ঢাকা ০৩:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পুলিশের বিশেষ অভিযানে ভয়ঙ্কর ডাকাত সর্দার মামুন গ্রেফতার বগুড়ায় অবকাশ হোটেলে অবৈধ কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ৯ জন খরিদ্দারকে দুই দিনের কারাদণ্ড দিলেন আদালত নানা বাড়ি বেড়াতে এসে নদীতে ডুবে কিশোর কিশোরীর মৃত্যু চরফ্যাসনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ৯।। দুমকিতে নবজাতক শিশুকে হসপিটালে রেখে পালিয়ে গেলো মা। গজারিয়ার বালুয়াকান্দীতে আমিরুল ইসলাম এর নির্বাচনী কর্মী সভা রাঙ্গুনিয়ায় দাওয়াতে তাবলীগের নিছবতে ওলামায়েকেরামের আলোচনা সভা চট্টগ্রামে উপজেলা নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য গরমিল, ২ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল নিয়ামতপুরে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত বাড়াইপাড়া খাল খননের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ মেয়র রেজাউলের

অবশেষে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ধানসিঁড়ি

মোঃ সাইদুল ইসলাম, রাজাপুর (ঝালকাঠি) প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ দুই যুগ প্রাণহীন থাকার পর অবশেষে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের সেই মরা ধানসিঁড়ি নদীটি। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা সদরের বাঘরি ও ঝালকাঠির সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ছত্রকান্দা এলাকা থেকে একযোগে খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বহুল প্রতিক্ষিত ধানসিঁড়ির খননকাজ শুরু হওয়ায় নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। ধানসিঁড়ির খননকাজ শেষ হলে দুই যুগ ধরে বন্ধ থাকা ঝালকাঠি-রাজাপুর নৌপথের যোগাযোগ আবার শুরু হবে। ফলে খুব সহজে ও অল্প খরচে জেলা সদর দিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহন করতে পারবেন। পাশাপাশি কৃষকদের এক ফসলি জমিগুলো তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। এ ছাড়াও জেলেদের মাছ ধরাসহ স্থানীয় সাধারণ মানুষ নদীর সুফল ভোগ করতে পারবেন। অপরদিকে জীব বৈচিত্য সুরক্ষিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানাযায়, ঝালকাঠির সুগন্ধা, বিশখালী ও গাবখান চ্যানেলের মোহনা থেকে ধানসিঁড়ি নদীর উৎপত্তি। সেখান থেকে সাড়ে ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজাপুর খালে মিশেছে নদীটি। রাজাপুর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে জাঙ্গালিয়া নদী হয়ে আবার বিশখালীতে মিশেছে ধানসিঁড়ির পানি প্রবাহ। কিন্তু গত দুই যুগ ধরে ধানসিঁড়ির তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। তাই মরা ধানসিঁড়িতে প্রাণ ফেরাতে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ধানসিঁড়ি খনন প্রকল্প গ্রহন করে। এ প্রকল্পে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন থেকে রাজাপুর সদরের বাগড়ী পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হচ্ছে। ৪টি এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিনের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ধানসিঁড়ি নদীটির সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ৭০ ফুট চওড়া, ১০ ফুট গভীর ও তলদেশ ২০ ফুট চওড়া করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে রাজাপুর অংশের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা খনন করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি সরেজমিনে খনন এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ চাঞ্চল্য লক্ষ করা গেছে। ধানসিঁড়ি পারের চর ইন্দ্রপাশা গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম। তিনি নিজ বাড়িতে উঠানে বসে পুরনো জাল মেরামত করছিলেন। জানতে চাইলে হাকিম বলেন, বহুবছর ধানসিঁড়িতে পানি ছিল না। ফলে কৃষক, জেলে, মাঝিসহ সাধারণ মানুষ দারুন কষ্টে ছিল। খনন শেষ হলে ধানসিঁড়িতে পানি আসবে। তাই মাছ শিকারের জন্য জাল মেরামত করছি। দীর্ঘদিন পরে হলেও অবশেষে নদীটি খনন হওয়ায় আমরা ধানসিড়ি পাড়ের মানুষেরা দারুন খুঁশি। হাইলাকাঠি গ্রামের কৃষক মো. সেলিম বলেন, আমরা ছোটবেলায় ধানসিঁড়ির সৌর্ন্দয্য দেখেছি। এ নদীকে ঘিরে আমাদের বহু আনন্দঘন স্মৃতি রয়েছে। আবার ধীরে ধীরে অপরূপ ধানসিঁড়ির মৃত্যুও দেখেছি। অবশেষে ধানসিঁড়িতে আবার পানি আসছে ভেবে ভালোই লাগছে। রাজাপুর বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মো. সবুর বলেন, আগে ধানসিঁড়ি নদী দিয়ে নৌকা ও ট্রলারে যেমন মানুষ যাতায়াত করতে পারত তেমনি ব্যবসায়ীরাও খুব সহজে এবং অল্প খরচে পণ্য পরিবহন করতে পারত। কিন্তু গত দুই যুগ ধরে সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল এ অঞ্চলের মানুষ। অবশেষে ধানসিঁড়ি খনন হওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। রাজাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রিয়াজউল্লাহ বাহাদুর বলেন, ধানসিঁড়ি খনন সম্পন্ন হলে দুই পাড়ের কৃষি জমিগুলো তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। ফলে কৃষি উৎপাদনে নদীটি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতাউর রহমান বলেন, “৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫১ টাকা ব্যয়ে দুই বছর মেয়াদী এ প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। কাজটি যেন সঠিক ও সুন্দরভাবে হয় আমরা সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।” এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, “খননকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করি দ্রুতই কাজ শেষ হবে। এরপর ধানসিঁড়ি আবার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। দুই পাড়ের মানুষের আর পানির অভাব থাকবে না। এ ছাড়া খনন এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও কাজ করা হবে। ফলে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের ভিড় বাড়বে ধানসিঁড়ি পাড়ে।”।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

