ঢাকা ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল। গজারিয়া বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে সিকদার পরিবারে আমিরুল ইসলাম এর সর্মথনে আলোচনা সভা ও ইফতার দোয়া মাহফিল চসিকের ৬ ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৮ তম সাধারণ সভায় মশা কমাতে কার্যক্রম বাড়াবে : মেয়র রেজাউল “বিড়ি শিল্পে ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে রংপুর শ্রমিকদের মানববন্ধন” ইন্দুরকানী প্রেসক্লাবে ইফতার মাহফিল বরিশাল চকবাজার এবায়দুল্লাহ মসজিদে অগ্নিকান্ড। টাঙ্গাইলে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার পাঠক ফোরাম গঠিত চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার চট্টগ্রামে জালনোটসহ প্রতারকচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ রমজান মাসের পবিত্রতা লঙ্ঘন করছে নারায়ণগঞ্জ চিশতিয়া বাউল সমিত

আকাশের ভ্রমণ।

আকাশের ভ্রমণ।
শাহানাজ পারভীন শিউলী

একে একে ফোন করতে লাগলো আকাশ। চাঁদ, তারা,উল্কা,নিহারীকা,পালসার,সপ্তর্ষি,ছায়াপথ সবার কাছে।।চাঁদকে বলল,আগামীকাল আমরা সবাই তোমার বাড়িতে আসছি।তোমার বাড়িতে একটা মিটিং কi

