ঢাকা ০৭:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গজারিয়া বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে সিকদার পরিবারে আমিরুল ইসলাম এর সর্মথনে আলোচনা সভা ও ইফতার দোয়া মাহফিল চসিকের ৬ ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৮ তম সাধারণ সভায় মশা কমাতে কার্যক্রম বাড়াবে : মেয়র রেজাউল “বিড়ি শিল্পে ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে রংপুর শ্রমিকদের মানববন্ধন” ইন্দুরকানী প্রেসক্লাবে ইফতার মাহফিল বরিশাল চকবাজার এবায়দুল্লাহ মসজিদে অগ্নিকান্ড। টাঙ্গাইলে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার পাঠক ফোরাম গঠিত চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার চট্টগ্রামে জালনোটসহ প্রতারকচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ রমজান মাসের পবিত্রতা লঙ্ঘন করছে নারায়ণগঞ্জ চিশতিয়া বাউল সমিত গজারিয়ায় বালুয়াকান্দী অটো ড্রাইভার ও মালিক সমিতির উদ্যোগে আমিরুল ইসলাম এর নির্বাচনী সভা ও দোয়া মাহফিল

সান্ধ‌্য কোর্সের নীতিমালা চান শিক্ষাবিদরা

আবু বকর ইয়ামিন : সান্ধ‌্য কোর্স নিয়ে চলছে নানামুখী সমালোচনা।  চলছে বিশ্লেষণও। কেউ বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উদ্দেশ্যে সান্ধ্য কোর্স চালু হয়েছিল, তা সঠিক প্রক্রিয়ায় হচ্ছে না। এ বিষয়ে একটি চূড়ান্ত নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করছেন বিষেজ্ঞরা। তবে, এই সংক্রান্ত নীতিমালা হলে বর্তমানে যেসব কোর্স চলছে, এগুলোর অধিকাংশই থাকবে না বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও সান্ধ্য কোর্স নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির প্রধান অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ রাইজিংবিডিকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চালুর আগে দেখতে হবে তার সক্ষমতা কতটুকু আছে। এ কোর্সের জাতীয় চাহিদা কেমন। এর গুণগত মান সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও যথাযথ বাস্তবাযন করতে হবে।

বর্তমান যে প্রক্রিয়ায় সান্ধ্য কোর্স চলছে, এটি কী বন্ধ হয়ে যাবে—এ বিষয়ে অধ্যাপক আহমাদ বলেন, ‘অবশ্যই। নীতিমালা হয়ে গেলে এভাবে আর চলবে না। তখন নীতিমালার শর্তপূরণ করেই কোর্সের অনুমোদন নিতে হবে। নীতিমালা হয়ে গেলে বর্তমানে যেগুলো চলছে, এগুলোর অধিকাংশই থাকবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘মূলত সান্ধ্য কোর্সগুলো চালু হয়েছিল পেশাজীবীদের মানোন্নয়নের জন্য। কর্মস্থলে তাদের ব্যবহারিক দক্ষতা বাড়ানোর। কিন্তু বর্তমানে এগুলো ভিন্নভাবে ব্যবহার হচ্ছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক লাভের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এটিকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। ফলে পেশাজীবীদের মানোন্নয়নের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে এ বিষয়ে একটি সঠিক নীতিমাল প্রণয়ন করা উচিত। যেন পুরো বিষয়টি একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে আসে।’

কোর্সের বিরোধিতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত শিক্ষার্থী, যারা মেধা দিয়ে এখানে ভর্তি হয়, তাদের স্বার্থের বিষয়ে আমাদের চিন্তুা করতে হয়। শিক্ষকরা সময় দেন না বলে অনেক শিক্ষার্থীই অভিযোগ করেছেন।’

আবার কেউ কেউ সান্ধ্য কোর্স থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, পেশাগত মানোন্নয়নে অবশ্যই এটি থাকতে হবে। এর মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়েরও সুনাম অর্জিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, এ ধরনের প্রোগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। আমি যদি আমার বিভাগের কথা বলি তাহলে বলব, আমার এখানে ডিগ্রি নেওয়ার জন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আসেন, যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরাবান্বিত করে।

সান্ধ্য কোর্স বন্ধ হলে ছাত্র-শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান সান্ধ্য কোর্স বন্ধে গত ১১ ডিসেম্বর নির্দেশনা জারি করে ইউজিসি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সান্ধ্য কোর্সের যৌক্তিকতা যাচাই কমিটি গঠন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি যৌক্তিকতা যাচাই কমিটি সান্ধ্য কোর্স সাময়িক বন্ধ রাখার সুপারিশ করে। ডাকা হয় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক। এরপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সান্ধ্য কোর্সের পক্ষে বিপক্ষে তুমুল তর্ক-বিতর্কের পর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় অ‌্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক। পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করে জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চালু থাকবে কি না—সেই সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নতুন করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সান্ধ্য কোর্স নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা  হবে।’ তবে কোন বিভাগে সান্ধ্য কোর্স থাকবে বা খোলা হবে, আর কোন বিভাগে থাকবে না কিংবা খোলা হবে না—সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

