স্টাফ রিপোর্টার
ফুপু কোনোদিন তোমার পোলা-মাইয়া আইসা যদি আমারে বাড়ির থেইকা খেদায়া দেয়।
-কেমনে দিবো, আমিতো তোরে আমার অংশটা সাফ কবলা করে দিলাম।
-ক্যান দিছো? ওরা খেদায়া দিবো ওই ডরে?
-ডরে নারে ঝুমা। তোরেতো চাইছিলাম অন্তত ডিগ্রি পাসটা করাতে, তুইতো ক্লাস এইটে এসে আর লেখাপড়াটা করলি না!
-লেখাপড়া কইরা কী লাভ?
-লাভ মানে? আমি মরার পরে তোর বাপ-মায়েরে মুখ দেখামু কেম্নে? তোর মা মেরিনা আমার সখি ছিলো, তোর বাপ আব্বাস মিয়া ছিলো আমার বড় মামুর পোলা। ওদের বিয়ের বিষয়ে আমার একটা বড় ভূমিকাও ছিলো। বিয়ের পাঁচবছর না যেতেই চাঁদপুরের ষাটনলে লঞ্চডুবিতে দুইজনেই মরে গেলো! তুই তিন বছরের, সেদিন তোর দাদীর কাছে ছিলি তাই বেঁচে গেলি। একদিন তোর দাদী, মানে আমার মামীমা খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে হসপিটালে নেয়ার আগে তোকে আমার কাছে রেখে গেলো। কিন্তু মামীমা আর জিন্দা ফিরলো না। তারপর থেকে তুইও আমার আরেকটা মেয়ে হয়ে গেলি। কিন্তু লেখাপড়া করে আর মানুষ হইলি না।
-আবারো লেখাপড়ার খোটা দিতাছো? আচ্ছা কওতো ফুপু তোমার কী মনে হয় না, তোমার দুইটা পোলা আর একটা মাইয়ারে তুমি লেখাপড়াটা দরকারের চাইতে এট্টু বেশিই করাইছো?
-কেনো ওরাতো সবাই মানুষ হইছে, অনেক বড় হইছে, আমিতো এটাই চাইছিলাম।
-মিছা কথা, তুমি এইটা চাও নাই ফুপু, ওরা মানুষ হইতে গিয়া বিদেশে পড়ে থাকবে এইটা কোনো দিন চাও নাই, চাইলে রাইতে জাইগা কান্তানা। আমেরিকা আর অস্ট্রেলিয়ায় মাস্টারি আর ডাক্তারি করার কারণে তোমার দুই পোলা আমান ভাই আর জামান ভাই গত সাত বছরেও একবারও দেশে আসে নাই! তোমার মাইয়া হৃদিতা আপুতো সিলেটের পাহাড়ে চা বাগানেই পইড়া রইছে। গত তিন বছরে সেও আসে নাই! এখানে আসলে নাকি তার শখের ফুল বাগানের সমস্যা হইবো। আচ্ছা মায়েরে দেখার চেয়ে ফুল বাগানটা বড় হইলো?
-আচ্ছা তুই এবার থামবি ঝুমা।
ঝুমাকে থামিয়ে দিয়ে কবিতা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, তারপর জানালার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে সত্যিই কী সন্তানদের শিক্ষিতটা একটু বেশিই করিয়েছিলো! ভাবতে-ভাবতে নিজের অজান্তেই চোখের পানিটা তার গাল গড়িয়ে বুকের কাপড়ে এসেনাও চোখ মুছো, আর কান্দন লাগবো না।
😍😍 তানভীর আলাদিনের প্রকাশিতব্য উপন্যাস
❤️ “মাথিয়ারার মেয়ে” ❤️