রতে চাই।তুমি প্রস্তুত থেকো। পরের দিন আকাশ সবাইকে নিয়ে হাজির হলো চাঁদের বাড়ি।আকাশ বলল,তোমরা তো জানো,আমার বন্ধু বসুমাতার কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি প্রায় শত বছর হয়ে গেলো।জানিনা,সে কেমন আছে। কিভাবে তার দিন যাচ্ছে। বেশ কয়েক মাস ধরে আমার মনটা কেমন ছটফট করছে ওকে দেখার জন্য।
কেমন আছে আমার বসুমাতার সবুজ অরণ্য,নদী,সাগরের শীতল পানি,পাখির কলতান,ফলের সমারোহ, মমতামাখা মৃত্তিকা,মানুষের ভালবাসা, কিছুই তো জানিনা। আমাদের কি উচিত নয়? একবার ওকে খোঁজ নেওয়া?যা হোক আমি তোমাদের সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চায়। তোমাদের কি কোনো আপত্তি আছে? কেউ কোনো আপত্তি জানালো না।আকাশ বলল, আমরা কেউ এখন বসুমাতাকে জানাবো না।একবারে যেয়ে ওকে সারপ্রাইজ দেবো। সবাই বলল,ঠিক আছে।।সেইদিন রাতে আকাশের ভালো ঘুম হলো না। তড়িঘড়ি উঠে পড়লো।সবাই যথাসময়ে হাজির হলো আকাশের বাড়িতে। আনন্দ উল্লাস করে একসাথে খাবার খেয়ে নিলো। তারপর মেঘের ভেলায় চড়ে বেরিয়ে পড়লো বসুমাতাকে দেখার উদ্দেশ্যে। খুশীতে গান ধরলো সবাই ” আজ নির্ঘুম চোখে জেগে ছিলাম তোমাকে দেখবো বলে”।
হৈচৈ করতে করতে তারা বসুমাতার বাড়িতে পোঁছালো।
বসুমাতার দ্বারে কড়া নাড়ালো আকাশ।বসুমাতা রুগ্ন কন্ঠে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “কে? আকাশ বলল,আমরা।দরজা খোলো। বসুমাতা দরজা খুলে সবাইকে একসাথে দেখে অবাক হলো।সে বলল,তোমরা! এত বছর পর? কি দেখতে এসেছো? আমার দুর্ভাগ্য?আমার ভগ্ন শরীর? এখন আর কি হবে দেখে? ওরা সবাই অবাক হলো বসুমাতাকে দেখে।এ কি অবস্থা! আকাশ বলল,চিন্তা করোনা বন্ধু। আমরা তোমাকে সুস্থ্য করে তুলবো। বসুমাতা বলল,কিভাবে সুস্থ্য করবে আমাকে? সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।আকাশ বলল,তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা।যা করার আমরা করবো। আমরা সাতদিন তোমার এখানে থাকবো।
তারপর পাহাড়-পর্বত,অরন্য সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখবো। আকাশ বলল,আজ রাতে আমরা তোমার কথাই শুধু শুনবো। শত বছরের না বলার কথা। বসুমাতা বলল,সে কথা শুনতে গেলে শত রজনী লাগবে বন্ধু। আমার দূ্র্ভাগ্যের কথা তোমরা সইতে পারবে তো? বসুমতী শুরু করলো তার জীবনের উপর বয়ে যাওয়া নিপিড়ন,অত্যাচার, যুদ্ধ-বিঘ্রহের কথা। বলতে বলতে কখন যে রাতের প্রান্তে ভোরের তারা নিভে গেলো কেউ তা টের পাইনি।
তারপর খাওয়া-দাওয়া সেরে খানিক পরে বেরিয়ে পড়লো নদীতে মাছ ধরার জন্য।নদীতে পৌঁছে তারা বিস্মিত হয়ে গেলো।নদীর মাঝখানে দেখলো ফসলের চাষ। নদীতে কোনো পানি নেই।কোনো কোনো জায়গায় উচু করে বাঁধা। আকাশ বলল,এভাবে কারা নদীকে পুকুর বানালো? বসুমাতা বলল,আমার সম্পদ এখানকার মানুষের দখলে।। ওরা চমকে গেলো।অবাক হয়ে বলল, তা কি করে সম্ভব? এটা তো বসুমাতার সম্পদ।এখানে কারোর হস্তক্ষেপ চলবে না।সে বন্ধুদের বলল,ভেঙে দাও সব বাঁধ।নদী চলবে তার আপন গতিতে।এখানে কোনো বাঁধ চলবে না।তারা বাঁধ ভেঙে দিলো। নদীর করুন অবস্থা দেখে আহত মনে ফিরে এলো সবাই। পরের দিন তারা আবার সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য রওনা হলো। সমুদ্রের পাড়ে মানুষের ভীড় দেখতে পেলো।লোক সরিয়ে দেখলো সমুদ্রের কিছু প্রাণী মরে পড়ে আছে।খানিকটা যেয়ে পালসার বলল,এই দেখো, কি যেন একটা ভেসে আসছে। ওরা খুব খুশী। ভেবেছিল সামুদ্রিক কোনো বড় মাছ হবে হয়তো। কাছে আসতেই দেখলো প্লাস্টিকের বস্তা। সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো।
