ঢাকা ০১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ “২৬শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ” –মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে ৫৩ কেজি গাঁজাসহ ০৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; মাদক বহনে ব্যবহৃত পিকআপ জব্দ। “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ

আজ বিভীষিকাময় গণহত্যা দিবস।

ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহিদ মুরাদ:

বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা, মনীষী কিংবা সাধারণের জন্ম মৃত্যুর মাধ্যমে ধীরে ধীরে তৈরি হয় ইতিহাস, উন্মোচিত হয় জগতের নতুন নতুন দিগন্ত। নানা প্রয়োজনে মানুষ জানতে চায় সেসব ইতিহাস। তেমনই এক ইতিহাস বাংলাদেশের গণহত্যা। আজ ভয়াল ২৫ মার্চ , গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে এক বিভীষিকাময় রাত।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের কাল রাত হতে ১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যায় এক যুগান্তকারী গণহত্যার অধ্যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে আজ পর্যন্ত যে সকল বিভীষিকাময় গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশের গণহত্যা সকল ইতিহাসকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। মঙ্গোল নেতা হালাকু খান, চেঙ্গিস খান, নাদির শাহ ও জার্মানির কুখ্যাত সর্বাধিনায়ক হিটলার গণহত্যার কৃতিত্বের দাবিদার কিন্তু সমস্ত গণহত্যার বিভীষিকাময় কাহিনীও হার মানিয়েছে নর পিশাচ জঙ্গি শাহীর অধিনায়ক ইয়াহিয়া খানের সুপরিকল্পিত বাঙালি গণহত্যা। তাদের সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ সবই ১৯৪৮ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ শীর্ষক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে বর্ণিত সংজ্ঞায় গণহত্যার চূড়ান্ত উদাহরণ।

১৯৭০ সালে সাবেক পাকিস্তানে দেশব্যাপী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। সংসদীয় আইন অনুযায়ী দেশের শাসন ক্ষমতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে আসার কথা ছিল কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর কারসাজিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে অস্বীকার করে। সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বরং বাঙালি জাতিকে চিরতরে ধ্বংস করার জন্য সশস্ত্র পশ্চিমা সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে আজকের এই দিনে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের উপর গণহত্যা শুরু করে। সংগঠিত হয় ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে তারই নাম ‘অপারেশন সার্চলাইট’।

তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মী সহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।

এই অভিযানের নির্দেশননামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোন লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘ A stranger in my own country’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়। অপারেশন সার্চলাইট কিভাবে পরিকল্পিত হয় ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন,
১৭ মার্চ সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে এবং মেজর জেনারেল ফরমান কে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি সেখানে জেনারেল আব্দুল হামিদ ও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এছাড়া আর কোন মৌলিক ও লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয় পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনার চূড়ান্ত করি। পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন “অপারেশন সার্চলাইট”।

আজ সেই ঐতিহাসিক গণহত্যা দিবস। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন’সেই রাতে ৭০০০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় গ্রেফতার করা হয় আরো ৩০০০ লোক । ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘরবাড়ি দোকানপাট, লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক শিয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি’।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের মধ্যরাতে ঘুমন্ত ঢাকা নগরীর নিরীহ মানুষের উপর পশ্চিমা হানাদার নরপশুর দল ঝাঁপিয়ে পড়ে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস
গুলোতে, রাজার বাগ পুলিশ লাইনে, পিলখানায় ইপি আর ঘাঁটিতে গোলাগুলি চালিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেইসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।

বন্দী হওয়ারআগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং শেষ শত্রু বিদায় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণায় সাড়া দিয়ে বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের ।

আজকের এই গণহত্যা দিবস টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আজ রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত প্রতিকী ব্ল্যাকআউট পালন করা হবে। তবে কে পি আই এবং জরুরী স্থাপনা সমূহ এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। কর্মসূচির মধ্যে আরো রয়েছে আলোচনা সভা ও গণহত্যার উপর দুর্লভ আলোকচিত্র/প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত এবং প্রার্থনা।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