পুলিশের বিশেষ অভিযানে ভয়ঙ্কর ডাকাত সর্দার মামুন গ্রেফতার

অবশেষে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ধানসিঁড়ি

আপডেট টাইম ০৬:২৭:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

মোঃ সাইদুল ইসলাম, রাজাপুর (ঝালকাঠি) প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ দুই যুগ প্রাণহীন থাকার পর অবশেষে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের সেই মরা ধানসিঁড়ি নদীটি। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা সদরের বাঘরি ও ঝালকাঠির সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ছত্রকান্দা এলাকা থেকে একযোগে খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বহুল প্রতিক্ষিত ধানসিঁড়ির খননকাজ শুরু হওয়ায় নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। ধানসিঁড়ির খননকাজ শেষ হলে দুই যুগ ধরে বন্ধ থাকা ঝালকাঠি-রাজাপুর নৌপথের যোগাযোগ আবার শুরু হবে। ফলে খুব সহজে ও অল্প খরচে জেলা সদর দিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহন করতে পারবেন। পাশাপাশি কৃষকদের এক ফসলি জমিগুলো তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। এ ছাড়াও জেলেদের মাছ ধরাসহ স্থানীয় সাধারণ মানুষ নদীর সুফল ভোগ করতে পারবেন। অপরদিকে জীব বৈচিত্য সুরক্ষিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানাযায়, ঝালকাঠির সুগন্ধা, বিশখালী ও গাবখান চ্যানেলের মোহনা থেকে ধানসিঁড়ি নদীর উৎপত্তি। সেখান থেকে সাড়ে ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজাপুর খালে মিশেছে নদীটি। রাজাপুর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে জাঙ্গালিয়া নদী হয়ে আবার বিশখালীতে মিশেছে ধানসিঁড়ির পানি প্রবাহ। কিন্তু গত দুই যুগ ধরে ধানসিঁড়ির তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। তাই মরা ধানসিঁড়িতে প্রাণ ফেরাতে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ধানসিঁড়ি খনন প্রকল্প গ্রহন করে। এ প্রকল্পে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন থেকে রাজাপুর সদরের বাগড়ী পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হচ্ছে। ৪টি এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিনের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ধানসিঁড়ি নদীটির সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ৭০ ফুট চওড়া, ১০ ফুট গভীর ও তলদেশ ২০ ফুট চওড়া করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে রাজাপুর অংশের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা খনন করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি সরেজমিনে খনন এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ চাঞ্চল্য লক্ষ করা গেছে। ধানসিঁড়ি পারের চর ইন্দ্রপাশা গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম। তিনি নিজ বাড়িতে উঠানে বসে পুরনো জাল মেরামত করছিলেন। জানতে চাইলে হাকিম বলেন, বহুবছর ধানসিঁড়িতে পানি ছিল না। ফলে কৃষক, জেলে, মাঝিসহ সাধারণ মানুষ দারুন কষ্টে ছিল। খনন শেষ হলে ধানসিঁড়িতে পানি আসবে। তাই মাছ শিকারের জন্য জাল মেরামত করছি। দীর্ঘদিন পরে হলেও অবশেষে নদীটি খনন হওয়ায় আমরা ধানসিড়ি পাড়ের মানুষেরা দারুন খুঁশি। হাইলাকাঠি গ্রামের কৃষক মো. সেলিম বলেন, আমরা ছোটবেলায় ধানসিঁড়ির সৌর্ন্দয্য দেখেছি। এ নদীকে ঘিরে আমাদের বহু আনন্দঘন স্মৃতি রয়েছে। আবার ধীরে ধীরে অপরূপ ধানসিঁড়ির মৃত্যুও দেখেছি। অবশেষে ধানসিঁড়িতে আবার পানি আসছে ভেবে ভালোই লাগছে। রাজাপুর বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মো. সবুর বলেন, আগে ধানসিঁড়ি নদী দিয়ে নৌকা ও ট্রলারে যেমন মানুষ যাতায়াত করতে পারত তেমনি ব্যবসায়ীরাও খুব সহজে এবং অল্প খরচে পণ্য পরিবহন করতে পারত। কিন্তু গত দুই যুগ ধরে সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল এ অঞ্চলের মানুষ। অবশেষে ধানসিঁড়ি খনন হওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। রাজাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রিয়াজউল্লাহ বাহাদুর বলেন, ধানসিঁড়ি খনন সম্পন্ন হলে দুই পাড়ের কৃষি জমিগুলো তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। ফলে কৃষি উৎপাদনে নদীটি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতাউর রহমান বলেন, “৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫১ টাকা ব্যয়ে দুই বছর মেয়াদী এ প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। কাজটি যেন সঠিক ও সুন্দরভাবে হয় আমরা সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।” এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, “খননকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করি দ্রুতই কাজ শেষ হবে। এরপর ধানসিঁড়ি আবার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। দুই পাড়ের মানুষের আর পানির অভাব থাকবে না। এ ছাড়া খনন এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও কাজ করা হবে। ফলে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের ভিড় বাড়বে ধানসিঁড়ি পাড়ে।”।