পরের দিন সকালে আকাশ তড়িঘড়ি উঠে সবাইকে নিয়ে একসাথে রেবিয়ে পড়লো বসুমাতার ম্যানগ্রোভ দেখার জন্য।সেখানে যেয়ে তারা ভীষণ মর্মাহত হলো। ঘন সবুজ অরণ্য আর নেই। কিছু পাখি তাদের অসহায় দৃষ্টি নিয়ে ওদের দেখছে।দুরে একজোড়া শিয়াল ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে হন্য হয়ে খাবার খুঁজছে।আকাশ বলল,এটা কি করে সম্ভব!বসুমাতার বনভূমি তো অর্ধকের বেশী উজাড় হয়ে গেছে।হায় হায়,কিভাবে বসুমাতাকে আমরা বাঁচাবো?একবুক কষ্ট নিয়ে ফিরে এলো ওরা।রাতে খাবার সেরে সবাই একজায়গায় বসলো।বসুমাতার করুন পরিণতির
কথা সবাই ভাবতে লাগলো।অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি,ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস মহামারি এই সবই একমাত্র বৃক্ষনিধনের কারণে হচ্ছে। জানিনা, বসুমাতার জন্য আরো কত ভয়ঙ্কর দিন অপেক্ষা করছে।বিশ্বপরিবেশ আজ বিপযর্স্ত ও হুমকির সম্মুখীন। ।না না এভাবে চলতে পারেনা।আমাদের চোখের সামনে আমাদের প্রানপ্রিয় বন্ধুকে মরে যেতে দিতে পারিনা।উল্কা,সপ্তর্ষি,নিহারিকা বলল, তাহলে আমরা কী করতে পারি?আকাশ বলল,আমরা তো শেষচেষ্টা করতে পারি। আমরা আরো কিছুদিন বসুমাতার কাছে থাকবো এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করবো।যে ভাবেই হোক বৃক্ষ-অরণ্য বাচাঁতেই হবে।বৃক্ষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে।দেশ বাঁচলে বসুমাতা বাঁচবে।শুধু হাউমাউ, কান্নাকাটি করলে তো দেশ আর সবুজ হয়ে যাবেনা। একে সফল করতে হলে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসুচি হাতে নিতে হবে।বসুমাতার সারাবিশ্বে ৭৭০কোটি সম্তান।যদি প্রত্যেকে একটি করে গাছ লাগাই তাহলে তো বসুমাতা বেঁচে যাবে।
আকাশ বলল,যাক আর কথা নয়, এখন শুধু কাজ আর কাজ। এই বলে সে সবার কাজ ভাগ করে দিলো।
*পালসারকে বলল, তুমি টেলিভিশন, মিনিপর্দায়, বৃক্ষের প্রয়োজনীতা সম্পর্কে উপস্হাপন করবে সন্ধ্যায় সাতটায়।এই খবরটা সারাবিশ্বের মোবাইলে ম্যাচেজ পাঠাবে।
*উল্কা, তুমি এলাকায় এলাকায় মাইকে প্রচার করবে।
* ছায়াপথ, তুমি পোস্টার বিলি করবে।
* সপ্তর্ষি, তুমি সভাসমিতি- সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করবে।
* চাঁদ, স্কুল- কলেজের পাঠ্যপুস্তকে অধিকহারে প্রবন্ধ রচনা করবে।
* তারা,পতিত জমির হিসাব দেবে এবং বিনামুল্যে গাছের চারা বিতরণ করবে।
* নক্ষত্র, তুমি ছাত্রসমাজ,জনগণকে দেশপ্রেমিক করে গড়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। মনে রেখো,দেশের প্রতি ভালবাসা না থাকলে কখনও কিছু করা সম্ভব নয়।কারোর জন্য কিছু করতে গেলে ভালবাসা ব্যতিত হতে পারেনা।
* সবশেষে সুর্যকে বলল,তোমার এক কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেবো।সেটা হলো,বেজন্মা মুখোশধারী দেশপ্রেমিকদের খুঁজে তালিকা করবে।যারা দেশমাতৃকার জন্য কোনো উপকার না করে শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের জন্য দেশের সম্পদ ধ্বংস করে,বিদেশে অর্থ পাচার করে তাদের ধরে আনবে।তাদের অর্থ-সম্পদ সমস্ত হস্তগত করবে।এবং তা দিয়ে সারা বিশ্বে সবুজ অরণ্য তৈরী করবে।অক্সিজেন দেবেনা ঐ সব বেজন্মাদের। তোমার তাপে পুড়িয়ে কয়লা করবে যাতে সেই কয়লা দিয়ে আরো ধীরে ধীরে ওদের বেশী করে জ্বালানো যায়।
একটু একটু করে ওদের কর্মসুচী এগুতে থাকলো।একটা নতুন স্বপ্ন,একটা নতুন আশা যেন বসুমাতার প্রাণ সঞ্জীবিত করলো। বসুমাতা আবার ফিরে পাবে তার ভরা যৌবন,অফুরন্ত সৈন্দার্য, মধুর নিকুঞ্জ।সবার চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আকাশ।তাদের কাজ শেষ করে সবাই আবার খুশীর গান গাইতে গাইতে মেঘের ভেলায় ভেসে গেলো।

