরা হয়ে রাঙিয়ে রাখলেন।
সাকিবের টেস্ট অভিষেক ১৯ মে ২০০৭, চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে। টি-টোয়েন্টি অভিষেকও একই বছর, ২৮ নভেম্বর খুলনায় প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৩৯ রানে নেন এক উইকেট। পরে ব্যাট হাতে দুই চারে ৪৯ বলে অপরাজিত ৩০ রান করেন। বাংলাদেশ জেতে আট উইকেটে। যুগপূর্তির দিনে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই চারে ২২ বলে ২৪ রান করেছেন। বল হাতে ২২ রানে নেন এক উইকেট।
সাকিবের ১২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, ‘শুর থেকেই সাকিব নিজেকে যেভাবে উন্নতির ধারায় এগিয়ে নিয়ে গেছে সেটা অসাধারণ। বাংলাদেশের অনেক সাফল্যের কারিগর সে। আশা করি তার ক্যারিয়ার আরও লম্বা হবে।’
এক যুগের পথ চলায় ৫৩ টেস্ট, ১৮৮ ওয়ানডে এবং ৬৯ টি ২০ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের ম্যাচ সংখ্যা ৩১০টি। সব ফরম্যাট মিলিয়ে মোট রান ১০,৪৯৩। টেস্টে ৩৬৯২, ওয়ানডেতে ৫৪৩৩, টি ২০তে ১৩৬৮ রান করেছেন। বোলিংয়ে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৫১৩ উইকেট পেয়েছেন। টেস্টে ১৯৬, ওয়ানডেতে ২৩৭ এবং টি ২০তে পেয়েছেন ৮০ উইকেট।
প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে ৪,০০০ রান করার গৌরব আছে সাকিবের। শুধু তাই নয়, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ রান আছে তার নামের পাশে। দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০০০ রান ও ৫০ উইকেট লাভ করেন।
টেস্ট ইনিংসে ১৮ বার পাঁচ উইকেট ও ম্যাচে দু’বার ১০ উইকেট নিয়েছেন। ওয়ানডেতে নিয়েছেন ২৩৭ উইকেট। সেরা ৪৭ রানে পাঁচ উইকেট। আর টি ২০তে ৮০ উইকেট, সেরা ১৫ রানে চারটি। সাকিবের বয়স এখন ৩১।
সোমাবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যেন টেস্টে ভালো খেলতে পারি সেই চেষ্টাই করতে হবে। দেশের মাটিতে আমরা টেস্ট জিতে দেখিয়েছি। এবার সময় বিদেশের মাটিতে ভালো করার।’
এক যুগের ক্যারিয়ারে দীর্ঘদিন তিন ফরম্যাটে অলরাউন্ডারদের র্যাংকিংয়ে শীর্ষে থেকে রেকর্ড গড়েছেন। এখনও তিনি টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডার।