ঢাকা ০৫:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সৌন্দর্যের স্বর্গরাজ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার পেনাং দ্বীপ “নির্বাচনকে ভয় বলেই ষড়যন্ত্রের পথে বিএনপি : তথ্যমন্ত্রী” বাকেরগঞ্জে জমিসহ আশ্রয়ণের ঘর পাচ্ছেন আরও ২৭৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার “বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের “ক্রস পার্টি পার্লামেন্টারি ডেলিগেশন” প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ” সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ যোগ্য নাগরিক গড়ে: মেয়র জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এসিল্যান্ড নাজমুল হুদার হস্তক্ষেপে নির্মিত হচ্ছে ব্রীজ সাপুড়ের কাছ থেকে উদ্ধার করে বনে ছাড়া হলো ৫ সাপ। কুয়াকাটায় পর্যটকদের বিনোদনে যোগ হলো বিমানাকৃতির গাড়ি। হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের বিশেষ অভিযানে বিদেশী মদসহ আটক ২ সিলেট জুড়ে বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরে পেয়েছে চা বাগান গুলোতে

পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন চর।

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন চর।পটুয়াখালীর দক্ষিণ উপকূলে গত কয়েক দশকে জেগে উঠেছে বেশ কিছু চর। এসব চরের সৌন্দর্যও অপরূপ। তবে নেই প্রচার-প্রচারণা। এসব চরের প্রতিটিই হতে পারে দেশের পর্যটন শিল্পের জন্য সমৃদ্ধ এক একটি দর্শনীয় স্থান। পর্যটন সুবিধা নিশ্চিত হলে এসব চর দেশের পর্যটন শিল্পের জন্য নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে।
আরব্য রজনীর সিন্দবাদের কাহিনির মতোই হঠাৎ সাগরের বুকে জেগে ওঠা এক দ্বীপ ‘চর বিজয়’। কয়েক বছর আগে জেলেরা আবিষ্কার করেন এ চর। ডিসেম্বরে চরটি খুঁজে পাওয়ায় নাম রাখা হয় ‘চর বিজয়’। ১০ হাজার একরের বেশি এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা এ চরের পরিধি প্রতি বছরই বাড়ছে। কুয়াকাটা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এ চরে স্প্রিড বোটে যেতে সময় লাগে ২০-২৫ মিনিট। লাখ লাখ লাল কাঁকড়া আর দেশি-বিদেশি পাখির এক অভয়ারণ্য এ চর। নেই মানুষের উপস্থিতি কিংবা গাছপালা। শীতে জেগে উঠলেও বর্ষায় তলিয়ে যায়। সম্প্রতি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে চর বিজয়। জনমানবহীন এ চরে মানুষের উপস্থিত টের পেলেই লাল কাঁকড়ার দল ছুটে পালায় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কাঁকড়াগুলো গর্তে লুকিয়ে উঁকি দিয়ে পর্যটকদের গতিবিধি লক্ষ্য করে, যা পর্যটকদের বিমোহিত করে।
চর বিজয় ঘুরতে যাওয়া রেজাউল করিম সোয়েব বলেন, ‘কুয়াকাটায় এসে যদি চর বিজয়ে না যাওয়া হয় তবে অপূর্ণতা থেকে যাবে। চরটি পাখি ও লাল কাকঁড়ার দখলে থাকা একটি দ্বীপ, যে কোনো মানুষকে মুগ্ধ করবে।’
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা অরেক চর ‘চরহেয়ার’। স্থানীয় জেলেদের কাছে এটি কলাগাছিয়া নামে পরিচিত। চর হেয়ারে রয়েছে বিস্তৃত বালুময় সমুদ্র সৈকত। একপাশে সাগর অন্য পাশে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। সব মিলিয়ে অপরূপ এক সৌন্দর্য এই চরের। দেশের অন্য সমুদ্র সৈকতে মাছ শিকারের দৃশ্য খুব একটা চোখে না পড়লেও এই চরে জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য সরাসরি দেখার সুযোগ মিলবে। প্রকৃতির অপার এক সৃষ্টি সোনার চর। পশু-পাখির জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণা করা এই চরে রয়েছে ভিন্নতা। বনের মধ্য থেকে বয়ে গেছে ছোট ছোট খাল, যা পার হয়ে চরের শেষ প্রান্তে পৌঁছালে দেখা মিলবে বিশাল সমুদ্র সৈকত। সম্প্রতি এখানে পলি জমে কাদাময় সৈকতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি এ চরে রয়েছে শত শত প্রজাতির পাখি। ভাগ্য ভালো হলে দেখা মিলবে হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর। এ বনে রয়েছে বুনো মহিষ। তবে এসব চরে ভ্রমণে নিয়মিত কোনো যানবাহন না থাকায় ভাড়ায়চালিত ট্রলার কিংবা স্পিডবোটই এমমাত্র ভরসা।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান জানান, বিচ্ছিন্ন এসব চর কীভাবে পর্যটনের আওতায় আনা যায় তা নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছি। গত এক দশকে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ অঞ্চলে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে পায়রা সমুদ্র বন্দর, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, লেবুখালী সেতু অন্যতম। পদ্মা সেতুর কারণে এ এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ অঞ্চল এখন কৃষি-মৎস্যের পাশাপাশি মাঝারি ও ভারী শিল্পের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ কারণে পটুয়াখালী পর্যটন সম্ভানাকেও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা।
পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভাকেট হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রকৃতির অপার এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে দক্ষিণ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার যেমন আমূল পরিবর্তন ঘটবে তেমনি শত শত মানুষের কর্মসংস্থানও হবে। বর্তমানে কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা একদিনের বেশি ঘোরার জায়গা পায় না। এক্ষেত্রে কুয়াকাটা থেকে যদি কোনো সি-বোট কিংবা আধুনিক জাহাজে এসব চর ঘুরে দেখার সুযোগ তৈরি করা যায় তবে তা দ্রুত সেন্টমার্টিনের মতো জনপ্রিয়তা পাবে। উপকূলীয় এলাকার দ্বীপ ও চর উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান জেলার পর্যটন ব্যবসায়ীরা।###

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সৌন্দর্যের স্বর্গরাজ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার পেনাং দ্বীপ

পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন চর।

আপডেট টাইম ০৭:৪১:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন চর।পটুয়াখালীর দক্ষিণ উপকূলে গত কয়েক দশকে জেগে উঠেছে বেশ কিছু চর। এসব চরের সৌন্দর্যও অপরূপ। তবে নেই প্রচার-প্রচারণা। এসব চরের প্রতিটিই হতে পারে দেশের পর্যটন শিল্পের জন্য সমৃদ্ধ এক একটি দর্শনীয় স্থান। পর্যটন সুবিধা নিশ্চিত হলে এসব চর দেশের পর্যটন শিল্পের জন্য নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে।
আরব্য রজনীর সিন্দবাদের কাহিনির মতোই হঠাৎ সাগরের বুকে জেগে ওঠা এক দ্বীপ ‘চর বিজয়’। কয়েক বছর আগে জেলেরা আবিষ্কার করেন এ চর। ডিসেম্বরে চরটি খুঁজে পাওয়ায় নাম রাখা হয় ‘চর বিজয়’। ১০ হাজার একরের বেশি এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা এ চরের পরিধি প্রতি বছরই বাড়ছে। কুয়াকাটা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এ চরে স্প্রিড বোটে যেতে সময় লাগে ২০-২৫ মিনিট। লাখ লাখ লাল কাঁকড়া আর দেশি-বিদেশি পাখির এক অভয়ারণ্য এ চর। নেই মানুষের উপস্থিতি কিংবা গাছপালা। শীতে জেগে উঠলেও বর্ষায় তলিয়ে যায়। সম্প্রতি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে চর বিজয়। জনমানবহীন এ চরে মানুষের উপস্থিত টের পেলেই লাল কাঁকড়ার দল ছুটে পালায় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কাঁকড়াগুলো গর্তে লুকিয়ে উঁকি দিয়ে পর্যটকদের গতিবিধি লক্ষ্য করে, যা পর্যটকদের বিমোহিত করে।
চর বিজয় ঘুরতে যাওয়া রেজাউল করিম সোয়েব বলেন, ‘কুয়াকাটায় এসে যদি চর বিজয়ে না যাওয়া হয় তবে অপূর্ণতা থেকে যাবে। চরটি পাখি ও লাল কাকঁড়ার দখলে থাকা একটি দ্বীপ, যে কোনো মানুষকে মুগ্ধ করবে।’
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা অরেক চর ‘চরহেয়ার’। স্থানীয় জেলেদের কাছে এটি কলাগাছিয়া নামে পরিচিত। চর হেয়ারে রয়েছে বিস্তৃত বালুময় সমুদ্র সৈকত। একপাশে সাগর অন্য পাশে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। সব মিলিয়ে অপরূপ এক সৌন্দর্য এই চরের। দেশের অন্য সমুদ্র সৈকতে মাছ শিকারের দৃশ্য খুব একটা চোখে না পড়লেও এই চরে জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য সরাসরি দেখার সুযোগ মিলবে। প্রকৃতির অপার এক সৃষ্টি সোনার চর। পশু-পাখির জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণা করা এই চরে রয়েছে ভিন্নতা। বনের মধ্য থেকে বয়ে গেছে ছোট ছোট খাল, যা পার হয়ে চরের শেষ প্রান্তে পৌঁছালে দেখা মিলবে বিশাল সমুদ্র সৈকত। সম্প্রতি এখানে পলি জমে কাদাময় সৈকতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি এ চরে রয়েছে শত শত প্রজাতির পাখি। ভাগ্য ভালো হলে দেখা মিলবে হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর। এ বনে রয়েছে বুনো মহিষ। তবে এসব চরে ভ্রমণে নিয়মিত কোনো যানবাহন না থাকায় ভাড়ায়চালিত ট্রলার কিংবা স্পিডবোটই এমমাত্র ভরসা।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান জানান, বিচ্ছিন্ন এসব চর কীভাবে পর্যটনের আওতায় আনা যায় তা নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছি। গত এক দশকে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ অঞ্চলে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে পায়রা সমুদ্র বন্দর, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, লেবুখালী সেতু অন্যতম। পদ্মা সেতুর কারণে এ এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ অঞ্চল এখন কৃষি-মৎস্যের পাশাপাশি মাঝারি ও ভারী শিল্পের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ কারণে পটুয়াখালী পর্যটন সম্ভানাকেও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা।
পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভাকেট হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রকৃতির অপার এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে দক্ষিণ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার যেমন আমূল পরিবর্তন ঘটবে তেমনি শত শত মানুষের কর্মসংস্থানও হবে। বর্তমানে কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা একদিনের বেশি ঘোরার জায়গা পায় না। এক্ষেত্রে কুয়াকাটা থেকে যদি কোনো সি-বোট কিংবা আধুনিক জাহাজে এসব চর ঘুরে দেখার সুযোগ তৈরি করা যায় তবে তা দ্রুত সেন্টমার্টিনের মতো জনপ্রিয়তা পাবে। উপকূলীয় এলাকার দ্বীপ ও চর উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান জেলার পর্যটন ব্যবসায়ীরা।###