পরিচিতি
শাহানাজ পারভীন শিউলী
আড়পাড়া, কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল।

আকাশের ভ্রমণ।

আপডেট টাইম ০৬:৩১:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জুন ২০২২

আকাশের ভ্রমণ।
শাহানাজ পারভীন শিউলী

একে একে ফোন করতে লাগলো আকাশ। চাঁদ, তারা,উল্কা,নিহারীকা,পালসার,সপ্তর্ষি,ছায়াপথ সবার কাছে।।চাঁদকে বলল,আগামীকাল আমরা সবাই তোমার বাড়িতে আসছি।তোমার বাড়িতে একটা মিটিং কi

রতে চাই।তুমি প্রস্তুত থেকো। পরের দিন আকাশ সবাইকে নিয়ে হাজির হলো চাঁদের বাড়ি।আকাশ বলল,তোমরা তো জানো,আমার বন্ধু বসুমাতার কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি প্রায় শত বছর হয়ে গেলো।জানিনা,সে কেমন আছে। কিভাবে তার দিন যাচ্ছে। বেশ কয়েক মাস ধরে আমার মনটা কেমন ছটফট করছে ওকে দেখার জন্য।
কেমন আছে আমার বসুমাতার সবুজ অরণ্য,নদী,সাগরের শীতল পানি,পাখির কলতান,ফলের সমারোহ, মমতামাখা মৃত্তিকা,মানুষের ভালবাসা, কিছুই তো জানিনা। আমাদের কি উচিত নয়? একবার ওকে খোঁজ নেওয়া?যা হোক আমি তোমাদের সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চায়। তোমাদের কি কোনো আপত্তি আছে? কেউ কোনো আপত্তি জানালো না।আকাশ বলল, আমরা কেউ এখন বসুমাতাকে জানাবো না।একবারে যেয়ে ওকে সারপ্রাইজ দেবো। সবাই বলল,ঠিক আছে।।সেইদিন রাতে আকাশের ভালো ঘুম হলো না। তড়িঘড়ি উঠে পড়লো।সবাই যথাসময়ে হাজির হলো আকাশের বাড়িতে। আনন্দ উল্লাস করে একসাথে খাবার খেয়ে নিলো। তারপর মেঘের ভেলায় চড়ে বেরিয়ে পড়লো বসুমাতাকে দেখার উদ্দেশ্যে। খুশীতে গান ধরলো সবাই ” আজ নির্ঘুম চোখে জেগে ছিলাম তোমাকে দেখবো বলে”।
হৈচৈ করতে করতে তারা বসুমাতার বাড়িতে পোঁছালো।
বসুমাতার দ্বারে কড়া নাড়ালো আকাশ।বসুমাতা রুগ্ন কন্ঠে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “কে? আকাশ বলল,আমরা।দরজা খোলো। বসুমাতা দরজা খুলে সবাইকে একসাথে দেখে অবাক হলো।সে বলল,তোমরা! এত বছর পর? কি দেখতে এসেছো? আমার দুর্ভাগ্য?আমার ভগ্ন শরীর? এখন আর কি হবে দেখে? ওরা সবাই অবাক হলো বসুমাতাকে দেখে।এ কি অবস্থা! আকাশ বলল,চিন্তা করোনা বন্ধু। আমরা তোমাকে সুস্থ্য করে তুলবো। বসুমাতা বলল,কিভাবে সুস্থ্য করবে আমাকে? সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।আকাশ বলল,তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা।যা করার আমরা করবো। আমরা সাতদিন তোমার এখানে থাকবো।