গজারিয়া বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে সিকদার পরিবারে আমিরুল ইসলাম এর সর্মথনে আলোচনা সভা ও ইফতার দোয়া মাহফিল

সান্ধ‌্য কোর্সের নীতিমালা চান শিক্ষাবিদরা

আপডেট টাইম ১০:৩৩:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ মার্চ ২০২০
আবু বকর ইয়ামিন : সান্ধ‌্য কোর্স নিয়ে চলছে নানামুখী সমালোচনা।  চলছে বিশ্লেষণও। কেউ বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উদ্দেশ্যে সান্ধ্য কোর্স চালু হয়েছিল, তা সঠিক প্রক্রিয়ায় হচ্ছে না। এ বিষয়ে একটি চূড়ান্ত নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করছেন বিষেজ্ঞরা। তবে, এই সংক্রান্ত নীতিমালা হলে বর্তমানে যেসব কোর্স চলছে, এগুলোর অধিকাংশই থাকবে না বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও সান্ধ্য কোর্স নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির প্রধান অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ রাইজিংবিডিকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চালুর আগে দেখতে হবে তার সক্ষমতা কতটুকু আছে। এ কোর্সের জাতীয় চাহিদা কেমন। এর গুণগত মান সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও যথাযথ বাস্তবাযন করতে হবে।

বর্তমান যে প্রক্রিয়ায় সান্ধ্য কোর্স চলছে, এটি কী বন্ধ হয়ে যাবে—এ বিষয়ে অধ্যাপক আহমাদ বলেন, ‘অবশ্যই। নীতিমালা হয়ে গেলে এভাবে আর চলবে না। তখন নীতিমালার শর্তপূরণ করেই কোর্সের অনুমোদন নিতে হবে। নীতিমালা হয়ে গেলে বর্তমানে যেগুলো চলছে, এগুলোর অধিকাংশই থাকবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘মূলত সান্ধ্য কোর্সগুলো চালু হয়েছিল পেশাজীবীদের মানোন্নয়নের জন্য। কর্মস্থলে তাদের ব্যবহারিক দক্ষতা বাড়ানোর। কিন্তু বর্তমানে এগুলো ভিন্নভাবে ব্যবহার হচ্ছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক লাভের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এটিকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। ফলে পেশাজীবীদের মানোন্নয়নের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে এ বিষয়ে একটি সঠিক নীতিমাল প্রণয়ন করা উচিত। যেন পুরো বিষয়টি একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে আসে।’

কোর্সের বিরোধিতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত শিক্ষার্থী, যারা মেধা দিয়ে এখানে ভর্তি হয়, তাদের স্বার্থের বিষয়ে আমাদের চিন্তুা করতে হয়। শিক্ষকরা সময় দেন না বলে অনেক শিক্ষার্থীই অভিযোগ করেছেন।’

আবার কেউ কেউ সান্ধ্য কোর্স থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা বলছেন, পেশাগত মানোন্নয়নে অবশ্যই এটি থাকতে হবে। এর মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়েরও সুনাম অর্জিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, এ ধরনের প্রোগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। আমি যদি আমার বিভাগের কথা বলি তাহলে বলব, আমার এখানে ডিগ্রি নেওয়ার জন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আসেন, যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরাবান্বিত করে।

সান্ধ্য কোর্স বন্ধ হলে ছাত্র-শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান সান্ধ্য কোর্স বন্ধে গত ১১ ডিসেম্বর নির্দেশনা জারি করে ইউজিসি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সান্ধ্য কোর্সের যৌক্তিকতা যাচাই কমিটি গঠন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি যৌক্তিকতা যাচাই কমিটি সান্ধ্য কোর্স সাময়িক বন্ধ রাখার সুপারিশ করে। ডাকা হয় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক। এরপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সান্ধ্য কোর্সের পক্ষে বিপক্ষে তুমুল তর্ক-বিতর্কের পর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় অ‌্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক। পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করে জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চালু থাকবে কি না—সেই সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নতুন করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সান্ধ্য কোর্স নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা  হবে।’ তবে কোন বিভাগে সান্ধ্য কোর্স থাকবে বা খোলা হবে, আর কোন বিভাগে থাকবে না কিংবা খোলা হবে না—সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।