ঢাকা ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রাঙ্গুনিয়ায় নববর্ষ বৈশাখী উৎসবে জলকেলি ও বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে বেলখাইন স্পোটিং ক্লাবের অলনাইট ফুটবল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল সম্পন্ন বগুড়ায় চাঞ্চ্যল্যকর শিশু বন্ধনকে গলাকেটে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন গজারিয়ায় দুই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলাম এর পক্ষে গনসংযোগ ও লিফলেট বিতরন প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে আলোচনা ও পুরুষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান –অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৪ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। চট্টগ্রামে দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে-২ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা বিএমএর হকার আর যত্রতত্র আবর্জনা কমাতে অভিযানের ঘোষণা মেয়র রেজাউলের রামগঞ্জে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ২০২৪ অনুষ্ঠিত। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

খাবারের কষ্টে হিজড়া সম্প্রদায়

মাতৃভূমির খবর ডেস্ক: সারাদেশে চলমান সাধারণ ছুটির জেরে সৃষ্ট ‘অচলাবস্থায়’ হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষগুলো আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন। চেয়েচিন্তে দিন পার করা এই মানুষগুলোর খোঁজ নেওয়ার যেন কেউ নেই। বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠান তাদের পাশে দাঁড়ালেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

রাজধানীর বাড্ডার নতুন বাজার এলাকার খন্দকার গলির মাথায় একসঙ্গে আটজন হিজড়া একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। তাদের একজন শোভা। ভাটারায় একটি চায়ের দোকান আছে তার। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ১০ দিনের সাধারণ ছুটিতে তার দোকানটিও বন্ধ রয়েছে। কয়েকদিনের খাবার তিনি কিনে রেখেছিলেন। সেই খাবারও শেষ। এখন পর্যন্ত কেউ তাদের খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেননি বলে জানান শোভা।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) তিনি মাতৃভূমির খবরকে বলেন, ‘আমাদের কেউ খোঁজ নেয়নি। একটা দোকান করে দিয়েছিলেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। সেটিও বন্ধ রয়েছে। কবে খুলবো, তাও কেউ কিছু বলছে না। বাসায় যে সদাই ছিল তাও শেষ। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে একজন নারী অল্প কিছু চাল দিয়ে গেছেন। সেটাই রান্না করে খাবো। আমাদের দেখার কেউ নেই।’

সাধারণ ছুটির মেয়াদ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোয় তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “স্বাভাবিক সময় দোকান থেকে ‘তোলা’ তুলে, বিয়ের অনুষ্ঠানে বা কারো সন্তান হলে সেখানে গিয়ে বকশিস নিয়ে আসি। কেউ কেউ টুকটাক কাজ করে তাদের জীবন চালায়। কিন্তু দোকানপাট বন্ধ থাকায় সেই অবস্থাও নেই।’

সরকারের সহযোগিতা চেয়ে শোভা বলেন, ‘কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা এবং ভাটারা এলাকায় অন্তত আড়াইশ’ হিজড়া থাকে। এছাড়া শ্যামপুর মিরপুর ও মগবাজারে অনেক হিজড়া রয়েছে। যাদের খবর কেউ নিচ্ছে না। সরকার পাশে না থাকলে আমরা কীভাবে বাঁচবো?’

আনুরি হিজড়া থাকেন দয়াগঞ্জের স্বামীবাগে। তিনি একজন ‘গুরু’ হিসেবে পরিচিত। পুরান ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় তার তিন শতাধিক শিষ্য রয়েছে। তার বাসার আশপাশে প্রায় ৫০ জন হিজড়া থাকেন। তারা কেউই এখন পর্যন্ত কারো সহযোগিতা পাননি বলে জানান আনুরি।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘সমাজে আমরা এমনিতেই অবহেলিত। আমরা চেয়েচিন্তে খাই। স্বাভাবিক সময়ে সেটাই কারো সহ্য হয় না। আর এই সময় কার কাছে চাইবো? কে আমাদের সহযোগিতা করবে? সবাই এখন নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের দিকে তাকানোর কারো সময় নেই!’

আনুরি বলেন, ‘একমাত্র সরকার চাইলে আমাদের সহযোগিতা করতে পারে। কোনোরকম ডাল-আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। এভাবে চলতে পারলেই হলো। তাও কতদিন পারি, জানি না!’

হিজড়াদের মানবাধিকার ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (বন্ধু)। প্রতিষ্ঠানটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার উম্মে ফারহানা জারিফ কান্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে হিজড়া সম্প্রদায়কে জেলা প্রশাসকদের দফতরের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছি। জেলা প্রশাসকরা তাদের সাহায্য করবেন। বরিশালে ইতোমধ্যে ৫০ জন হিজড়াকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীতে মঙ্গলবার দেওয়ার কথা।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রক্রিয়া চলছে, দুই-একদিনের ভেতরে তাদের সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হবে।’ ব্যক্তি উদ্যোগে হিজাড়াদের সাহায্য করতে অর্থবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হিজড়া সম্প্রদায়ের কেউ কেউ বয়স্ক ভাতা পান। তবে সব বয়সের হিজড়ারা ভাতা পান না। করোনাভাইরাসের কারণে হিজড়া সম্প্রদায়কে আলাদাভাবে কোনও সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেই। তবে কেউ আবেদন করলে আমরা তাদের বিষয় বিবেচনা করবো। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।’