তারপর পাহাড়-পর্বত,অরন্য সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখবো। আকাশ বলল,আজ রাতে আমরা তোমার কথাই শুধু শুনবো। শত বছরের না বলার কথা। বসুমাতা বলল,সে কথা শুনতে গেলে শত রজনী লাগবে বন্ধু। আমার দূ্র্ভাগ্যের কথা তোমরা সইতে পারবে তো? বসুমতী শুরু করলো তার জীবনের উপর বয়ে যাওয়া নিপিড়ন,অত্যাচার, যুদ্ধ-বিঘ্রহের কথা। বলতে বলতে কখন যে রাতের প্রান্তে ভোরের তারা নিভে গেলো কেউ তা টের পাইনি।
তারপর খাওয়া-দাওয়া সেরে খানিক পরে বেরিয়ে পড়লো নদীতে মাছ ধরার জন্য।নদীতে পৌঁছে তারা বিস্মিত হয়ে গেলো।নদীর মাঝখানে দেখলো ফসলের চাষ। নদীতে কোনো পানি নেই।কোনো কোনো জায়গায় উচু করে বাঁধা। আকাশ বলল,এভাবে কারা নদীকে পুকুর বানালো? বসুমাতা বলল,আমার সম্পদ এখানকার মানুষের দখলে।। ওরা চমকে গেলো।অবাক হয়ে বলল, তা কি করে সম্ভব? এটা তো বসুমাতার সম্পদ।এখানে কারোর হস্তক্ষেপ চলবে না।সে বন্ধুদের বলল,ভেঙে দাও সব বাঁধ।নদী চলবে তার আপন গতিতে।এখানে কোনো বাঁধ চলবে না।তারা বাঁধ ভেঙে দিলো। নদীর করুন অবস্থা দেখে আহত মনে ফিরে এলো সবাই। পরের দিন তারা আবার সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য রওনা হলো। সমুদ্রের পাড়ে মানুষের ভীড় দেখতে পেলো।লোক সরিয়ে দেখলো সমুদ্রের কিছু প্রাণী মরে পড়ে আছে।খানিকটা যেয়ে পালসার বলল,এই দেখো, কি যেন একটা ভেসে আসছে। ওরা খুব খুশী। ভেবেছিল সামুদ্রিক কোনো বড় মাছ হবে হয়তো। কাছে আসতেই দেখলো প্লাস্টিকের বস্তা। সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো।
পরের দিন সকালে আকাশ তড়িঘড়ি উঠে সবাইকে নিয়ে একসাথে রেবিয়ে পড়লো বসুমাতার ম্যানগ্রোভ দেখার জন্য।সেখানে যেয়ে তারা ভীষণ মর্মাহত হলো। ঘন সবুজ অরণ্য আর নেই। কিছু পাখি তাদের অসহায় দৃষ্টি নিয়ে ওদের দেখছে।দুরে একজোড়া শিয়াল ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে হন্য হয়ে খাবার খুঁজছে।আকাশ বলল,এটা কি করে সম্ভব!বসুমাতার বনভূমি তো অর্ধকের বেশী উজাড় হয়ে গেছে।হায় হায়,কিভাবে বসুমাতাকে আমরা বাঁচাবো?একবুক কষ্ট নিয়ে ফিরে এলো ওরা।রাতে খাবার সেরে সবাই একজায়গায় বসলো।বসুমাতার করুন পরিণতির
কথা সবাই ভাবতে লাগলো।অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি,ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস মহামারি এই সবই একমাত্র বৃক্ষনিধনের কারণে হচ্ছে। জানিনা, বসুমাতার জন্য আরো কত ভয়ঙ্কর দিন অপেক্ষা করছে।বিশ্বপরিবেশ আজ বিপযর্স্ত ও হুমকির সম্মুখীন। ।না না এভাবে চলতে পারেনা।আমাদের চোখের সামনে আমাদের প্রানপ্রিয় বন্ধুকে মরে যেতে দিতে পারিনা।উল্কা,সপ্তর্ষি,নিহারিকা বলল, তাহলে আমরা কী করতে পারি?