আজ বিভীষিকাময় গণহত্যা দিবস।

আপডেট টাইম ০২:১৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহিদ মুরাদ:

বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা, মনীষী কিংবা সাধারণের জন্ম মৃত্যুর মাধ্যমে ধীরে ধীরে তৈরি হয় ইতিহাস, উন্মোচিত হয় জগতের নতুন নতুন দিগন্ত। নানা প্রয়োজনে মানুষ জানতে চায় সেসব ইতিহাস। তেমনই এক ইতিহাস বাংলাদেশের গণহত্যা। আজ ভয়াল ২৫ মার্চ , গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে এক বিভীষিকাময় রাত।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের কাল রাত হতে ১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যায় এক যুগান্তকারী গণহত্যার অধ্যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে আজ পর্যন্ত যে সকল বিভীষিকাময় গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশের গণহত্যা সকল ইতিহাসকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। মঙ্গোল নেতা হালাকু খান, চেঙ্গিস খান, নাদির শাহ ও জার্মানির কুখ্যাত সর্বাধিনায়ক হিটলার গণহত্যার কৃতিত্বের দাবিদার কিন্তু সমস্ত গণহত্যার বিভীষিকাময় কাহিনীও হার মানিয়েছে নর পিশাচ জঙ্গি শাহীর অধিনায়ক ইয়াহিয়া খানের সুপরিকল্পিত বাঙালি গণহত্যা। তাদের সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ সবই ১৯৪৮ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ শীর্ষক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে বর্ণিত সংজ্ঞায় গণহত্যার চূড়ান্ত উদাহরণ।

১৯৭০ সালে সাবেক পাকিস্তানে দেশব্যাপী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। সংসদীয় আইন অনুযায়ী দেশের শাসন ক্ষমতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে আসার কথা ছিল কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর কারসাজিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে অস্বীকার করে। সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বরং বাঙালি জাতিকে চিরতরে ধ্বংস করার জন্য সশস্ত্র পশ্চিমা সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে আজকের এই দিনে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের উপর গণহত্যা শুরু করে। সংগঠিত হয় ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে তারই নাম ‘অপারেশন সার্চলাইট’।

তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মী সহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।

এই অভিযানের নির্দেশননামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোন লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘ A stranger in my own country’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়। অপারেশন সার্চলাইট কিভাবে পরিকল্পিত হয় ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন,
১৭ মার্চ সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে এবং মেজর জেনারেল ফরমান কে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি সেখানে জেনারেল আব্দুল হামিদ ও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এছাড়া আর কোন মৌলিক ও লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয় পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনার চূড়ান্ত করি। পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন “অপারেশন সার্চলাইট”।

আজ সেই ঐতিহাসিক গণহত্যা দিবস। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন’সেই রাতে ৭০০০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় গ্রেফতার করা হয় আরো ৩০০০ লোক । ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘরবাড়ি দোকানপাট, লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক শিয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি’।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের মধ্যরাতে ঘুমন্ত ঢাকা নগরীর নিরীহ মানুষের উপর পশ্চিমা হানাদার নরপশুর দল ঝাঁপিয়ে পড়ে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস
গুলোতে, রাজার বাগ পুলিশ লাইনে, পিলখানায় ইপি আর ঘাঁটিতে গোলাগুলি চালিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেইসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।

বন্দী হওয়ারআগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং শেষ শত্রু বিদায় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণায় সাড়া দিয়ে বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের ।

আজকের এই গণহত্যা দিবস টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আজ রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত প্রতিকী ব্ল্যাকআউট পালন করা হবে। তবে কে পি আই এবং জরুরী স্থাপনা সমূহ এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। কর্মসূচির মধ্যে আরো রয়েছে আলোচনা সভা ও গণহত্যার উপর দুর্লভ আলোকচিত্র/প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত এবং প্রার্থনা।