সমাজসেবা অধিদফতরের প্রায় অর্ধযুগ আগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ১০ হাজার হিজড়া রয়েছে। তবে হিজড়া সংগঠনগুলোর দাবি, এই সংখ্যা অর্ধ লক্ষাধিক।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

রাঙ্গুনিয়ায় নববর্ষ বৈশাখী উৎসবে জলকেলি ও বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে

খাবারের কষ্টে হিজড়া সম্প্রদায়

আপডেট টাইম ১১:০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ এপ্রিল ২০২০

মাতৃভূমির খবর ডেস্ক: সারাদেশে চলমান সাধারণ ছুটির জেরে সৃষ্ট ‘অচলাবস্থায়’ হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষগুলো আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন। চেয়েচিন্তে দিন পার করা এই মানুষগুলোর খোঁজ নেওয়ার যেন কেউ নেই। বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠান তাদের পাশে দাঁড়ালেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

রাজধানীর বাড্ডার নতুন বাজার এলাকার খন্দকার গলির মাথায় একসঙ্গে আটজন হিজড়া একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। তাদের একজন শোভা। ভাটারায় একটি চায়ের দোকান আছে তার। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ১০ দিনের সাধারণ ছুটিতে তার দোকানটিও বন্ধ রয়েছে। কয়েকদিনের খাবার তিনি কিনে রেখেছিলেন। সেই খাবারও শেষ। এখন পর্যন্ত কেউ তাদের খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেননি বলে জানান শোভা।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) তিনি মাতৃভূমির খবরকে বলেন, ‘আমাদের কেউ খোঁজ নেয়নি। একটা দোকান করে দিয়েছিলেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। সেটিও বন্ধ রয়েছে। কবে খুলবো, তাও কেউ কিছু বলছে না। বাসায় যে সদাই ছিল তাও শেষ। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে একজন নারী অল্প কিছু চাল দিয়ে গেছেন। সেটাই রান্না করে খাবো। আমাদের দেখার কেউ নেই।’

সাধারণ ছুটির মেয়াদ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোয় তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “স্বাভাবিক সময় দোকান থেকে ‘তোলা’ তুলে, বিয়ের অনুষ্ঠানে বা কারো সন্তান হলে সেখানে গিয়ে বকশিস নিয়ে আসি। কেউ কেউ টুকটাক কাজ করে তাদের জীবন চালায়। কিন্তু দোকানপাট বন্ধ থাকায় সেই অবস্থাও নেই।’

সরকারের সহযোগিতা চেয়ে শোভা বলেন, ‘কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা এবং ভাটারা এলাকায় অন্তত আড়াইশ’ হিজড়া থাকে। এছাড়া শ্যামপুর মিরপুর ও মগবাজারে অনেক হিজড়া রয়েছে। যাদের খবর কেউ নিচ্ছে না। সরকার পাশে না থাকলে আমরা কীভাবে বাঁচবো?’

আনুরি হিজড়া থাকেন দয়াগঞ্জের স্বামীবাগে। তিনি একজন ‘গুরু’ হিসেবে পরিচিত। পুরান ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় তার তিন শতাধিক শিষ্য রয়েছে। তার বাসার আশপাশে প্রায় ৫০ জন হিজড়া থাকেন। তারা কেউই এখন পর্যন্ত কারো সহযোগিতা পাননি বলে জানান আনুরি।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘সমাজে আমরা এমনিতেই অবহেলিত। আমরা চেয়েচিন্তে খাই। স্বাভাবিক সময়ে সেটাই কারো সহ্য হয় না। আর এই সময় কার কাছে চাইবো? কে আমাদের সহযোগিতা করবে? সবাই এখন নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের দিকে তাকানোর কারো সময় নেই!’

আনুরি বলেন, ‘একমাত্র সরকার চাইলে আমাদের সহযোগিতা করতে পারে। কোনোরকম ডাল-আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। এভাবে চলতে পারলেই হলো। তাও কতদিন পারি, জানি না!’

হিজড়াদের মানবাধিকার ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (বন্ধু)। প্রতিষ্ঠানটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার উম্মে ফারহানা জারিফ কান্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে হিজড়া সম্প্রদায়কে জেলা প্রশাসকদের দফতরের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছি। জেলা প্রশাসকরা তাদের সাহায্য করবেন। বরিশালে ইতোমধ্যে ৫০ জন হিজড়াকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীতে মঙ্গলবার দেওয়ার কথা।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রক্রিয়া চলছে, দুই-একদিনের ভেতরে তাদের সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হবে।’ ব্যক্তি উদ্যোগে হিজাড়াদের সাহায্য করতে অর্থবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হিজড়া সম্প্রদায়ের কেউ কেউ বয়স্ক ভাতা পান। তবে সব বয়সের হিজড়ারা ভাতা পান না। করোনাভাইরাসের কারণে হিজড়া সম্প্রদায়কে আলাদাভাবে কোনও সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেই। তবে কেউ আবেদন করলে আমরা তাদের বিষয় বিবেচনা করবো। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।’

সমাজসেবা অধিদফতরের প্রায় অর্ধযুগ আগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ১০ হাজার হিজড়া রয়েছে। তবে হিজড়া সংগঠনগুলোর দাবি, এই সংখ্যা অর্ধ লক্ষাধিক।