আকাশ বলল,আমরা তো শেষচেষ্টা করতে পারি। আমরা আরো কিছুদিন বসুমাতার কাছে থাকবো এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করবো।যে ভাবেই হোক বৃক্ষ-অরণ্য বাচাঁতেই হবে।বৃক্ষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে।দেশ বাঁচলে বসুমাতা বাঁচবে।শুধু হাউমাউ, কান্নাকাটি করলে তো দেশ আর সবুজ হয়ে যাবেনা। একে সফল করতে হলে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসুচি হাতে নিতে হবে।বসুমাতার সারাবিশ্বে ৭৭০কোটি সম্তান।যদি প্রত্যেকে একটি করে গাছ লাগাই তাহলে তো বসুমাতা বেঁচে যাবে।
আকাশ বলল,যাক আর কথা নয়, এখন শুধু কাজ আর কাজ। এই বলে সে সবার কাজ ভাগ করে দিলো।
*পালসারকে বলল, তুমি টেলিভিশন, মিনিপর্দায়, বৃক্ষের প্রয়োজনীতা সম্পর্কে উপস্হাপন করবে সন্ধ্যায় সাতটায়।এই খবরটা সারাবিশ্বের মোবাইলে ম্যাচেজ পাঠাবে।
*উল্কা, তুমি এলাকায় এলাকায় মাইকে প্রচার করবে।
* ছায়াপথ, তুমি পোস্টার বিলি করবে।
* সপ্তর্ষি, তুমি সভাসমিতি- সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করবে।
* চাঁদ, স্কুল- কলেজের পাঠ্যপুস্তকে অধিকহারে প্রবন্ধ রচনা করবে।
* তারা,পতিত জমির হিসাব দেবে এবং বিনামুল্যে গাছের চারা বিতরণ করবে।
* নক্ষত্র, তুমি ছাত্রসমাজ,জনগণকে দেশপ্রেমিক করে গড়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। মনে রেখো,দেশের প্রতি ভালবাসা না থাকলে কখনও কিছু করা সম্ভব নয়।কারোর জন্য কিছু করতে গেলে ভালবাসা ব্যতিত হতে পারেনা।
* সবশেষে সুর্যকে বলল,তোমার এক কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেবো।সেটা হলো,বেজন্মা মুখোশধারী দেশপ্রেমিকদের খুঁজে তালিকা করবে।যারা দেশমাতৃকার জন্য কোনো উপকার না করে শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের জন্য দেশের সম্পদ ধ্বংস করে,বিদেশে অর্থ পাচার করে তাদের ধরে আনবে।তাদের অর্থ-সম্পদ সমস্ত হস্তগত করবে।এবং তা দিয়ে সারা বিশ্বে সবুজ অরণ্য তৈরী করবে।অক্সিজেন দেবেনা ঐ সব বেজন্মাদের। তোমার তাপে পুড়িয়ে কয়লা করবে যাতে সেই কয়লা দিয়ে আরো ধীরে ধীরে ওদের বেশী করে জ্বালানো যায়।
একটু একটু করে ওদের কর্মসুচী এগুতে থাকলো।একটা নতুন স্বপ্ন,একটা নতুন আশা যেন বসুমাতার প্রাণ সঞ্জীবিত করলো। বসুমাতা আবার ফিরে পাবে তার ভরা যৌবন,অফুরন্ত সৈন্দার্য, মধুর নিকুঞ্জ।সবার চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আকাশ।তাদের কাজ শেষ করে সবাই আবার খুশীর গান গাইতে গাইতে মেঘের ভেলায় ভেসে গেলো।

পরিচিতি
শাহানাজ পারভীন শিউলী
আড়পাড়া, কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